‘আ পলিটিক্যাল স্টার হ্যাজ অ্যারাইভড’।

Author Topic: ‘আ পলিটিক্যাল স্টার হ্যাজ অ্যারাইভড’।  (Read 1721 times)

Offline shyful

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 219
    • View Profile
একজন মহুয়া মৈত্র
২৫ জুন বিজেপির তিন শতাধিক এমপিকে বাক্‌রুদ্ধ করে দিয়েছিলেন। লেখিকা শোভা দে এই বক্তৃতার পর টুইটারে লিখেছেন, ‘আ পলিটিক্যাল স্টার হ্যাজ অ্যারাইভড’। নতুন ভারতীয় লোকসভা প্রায় প্রতিদিন গেরুয়া উল্লাসে মুখর থাকে। বিজেপির তুমুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার এই লোকসভা কার্যত ভারাক্রান্ত। কিন্তু ২৫ জুন তা দেখেছে ভিন্নমত কত শক্তিশালী হতে পারে। শুধু একটি কণ্ঠ কত তীব্র, কত প্রাণস্পর্শী হতে পারে। নিয়মতান্ত্রিক পথে একজন রাজনীতিবিদ কতটা আলোড়িত করতে পারেন একটি দেশকে, তার নজির মহুয়া মৈত্র।
সেই ভাষণের পর ইতিমধ্যে কয়েক দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু সমগ্র ভারতে এখনো হাজার হাজার মানুষ সেই ভাষণ দেখে চলেছে ইউটিউবে। ভারতের প্রায় সব প্রচারমাধ্যমের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে আছেন তিনি। তাঁর বক্তৃতা নিয়ে শত শত প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। নিশ্চিতভাবেই আরও হবে।
বলা হচ্ছে, বহু বহুদিন পর ভারতীয় পার্লামেন্ট একটি সাহসী কণ্ঠস্বর খুঁজে পেল। ক্রমে দমবন্ধ হয়ে আসা দক্ষিণ এশিয়ায় মহুয়া যেন কিছু অক্সিজেন নিয়ে এলেন।
করপোরেট জীবন ছেড়ে রাজনীতিতে
ভারতে হিন্দুত্ববাদের আক্রমণাত্মক উত্থানে বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে উদ্বেগ আছে। ভারত থেকে প্রায় প্রতিদিন ভিন্নমত দলনের খবর আসছে। সেখানে পাল্টা একটা সমাবেশ শক্তিও যে তৈরি হচ্ছে, সে খবর প্রায় আসেই না। বাস্তবে বহু ভারতীয় তরুণ-তরুণী রাজনৈতিক দুঃসময়ে প্রতিরোধ গড়তে কাজে নেমে পড়েছেন। মহুয়া মৈত্রকেও সে কাতারে ফেলা যায়। শৈশবে কলকাতা ও পরে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসে গণিত ও অর্থনীতিতে পড়েছেন। নিউইয়র্ক ও লন্ডনে জেপি মরগ্যানের হয়ে ব্যাংকিং পেশায় ছিলেন। ২০০৯-এ সেসব ছেড়ে স্বদেশে ফিরে যোগ দেন রাজনীতিতে। তখন বয়স ৩৪। কিছুদিন কংগ্রেসের যুব শাখায় কাজ করেছেন। মহুয়া ছিলেন কার্যত রাহুল গান্ধীর আবিষ্কার। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে কংগ্রেস পছন্দ হয়নি। অল্প দিন পরই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। রাজনীতিতে হাটে-মাঠে-ঘাটে ঘুরতে পছন্দ করেন। যেখানে রাজনীতিবিদেরা যান না, সেখানেই ঘোরেন। ২০১৬ সালে বিধানসভায় জেতেন করিমপুর থেকে। এবারের লোকসভায় জিতলেন কৃষ্ণনগর থেকে, ৬৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে। ২৫ জুন প্রথম লোকসভায় ভাষণ দিতে দাঁড়িয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর। সেই ভাষণের পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরই পশ্চিমবঙ্গের প্রধান আলোচিত রাজনীতিবিদ মহুয়া। এমনকি আসামেও বাংলাভাষীদের মধ্যে তাঁকে সাহসের প্রতীক বলা হচ্ছে।
ফ্যাসিবাদের সংজ্ঞায়ন
১০ মিনিটের পিনপতন নীরবতার মধ্যে ২৫ জুন মহুয়া যা করলেন, তা হলো মোদি সরকারকে আয়নায় নিজের মুখ দেখানো। তিনি ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করছিলেন নিজ দেশে ফ্যাসিবাদের আসন্ন স্বরূপ। বিজেপির সাংসদেরা বারবার তাঁকে থামিয়ে দিতে চাইছিলেন। বেপরোয়া মহুয়া ‘চোখ খুলে’ তাঁদের দেখতে বলছিলেন কীভাবে ফ্যাসিবাদ আসে একটি দেশে। কীভাবে একটি সমাজে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয়। তাঁর বর্ণনাগুলো এত আঞ্চলিক, বৈশ্বিক ও সামগ্রিকতায় ভরা ছিল যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাতেও তিনি মনোযোগ আকর্ষণ করে ফেলেছেন।
মহুয়া কোনো তত্ত্বকথা শোনান না। তিনি দেখান ফ্যাসিবাদ বা কর্তৃত্ববাদের লক্ষণগুলো কীভাবে সমাজদেহে সংক্রমিত হয় ধর্ম, জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব কিংবা কিছু ব্যক্তির নামকীর্তনের আড়ালে। তিনি একে একে কর্তৃত্ববাদের সাতটি লক্ষণের বিবরণ দেন। তিনি শোনান কৃত্রিম জাতীয়তাবাদের কথা, যা ‘অপর’ ধর্ম ও ভাষাভাষীর মানুষকে হেয় করে, যা মূলত বর্ণবাদী। এরূপ পরিস্থিতি যে অনিবার্যভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন বাড়িয়ে তোলে, সেটাও তথ্য-উপাত্ত দিয়ে তুলে ধরেন তিনি।
