রক্তশূন্যতার কারণ ও করণীয়

Author Topic: রক্তশূন্যতার কারণ ও করণীয়  (Read 1470 times)

Offline tany

  • Faculty
  • Sr. Member
  • *
  • Posts: 401
  • Tajmary Mahfuz,Assistant Professor,Dept of GED
    • View Profile
রক্তশূন্যতা বিশ্বব্যাপী একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩০ ভাগ মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময়ে রক্তশূন্যতায় ভুগে থাকেন। এই স্বাস্থ্য সমস্যাটি পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে অনেক বেশি।

তবে রক্তশূন্যতা বা এ্যানিমিয়া কোনো অসুখ নয়। এটি অসুখের পূর্ব লক্ষণ বা উপসর্গ মাত্র। রক্তশূন্যতা মানে রক্ত কমে যাওয়া নয়, বরং রক্তের উপাদান লোহিত কণিকায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলেই রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়ের অধিক মৃত্যুহারের অন্যতম কারণ এই ‘রক্তশূন্যতা’। রক্তশূন্যতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হল—

(ক) দেহে আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা

(খ) থ্যালাসেমিয়া

(গ) এপ্লাস্টিক এ্যানিমিয়া

(ঘ) অন্যান্য হিমোলাইটিক এ্যানিমিয়া,

(ঙ) ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকোমিয়া

রক্তশূন্যতার সংজ্ঞা

বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী রক্তে প্রয়োজনীয় পরিমাণ হিমোগ্লোবিনের চেয়ে কম হিমোগ্লোবিন থাকার অবস্থাকে রক্তশূন্যতা বা এ্যানিমিয়া বলে।

প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১৫.৫ ক্ট ২.৫ গ্রাম/ ১০০ মিলিলিটার এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার রক্তে এর মাত্রা ১৪ ক্ট ২.৫ গ্রাম/ ১০০ মিলিলিটার।

রক্তশূন্যতার কারণ

বহুবিধ কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এগুলোর মধ্যে প্রধান ৩টি কারণ হল—

ক) অস্থিমজ্জায় লোহিত কণিকা কম তৈরি হওয়া। এর কারণগুলো হল—

১. অস্থিমজ্জার স্বল্পতা

২. লৌহ, ভিটামিন বি১২ অথবা ফলিক এসিডের অভাব (মাসিক, গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব, দীর্ঘদিন রক্তক্ষরণ)

৩. দীর্ঘস্থায়ী জীবাণু সংক্রমণ, থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ বা লিভারের অসুখ, বিভিন্ন প্রকার ওষুধ সেবন, কীটনাশক ওষুধের ব্যবহার, রঞ্জন রশ্মি বা তেজষ্ক্রিয় রশ্মির প্রভাব ইত্যাদি।

খ) অতিরিক্ত পরিমাণে লোহিত কণিকা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণগুলো হল—

১. জন্মগতভাবে লোহিত কণিকাতে ত্রুটি যেমন— থ্যালাসেমিয়া

গ) অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণগুলো হল—

১. সাময়িক ও দীর্ঘস্থায়ী রক্তক্ষরণ যেমন— আঘাতজনিত কারণ।

২. পেপটিক আলসার, পাইলস, বক্র কৃমির সংক্রমণ, ঘন ঘন গর্ভধারণ ও প্রসব, মহিলাদের মাসিকের সময় অধিক রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।

রক্তশূন্যতার স্বাভাবিক লক্ষণ

সামান্য পরিমাণ রক্তশূন্যতায় তেমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। রক্তশূন্যতা প্রকট হলে নিচের উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে—

ক) অবসাদ, দুর্বলতা, ক্লান্তি

খ) বুক ধড়ফড় করা

গ) স্বল্প পরিশ্রমে শ্বাসকষ্ট

ঘ) মাথা ঝিমঝিম করা

ঙ) চোখে ঝাপসা লাগা

চ) মাথা ব্যথা করা

ছ) হাতে পায়ে ঝিনঝিন করা, অবশ ভাব হওয়া

জ) হাত, পা, সমস্ত শরীর ফ্যাকাসে হয়ে আসা

এ ছাড়া লৌহের অভাবজনিত কারণে রক্তশূন্যতা হলে যা আমাদের দেশে বেশি দেখা যায়—

ঝ) অস্বাভাবিক খাদ্যের প্রতি আসক্তি জমায়

ঞ) মুখের কোণায় ঘা হয় (Stomatitis)

