১২ - ১৩ বছরের পঞ্চাশটি ছেলে। সবাই ভালো ছাত্র। এক সাথে তাদের রাখা হল কলেজে। এদের মধ্যে কেউ হয়তো আগে রাতে মাকে ছাড়া কখনো ঘুমায়নি। সে এখন জানালার পাশের বেডে একা ঘুমিয়ে থাকে। একাএকাই গভীর রাতে সেই লম্বা বারান্দার আরেক মাথায় বাথরুমে যায়। কেউ ছিল বাসায় কোনদিন মাছ খায়নি। সেও এখন ডাইনিঙয়ে কাঁটাচামচ দিয়ে বেছে বেছে ভাত দিয়ে মাছ খেয়ে চলে। এদের মাঝে কারো কারো মাথায় আসে যে ইস্ সে যদি আরেকটু খারাপ ছাত্র হত তাহলে আর বাসা ছেড়ে আসতে হত না। আবার কেউ খুব সিরিয়াস। ভোর সকালে উঠে পিটির জন্য রেডি হয়ে থাকে।
একেক জেলার পঞ্চাশটি পরিবারের পঞ্চাশটি সন্তান। পঞ্চাশ রকমের মনমানুশিকতা। এক সাথে থাকে। পড়াশুনা করে খেলা ধুলা করে আর হোস্টেলে ঘুমায়। সবাই তাদের বাসাকে আর পরিবারের সদস্যদেরকে মিস করে। কেউ গুনে চলে কবে প্যারেন্টস ডে? কেউ বা গুনে চলে কবে ছুটি শুরু হবে? কবে বাসায় যেতে পারবে। এক সাথে পানিশমেন্ট খায় আর দিন গুনে চলে।
বাড়ন্ত দেহ সাথে সকালের পিটি আর বিকালের গেমস। সারাক্ষণই তাদের ক্ষুধা আর ঘুম লাগে। তাদের সারাক্ষণই মনে হয় বাসার কথা। বাসার প্রিয়জনের কথা। তাদের সব থেকে বড় আশা হল সকালে পিটির সময় যেন বৃষ্টি হয়। আর তারা পিটির সময় যেন ঘুমাতে পারে। একসাথে গল্প করা আর পড়াশুনা করা। তাদের একটি অপেক্ষার ক্ষণ হল সেই বিখ্যাত বৃহস্পতিবার। যেই দিন তাদের রাতে স্পেশাল ডিনার হয়। আর টিভি দেখতে পারে।
এইভাবে কেটে গেল ছয়টি বছর। সেই ছয়টি বছর। যেটি আগে খুব স্লো ভাবে যাচ্ছে বলে মনে হত। তারা এখন সব উচ্ছল তরুণ যুবা।
কি আশ্চর্য!! এখন তাদের কাছে কলেজটি কত মহনীয় জায়গা মনে হয়। বাসার প্রিয়জনেরা যেমন আপন ঠিক তেমন আপন তাদের এই কলেজের বন্ধুরা। সব কিছুর থেকে এখন সেই সব বন্ধুদের সান্নিধ্য সব থেকে ভালো লাগে। ভালো লাগে বন্ধুদের সাথে সেই ছয়টি বছরের স্মৃতি রোমন্থন করতে।