Faculty of Allied Health Sciences > Public Health
ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে ১০টি তথ্য জেনে নিন
(1/1)
Sultan Mahmud Sujon:
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ অতীতে যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত দুই সপ্তাহে অন্তত আটজন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে চিকিৎসকও আছেন।
স্বাভাবিকভাবেই ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে মানুষের মাঝে প্রবল উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
কোন শরীরে কোন লক্ষণ দেখলে আপনি বুঝবেন যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন এবং সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী হতে পারে?
১. ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো কী?
সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০২ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকতে পারে। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেবার পর আবারো জ্বর আসতে পারে। এর সাথে শরীরে ব্যথা মাথাব্যথা, চেখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র্যাশ) হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে।
২. জ্বর হলেই কি চিন্তিত হবেন?
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ বলছেন, এখন যেহেতু ডেঙ্গুর সময়, সেজন্য জ্বর হল অবহেলা করা উচিত নয়।
জ্বরে আক্রান্ত হলেই সাথে-সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ।
তিনি বলছেন, ''ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন, তারা জ্বরকে অবহেলা করেছেন। জ্বরের সাথে যদি সর্দি- কাশি, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কিংবা অন্য কোন বিষয় জড়িত থাকে তাহলে সেটি ডেঙ্গু না হয়ে অন্যকিছু হতে পারে। তবে জ্বর হলেই সচেতন থাকতে হবে।''
৩. বিশ্রামে থাকতে হবে
সরকারের কমিউনিক্যাবল ডিজিজ কন্ট্রোল বা সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ বিভাগের অন্যতম পরিচালক ড. সানিয়া তাহমিনা বলেন, ''জ্বর হলে বিশ্রামে থাকতে হবে। তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, জ্বর নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি সাধারণত প্রতিদিন যেসব পরিশ্রমের কাজ করে, সেগুলো না করাই ভালো। পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন।''
৪. কী খাবেন?
প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন - ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে। এমন নয় যে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে, পানি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
৫. যেসব ঔষধ খাওয়া উচিত নয়
অধ্যাপক তাহমিনা বলেন, ''ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ চারটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে।''
চিকিৎসকরা বলছেন, প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে প্রতিদিন চার গ্রাম। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট এবং কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
৬. প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা নিয়ে চিন্তিত?
ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্ল্যাটিলেট বা রক্তকণিকা এখন আর মূল ফ্যাক্টর নয় বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক তাহমিনা।
তিনি বলেন, ''প্ল্যাটিলেট কাউন্ট নিয়ে উদ্বিগ্ন হবার কোন প্রয়োজন নেই। বিষয়টি চিকিৎসকের উপর ছেড়ে দেয়াই ভালো।''
সাধারণত একজন মানুষের রক্তে প্ল্যাটিলেট কাউন্ট থাকে দেড়-লাখ থেকে সাড়ে চার-লাখ পর্যন্ত।
৭. ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়?
ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে।
এ ভাগগুলো হচ্ছে - 'এ', 'বি' এবং 'সি'।
প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা নরমাল থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী 'এ' ক্যাটাগরির।
তাদের হাসপাতালে ভর্তি হবার কোন প্রয়োজন নেই। 'বি' ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে, কিন্তু শরীরে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন তার পেটে ব্যথা হতে পারে, বমি হতে পারে প্রচুর কিংবা সে কিছুই খেতে পারছে না।
অনেক সময় দেখা যায়, দুইদিন জ্বরের পরে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে হাসপাতাল ভর্তি হওয়াই ভালো।
'সি' ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ'র প্রয়োজন হতে পারে।
৮. ডেঙ্গুর জ্বরের সময়কাল
সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকে। কারণ এ সময়টিতে এডিস মশার বিস্তার ঘটে।
কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরের সময়কাল আরো এগিয়ে এসেছে। এখন জুন মাস থেকেই ডেঙ্গুজ্বরের সময় শুরু হয়ে যাচ্ছে।
৯. এডিস মশা কখন কামড়ায়
ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী এডিস মশা অন্ধকারে কামড়ায় না। সাধারণত সকালের দিকে এবং সন্ধ্যার কিছু আগে এডিস মশা তৎপর হয়ে উঠে। এডিস মশা কখনো অন্ধকারে কামড়ায় না।
১০. পানি জমিয়ে না রাখা
অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলছেন, ''এডিস মশা 'ভদ্র মশা' হিসেবে পরিচিত। এসব মশা সুন্দর-সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এডিস মশা সাধারণত ডিম পাড়ে স্বচ্ছ পানিতে। কোথাও যাতে পানি তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি জমা না থাকে।
এ পানি যে কোন জায়গায় জমতে পারে। বাড়ির ছাদে কিংবা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনের বিভিন্ন পয়েন্টে, রাস্তার পাশে পড়ে থাকা টায়ার কিংবা অন্যান্য পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে।
Source: https://www.bbc.com/bengali/news-49124515
Navigation
[0] Message Index
Go to full version