ট) জিহ্বায় ঘা বা প্রদাহ (Glossitis)

ঠ) খাদ্য গিলতে অসুবিধা (Dysphagia)

ড) নখের ভঙ্গুরতা ও চামচের মতো আকৃতির নখ হয়ে যাওয়া

ঢ) থ্যালাসেমিয়াতে চেহারার আকৃতি মঙ্গোলীয় জাতির মতো দেখায় ও চাপা দেখা যায় (Mongoloid Facies)

রক্তশূন্যতায় করণীয়

রক্তশূন্যতার উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্চনীয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা করানো যেতে পারে। যেমন—

ক) রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা (Hb%)

খ) পেরিফেরাল ব্লাড ফিল্ম (PBF)

গ) অস্থিমজ্জা পরীক্ষা (Bone marrow examination)

ঘ) মাথার এক্স-রে (X-ray of Skull)

ঙ) প্রয়োজন ভেদে কিছু বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষা ইত্যাদি।

রক্তশূন্যতার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় প্রথমে রোগীর রক্তশূন্যতা প্রকৃতপক্ষে আছে কি-না তা নিরূপণ করতে হয়। যদি রক্তশূন্যতা থাকে তবে রক্তশূন্যতার কারণ যাচাই এর জন্য আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেতে পারে। যেমন—

চ) রক্তশূন্যতার উপসর্গের চিকিৎসা

ছ) খাদ্যে যে যে উপাদানের ঘাটতির জন্য রক্তশূন্যতা হয়েছে সে উপাদানের ঘাটতিপূরণ।

জ) যে শারীরিক ত্রুটি বা অসুস্থতার জন্য রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে সে রোগের চিকিৎসা করানো।
চিকিৎসা

ক) নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন করা

খ) রোগ-সংক্রান্ত প্রতিকার ও প্রতিরোধ করা

গ) অনেক ক্ষেত্রে প্লিহা অপারেশন করে ফেলে দিতে হয়

ঘ) অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা।

প্রতিকার

ক) রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে প্রথা বন্ধ করা

খ) বাচ্চা গর্ভে থাকাকালীন জেনেটিক পরীক্ষা করে প্রয়োজনমতো গর্ভপাত করা

লৌহের অভাবজনিত কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দিলে (যেমন— খাদ্যে ঘাটতি, বক্রকৃমির সংক্রামক, পেপটিক আলসার এর রক্তক্ষরণ ইত্যাদি) আয়রন ট্যাবলেট খেতে হবে।

ভিটামিন বি১২ বা ফলিক এসিডের অভাবে উক্ত উপাদানের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। যে কোনো কারণেই হোক যদি রক্তশূন্যতা অত্যন্ত প্রকটভাবে দেখা দেয় তবে অল্প সময়ে সাময়িক উন্নতির জন্য রক্ত পরিসঞ্চালন করা জরুরি হয়ে পড়ে এবং এ জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রয়োজন। প্রেক্ষাপটে গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মা এবং শিশুদের অধিকাংশই সাধারণ রক্তশূন্যতার শিকার। রক্তশূন্যতা রোধে গর্ভবতী মা, শিশুদের লৌহসমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে দিতে হবে। কালো কচু, ধনেপাতা, কাটা নটে, ডাঁটা শাক, আমচুর, পাকা তেঁতুল, ছোলা শাক, ফুলকপি, আটা, কালোজাম, চিড়া, শালগম, কলিজা, চিংড়ি এবং শুঁটকি মাছেও আয়রন রয়েছে। তাই এগুলো মা ও শিশুকে খেতে দিতে হবে।

গর্ভবতী মাকে গর্ভের চতুর্থ মাস থেকে আয়রন ট্যাবলেট খেতে দিতে হবে। শিশুর কৃমি রক্তশূন্যতার অন্যতম কারণ। তাই কৃমি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

পরিশেষে, কেউ কেউ শরীর দুর্বল হলে বা ফ্যাকাসে হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজেরাই আয়রন সিরাপ বা ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন। এটা ঠিক নয়, এতে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি যেমন—থ্যালাসেমিয়া।

