ঘরে ঘরে ডেঙ্গু

Author Topic: ঘরে ঘরে ডেঙ্গু  (Read 724 times)

Offline thowhidul.hridoy

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 185
  • Test
    • View Profile
ঘরে ঘরে ডেঙ্গু
« on: July 18, 2019, 01:05:50 PM »
রাজধানীর বাসিন্দাদের মধ্যে এখন তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। আর সে আতঙ্কের কারণ মশা। এডিস মশার আতঙ্কে ঘুম হারাম হয়ে গেছে রাজধানীবাসীর। আত্নীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী, চেনা পরিচিত লোকজন ডেঙ্গু থেকে নিরাপদ কিনা এই দুর্ভাবনা পেয়ে বসেছে তাদের। গত কিছু দিন ধরে ঘরে ঘরে কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরে- এ খবরে স্বস্তিতে নেই মানুষজন।

সরকারি হিসাবে বুধবারই ২১৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ৫ হাজারেরও বেশি। অর্থাৎ প্রতি ৭ মিনিটে একজন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের হিসাব অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীতে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮১ জন এবং মারা গেছে তিনজন । বেসরকারি হিসাবে এ সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫ হাজারেরও বেশি। আর মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ।

জানা গেছে, রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কাঁচাবাজার এলাকায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি বেশি। এতে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সমপ্রতি রাজধানীর আহমদ বাউয়ানি স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্র মো. ফাহিম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এবার ডেঙ্গুর ব্যতিক্রমী চেহারা দেখা যাচ্ছে। আক্রান্তদের অধিকাংশের প্ল্যাটিলেট কমে যাচ্ছে। মস্তিষ্ক হূদযন্ত্র, যকৃত ও কিডনির মতো নানা অঙ্গ আক্রান্ত করছে। এই পরিস্থিতিতে জ্বর হলে গাফিলতি না করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশন ব্যর্থ হওয়ায় নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

রাজধানীর কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা রিনা আক্তার বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তাদের একমাত্র ছেলে গত ৭ দিন গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তিনি অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশন থেকে মশা নিধনের ওষুধ ছিটানোর কথা থাকলেও তারা নিয়মিত আসে না। আর ওষুধ দিলেও সেই ওষুধে কাজ করে না। খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের মতো মশার ওষুধেও ভেজাল ঢুকেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা খলিল উল্লাহ জানান, বাসায় ঘুমানোর সময় সব সময় মশারি ব্যবহার করি, তারপরও আতঙ্কে থাকি, কখন যে পরিবারের কোনো সদস্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ:
এ জ্বরে শরীরে তীব্র তাপমাত্রা থাকে। হাত-পা-মাথা ও পিঠে প্রচন্ড ব্যথা হয়। শরীরের জয়েন্টে জয়েন্টে ব্যথা এবং রেশ উঠে। এবার মানুষজন বেশি আতঙ্কিত হচ্ছে এ কারণে যে, একাধিকবার আক্রান্ত ব্যক্তিরাও এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরেজিকের সংখ্যাই বেশি। সঠিক চিকিৎসা না হলে এ ধরনের রোগীদের মৃত্যু হতে পারে। এ বছরের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ হলো- জ্বরে তাপমাত্রা বেশি না হওয়া, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, ৪-৬ ঘণ্টা প্রস্রাব না হওয়া বা কম হওয়া, খুব বেশি দুর্বল হয়ে পড়া, নিদ্রাহীনতা ও আচরণের আকস্মিক পরিবর্তন।

প্রতিরোধ:
ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার উপদ্রব থাকে বেশি। এই সময়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় এডিস মশার প্রজনন বাড়ে। ফলে রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগ।

বাড়িঘর বা বাড়ির আঙ্গিনার কোথাও যেন পানি জমে না থাকে- এটুকু সচেতন হলেই সহজে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব। কিন্তু এই সচেতনতা সৃষ্টিতেও সিটি করপোরেশন ব্যর্থ হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন।

