দূষণের কবলে বঙ্গোপসাগর হুমকির মুখে উদ্ভিদ ও মাছসহ জলজ প্রাণী

Author Topic: দূষণের কবলে বঙ্গোপসাগর হুমকির মুখে উদ্ভিদ ও মাছসহ জলজ প্রাণী  (Read 843 times)

Offline thowhidul.hridoy

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 185
  • Test
    • View Profile
পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে কোনো না কোনো স্থানে ফেলে দেওয়া চিপসের প্যাকেট, কিংবা প্লাস্টিকের বোতল তার গন্তব্য হিসেবে খুঁজে নিচ্ছে সমুদ্রকে। তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে সেই এলাকার জীবন আর প্রকৃতিকে। ভয়ানকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে সমুদ্রের তলদেশে থাকা জীবেরা। ২০১৫ সাল নাগাদ, পৃথিবীতে ৬.৩ বিলিয়ন প্লাস্টিক পণ্য তৈরি করা হয়েছে। ভয়ংকর হলেও সত্য যে, এর মাত্র ৯ শতাংশকে পুনরায় ব্যবহার করা হয়েছে, ১২ শতাংশ পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে আর বাকি ৭৯ শতাংশই পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশে জমা আছে। এই তথ্যগুলো উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ম্যাগাজিনে ২০১৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক গবেষণা আর্টিকেলে। গবেষণা প্রবন্ধটি তৈরী করেছেন জর্জিয়া এনভাইরনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক জেনা জামব্রেক। মানবসমাজের আচরণ দেখে মনে হয় বর্জ্য অপসারণের সবচেয়ে উপযোগী স্থান হচ্ছে সমুদ্র, যা মোটেই উচিত হচ্ছে না। বছরে ২৫০ মিলিয়ন টন বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হচ্ছে সমুদ্রে। সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্যে সমুদ্র দূষণ। তারপর রয়েছে তেলজাতীয় পদার্থ ও জাহাজ থেকে নিক্ষিপ্ত অন্যান্য বর্জ্য।

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের নিষ্পত্তি হওয়ায় বাংলাদেশের জলসীমা এখন অনেক প্রসারিত। এ সমুদ্রে অঢেল সম্পদ। এ কারণেই আমরা এখন ব্লু-ইকোনমির কথা ভাবতে পারছি। এখানে বিনিয়োগে উন্নত বিশ্বেরও আগ্রহ কম নয়। কিন্তু সম্পদ থাকলে তার রক্ষণাবেক্ষণে মনোযোগী হতে হয়। আমরা কি সে বিষয়ে যত্নবান? আমরা মহামূল্যবান সম্পদের প্রতি যথেষ্ট অবহেলা প্রদর্শন করে চলেছি। দেশের বৃহত্তর নোয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কলকারখানা এবং হোটেলের বর্জ্য ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে বঙ্গোপসাগরের পানি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দূষণের কারণে উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণীও হুমকির মুখে পড়ছে। ঢাকার বুড়িগঙ্গায় যেমন দূষণের প্রভাবে অক্সিজেনের মাত্রা কমছে, তেমনি সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে সমুদ্র উপকূলেও। তেলবাহী জাহাজ ও কার্গো দুর্ঘটনার কারণেও বিপদ বাড়ছে।

 মেরিন ইকোসিস্টেমে প্রভাব বিষয়ে আরেকটি গবেষণায় সমুদ্র-তীরবর্তী হ্যাচারি থেকে নির্গত ধাতব পদার্থের কারণেও উপকূল দূষণের কথা বলা হয়েছে। এ ধরনের দূষণের কারণে সমুদ্রে মাছের বৃদ্ধির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে, এটাই স্বাভাবিক। বাস্তবে সেটা যে ঘটছে, তার প্রমাণ মিলছে গবেষণায়। অন্যদিকে, দূষিত পরিবেশে বেড়ে ওঠা মাছও মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে। দূষিত জীবাণুযুক্ত মাছ খেলে ক্যান্সার, শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ জটিল রোগের শঙ্কা। একদিকে শিল্পায়ন ও নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্লাস্টিকের (পলিথিনসহ) ব্যবহার বাড়ছে। মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে বর্ধিত পরিমাণে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের সম্পর্ক রয়েছে।

বাংলাদেশেও প্লাস্টিকের ব্যবহার বাড়ছে। ২০১৪ সালের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বছরে গড়ে মাথাপ্রতি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহৃত হয় ৩ দশমিক ৫ কিলোগ্রাম। ইউরোপের গড় মাথাপ্রতি বছরে ১৩৬ কিলোগ্রাম এবং উত্তর আমেরিকায় ১৩৯ কিলোগ্রাম। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারের পরিমাণ কম হলেও নগরায়ণের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত বাড়ছে সে পরিমাণ। কেবল প্লাস্টিক পণ্যের পরিমাণ নয়, বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বৈচিত্র্যও বাড়ছে।