থ্যালাসেমিয়াতে রক্তশূন্যতা হয় ঠিকই কিন্তু আয়রনের অভাব হয় না। বরং আয়রন জমা হয়ে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে রক্তের প্রয়োজন। সর্বোপরি অসুখ হলেই নিজের ইচ্ছামতো কোনো ওষুধ খাওয়া ঠিক হবে না, অসুখের সঠিক কারণ বের করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।

প্রধান প্রধান রক্তশূন্যতাজনিত রোগ

দেহে আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা : অধিকাংশ মানুষই দেহে আয়রনের অভাবজনিত কারণে রক্তশূন্যতায় ভুগে থাক। অনুন্নত অপরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্য সচেতনতাবর্জিত জনপদে এ রোগের প্রকোপ খুব বেশি। আয়রন বা লোহ ঘাটতির প্রধান কারণসমূহ নিম্নরূপ—

ক) উঠতি বয়সী শিশুদের খাবারে প্রয়োজনমতো আয়রন না থাকলে

খ) মহিলারা তাদের গর্ভাবস্থায়, সন্তান জন্মদানের পরেও শিশুকে দুগ্ধ পানের সময়ে প্রয়োজনীয় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার না খেলে

গ) কৃমি দ্বারা সংক্রমিত হলে

ঘ) পেপটিক আলসার ডিজিস

ঙ) পাইলস হেমরয়েড

চ) ক্রনিক লিভার ডিজিস

ছ) পাকস্থলী ও অন্ত্রের ক্যান্সার

জ) পাকস্থলীর অপারেশনের পর

লক্ষণ

ক) রক্তশূন্যতার সাধারণ লক্ষণ (পূর্বে আলোচিত)

খ) মুখের কর্নারে ঘা

গ) খাবার গিলতে অসুবিধা

ঘ) নখগুলো শুকনো, ভঙ্গুর ও চামচের মতো হয়ে যাওয়া

ঙ) চূড়ান্ত পর্যায়ে পায়ে পানি আসা (Generalized Oedema)।

চিকিৎসা প্রণালী

চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে প্রথমে কারণ বের করেন এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন

ক) Cap Feplus ২০০সম ০+১+০ (রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক হওয়ার পর আরও ৩ মাস খেতে হবে)

খ) কৃমির সংক্রামণ থাকলে ট্যাবলেট এলবেনডাজল ১+০+১ (৩ দিন)

গ) অন্যান্য কারণ ধরা পড়লে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে

থ্যালাসেমিয়া

এটা একটি জন্মগত সমস্যা, যা প্রয়োজনমতো হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণ না হওয়ার জন্য হয়। এ রোগের লক্ষণ উল্লেখ করা হল—

ক) সাধারণত বাচ্চা বয়সেই এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেয়ে থাকে

খ) শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়

গ) রোগী সবসময় বিষণ্ন থাকে এবং আশপাশের লোকদের জ্বালাতন করে

ঘ) রক্তশূন্যতার সাধারণ লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায় (পূর্বে আলোচিত)

ঙ) খাওয়ায় অরুচি এবং ঘন ঘন ডায়ারিয়া ও জ্বর হওয়া

চ) অনেক সময় পেটে চাকা দেখা দিতে পারে
Tajmary Mahfuz
Assistant Professor
Department of GED

Offline zafrin.eng

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 390
  • Test
    • View Profile
Re: রক্তশূন্যতার কারণ ও করণীয়
« Reply #1 on: February 26, 2020, 05:29:17 PM »
A very significant information!

Offline Raihana Zannat

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 392
  • Test
    • View Profile
Re: রক্তশূন্যতার কারণ ও করণীয়
« Reply #2 on: February 27, 2020, 08:58:59 AM »
Nice post
Raihana Zannat
Senior Lecturer
Dept. of Software Engineering
Daffodil International University
Dhaka, Bangladesh

Offline Shahrear.ns

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 430
  • Plan living, High Thinking, Love After Marriage !!
    • View Profile
    • Shahrear Khan Rasel
Re: রক্তশূন্যতার কারণ ও করণীয়
« Reply #3 on: February 29, 2020, 03:36:57 PM »
Thanks  for sharing such an informative article
Shahrear Khan Rasel
Sr. Lecturer
Dept. of GED
Daffodil International University