হজের সওয়াব পাওয়া যায় যেসব আমলে

Author Topic: হজের সওয়াব পাওয়া যায় যেসব আমলে  (Read 1394 times)

Offline Mrs.Anjuara Khanom

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 478
  • Test
    • View Profile
হজ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য-সংহতি ও সাম্যের সসুজ্জ্বল নিদর্শন। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভও বটে।  হজে আর্থিক ও কায়িক শ্রমের সমন্বয় রয়েছে, অন্য কোনো ইবাদতে যা একসঙ্গে পাওয়া না। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ পবিত্র হজ পালনে সৌদি গমন করেন। সেখানে তারা আল্লাহপ্রেমের পাঠ চুকিয়ে রাসুলপ্রেমের ষোলকলা পূর্ণ করেন।

হজের সওয়াব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর মকবুল হজের পুরস্কার জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।’ (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৬)

মূলত যাদের হজে অথবা ওমরায় যাওয়ার সামর্থ্য ও সক্ষমতা নেই, তাদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হজ-ওমরাহর সওয়াব অর্জনের চমৎকার সুযোগ রয়েছে। প্রিয়নবী মুহাম্মাদ (সা.) বিভিন্ন হাদিসে সেসব আমল বাতলে দিয়েছেন।

এক. সকাল-সন্ধ্যার জিকির
আবুদ্দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, আমরা একবার রাসুল (সা.)-কে বলি, হে আল্লাহর রাসুল! ধনী ব্যক্তিরা সওয়াবের ক্ষেত্রে আমাদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তারা হজ করেন, আমরা হজ করি না। তারা সংগ্রাম-যুদ্ধে শরিক হন, আমরা শরিক হতে পারি না। আরো আরো...। তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন আমালের কথা বলবো যেটা তোমরা করলে তোমরা তারা যে আমল করে তারচেয়ে বেশি সওয়াব পাবে? আর সেটা হলো- প্রতি নামাজের পর তোমরা ৩৪ বার আল্লাহু আকবার, ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ও ৩৩ আলহামদুল্লিাহ পড়ো।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং: ১১১৫৪)

দুই. জামাতে নামাজ আদায়
আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে ফরজ নামাজ আদায় করলো, সে যেন হজ করে আসলো। আর যে ব্যক্তি নফল নামাজ আদায় করতে মসজিদে গেলো, সে যেন ওমরাহ করে আসলো।’ (তাবারানি, হাদিস নং: ৭৫৭৮)

তিন. ইশরাকের নামাজ পড়া
ফজরের নামাজ আদায়ের পর মসজিদে সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করা। আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে আল্লাহর জিকির করলো, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করলো, সে ব্যক্তি হজ ও ওমরাহর সওয়াব নিয়ে ফিরলো।’ (তিরমিজি, হাদিস নং: ৫৮৬)

পবিত্র মসজিদুল হারামের নান্দনিক ও আধ্যাত্মিক আবহপুর্ণ দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

চার. ফরজ নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়া
আবু উমামা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ফরজ নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে নিজের ঘর থেকে ওজু করে (মসজিদের দিকে) বের হয়, সেই ব্যক্তির সওয়াব ইহরাম বাঁধা হাজির মতো হয়।’ (আহমাদ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ২১২; আবু দাউদ, হাদিস নং: ৫৫৮; তারগিব, হাদিস নং: ৩২০)

পাঁচ. দ্বীন শেখা বা শেখানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়া
আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কথা শিখা বা শিখানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে গেল, সে পরিপূর্ণরূপে হজ আদায়কারী ব্যক্তির মতো সওয়াব লাভ করবে।’ (তাবারানি, হাদিস নং: ৭৪৭৩)

ছয়. রমজানে ওমরাহ পালন করা
সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানে ওমরাহ আদায় করলে আমার সঙ্গে হজ্জ আদায়ের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে।’ (বুখারি, হাদিস নং: ১৭৮২; মুসলিম, হাদিস নং: ২২২)

সাত. মসজিদে কুবায় নামাজ আদায়
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিজ ঘরে পবিত্রতা অর্জন করল, তারপর মসজিদে কুবায় এসে কোনো নামাজ আদায় করল, সে ওমরাহর সওয়াব হাসিল করল। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং: ১৪১২)

পবিত্র মসজিদুল হারামের নান্দনিক ও আধ্যাত্মিক আবহপুর্ণ দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

আট. জুমার নামাজ
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের ঘর থেকে উত্তমরূপে অজু করে ফরজ নামাজের উদ্দেশ্যে বের হয়, সে ইহরাম বেঁধে হজে গমনকারীর মতো সওয়াব লাভ করে। আর যে ব্যক্তি শুধু সালাতুদ্দুহা (পূর্বাহ্নের নামাজ) আদায়ের উদ্দেশ্যে কষ্ট করে বের হয়, সে ওমরাহ আদায়কারীর মতো সওয়াব লাভ করবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস নং:৫৫৮)

নয়. পিতা-মাতার সেবা ও তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুল (সা.) এর নিকট এসে বললো, আমি জিহাদে-সংগ্রামে অংশ নিতে চাই, কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য ও সক্ষমতা নেই। তখন রাসুল (সা.) তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমার মাতা-পিতার কেউ কি জীবিত আছেন?’ লোকটি বলল, আমার মা জীবিত। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তাহলে মায়ের সেবা করে আল্লাহর নিকট যুদ্ধ-সংগ্রামে যেতে না পারার অপারগতা পেশ কর। এভাবে যদি করতে পার এবং তোমার মা সন্তুষ্ট থাকেন তবে তুমি হজ, ওমরাহ এবং যুদ্ধ-সংগ্রামের সওয়াব পেয়ে যাবে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করো এবং মায়ের সেবা করো।’ (মাজমাউজ জাওয়াইদ, হাদিস নং: ১৩৩৯৯)

দশ. ঈদের নামাজ
বিভিন্ন বর্ণনায় সাহাবায়ে কিরাম বলেছেন, ‘ঈদুল ফিতরের নামাজ ওমরার সমতুল্য এবং ঈদুল আজহার নামাজ হজের সমতুল্য।’

এগারো. মুসলমানের প্রয়োজন মেটানো
হাসান আল-বসরি (রহ.) বলেন, ‘তোমার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটানো তোমার বারবার হজ করার থেকে উত্তম।’

আল্লাহ তাআলা এই কাজগুলোর মাধ্যমে হজের সমপরিমাণ নেকি অর্জনের পাশাপাশি আমাদের সবাইকে হজ আদায়ের যাওয়ার তাওফিক দান করুন।

Source:https://www.banglanews24.com/islam/news/bd/723230.details
Mrs, Anjuara Khanom
Library Assistant Officer,
Daffodil International University
DSC Campus
02224441833/34