কোমরের ব্যথায় ভুগতে হয় নি এমন মানুষ দেখাই যায় না। কষ্ট কেমন হয় তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন। কোমর ব্যথা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে রয়েছে নানা ধরনের ভ্রান্ত ধারণা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সব অবৈজ্ঞানিক ভুল চিকিৎসা। ফলে ব্যথায় জর্জরিত হচ্ছেন মানুষ, কিন্তু আসল চিকিৎসা আর হচ্ছে না। গবেষণায় দেখা গেছে, সমগ্র বিশ্বে শারীরিক অক্ষমতার সব ভয়াবহ কারণের মধ্যে কোমর ব্যথা অন্যতম। সব জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ জীবনে কোন না কোন সময় কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আসুন তাহলে আজ জেনে নেই এর কিছু কারণ ও তা থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে।
যে সব কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে
১) বসার চেয়ার টেবিল ঠিকমতো না হলে বা ঠিকমতো না বসলে বা সামনে-পেছনে ঝুঁকে বসলে কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
২) যাঁরা অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে একই ভঙ্গিতে কাজ করেন। এতে দেখা যায়, কোমরে ব্যথা প্রচণ্ড হয়ে থাকে।
৩) যাঁরা শুয়ে বা কাত হয়ে বই পড়েন বা অন্য কাজ করেন, তাঁদের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ব্যথা অনুভূত হয় ।
৪) অনেকেই আছেন যাঁরা কোনো ভারী জিনিস সঠিক নিয়মে তোলেন না। ফলে মেরুদণ্ডে অস্বাভাবিক চাপ পড়ে এবং তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ব্যথা হয়।
৫) একটি হাড়ের সঙ্গে আরেকটি হাড় লেগে থাকে, তাঁর মাঝের জায়গাটিকে ইন্টারভার্টিব্রাল ডিস্ক (Intervertebral disc) বলে।
shaj
এই তিনটি জায়গার যেকোনো একটি যদি এলোমেলো হয়ে যায়, যেকোনো একটি জায়গায় যদি সমস্যা হয়ে যায়, তাহলে কোমর ব্যথা হতে পারে।
৬) মহিলাদের হাড় ক্ষয় জনিত সমস্যার কারণে ৩০-৩৫ বয়সের পর থেকে কোমর ব্যথা হতে পারে।
৭) এছাড়াও স্পন্ডাইলাইটিস (Spondylitis) বা হাড়ের প্রদাহ, আরথ্রাইটিস, স্নায়ুর রোগ বা ইঞ্জুরি ইত্যাদি কারণেও কোমর ব্যথা হতে পারে।
কাদের বেশি হয়
১. কোমরে ব্যথা সাধারণত বয়সের সাথে সাথে বাড়ে। বেশি দেখা যায় ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের পর থেকে।
২. কায়িক শ্রম এর অভাব বা নিয়মিত ব্যায়ামের অভাবে পেট ও পিঠের মাংসপেশি চাপ ধরে যায়। ফলে একটু পরিশ্রমেই ব্যথা হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত ওজনের কারণে কোমরের মাংসপেশি এবং হাড়ের ওপর চাপ পড়ে। ফলে ব্যথা হতে পারে।
অতিরিক্ত মোটা হওয়াতে কোমর ব্যাথাতে আক্রান্ত - shajgoj.com
৪. অনেক সময় কিডনিতে পাথর হলে বা প্রস্রাবে ইনফেকশন হলেও কোমরে ব্যথা হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শুধু কোমরে ব্যথাই না, অন্য আরো অনেক উপসর্গও থাকবে। তাই কোমরে ব্যথা হলেই সেটা কিডনি স্টোন বা ইউরিন ইনফেকশন নয়।
৫. ডিপ্রেশন বা স্ট্রেস-এর কারণেও কোমরে ব্যথা হতে পারে।
৬. মদ্যপান এবং স্মোকিং-এর কারণেও কোমরে ব্যথা হয়। স্মোকিং-এর কারণে রক্তনালী চিকন হয়ে যায় এবং কোমর থেকে নিচের দিকে ঠিকমত রক্ত প্রবাহ হয় না। যার ফলে হাড় ঠিকমত পুষ্টি পায় না এবং দুর্বল হয়ে পড়ে।
চিকিৎসা
কোমর ব্যথার চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো ব্যথা নিরাময় করা এবং কোমরের নড়াচড়া স্বাভাবিক করা। পরিপূর্ণ বিশ্রামে তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ওজন তোলা, মোচড়ানো পজিশন, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ও সামনে ঝুঁকে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। সঠিক উপায়ে বসার অভ্যাস করতে হবে এবং প্রয়োজনে ব্যাক সাপোর্ট ব্যবহার করতে হবে। গরম সেঁক (গরম প্যাড, গরম পানির বোতল বা উষ্ণ পানিতে গোসল) নিতে হবে। পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে। এছাড়াও আরো কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারেন, যেমন-
১) একই সাথে ঠান্ডা ও গরম সেঁক থেরাপি নিতে পারেন। ১০ মিনিট গরম সেঁক নিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, কিছুক্ষণ পর আবার ঠান্ডা পানি বা বরফ চেপে ধরুন। এভাবে কয়েকদিন করলে ব্যথা একেবারে না সারলেও আরাম পাবেন।
লিখেছেন - ডাঃ মারুফা আক্তার