ওবিই শিক্ষাক্রমের সমস্যা কোথায়, সমাধান কী

Author Topic: ওবিই শিক্ষাক্রমের সমস্যা কোথায়, সমাধান কী  (Read 159 times)

Offline Imrul Hasan Tusher

  • Administrator
  • Full Member
  • *****
  • Posts: 179
  • Test
    • View Profile
    • Looking for a partner for an unforgettable night?
ওবিই শিক্ষাক্রমের সমস্যা কোথায়, সমাধান কী


বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কয়েক বছর আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য একটি বিশেষ শিক্ষাক্রম প্রস্তাব করে। এর নাম দেওয়া হয় আউটকাম বেজড এডুকেশন, সংক্ষেপে ওবিই। ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী বর্তমানে দেশের প্রায় সব কটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওবিইভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে ওবিই প্রস্তাব করা হয়েছে, তা ব্যাহত হওয়ার সমূহ কারণ রয়েছে।

 প্রথম কথা, ওবিইকে শিক্ষাক্রম বলা হলেও তা পুরোপুরি শিক্ষাক্রম নয়। এটি বিদ্যমান সিলেবাসকে নতুনভাবে উপস্থাপন করার টেমপ্লেট বা কাঠামোমাত্র। ফলে আগের সিলেবাসে যদি সমস্যা থেকে থাকে, তবে নতুন কাঠামোতেও সমস্যা রয়ে যাবে। উচ্চশিক্ষার মৌলিক পরিবর্তন এভাবে আশা করা যায় না। দ্বিতীয়ত, সিলেবাস তৈরি করার আগে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে যেসব সিলেবাস চালু রয়েছে, তা প্রায় কোনো ক্ষেত্রেই শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে তৈরি হয়নি। ফলে ওবিই নাম দিয়ে সিলেবাসের কাঠামোয় বদল আনা হলেও তাতে উদ্দেশ্য পূরণ হবে না।

আমরা বরাবরই বলে আসছি, সিলেবাস তৈরির আগে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা জরুরি। এ কাজে বিষয়-বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি শিক্ষাক্রম-বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করতে হবে। ইউজিসি উচ্চশিক্ষার মান বাড়ানোর ব্যাপারে চিন্তা করছে, ভালো কথা। কিন্তু মুশকিল হলো তারা পুরোনো সিলেবাসকে নতুন কাঠামোয় ফেলে সমাধান আশা করছে। ওবিই টেমপ্লেট অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতিমধ্যে তাদের নিজ নিজ বিভাগের সিলেবাস সাজিয়েছে। অর্থাৎ আগের সিলেবাসই নতুন কাঠামো বা চেহারায় হাজির হয়েছে।

শিক্ষাক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উপযুক্ত মূল্যায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা। কারণ, এখানে ত্রুটি রয়ে গেলে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে কি না, তা বোঝা যাবে না

এর আগে ওবিই শিক্ষাক্রমের কাঠামো বোঝানোর জন্য ইউজিসি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। সেই প্রশিক্ষণেও যে ঘাটতি রয়ে গেছে, এটি বোঝা যায় বিভাগগুলোর সিলেবাসের দিকে তাকালেই। পরীক্ষার কাজে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখেছি, সেসব কাঠামোর মধ্যে সমরূপতা নেই। শিক্ষাক্রম সম্পর্কে সাধারণ শিক্ষকদের ধারণা না থাকার কারণে তাঁরা অনেক ক্ষেত্রে এটি ঠিকমতো বুঝেও উঠতে পারেননি।

সিলেবাসের আগে শিক্ষাক্রম কেন প্রণয়ন করতে হবে, সেটি বোঝা দরকার। শিক্ষাক্রম মূলত পদ্ধতি ও কাঠামোগত পরিকল্পনা। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি ও মূল্যায়নের পদ্ধতি কেমন হবে, সেটি শিক্ষাক্রমে উল্লেখ থাকে। তবে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক শিক্ষার একেকটি স্তরে শিক্ষার্থীর জ্ঞান ও দক্ষতার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা। সেই লক্ষ্যমাত্রার সূত্র ধরেই পরে বিষয় অনুযায়ী সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম রচিত হয়।

এই লক্ষ্যমাত্রাকেই অন্যভাবে বলা যায় শিখনফল, ইউজিসি যাকে বলছে আউটকাম। উচ্চশিক্ষার স্তরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করে যদি আগেই সিলেবাস তৈরি করা হয়, তবে তাকে কীভাবে আউটকাম বেজড এডুকেশন বলা যাবে?

