Entertainment & Discussions > Story, Article & Poetry

'দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস'-কালের কণ্ঠ (৬.২.২০২০; পৃ.১৫)

(1/1)

kekbabu:
দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে। বিষয়টি ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো’র মতো হলে এটি অবশ্যই একটি শুভ দিক। ১৮০টি দেশের মধ্যে ২০১৯ সালে অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভালো) বাংলাদেশের অবস্থান ১৪তম, যা আগের বছর ছিল ১৩তম। আবার সূচকের ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) বাংলাদেশের অবস্থান তিন ধাপ এগিয়ে ১৪৯ থেকে ১৪৬তম অবস্থানে এসেছে। তবে দুর্নীতি পরিস্থিতি উন্নয়নসংক্রান্ত স্কোরে বাংলাদেশের কোনো পরিবর্তন নেই। ১০০ নম্বরের মধ্যে এবারও বাংলাদেশ পেয়েছে ২৬। এর মানে, সূচকের উন্নতি হলেও দুর্নীতি কমেনি। সামনে এগিয়ে থাকা কোনো দেশ আরো খারাপ করায় বাংলাদেশের অবস্থান এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের এই অবস্থান এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চতুর্থ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়। জার্মানভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচক (করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স)-২০১৯ সালের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এ কথা অনস্বীকার্য যে আমাদের দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি হচ্ছে এবং দিন দিন প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু এই প্রবৃদ্ধির ব্যবহার কোথায় হচ্ছে এবং কারা ভোগ করছে, সেটা সঠিকভাবে বণ্টন হচ্ছে কি না ইত্যাদি বিষয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবারই ভালোভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করলেও সমাজে দুর্নীতি থাকায় এর সুফল ঠিকমতো পাচ্ছে না দেশের জনগণ। তবে দুর্নীতি না থাকলে আমাদের দেশের যে আরো অনেক অনেক উন্নতি হতো, সে কথা বলা যায় নিঃসন্দেহে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশও এখন পর্যন্ত দুর্নীতির আওতামুক্ত হতে পারেনি। বরং আমাদের সবার প্রিয় এ বাংলাদেশে যত সমস্যা জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতি, ন্যায়বিচার ও সুশাসনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং দাঁড়াচ্ছে; দুর্নীতি তাদের মধ্যে অন্যতম। মূলত রাজনীতিবিদদের প্রতিশ্রুতির ঘাটতি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবহিদির অভাব, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য অবস্থান সংকুচিত করে দেওয়া এবং গণমাধ্যম ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের কথা বলার সুযোগ সীমিত করার বিষয়গুলোকে দুর্নীতি না কমার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে টিআইবি। জনসংখ্যাধিক্য ও ক্ষুদ্র আয়তনের এ দেশটির একদিকে যেমন এখনো বিরাজ করছে দারিদ্র্য, অপুষ্টি ও সম্পদের অভাব, তেমনি অন্যদিকে সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিরাজ করছে দুর্নীতির কালো ছায়া। দুর্নীতি নামক সমাজের সর্বগ্রাসী এই কালোব্যাধিটি যে তার কালো থাবা বিস্তার করে সমাজকে দিন দিন রাঘব বোয়ালের মতো গ্রাস করেই চলেছে তা সহজেই অনুমেয়। টিআই ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দুর্নীতির ওপর জরিপ চালিয়ে যে ফলাফল প্রকাশ করেছিল, তাতে পর পর টানা পাঁচ বছরেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। তবে আশার কথা এই যে এর পরবর্তী বছরগুলোতে টিআইয়ের জরিপে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান অনেকাংশে নিচের দিকে অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত ভালো পর্যায়ে রয়েছে। এর আগে বারবার দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান করায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন্ন হয়েছে। আবার তখন দেশে সীমাহীন দুর্নীতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশকে ‘আস্থাহীন দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। শুধু তাই নয়, দুর্নীতি নামক এই কালোব্যাধির কারণে একদিকে যেমন জিডিপি তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি, দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি সফলতা পায়নি; তেমনি অন্যদিকে জীবনযাত্রার মানও হয়েছিল নিম্নগামী।

দুর্নীতি প্রতিরোধে বিগত সরকারগুলোর আমলসহ বর্তমান সরকারের আমলে গৃহীত ব্যবস্থা যে একেবারেই অপ্রতুল তা অস্বীকার করার উপায় নেই। আইডিবি, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও নীতিনির্ধারকরা দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন সরকারকে দুর্নীতি হ্রাস করার উপায় হিসেবে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। টিআইবিও বিভিন্ন সময়ে সভা, সেমিনার ও রিপোর্টের মাধ্যমে দুর্নীতি প্রতিরোধে নানাভাবে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এবারও দুর্নীতি প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে টিআই। তার মধ্যে রয়েছে; দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখানো; দুদককে আরো স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া এবং অবাধ গণমাধ্যম ও সক্রিয় নাগরিক সমাজ বিকাশে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে সব কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির যথাযথ ব্যবস্থা করা, দারিদ্র্য বিমোচন ও আয়বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন, দুর্নীতি দমন কমিশনকে প্রকৃত অর্থেই স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া এবং দুর্নীতিবিষয়ক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা জরুরি। পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিয়ে তাদের শুধু ‘দুর্নীতিবাজ’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করাসহ তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করার ব্যবস্থা করা দরকার। দুর্নীতি রোধের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক সংস্কার, সুধীসমাজ গঠন, ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে দুর্নীতির প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন ও তা দূর করতে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করাও আবশ্যক। এ ছাড়া গণমাধ্যমকে প্রকৃত অর্থেই স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির সুযোগ করে দেওয়া, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দলীয় সম্পৃক্ততা বিচ্ছিন্ন করা এবং সব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানো অতি জরুরি। সর্বোপরি দুর্নীতি থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য দেশের সর্বত্র প্রয়োজন ‘সততা’র একটি আবহ। দরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির একটি সুষ্ঠু, সুন্দর পরিমণ্ডল। এ কথা সবারই স্মরণ রাখা দরকার, এ দেশটি আমার, আপনার, সবার। আসুন, আমরা সবাই মিলে সম্মিলিত কণ্ঠে দুর্নীতিকে ‘না’ বলি। দুনীতি প্রতিরোধে সরকারসহ আমাদের সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবশ্যই বাংলাদেশকে একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক সদস্য
kekbabu@yahoo.com

Link: https://www.kalerkantho.com/print-edition/muktadhara/2020/02/06/871297?fbclid=IwAR0AX5cbJyHCHqao1lxsbAJPDXJyFlpdoRBrERte6_qCMA2uTNDi6SCwZF4

Sharminte:
thanks for sharing

Navigation

[0] Message Index

Go to full version