গত ১২ জুলাই শুক্রবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন ও সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্টাল প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘লন্ডন প্রটোকল’-এর ওপর অনুষ্ঠিত এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ এনভায়রনমেন্টাল প্রোগ্রামের ডিরেক্টর জেনারেল ড. আবাস বাসির ও ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধি অ্যান্ড্রো ব্রিকেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাবউদ্দিন বলেন, দূষণের আচরণ থেকে সরে আসতে না পারলে সমুদ্র বাঁচানো যাবে না। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী আজ সচেতনতা তৈরির সময় হয়েছে। সমুদ্র হচ্ছে পৃথিবীর শরীরের রক্তপ্রবাহ। রক্তপ্রবাহ দূষিত হলে যেমন মানুষ বাঁচে না, তেমনি সমুদ্র দূষিত হলেও পৃথিবী বাঁচবে না। মন্ত্রী বলেন, পরিবেশের একটি বড় অংশ ও পানির প্রধান উৎস হচ্ছে সমুদ্র। এই প্রধান উৎসকে আমরা নষ্ট করে দিচ্ছি নানা রকম দূষণের মাধ্যমে। মানবসমাজের আচরণ দেখে মনে হয় বর্জ্য অপসারণের সবচেয়ে উপযোগী স্থান হচ্ছে সমুদ্র, যা মোটেই উচিত হচ্ছে না। বছরে ২৫০ মিলিয়ন টন বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হচ্ছে সমুদ্রে। সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্যে সমুদ্র দূষণ। তারপর রয়েছে তেলজাতীয় পদার্থ ও জাহাজ থেকে নিক্ষিপ্ত অন্যান্য বর্জ্য।

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সম্প্রতি প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লেট, গ্লাস, কাপ, স্ট্র, বেলুন স্টিক, কটন বাড, চা-কফিতে চিনি বা দুধ মেশানোর দণ্ড ইত্যাদির ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ২০২১ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার কথা। জলাভূমি, সমুদ্র এবং উপকূল-সৈকতের দূষণ নিয়ন্ত্রণে একবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিকের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপে প্রতিবছর প্রায় আড়াই কোটি টন (২৫ মিলিয়ন টন) প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে অন্তত দেড় লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য মহাদেশের নদ-নদী ও জলাশয়ে গিয়ে জমে। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের (৮ এপ্রিল ২০১৯) তথ্য বলছে, প্লাস্টিকের তৈরি বিভিন্ন পাত্র, পানি ও কোমল পানীয়র বোতল যথেচ্ছ ছুড়ে ফেলার প্রবণতা নদী-জলাশয়ে প্লাস্টিক দূষণের অন্যতম ইন্ধন। তবে শুধু সমুদ্র নয়, যেকোনো জলাশয়ের জন্য এই ক্ষুদ্র প্রাণীদের ভূমিকা অপরিসীম। সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্যশৃংখলে প্রাথমিক খাদ্য উৎপাদক আর অক্সিজেন সরবরাহকারী হিসেবে এই প্ল্যাঙ্কটনদের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের একটা বড় অংশ যখন সমুদ্রে ভেসে বেড়াচ্ছে, তখন তা বেশ ভয়ংকরভাবেই প্ল্যাঙ্কটন উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করছে।

সমুদ্রের নীল জলরাশির উপর কালো ছায়ার মতো বিশাল ক্ষেত্রফলজুড়ে প্লাস্টিক ছড়িয়ে আছে। এই বিপর্যয় যে কতটা ভয়াবহ হয় উঠছে, তা উপকূলীয় এলাকায় বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করা যায়। আর বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই প্লাস্টিকের ফলে সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্য সরবরাহের প্রথম ধাপটিই শিকার হয়েছে বাধার। তবে সমুদ্রে জমে থাকা প্লাস্টিকের ফলে সৃষ্ট সমস্যার তালিকা এখানেই শেষ হচ্ছে না।

