Help & Support > Common Forum/Request/Suggestions

আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা - পিএইচডি করার নানা ধাপ

(1/1)

Fahmida Afrin:
© Ragib Hasan

আমেরিকায় পিএইচডিতে ভর্তি হওয়ার নানা ব্যাপার নিয়ে লিখেছি। কিন্তু পিএইচডি প্রোগ্রামটি কীভাবে চলে, কী কী করতে হয় ইউনিভার্সিটিতে আসার পরে, সেটা নিয়ে বলা হয়নি। পিএইচডিতে আবেদনের আগে এই সব বিষয়ে আসলে সবার ধারণা থাকে না। তাই আজকের লেখায় চেষ্টা করব পিএইচডি প্রোগ্রামের নানা ধাপ ও প্রক্রিয়া নিয়ে।

পিএইচডি প্রোগ্রামের উপরে খুব ভাল একটা কথা সেদিন কোথায় যেন দেখলাম -- পিএইচডি প্রোগ্রামের ফলাফল বা প্রডাক্ট আসলে শিক্ষার্থীর থিসিস না, আসল প্রডাক্ট হল শিক্ষার্থী নিজেই। অর্থাৎ এই পিএইচডি করতে গিয়ে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তার মাধ্যমে একজন স্কলার বা পণ্ডিত ব্যক্তিকে প্রস্তুত করা হয়।

১) কোর্সওয়ার্ক

অন্য অনেক দেশের পিএইচডি প্রোগ্রামের সাথে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি প্রোগ্রামের বড় পার্থক্য হল কোর্সওয়ার্ক। শুরুতেই অনেক কোর্স করা লাগে। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানের জন্য মোট ৪৮ ক্রেডিট আওয়ারের কোর্সওয়ার্ক করা লাগে। প্রতিটি পিএইচডি প্রোগ্রামেই এরকম নিয়ম থাকে। এই কোর্সওয়ার্কের মধ্যে বেশ কিছু বেছে নিতে হয় কোর কারিকুলাম বা মূল সিলেবাস এর নানা অংশ থেকে। সেগুলো পাস করলে তবেই পরের ধাপে যাওয়া চলে। আর অনেক ক্ষেত্রেই কোন কোর্সে সর্বনিম্ন বি প্লাস টাইপের গ্রেড পাওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য।

২) কোয়ালিফাইং এক্সাম

কোর্সওয়ার্ক বাদে বড় পরীক্ষাটি হল পিএইচডি কোয়ালিফাইং এক্সাম বা কোয়ালিফায়ার। পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হলেই যে পিএইচডি করতে পারবেন, তা নিশ্চিত না। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পিএইচডি কোয়ালিফাইং এক্সাম পাস করতে হয়। সাধারণত ভর্তির ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে এটা পাস করা লাগে। একেক ইউনিভার্সিটিতে একেক নিয়ম। (অল্প কিছু জায়গায় এই পরীক্ষাটি দিতে হয় না, এমনও আছে। তবে অধিকাংশ জায়গাতেই দিতে হয়)। একেক ইউনিভার্সিটির একেক ডিপার্টমেন্টে এই পরীক্ষার ফরম্যাট আলাদা। কোথাও লিখিত পরীক্ষা দিতে হয় পঠিত বিষয় থেকে এবং কোর কোর্সওয়ার্কের এলাকার উপরে। আবার কোথাও সেটা প্রেজেন্টেশন অথবা মৌখিক পরীক্ষা। আমি যখন পিএইচডি করছিলাম ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ে, সেখানে পরীক্ষাটা ছিল দুইটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে তার পর ৩ জন অধ্যাপকের সামনে সেগুলোর বা অন্য যেকোন বিষয়ের উপরে প্রশ্নোত্তর পরীক্ষা। আবার আমার বর্তমানের কর্মক্ষেত্রে আগে ছিল ৩টি বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা, আমরা সম্প্রতি সেটাকে পাল্টে লিটারেচার সার্ভে, প্রেজেন্টেশন এবং মৌখিক প্রশ্নোত্তর পদ্ধতিতে এনেছি।

কোয়ালিফাইং এক্সাম অনেক সময়েই বিভীষিকার মত হয়ে দাঁড়ায়। আমার পিএইচডির ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সাইন্স বিভাগে প্রায় সবাই প্রথমবারে ফেল করত। মাত্র ২ বার দেয়ার সুযোগ ছিল -- দ্বিতীয়বার ফেল করলে পিএইচডি প্রোগ্রাম থেকে বের করে দেয়া হত।

