আমার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী একটি ক্লাসে সাধারণতঃ তিন ধরণের ছাত্র বা স্টুডেন্ট থাকে।
১. সিন্সেয়ার স্টুডেন্ট ২. সাধারণ স্টুডেন্ট ৩. আউট অফ ট্র্যাক স্টুডেন্ট।
১. সিন্সেয়ার স্টুডেন্টঃ এরা পরাশুনায় অনেক মনযোগী। ক্লাসে নিয়মিত ভাবে উপস্থিত থাকে। এদের ক্লাস করার ও পড়াশুনার একটি নির্দিষ্ট প্রাত্যাহিক রুটিন থাকে। এদের জীবন অভ্যাস ঝামেলাবিহীন। এরা শিখতে চায়। কখনো যদি ক্লাস মিস করে তাহলে এরা কিছু জিনিস ক্লাস লেকচার শীট অথবা বই পড়েই শিখতে পারে। টিচার যদি নিয়মিত ক্লাস নেয় তাহলেই তা এদের শেখার জন্য যথেষ্ট। পরীক্ষায় যতটুকুই সিলেবাস দেয়া হোক না কেন এরা তার পূর্ণ প্রেপারেশন নিতে পারে। প্রতি ক্লাসে ৫ - ৬ জন এই শ্রেণীর স্টুডেন্ট পাওয়া যায়।
৩. আউট অফ ট্র্যাক স্টুডেন্টঃ এদের জীবন যাপন পদ্ধতি ঝামেলা পূর্ণ। এদের কোন প্রাত্যাহিক রুটিন নাই। পড়াশুনা ছাড়া এরা সব কিছুতেই এরা আগ্রহী থাকে। এদের জীবন যাপনে প্রায় সময়ই ঝামেলা যোগ হয়। এরা বিশেষতঃ সকালের ক্লাস করতে পারে না। গভীর রাত পর্যন্ত এরা জেগে থাকে ও পড়াশুনা ছাড়া অন্য কোন ঝামেলার কাজে সময় নষ্ট করে। এরাই ক্লাসে কম সিলেবাসে পরীক্ষা দিতে চায়। এর ফলে সহজেই এদেরকে চিহ্নিত করা যায়। এদেরকে একটি স্বাভাবিক ও নিয়মিত জীবন যাপনে অভ্যস্থ করা গেলেই এদের পড়াশুনা স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। আমার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এরা অনেক ট্যালেন্টেড হয়ে থাকে। তবে একেবারেই পড়াশুনা করতে চায় না। এদেরকে একবার যদি পরাশুনায় আগ্রহী করে তোলা যায় তাহলে এরা খুব ভাল ফলাফল করতে পারে। প্রতি ক্লাসে ২ - ৩ জন এই শ্রেণীর স্টুডেন্ট পাওয়া যায়।
২. সাধারণ স্টুডেন্টঃ এরা সিন্সেয়ার ও আউট অফ ট্র্যাক এই দুই রকমের স্টুডেন্টদের মধ্যে মধ্যম মানের হয়ে থাকে। এরা কখনো বা সিন্সেয়ার স্টুডেন্টদের ফলো করে আবার কখনো বা আউট অফ ট্র্যাক স্টুডেন্টদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ক্লাসের অধিকাংশ স্টুডেন্ট সাধারণ মানের হয়।
বিভিন্ন শ্রেণীর স্টুডেন্টদের সার্থক ভাবে শেখাতে হলে কিছু স্ট্রাটেজী নেয়া যেতে পারে। পড়ানোর সময় ডিটেইলস ভাবে পড়ালে ও কুইজের সিলেবাস ঠিক করার সময় সিন্সেয়ার স্টুডেন্টদের কথা খেয়াল রেখে ও প্রশ্ন করার সময় মধ্যম মানের স্টুডেন্টদের দিকে খেয়াল রেখে চললে ভাল ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়া তাদেরকে গ্রুপ স্টাডির জন্য উৎসাহিত করতে হবে। এছাড়াও একজন করে সিন্সিয়ার স্টুডেন্টকে প্রতি স্টাডি গ্রুপে অন্তরভুক্ত করে দিলে তাদের পরাশুনা ভাল হয়। ক্লাসের বাইরে গ্রুপ স্টাডির সময় একজন আউট অফ ট্র্যাক স্টুডেন্ট এর পড়া শেখার দায়িত্ব এক জন সিন্সেয়ার স্টুডেন্টকে দিলে পড়া শেখানো সহজ হয়। তবে সব থেকে চ্যালিঞ্জিং হল আউট অফ ট্র্যাক স্টুডেন্ট কে স্বাভাবিক ও প্রাত্যাহিক জীবনে অভ্যস্থ করে তোলা। তারা যদি স্বাভাবিক প্রাত্যাহিক রুটিন ফলো করতে শিখে তাহলে তারা নিজে থেকেই
পড়াশুনায় ভাল ফলাফল করতে পারে। এদেরকে যদি সিন্সেয়ার স্টুডেন্টদের মোটিভেশনটা কি - এইটা বোঝানো যায় - তাহলেও অনেক সময় ভাল পরিবর্তন দেখা যায়। তবে সব সময় মনে রাখতে হবে যে ঢালাও ভাবে গ্রেড দিয়ে পাস করালে আঊট অফ ট্র্যাক স্টুডেন্টদের অপকারই করা হয়। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়।