ফ্যাসিবাদের তৃতীয় ও চতুর্থ লক্ষণ হিসেবে প্রচারমাধ্যমের গলা টিপে রাখা এবং সরকারব্যবস্থার সঙ্গে কোনো বিশেষ ধর্ম ও বিশেষ ভাষাকে গুলিয়ে ফেলার দৃষ্টান্তও তুলে ধরেন তিনি। এরপর ফ্যাসিবাদের আরও চারটি লক্ষণের বিবরণ দেন, যার মধ্যে ‘ভয়ের সংস্কৃতি’ ছড়ানো ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দলনকে নিকৃষ্টতম হিসেবে উল্লেখ করেন।
মহুয়া মৈত্র ইংরেজি, হিন্দি এবং কখনো কখনো উর্দুতে বলছিলেন। এই ভাষণ চূড়ান্ত এক উত্তেজক মুহূর্তে পৌঁছায়, যখন তিনি আসামের নাগরিক পঞ্জিতে লাখ লাখ মানুষের বেনাগরিক হওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন। বিজেপির সাংসদেরা তখন তুমুল হইচই করে ওঠেন। মহুয়া ওই সাংসদদের উদ্দেশে উর্দু কবি রাহাত ইন্দোরির কবিতা উদ্ধৃত করে বলে ওঠেন:
‘সভি কা খুন হ্যায় শামিল য়াহাঁ কি মিট্টি মে—
কিসি কা বাপ কা হিন্দোস্তান থোড়ি হ্যায়।’
[সবার রক্ত মিশে আছে এখানকার মাটিতে—
এ তো কারও বাপের হিন্দুস্তান নয়।]
কবিতার এই দুই চরণ দিয়েই শেষ হয় তাঁর বক্তৃতা। মহুয়ার এরূপ জ্বলে ওঠায় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের এমপিরাও লজ্জায় কুঁকড়ে যান। কারণ, গত পাঁচ বছর ভারতীয় পার্লামেন্টে এত তীব্রতায় বিরোধী দলের কোনো এমপি সরকারি জুলুমের বিরুদ্ধে দাঁড়াননি। বহুত্ববাদী ভারতের আত্মার এত আন্তরিক আকুতি এত বলিষ্ঠ ভাষায় সমকালীন ভারতে খুব কম উচ্চারিত হয়েছে। বিষয়বস্তুর মতোই মহুয়া মৈত্রের ভঙ্গিও ছিল আপসহীন। অকুতোভয়। দর্শনীয়।
মহুয়ার বক্তব্যের বৈশ্বিক তাৎপর্য
মহুয়ার আলোচ্য ভাষণ ভারতের বাইরেও বিপুল মনোযোগ কেড়েছে। ইংরেজিতে দেওয়া এই ভাষণের বৈশ্বিক তাৎপর্যও অসামান্য। অনেকেই তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ট্রাম্পবিরোধী রাজনীতিবিদ আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিয়া-কর্টেজের ছায়া দেখেছেন। কর্টেজ যে ভঙ্গি ও যে ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণপন্থার বিপক্ষে নিয়মিত বলে যাচ্ছেন, মহুয়ার ভঙ্গিও ছিল সে রকম। উভয়ে নবীন। উভয়ে কর্তৃত্ববাদকে চিহ্নিত করার ব্যাপারে চূড়ান্তভাবে স্বচ্ছ। উভয়ে বহুজনবাদী এক সমাজের লড়াইয়ে ডাকছেন সবাইকে এবং তাতে নিজেদের সঁপে দিয়েছেন। ট্রাম্পের আমেরিকায় রিপাবলিকানদের মদদ পাওয়া দক্ষিণপন্থী সংবাদমাধ্যম ওকাসিয়া-কর্টেজের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধে লিপ্ত। তাঁকে অনেক সময় তারা ‘ডাইনি’ সম্বোধন করছে।
মহুয়ার রাজনৈতিক বন্ধুদেরও শঙ্কা, বিজেপি পার্লামেন্টে তাদের হেনস্তার প্রতিশোধ নেবে। ইতিমধ্যে শত শত কর্মীকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নামানো হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
তবে মহুয়া এবং ওকাসিয়ারা এই অর্থে ভাগ্যবান, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ভারতে হয়তো তাঁদের গুম বা হত্যা করা হবে না। জেলে আটকের আশঙ্কাও কম। কিন্তু বিশ্বের বহু দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসকেরা এসব অস্ত্রই ব্যবহার করে যাচ্ছেন ভিন্নমতাবলম্বীদের বিপক্ষে। সর্বত্র তাই মহুয়া মৈত্র হওয়া সহজ নয়। কিন্তু কেউ না কেউ মহুয়ার মতো সাহস নিয়ে ঠিক ঠিক দাঁড়িয়ে যায় সবখানে।
আলতাফ পারভেজ দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ে গবেষক
Source : https://www.prothomalo.com/amp/opinion/article/1602650/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%8F%E0%A6%95%E0%A6%9C%E0%A6%A8-%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A7%88%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0?fbclid=IwAR2ixCddwMbMie0ya4LCqP6BpGes9BF12NIKavJOmbH-DldYWjLrTIbcWrM
With best regards and Thanks in advance,

S.M.Saiful Haque