আমাদের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে কিছু বিষয় বা কনটেন্ট রয়েছে কেবল। সেগুলো শিক্ষাক্রমের কোন লক্ষ্যকে বিবেচনায় রেখে করা, তার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ, আদতে কোনো বিভাগেরই শিক্ষাক্রম নেই। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আগে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে হবে। সেই শিক্ষাক্রমের দুটি অংশ থাকবে।

একটি অংশে সামগ্রিক উচ্চশিক্ষার পদ্ধতি ও কাঠামো কেমন হবে, সেটি বলা হবে। সেখানে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য, শিক্ষাদানের পদ্ধতি, শ্রেণি কার্যক্রম, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার ধরন, পরীক্ষার পদ্ধতি ইত্যাদির বিস্তারিত বিবরণ থাকবে। সেমিস্টারের পরিসর কত মাসের হবে, একেকটি কোর্স কত ক্রেডিটের হবে, অনার্স বা মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য কত নম্বর থাকবে, ফলাফল জিপিএ বা নম্বর কিসের ভিত্তিতে হবে—এগুলোরও সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকবে। আরও নির্দেশ করতে হবে অ্যাসাইনমেন্ট, শ্রেণি-উপস্থাপনা, কুইজ, উপস্থিতি, মিডটার্ম ইত্যাদির জন্য নম্বর বরাদ্দ থাকবে কি না, থাকলে তা শতকরা কত ভাগ হবে।

শিক্ষাক্রমের আরেকটি অংশে বিষয় বা বিভাগ অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা নির্দেশিত থাকবে। সে কাজ বিভাগগুলোকে আলাদাভাবে করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকেরাই ঠিক করবেন, ওই বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন হলে একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা বা অভিজ্ঞতার কী রূপান্তর ঘটবে। এটি না থাকার দরুন সমস্যা কী হয়, তা তো দেখাই যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষা অর্জন করেও বিষয়গত জ্ঞান ও দক্ষতায় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

ইউজিসি যদি আসলেই ‘শিখনফলভিত্তিক’ শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করতে চায়, তবে নামে ‘ওবিই’ রাখলেই হবে না। আসলেই শিক্ষাক্রমকে ফলদায়ক করে তুলতে হবে। এ জন্য পুরোনো সিলেবাসকে নতুন মোড়ক দেওয়ার এই প্রকল্প নিয়ে আর এগোনো ঠিক হবে না; বরং আগে শিক্ষাক্রম-বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চশিক্ষার পদ্ধতি ও কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে। এরপর বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের দায়িত্ব দিতে হবে স্তর অনুযায়ী ওই বিষয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ঠিক করার। পরে সেই অনুযায়ী নতুন করে সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হবে।

শিক্ষাক্রমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উপযুক্ত মূল্যায়নের পদ্ধতি নির্ধারণ করা। কারণ, এখানে ত্রুটি রয়ে গেলে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে কি না, তা বোঝা যাবে না। সিলেবাস তৈরি করার আগে মূল্যায়নের পদ্ধতি নিয়েও নতুন করে ভাবা দরকার। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে বিবেচনায় নিয়ে মূল্যায়নের বিকল্প উপায় রাখতে হবে।

Source: https://www.prothomalo.com/opinion/column/0nhups0xdx
Imrul Hasan Tusher
Senior Administrative Officer
Office of the Chairman, BoT
Cell: 01847334718
Phone: +8809617901233 (Ext: 4013)
cmoffice2@daffodilvarsity.edu.bd
Daffodil International University