শিক্ষকতা জীবনের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতাগুলোর একটা হচ্ছে নামে/বেনামে নানান কিসিমের ইমেইল পাওয়া। এর মাঝে গুটিকয়েক ইমেইল গোলকধাঁধাঁর মত মাথায় কুটকুট করে। এই যেমন গতকালের এই মেইলটা। কাব্যিক ভাষায় লেখক সুগভীর তিনটি ধাঁধাঁর অবতারণা করেছেন...
প্রশ্ন এক - তিনি নিজেকে “নিচু লেভেল” এর ছাত্র বলে দাবী করেছেন। ডিটিফাইভ লেভেল এইটে ক্লাস হবার পরেও তিনি নিজেকে উঁচু লেভেলের মনে করতে পারছেন না কেন?! নাকি তিনি আমার মত বাইট্টা টাইপ?
প্রশ্ন দুই - তিনি সম্মানজনক মার্কস বলতে কি বুঝিয়েছেন? মার্কস = সম্মান?!!
প্রশ্ন তিন - আমার মন নরম করার কথা বললেও সেটা করার পদ্ধতিটা কি হবে সেটা বলেন নাই। বিস্কুটের মত চায়ে ভিজালে চলবে? মন দ্রবীভূত করার সম্পৃক্ত মিশ্রণের ফর্মূলা চাই।
ভন্ডামি বাদ দিয়ে আসল কথায় (আঁতলামি) আসি। আমি ভীষন লজ্জিত, অনেকটা আহত ও কিঞ্চিৎ বিচলিত। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্টে ভালো গ্রেড পেলে ম্যানেজারের চাকুরী নিশ্চিত ব্যাপারটা অবশ্যই তা নয়। অন্যের করূণা প্রত্যাশায় নিজে নতজানু হলে আত্মসম্মান কিছু বাকি থাকে কি? শতবছর আগে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পরেও কেন আমাদের এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের ঘাড় থেকে মানসিক দাসত্বের প্রেতাত্মা নামছে না, সেটা একটা রহস্য।
ভালোবাসা আর করূণা - দুইটা দুই জিনিষ; এই দুইটাকে গুলিয়ে ফেললে তো বিপদ! কাউকে ভালোবেসে কিছু দেয়া আর ভিক্ষুককে করূণার দান ভিক্ষায় তফাৎ আছে আলবত! শিক্ষক-শিক্ষার্থীর রসায়নের বিশাল জায়গা জুড়ে থাকে ভালোবাসা । কিন্তু সেই আবেগের সুযোগ নিয়ে প্রাপ্যের চাইতে বেশী কিছুর আবদার করাটা নিজেদের ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মানের সাথে প্রতারণা নয় কি? একটি জাতির শিক্ষাব্যবস্থায় প্রতারণা ঢুকে যাওয়ার মত ভয়ংকর আর কিছু হতে পারেনা! এই অতি সাধারণ সহজ ব্যাপারটা কেন এই প্রজন্মের কিছু বুদ্ধিমান ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারবেনা সেটাও একটা রহস্য!
আমাদের ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিত্ববান, আত্মসম্মানের সাথে বড় করার দায়িত্ব আমাদের শিক্ষকদেরই। সমস্ত সম্মান মার্ক্সের মধ্যেই এই জাতীয় সংকীর্ণতা থেকে ছেলেমেয়েদের বের করে আনতে ব্যর্থ হলে বৃথা এই শিক্ষকজীবন! যদিও অবশ্য ইমেইল লেখক থেকে ভবিষ্যতে কোম্পানির চাকুরিতে ভালো করার সার্টিফিকেট পেয়ে গেছি। যাক বাবা, বাঁচা গেল! সাইসাই করে উপরে ওঠার দেরী নাই আর! মুহাহাহা...
জয়তু শিক্ষকতা!