আমরা কথার ছলে অনেক সময় বলে থাকি, ব্যায়াম বা শরীরচর্চা অনেক উপকারী। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই জানি না যে, সেটা কেন বা কতটুকু আমাদের জন্য উপকারী। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে নানা রকম দীর্ঘমেয়াদি রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা যায়, ওজন কমানো যায়, ভালো ঘুম হয় কিংবা মানসিক প্রশান্তি আসে। এগুলো সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি, আর এ উপকার যেকোনো বয়সী মানুষের জন্য। তবে
এগুলো ছাড়াও ব্যায়ামের আরও নানাবিধ উপকার রয়েছে।
মন ভালো রাখার উপায়
শরীরচর্চা করলে মস্তিষ্ক থেকে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়। এ সকল রাসায়নিক উপাদান চিত্ত প্রফুল্ল করে এবং শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি চেহারায় লাবণ্য ও ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। ফলে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ অনেক বেড়ে যায়। নিয়মিত শরীরচর্চাকারীকে বিষণ্নতা কিংবা হতাশা সহসা গ্রাস করতে পারে না। অতএব, দিনের টানটান উত্তেজনাময় কর্মকাণ্ডের পর আধঘণ্টা হাঁটা, জগিং করা কিংবা হালকা ব্যায়াম অনেক কাজে দেয়।
নিয়মিত ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ করে
কিছুদিন আগেও আমাদের প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম করতে হতো। কোথাও যাতায়াত করার জন্য অনেক পথ হেঁটে পাড়ি দিতে হতো, তবে আধুনিক জীবনে শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ কমে গিয়েছে। হাঁটাহাঁটির প্রয়োজন হয় না বললেই চলে সেই সাথে বদলে গেছে আমাদের খাদ্যাভ্যাসও। ফলে দিন দিন রোগব্যাধি যেমন, হূদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার ইত্যাদির প্রকোপ বহু গুণে বেড়েছে। নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীরচর্চা এগুলো প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন হাঁটলে, দৌড়ালে কিংবা শরীরচর্চা করলে রক্ত চাপ বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না। কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। নিয়মিত শারীরিক কসরত্ রক্তে ‘ভালো’ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় আর ‘অপ্রয়োজনীয়’কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। এর ফলে রক্তনালীতে চর্বির পুরো আস্তর জমতে পারে না, ফলে হূদরোগ হওয়ার ভয় কমে যায়। এ ছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, হাড়ের ক্ষয় কম হয় এবং অনেক রকম ক্যান্সার হওয়ার ভয় থাকে না।
শরীরের ওজন কমে
যাদের ওজন বাড়তি, তাদের ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই। বাড়তি ওজন মানেই হূদরোগ, উচ্চরক্ত চাপ, ডায়াবেটিস, কিংবা ক্যান্সারের বাড়তি ঝুঁকি। শারীরিক পরিশ্রম করলে ক্যালরি খরচ হয়। যত বেশি ক্যালরি খরচ করা যাবে, শরীরের ওজন তত নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এজন্য যে প্রতিদিন প্রচুর সময় দিতে হবে তা কিন্তু নয়। লিফট দিয়ে না উঠে আমরা সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারি, টিভি দেখার পরিবর্তে আধঘণ্টা হাঁটতে পারি, অফিস যাওয়ার সময় হেঁটে যেতে কিংবা হেঁটে বাসায় ফিরতে পারি, এভাবে আমরা যতই শারীরিক পরিশ্রম করব ততই আমাদের ক্যালরি খরচ বাড়বে এবং শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর এ ক্ষেত্রে সাঁতারও খুব ভালো ব্যায়ামের তালিকায় পরে।
কর্মস্পৃহা বাড়ায়
ব্যায়াম এবং শরীরচর্চার ফলে আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে অতিরিক্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ হয়। এর ফলে আমাদের হূদযন্ত্র এবং রক্তনালি সচল থাকে। এর ফলে সমস্ত শরীরে একটি সুস্থ প্রাণস্পন্দন ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। এটা আমাদের কর্মস্পৃহা বাড়ায়, কাজে-কর্মে ও লেখাপড়ায় মনোসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
ঘুম ভালো হয়
যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য ব্যায়াম অত্যন্ত উপকারী। ব্যায়াম অনিদ্রা দূর করে, অতিনিদ্রা হ্রাস করে। নিয়মিত যিনি শরীরচর্চা করেন তার ঘুম আসার কোনো সমস্যা হয় না, গভীর ঘুম হয়। অবশ্য একেবারে ঘুমানোর আগে ব্যায়াম করা উচিত নয়। কারণ ব্যায়ামের পরে মানসিক চাঙ্গা ভাবের কারণে ঘুম আসা বিলম্বিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রত্যুষে ব্যায়াম করা উপকারী।
অনেক সময় দেখা যায়, আমাদের অবসর সময়গুলো কাটাতে কোনো কিছুর সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না, যেমন, হাতের কাছে কোনো গল্পের বই নেই, টিভিতে ভালো কিছু দেখাচ্ছে না। এককথায়, অবসর সময় কাটছে না, সেক্ষেত্রে ব্যায়াম হতে পারে খুব ভালো সঙ্গী।