পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদে প্রথম মানুষ নামার ৫০তম বর্ষপূর্তি উদযাপন করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার লোক।
১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময়) যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশযান অ্যাপোলো ১১ থেকে চন্দ্রযান ঈগল চাঁদের ট্রাঙ্কুইলিটি বেইস অবতরণ করে।
এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সময় ৯টা ৫৬ মিনিটে (০২৫৬ জিএমটিতে) নিল আর্মস্ট্রং প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদের বুকে পা রেখে ইতিহাস সৃষ্টি করেন।
প্রকৃতপক্ষে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে চলা শীতল যুদ্ধের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনুপ্রাণিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র চাঁদে মানুষ পাঠালেও এখন অভিযানের ওই অংশটি একটি অনুপম মূহুর্ত হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্মরণ করা হয়।
অনলাইনে ওই অবতরণের ফুটেজ সম্প্রচার করে নাসা এ বর্ষপূর্তি উদযাপন করে। এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ওই ঐতিহাসিক মূহুর্তটি দেখার সুযোগ পায়। ৫০ বছর আগে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫০ কোটি লোক রুদ্ধশ্বাসে ওই মূহুর্তটি দেখেছিল।
চন্দ্রযানটি অবতরণের মুহূর্তে অ্যাপোলো ১১-র কমান্ডার আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, “হিউস্টন, ট্রাঙ্কুইলিটি বেইস এখানে। ঈগল অবতরণ করেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের মিশন কন্ট্রোল থেকে চন্দ্রযানের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা চার্লস ডিউক জবাব দেন, “রজার, ট্রাঙ্কুইলিটি। আমরা আপনাদের মাটিতে দেখতে পাচ্ছি। আপনারা একদল লোকের নিঃশ্বাস বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা আবার নিঃশ্বাস নিতে পারছি।”
এর কয়েক ঘণ্টা পর চাদের পৃষ্ঠে প্রথম পা দিয়ে আর্মস্ট্রং তার বিখ্যাত উক্তিটি করেন, “মানুষের জন্য যা ছোট একটি পদক্ষেপ, মানবজাতির জন্য তা বড় এক লাফ।”
এর কিছুক্ষণের মধ্যে বাজ অলড্রিন চাঁদের পিঠে নেমে আর্মস্ট্রংয়ের সঙ্গে যোগ দেন। তাদের অপরসঙ্গী মাইকেল কলিন্স মূল যানে থেকে অভিযানের এক অংশ নিয়ন্ত্রণ করছিলেন।
এই তিন মার্কিন মহাকাশচারীরই জন্ম ১৯৩০ সালে। এদের মধ্যে অলড্রিন ও কলিন্স বেঁচে থাকলেও আর্মস্ট্রং ২০১২ সালে ৮২ বছর বয়সে মারা যান।
চাঁদে অবতরণের ৫০ বছর পূর্তিতে শনিবার এক টুইটে অলড্রিন বলেছেন, “আমরা সেখানে প্রথম গিয়েছিলাম। আমরা চাঁদে নেমেছিলাম, ২৫ কোটি আমেরিকান আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। সত্য হচ্ছে: অভিযানটি তাদের সবার ছিল এবং আমেরিকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যারা আবার চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে।”
মাইকেল কলিন্স ফক্স নিউজকে বলেছেন, “রাতে যখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই, অন্ধকার ঘনিয়ে আসে, আমি আমার ডান কাঁধের ওপরে কিছু অনুভব করি, তারপর তাকিয়ে ছোট ওই রূপালি রূপালিটি ওপরে দেখি আর ভাবি, ‘ওহ, ওই চাঁদ। আমি সেখানে গিয়েছিলাম।”
এই দিনটি উপলক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালিত হয়। এর মধ্যে অ্যাপোলো ১১ মিশন যেখান থেকে রওনা হয়েছিল হিউস্টনের সেই স্পেস সেন্টারেও বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।
বিশ্বজুড়ে উদযাপন : হুস্টনে নাসার স্পেস সেন্টারে পর্যটকদের জন্য নানা আয়োজন করা হয়। সামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্যারাশুট প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। ছিলো কনসার্টও। নতুন বছরের স্বাগত জানানোর স্টাইলে আর্মস্ট্রংয়ের প্রথম পদক্ষেপের মুহূর্তের জন্য সবাই অপেক্ষা করছিলো। ভার্জিনিয়ার মহাকাশ জাদুঘরে চাঁদে পাওয়া বস্তুর প্রদর্শনী চলে। রাখা হয় আর্মস্ট্রংয়ের স্পেসস্যুট। সিয়াটলেল আকাশ জাদুঘরও ওই অভিযানের ভিডিও সম্প্রচার করে। শুক্রবার ওয়াশিংটনে বড় পর্দায়ও চন্দ্রাভিযানের ছবি দিয়ে তৈরি ১৭ মিনিটের একটি ভিডিও দেখানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে প্যারিসের দ্য গ্র্যান্ড পালাইসে চাঁদে সফল অভিযানের অর্ধশতাব্দী বার্ষিকী নিয়ে আয়োজন করা হয়। ভবনটির কাঁচের দেয়ালে চাঁদের বিশাল একটি রেপ্লিকা প্রদর্শন করা হয়। মাদ্রিদের একটি ভবনের ওপরও বিশাল একটি চাঁদের রেপ্লিকা প্রদর্শন করা হয়।