পাকা জামের মধুর রসে

Author Topic: পাকা জামের মধুর রসে  (Read 809 times)

Offline thowhidul.hridoy

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 185
  • Test
    • View Profile
পাকা জামের মধুর রসে
« on: July 20, 2019, 02:20:11 PM »
পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের মামার বাড়ি কবিতার ‘পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ, ছোট বেলায় কবিতার এই পংক্তির সঙ্গে সকলেই পরিচিত। আর মাগুরাসহ বৃহত্তর যশোর অঞ্চলে বিখ্যাত ছিল এক সময় এই কালো জাম। গ্রাম গঞ্জের বাসা বাড়ি থেকে শুরু করে পথে ঘাটে, হাটবাজারে ও সড়ক মহাসড়কে ছিল জাম বাগানের সারি।
মধুমাসের মৌসুমী বাজারে এখন প্রচুর কালো জাম দেখা যাচ্ছে। ফেরিওয়ালারা স্কুল কলেজের সামনে বাসস্ট্যান্ডে ফেরি করে বিক্রি করে কালো জাম। বড় বড় গাছ ও বাগান কেটে সাফ করে ফেলায় এখন এই কালো জামের উৎপাদন কিংবা ফলন কমে গেলেও একেবারে হারিয়ে যায়নি। মাগুরা গ্রামগঞ্জে এখনও চোখে পড়ে বড় বড় জাম গাছের সারি। অনেক এলাকায় নুতন করে জাম বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। এসব বাগান থেকে প্রতিবছর বাণিজ্যিকভাবে কালো জাম বাজারজাত হচ্ছে।
মধুমাসের ফল কালো জাম ইংরেজী জাম্বুল থেকে এসেছে। পুষ্টিকর কালো জামের নানা গুনাগুণের কথা উল্লেখ রয়েছে চিকিৎসাশাস্ত্রে। এর নরম মাংসল অংশ ছাড়াও জামের বীজেরও উপকারিতা রয়েছে। জাম খেতে হালকা টক ও মিষ্টি স্বাদের। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, জিংক, ডেক্সট্রোজ, ফ্রুকটোজ, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারসহ নানা উপাদান। গবেষণায় বলা হয়েছে, কালো জাম ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। প্রথম দিকে ফলটি সবুজ, পরে হালকা বেগুনি ও পাকার পর কালো রং ধারণ করে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ায় কালোজামের ব্যাপক কদর রয়েছে। মূলত এই জাম ফলের অনুকরণেই মিষ্টি ব্যবসায়ীরা কালো জাম তৈরি করে।
সাধারণত ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে জাম গাছে ফুল ধরে এবং মে-জুন মাসে ফল পাকে। অন্যসব ফলের তুলনায় জামের স্থায়িত্বকাল কম। মে মাসের শেষ দিকে জাম বাজারে নামে এবং প্রায় এক মাসেই ব্যাপক চাহিদার ফলটি শেষ হয়ে যায়। মৌসুমে কালো জামের সাথে লবন মিশিয়ে ভর্তা করে খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে ঘরে ঘরে। পাকা কালো জাম গাছের ডালে ঝাঁকুনি দিয়ে নীচে জাল পেতে সংগ্রহ করা হয়।
গাছে উঠে আলাদাভাবেও পাকা জাম সংগ্রহ করা যায়। অনেক সময় পাকা জাম গাছের নীচে ঝরে পড়লেও সেখান থেকে কুড়িয়ে নেয়া হয়। ভর দুপুরে গ্রামেগঞ্জে পাকা কালো জামের সাথে লবন আর কাঁচা মরিচ মিশিয়ে ভর্তা করে খাওয়া হয়। বর্ষায় ভারী বৃষ্টিতে পাকা জাম তেলচে কালো চকচকে রং ধারণ করে বলে এর চাহিদা বেড়ে যায়।
উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘এ’তে ভরপুর জাম আমাদের রক্ত পরিষ্কার করে, দেহের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। ফলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করে।
চোখের ইনফেকশনজনিত সমস্যা ও সংক্রামক (ছোঁয়াচে) রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। রাতকানা রোগ ও চোখের ছানি অপারেশন হয়েছে এমন রোগীর জন্য জাম ভীষণ উপকারী। জামে গার্লিক এসিড, ট্যানিস নামে এক ধরনের উপকরণ রয়েছে, যা ডায়রিয়া ভালো করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস রোগ ও হরমোনজনিত রোগীদের জন্য এই ফল যথেষ্ট উপযোগী। কারণ, জাম রক্ত পরিষ্কার করে, শরীরের দূষিত কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে দেয়। আমাদের নাক, কান, মুখের ছিদ্র, চোখের কোনা দিয়ে বাতাসে ভাসমান রোগ-জীবাণু দেহের ভেতর প্রবেশ করে। জামের রস এই জীবাণুকে মেরে ফেলে।
পুরোনো বাতের ব্যথা, হাড়ের সন্ধিস্থলের ব্যথা দূর করে জাম। এই ফলে নেই কোনো কোলস্টেরল বা চর্বি। তাই ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার বা রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোনো ভয় নেই। টনসিল, ল্যারিনজাইটিস, ফ্যারিনজাইটিস, সোর-থ্রট (এগুলো গলার ইনফেকশনজনিত অসুখ)-এর জন্য জাম ভীষণ উপকারী।
দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া, দাঁতের কোনায় খাবার জমে দাঁত ময়লা হয়ে যাওয়াসহ জিহ্বা, তালুর অসুখের জন্য মাউথওয়াশের প্রয়োজন হয়। জাম মাউথওয়াশ হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
Md. Thowhidul Islam
Asst. Administrative Officer (Hall)
Daffodil International University (DIU), PC

Cell: 01847334814
Web: www.daffodilvarsity.edu.bd