তার জন্ম ব্রিটিশ পিরিয়ডে। ছোটবেলাতেই তার অন্য সব ভাই বোন মারা যায়। ছোটবেলা থেকেই তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। পড়ালেখা করে সরকারী চাকুরী শুরু করেছিলেন সেই ব্রিটিশ সময়েই। ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন। তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত যার যার সেক্টরে। রিটায়ারের পরে নিজের গ্রামে থাকা শুরু করেন। যমুনা নদীর ভাঙ্গনে গ্রামের পর গ্রাম উজার হয়ে যায়। তার পরও তার মাতৃভূমির প্রতি মায়া কমেনি। বাঁধের পাশে ঘর তুলে বাস করেছেন কিছুদিন। হয়তো তার গ্রামটি ভাংবে না। নদীর ভাঙ্গন হয়তো বন্ধ হবে। পরে তার গ্রাম ভেঙ্গে গেলে শহরের পাশে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করেন। কারো সাথে কখনো কোন শত্রুতা হয়নি। সবার ভাল চেয়েছেন - মঙ্গল চেয়েছেন। সবাইকে নামাজের কথা আর ইসলামের কথা মনে করে দিয়েছেন। তার কাছের মানুষেরা ভাবতো, তার একেবারে বৈষয়িক জ্ঞান নাই।
এক রাতে তার মৃত্যু হল। ঢাকা থেকে তার কাছের মানুষেরা সবাই এলো। বাড়ি ভর্তি সেই মফস্বল শহরের মানুষজন। বেশীর ভাগেরই দাড়ি টুপি আছে। এছাড়াও অন্য সব পোশাকের মানুষেরাও আছে। সেই শহরের কেউ বাদ পড়েনি। কাছের মানুষদের কাজ কিছুই করতে হল না। কি আশ্চর্য বিষয়। তাকে যখন জানাজার পর দাফনের জন্য নেয়া হচ্ছিল - মানুষের মিছিল যেন পিছনে চলেছে। হেটে রিক্সায় বা টিলারে করে। সেই শান্ত স্বভাবের সহজ সরল জীবনযাপনকারির এতো হিতকাঙ্খি - এতো আপনজন। মনে হল সেই তো কোটিপতি ব্যবসায়ী বা ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের থেকে বেশী ভাগ্যবান। অল্প অল্প করে কত সহস্র মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। আসলেই মানুষের মৃত্যুদিনেই বোঝা যায় কে কেমন ছিলেন। যার জন্য যত মানুষ মন থেকে দোয়া করে - সে তত বেশী ভাগ্যবান।