রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকে বেসরকারি আমানতের পরিমাণ কমছে। তার বিপরীতে বাড়ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত। ব্যাংকটির বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সোনালী ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ব্যাংকটিতে বেসরকারি খাতের আমানত কমে গেছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। আর সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত বেড়েছে আরও ৯ হাজার কোটি টাকা।
সারা দেশেই ছড়িয়ে আছে সোনালী ব্যাংকের শাখা। এরপরও ব্যাংকটিতে বেসরকারি খাতের আমানত কমে যাওয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তবে কী ব্যাংকটির প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থায় চিড় ধরেছে? অবশ্য ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বলছে, আস্থার ঘাটতি নয়, আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের আমানত কমেছে। এ কারণে ব্যাংকটির মোট আমানতও আগের বছরের চেয়ে খুব বেশি বাড়েনি।
জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের মধ্যভাবে আমানতে ৬ শতাংশ সুদহার কার্যকর করা হয়। এরপরই বেসরকারি খাতের আমানত কমে যায়। অনেক মানুষ নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা না করে সাময়িক লাভের জন্য বেশি সুদের জন্য টাকা অন্য ব্যাংকে নিয়ে গেছেন। এ কারণেই বেসরকারি আমানত কমে গেছে। আমরা সরকারি নির্দেশনা পুরোপুরি পালন করছি। সব ব্যাংক এ নির্দেশনা মানলে তহবিলের এত নড়াচড়া হতো না।’
জানা গেছে, ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংকটির আমানত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের আমানত ৪৭ হাজার ৬২০ কোটি টাকা ও বেসরকারি খাতের ৬১ হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ব্যাংকটির আমানত ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি আমানত ছিল ৩৮ হাজার ১২৯ কোটি টাকা ও বেসরকারি খাতের আমানত ছিল ৬৮ হাজার ৩০২ কোটি টাকা। ফলে ২০১৮ সালে এসে সরকারি আমানত আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে ৯ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। তবে বেসরকারি খাতের আমানত কমে গেছে ৬ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা। যদিও ২০১৭ সালে ব্যাংকটিতে সরকারি আমানত কমেছিল ও বেসরকারি আমানত বেড়েছিল।
এদিকে ব্যাংকটির আমানত লাখ কোটি টাকা ছাড়ালেও ঋণ বিতরণ হয়েছে আমানতের অর্ধেকেরও কম। জানা গেছে, ব্যাংকটি ঋণ বিতরণের চেয়ে সরকারি–বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে টাকা ধার দিয়ে আয়ের নিরাপদ পথে হাঁটছে। এ কারণে ২০১৮ সাল শেষে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা। গত সোমবার বার্ষিক সম্মেলনে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল জানান, হল–মার্ক কেলেঙ্কারি থেকে শিক্ষা নিয়ে রক্ষণশীল ব্যাংকিংয়ের পথ বেছে নিয়েছে ব্যাংকটি।
ঋণ কম বিতরণ করার বিপরীতে ব্যাংকটি খেলাপি ঋণ আদায়েও উদ্যোগ নিয়েছে। ২০১৮ সালে ব্যাংকটি প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। এর মধ্যে নগদ আদায় করেছে মাত্র ১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃ তফসিল করে আদায় দেখিয়েছে ব্যাংকটি। এর ফলে বছর শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৯৩ কোটি টাকায়। খেলাপি ঋণ বেশি থাকায় মতিঝিলের ছয়টি করপোরেট শাখার ঋণ একটি শাখায় স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ আদায়ে আইন সংশোধনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশ পাঠিয়েছে সোনালী ব্যাংক। ২০১২ সালে হল–মার্ক কেলেঙ্কারির পর থেকে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়। ২০১৯ সালে এসে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।