জনা গেছে, রাজধানীতে চার লাখ বাড়ি ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে। সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া এ রোগের বিস্তার রোধ করা অসম্ভব। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দয়াগঞ্জ, নারিন্দা, স্বামীবাগ, গেন্ডারিয়াসহ আশপাশের এলাকা, দক্ষিণ মুগদাপাড়া, বাসাবো, মানিকনগর বিশ্বরোড, শেরেবাংলা রোড, হাজারীবাগ, মগবাজার ও রমনা, সেগুনবাগিচা, শাহবাগ, ফরাশগঞ্জ, শ্যামপুর, উত্তর যাত্রাবাড়ী এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজধানীকে কেন্দ্র করে ডেঙ্গু নিয়ে জরিপ পরিচালনা করা হলেও দেশব্যাপী ডেঙ্গু নিয়ে নেই কোনো কার্যক্রম।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তেজগাঁও, তুরাগ, পল্লবী, মগবাজার, উত্তরা, গুলশান, বনানী, কাফরুল, খিলগাঁও, রামপুরা, মিরপুর, পীরেরবাগ, মোহাম্মদপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, বনানী, গুলশান, বারিধারা এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন, বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, চলতি মাসে রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার ব্যাপকহারে বেড়েছে। এ বছর ডেঙ্গু রোগীর শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি উঠছে না। কিন্তু দুই-তিন দিনের মধ্যে রক্তের প্লাটিলেট কমে হেমোরেজিকের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। অন্যান্য বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের শরীরে রেশ উঠত এবং প্রচন্ড ব্যথা হতো। তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত ৫-৬ দিন থাকে এবং তারপর সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। জ্বর কমে গেলে অনেক রোগী এমনকি ডাক্তারও মনে করেন রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বর সনাক্তে মারাত্মক সমস্যা এখানেই। এসময়ই প্লাটিলেট কমে যায় এবং রক্তক্ষরণসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। জ্বর কমে যাওয়ার পরবর্তী সময়টাকে তাই বলা হয় ‘ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড’। এ সময় সচেতন থাকা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যথাসময়ে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল সেবন, ডাবের পানি ও বেশি করে তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে রোগীকে। একইসঙ্গে রোগী চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিত্সা নিলে ডেঙ্গু জ্বর দ্রুত ভাল হয়ে যায়। তবে কোনো অবস্থাতেই এন্টিবায়োটিক বা এসপিরিন জাতীয় ওষুধ না খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এই ওষুধ খেলে রক্তক্ষরণ শুরু হবে এবং মৃত্যু ঝুঁকি থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এখন যেহেতু ডেঙ্গুর মৌসুম, তাই ডেঙ্গুতে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই। ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা নিয়ে আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। তিনি আরো বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনকে অনুরোধ করেছি, তারা যেন মশা নিধনের ব্যবস্থা আরো জোরদার করে। নগরবাসীর প্রতি আমাদের অনুরোধ মশা যেন বংশবৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য বাড়ি ও বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখবেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. একেএম শামসুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ১ ও ২ নম্বর সেরোটাইপের মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটেছিল। কিন্তু গত বছর ৩ নম্বর সেরোটাইপের দেখা পাওয়া যায়। আগে থেকে সেরোটাইপ সম্পর্কে জানতে পারলে রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখা সম্ভব হয়।

মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু বাংলাদেশে প্রথম দেখা দেয় ২০০০ সালে, সে সময় এই রোগে মারা যান ৯৩ জন। তিন বছর পর থেকে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার কমতে থাকে এবং কয়েক বছর এতে মৃত্যু শূন্যের কোটায় নেমে আসে। তবে গত বছর আবার ব্যাপকভাবে দেখা দেয় ডেঙ্গু, ১০ হাজার মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি ২৬ জনের মৃত্যু হয় সরকারি হিসাবে। বেসরকারি হিসেবে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার তিন গুণ।
Md. Thowhidul Islam
Asst. Administrative Officer (Hall)
Daffodil International University (DIU), PC

Cell: 01847334814
Web: www.daffodilvarsity.edu.bd

Offline Anuz

  • Faculty
  • Hero Member
  • *
  • Posts: 1988
  • জীবনে আনন্দের সময় বড় কম, তাই সুযোগ পেলেই আনন্দ কর
    • View Profile
Re: ঘরে ঘরে ডেঙ্গু
« Reply #1 on: July 19, 2019, 11:05:35 PM »
Very sensitive issue. Parents must be aware of their children.
Anuz Kumar Chakrabarty
Assistant Professor
Department of General Educational Development
Faculty of Science and Information Technology
Daffodil International University