অন্যদিকে বিশ্বের সাগর-মহাসাগরে প্রতিবছর প্রায় আশি লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমছে। সমুদ্রের স্রোত প্লাস্টিক বর্জ্য ভাসিয়ে নিয়ে যায় দূরদূরান্তে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত জাপানিজ গবেষণা রিপোর্ট জানিয়েছে যে ফিলিপাইনের অদূরে প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরতম মারিয়ানা ট্রেঞ্চে প্লাস্টিকের ব্যাগের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। অপর এক গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষুদ্রতম ভগ্নাংশ বা মাইক্রোপ্লাস্টিক বায়ুতাড়িত হয়ে পর্বতচূড়ায় মিলছে। বায়ুদূষণের অন্যতম ক্ষতিকর উপাদান যে ভাসমান বস্তুকণা, মাইক্রোপ্লাস্টিক সে তালিকায় যোগ হচ্ছে বিশ্বজুড়ে।

এদিকে বর্জ্য ও অন্যান্য পদার্থের ডাম্পিংয়ে সামুদ্রিক দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে ৮৭টি দেশের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত লন্ডন কনভেনশন। সামুদ্রিক দূষণের উৎসগুলি চিহ্নিত করা, দূষণ প্রতিরোধে বর্জ্য পদার্থ ও অন্যান্য বিষয়গুলির কার্যকর নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল ওই কনভেনশনের লক্ষ্য। তারই ধারাবাহিকতায় কনভেনশনের সিদ্ধান্তগুলো আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত হয় লন্ডন প্রটোকল। বাংলাদেশসহ ৫১টি রাষ্ট্র এতে সই করে। ২০০৬ সালের ২৪ মার্চ থেকে ৫১টি রাষ্ট্রের স্বাক্ষরিত লন্ডন প্রটোকল কার্যকর হয়।

কিন্তু গবেষকরা বলছেন, এ বিপদ ক্রমে বড় হতে থাকবে, যদি এখনই লাগাম টেনে ধরা না হয়। কীভাবে সেটা করা সম্ভব? প্রথম কাজ সর্বাত্মক মনিটরিং। এ কাজে সরকারের দায়িত্ব সর্বাধিক। শিল্প-কারখানা ও সেবা খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কীভাবে স্থাপিত হবে এবং কীভাবে কাজ করবে তার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। তবে তার অনেক কিছুই যে মানা হয় না, তেমন অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দায় উভয় পক্ষের। জানা যায়, অবৈধ আর্থিক লেনদেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে মনিটরিং জোরদারের তাগিদ রয়েছে। তবে এ জন্য সর্বপ্রথম চাই আসন্ন বিপদের যথাযথ উপলব্ধি। একই সঙ্গে সমুদ্রসম্পদ রক্ষার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি। এটা করা সম্ভব হলে দূষণ রোধে তারাও এগিয়ে আসবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

সামুদ্রিক পাখিও পলিথিন দূষণের শিকার: সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুযায়ী, সামুদ্রিক পাখিদের প্রায় নব্বই শতাংশ সরাসরি প্লাস্টিক দূষণের শিকার। ষাটের দশক থেকেই সামুদ্রিক এবং উপকূলীয় পাখিদের উপর প্লাস্টিকের প্রভাব নিয়ে জরিপ চালানো হয়। ষাটের দশকে পরিমাণ ছিলো পাঁচ শতাংশেরও কম পাখির পাকস্থলীতে পাওয়া যেত প্লাস্টিক। আশি আর নব্বইয়ের দশকে শিল্প কারখানায় প্লাস্টিক উৎপাদন সহজলভ্য হওয়ার পাশাপাশি কপাল পুড়েছে পাখিদেরও। কিছু গবেষণা বলছে, পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি সামুদ্রিক পাখির পাকস্থলীতেই পাওয়া যায় প্লাস্টিক।