৩) প্রপোজাল ডিফেন্স

কোয়ালিফাইং এক্সাম পাস করার পরে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত অর্থে পিএইচডি প্রোগ্রামে ঢুকে। এর পরের ধাপে আসবে নিজের গবেষণার বিষয়টি ঠিক করা এবং তার উপরে একটি থিসিস প্রপোজাল লেখা। গবেষণায় তদারকির জন্য থিসিস বা ডিজার্টেশন কমিটি গঠন করতে হয় নিজের এডভাইজর সহ আরো ৪/৫ জন প্রফেসর বা পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের নিয়ে। তাঁদের সাথে কাজ করে এবং গবেষণার বিষয়টি অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে তার পর থিসিস প্রপোজাল লিখতে হয়। মূলত সেটি হল পিএইচডি থিসিসের শুরুর অর্ধেকের মত। থিসিস প্রপোজাল পরীক্ষার নাম নানা রকমের। অনেক জায়গায় সেটাকে বলা হয় প্রিলিমিনারি এক্সাম। আবার অনেক জায়গায় প্রপোজাল ডিফেন্স। যাহোক, এই পরীক্ষাটিতে মোটামুটি ৪০ মিনিট - ১ ঘণ্টার প্রেজেন্টেশন দিয়ে থিসিসের বিষয়টির পটভূমি এবং সেটার উপরে যা কাজ করেছে শিক্ষার্থী, এবং থিসিসে মূল যে প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনা করা হবে, তা উপস্থাপন করতে হয়। সাধারণত এটা পাবলিক এক্সাম, মানে রুমভর্তি ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষকদের সামনে এটা করতে হয়। উপস্থিত যে কেউ প্রশ্ন করতে পারে প্রেজেন্টেশনের উপরে। আর তার পরে প্রাইভেট প্রশ্নের সময় থাকে যখন থিসিস কমিটি ছাড়া বাকিরা চলে যায়। রুদ্ধদ্বার কক্ষে থিসিস কমিটির সবাই প্রশ্ন করতে পারে। তার পর থিসিস কমিটির সদস্যরা আলোচনা করে পাস ফেল নির্ধারণ করেন, এবং কীভাবে এগোতে হবে তার উপরে শিক্ষার্থীকে পরামর্শ দেন। প্রপোজাল ডিফেন্সে পাস করলে শিক্ষার্থীটি নিজেকে এর পর পিএইচডি ক্যান্ডিডেট বলে দাবী করতে পারেন।

৪) পিএইচডি থিসিস ডিফেন্স

সব শেষের পরীক্ষাটি হল পিএইচডি ডিফেন্স। পিএইচডির সব কাজ শেষ হয়ে গেলে পুরো থিসিসের গবেষণার উপরে প্রেজেন্টেশন দিতে হয়। আগের মতোই এটি পাবলিক পরীক্ষা। সবার সামনে প্রেজেন্টেশন দিয়ে প্রশ্নোত্তরের জবাব দিতে হয়। এবং থিসিস কমিটির সামনে প্রাইভেট প্রশ্নোত্তরেরও সম্মুখীন হতে হয়। থিসিস কমিটিতে খুঁতখুঁতে প্রফেসর থাকলে ডিফেন্স বা প্রপোজালের পরীক্ষাতে কপালে দুঃখ আছে বলতে হবে -- প্রশ্ন করে করে জীবন ছারখার করে দিবে। তবে কাজ ভাল করলে এবং গবেষণা সম্পর্কে ভাল করে জানলে চিন্তার কিছু নাই। থিসিস কমিটির সবাই একমত হলে তবেই ডিফেন্স পরীক্ষায় পাস করে শিক্ষার্থী -- এর পরে বাকি থাকে থিসিস লিখে জমা দেয়া। ইউনিভার্সিটির নিজস্ব ফরম্যাটে এবং কাভার শিট সহ থিসিসের ইলেকট্রনিক কপি জমা দিলে তবেই মিলে পিএইচডি ডিগ্রি। অনেকেই ঠিক তখনই সমাবর্তনে অংশ নেন না, সুযোগ মত নেন।

সংক্ষেপে এই হল পিএইচডি ডিগ্রির পুরো প্রক্রিয়া। আশা করি অনেকের অনেক প্রশ্নের জবাব মিলবে এই লেখায়। প্রশ্ন থাকলে মন্তব্যের ঘরে করুন।

#আমেরিকায়উচ্চশিক্ষা

Dipty Rahman:
Thanks for sharing

shirin.ns:
Thanks for sharing...

farjana yesmin:
Thanks for sharing

Umme Atia Siddiqua:
Thanks for sharing.

Navigation

[0] Message Index

Go to full version