পৃথিবীজুড়ে প্রতি ১১ বছরে প্লাস্টিক উৎপাদনের পরিমাণ দ্বিগুণ হচ্ছে। আর ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিক ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট বর্জ্যের সবচেয়ে মারাত্মক শিকার এই পাখিরা। কারণ ১৯৬২ সালে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিসহ ১৮৬ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীর উপর গবেষণা করে, তাদের পাকস্থলীতে বর্জ্যের পরিমাণ নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন। নিয়মিত বিরতিতে বিভিন্ন সময় সেই গবেষণা পুনরাবৃত্তি করে দেখা গেছে অন্যান্য যেকোনো প্রাণীর তুলনায় পাখির পাকস্থলীতে বর্জ্যের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর তুলনায় পাখির আকার ছোট হওয়ায় গবেষণায় এমন ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে কিনা, এমনটাও প্রশ্ন থেকে যেতে পারে! পাশাপাশি পাখির পাকস্থলীতে মাত্রাতিরিক্ত প্লাস্টিক কণিকার উপস্থিতির সম্ভাব্য কারণ হিসেবে পাখির বৈচিত্র্যময় খাদ্যাভ্যাস এবং কৌতূহলী আচরণের পাশাপাশি সমুদ্রে ভাসমান প্লাস্টিক বর্জ্যও যে দায়ী- সে ব্যাপারে পরিবেশবিদদের সন্দেহ নেই। তবে এর মধ্যে অ্যালবাট্রোসের মতো বড় সামুদ্রিক পাখিদের অবস্থা সবচেয়ে ভয়ংকর। সমুদ্র উপকূলে এই পাখিদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে এবং পাখিদের শবদেহ বিশ্লেষণ করে পাওয়া তথ্য থেকে এটি পরিষ্কার যে, এই পাখিদের একটি বড় অংশ প্লাস্টিক দূষণের শিকার।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা’র নেতা আলমগীর কবির বলেন, উপকূলের পরিবেশে বিপর্যয়ের জন্য বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে অনেকটা পানি উন্নয়ন বোর্ডও দায়ী। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে তাদের যথেষ্ট উদাসীনতা রয়েছে। তারা সময়মত এসব বাঁধ মেরামত করছে না। এ ছাড়া তারা অর্থের বিনিময়ে উপকূলীয় এলাকায় বাঁধ কেটে লোনা পানি ঢুকিয়ে চিংড়ি চাষকে উৎসাহিত করছে। এতে গুটিকয়েক লোক লাভবান হলেও এর ক্ষতিকর প্রভাবে স্থানীয় পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। হারিয়ে যাচ্ছে উপকূলের সবুজ বেষ্টনি, নষ্ট হচ্ছে কৃষি বান্ধব পরিবেশ। বেকার হয়ে পড়ছে হাজার হাজার কৃষক পরিবার।

খনি প্রকৌশলী, জ্বালানি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক ড. মুশফিকুর রহমান তার এক গবেষণা লেখায় বলেন, নগরজীবনে আমাদের খাদ্যাভ্যাস ও দীর্ঘদিনের চেনা জীবনযাপনের বৈশিষ্ট্য বদলে যাচ্ছে। বাজারঘাটে, খাবার দোকানে, সুপারশপে, পণ্যের মোড়ক ব্যবহারে প্রচুর প্লাস্টিক ব্যবহার হচ্ছে নিত্যদিন। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্যও বাড়ছে। প্লাস্টিকের রকমারি পণ্য এবং তার প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত উপাদানেরও বিভিন্নতা রয়েছে। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও বিভিন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। এখনো আমাদের দেশে বর্জ্য সংগ্রহ উৎসে বর্জ্যের ধরন বুঝে তা পৃথক করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। অন্তত পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য যদি উৎসে আলাদা করা সম্ভব হতো, তাহলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অনেকাংশে সহজ হতে পারত। প্রতিদিন কেবল ঢাকা শহরে উৎপাদিত প্রায় ৩ হাজার ৫০০ টন বর্জ্যের মধ্যে ৩০ শতাংশ অপচনশীল। দেশের বর্জ্যের ভাগাড় এবং সড়ক-মহাসড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা আবর্জনার মধ্যে পলিথিন ও প্লাস্টিকের আধিক্য দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে অপচনশীল বর্জ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পলিথিন ও প্লাস্টিক।

পরিবেশ কর্মীরা বলেন, পৃথিবীজুড়ে প্লাস্টিক সহজলভ্য হয়ে যাওয়ার পর থেকেই প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিত্যাগ নিয়ে বরাবরই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।  কোমল পানীয় থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের বোতল তৈরি হচ্ছে প্লাস্টিক দিয়ে। শুধু ২০১৬ সালেই ১১০ বিলিয়ন প্লাস্টিক বোতল বানিয়েছে পৃথিবীর অন্যতম প্রধান কোমল পানীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোকা-কোলা। আর এই বোতলের বেশিরভাগই উন্মুক্তভাবে পরিবেশে পরিত্যাগ করেছেন ভোক্তারা। তাই অনেক পরিবেশবিদের দাবি, এখনই যদি প্লাস্টিক বোতলের বিকল্প না চিন্তা করা যায় তবে মানবজাতির সামনে অপেক্ষা করছে ভয়াবহ এক দুর্যোগ।

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করে আসছেন, কীভাবে পরিবেশে প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাবকে কমিয়ে আনা যায়। আর প্লাস্টিকের বিকল্প নিয়েও গবেষণাগারে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ চলছে। আবিষ্কৃত হয়েছে পরিবেশে পচনশীল বায়োপ্লাস্টিকও। কিন্তু সেই প্লাস্টিক উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে এই প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে না।
Md. Thowhidul Islam
Asst. Administrative Officer (Hall)
Daffodil International University (DIU), PC

Cell: 01847334814
Web: www.daffodilvarsity.edu.bd