
ইন্টারনেটের এ সময়ে পড়ার অভ্যাস যদিও সোশাল মিডিয়া আমাদের কিছুটা দিয়েছে, কেড়ে নিয়েছে ঢেড়। আমরা প্রতিনিয়ত নিউজফিড স্ক্রল করছি, পড়ছি, আবার ভুলে যাচ্ছি। আচ্ছা, বই পড়ার অভ্যাসটা আমাদের কী আগের মতোই আছে? উত্তর তো আমরা জানিই- না।
বই আমাদের অন্যতম ভালো বন্ধু। বই আমাদের জ্ঞানের উৎস। বই হাসায়, কাঁদায়। বই বিচরণ করায়। বই জানায়। বই জীবন শেখায়। বৈচিত্র্যের মধ্যে ভ্রমণ করায়। এর চেয়েও বড় কথা- বই আমাদের অনেক সেরা সেরা মনের ভাবনাকে জানিয়ে দেয়। আমরা বড় হই।
আজকাল আমরা যে হারে অডিও ভিজ্যুয়াল ইনপুট নিচ্ছি তার কতোটুকুই ধারণ করতে পারছি? বেশিরভাগই ভুলে যাচ্ছি। কেননা, বই যেভাবে আমাদের মনন-মগজে তথ্য মর্মে প্রবেশ করায়, ভিডিও আজ সেভাবে পারছে না। কেননা, আমাদের ইন্টারনেট অভ্যাস তার জন্য দায়ী। অতি মাত্রায় ভিডিও আমাদের ভাবনার সময় দিচ্ছে না। আমরা যন্ত্র হয়ে যাচ্ছি।
অনেক কথা হলো। কিন্তু কীভাবে এই বই পড়ার অভ্যেস আবার আয়ত্ত্বে আনা যায়? নিচের নোকতাগুলো সাহায্য করতে পারে:
১। সময় নির্দিষ্ট করাদিনের একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করা যেতে পারে কখন বই পড়লে সবচেয়ে ভালো লাগে, কোন সময়টায় ক্লান্তি থাকে না। কোন সময় মন নির্ভার থাকে। সাধারণত ভোর কিংবা বিকেল এ জন্যে খুব ভালো সময়। আরেকটা বিষয় হলো কখন পড়বো। তার জন্য একটা রুটিন করা যেতে পারে।
২। বই সাথে রাখাসব সময় যদি কোনো না কোনো বই সাথে থাকে তবে পড়ার জন্য মন চাবে কোনো না কোনো সময়। কিন্তু শর্ত থাকে যে ফোন ও ইন্টারনেটকে দূরে রাখতে হবে। নইলে আসক্তি আপনাকে ভুলিয়েই দিবে বইয়ের কথা।
৩। বইয়ের লিস্টআপনি এ বছর বা এ মাসে কী কী বই পড়বেন তার লিস্ট তৈরি করতে পারেন। লিস্ট অনুযায়ী একটা একটা করে পড়ে ফেলতে পারেন। এটা সাহায্য করবে।
৪। শান্ত পরিবেশপড়ার জন্য যতো শান্ত পরিবেশ ততোই তা আনন্দের। আপনার পড়ার স্থানটির আশেপাশে যাতে কোনো মিউজিক বা টিভি না বাজে তা দেখুন। আর বাড়ির অন্য সদস্যরা যাতে হৈহুল্লোড় না করে সেটাও নিশ্চিত করুন। এবার মন দিয়ে আরামদায়ক পরিবেশে পড়তে বসুন।
৫। ইন্টারনেট বা টিভি কমানোঅতিরিক্ত ইন্টারনেট বা টিভি দেখা আসক্তি সৃষ্টি করে। সুতরাং এগুলো যতো কমানো যায়, আপনার পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধিতে তা ততোই সহায়ক।
৬। লিখে রাখুনআপনি যা পড়ছেন তার সারসংক্ষেপ নোটপ্যাডে কিংবা ব্লগে লিখে রাখতে পারেন। এটা খুবই কাজের। বিশেষ করে অনেক দিন পর খুব সহজেই আবার মনে করা যায়।
৭। লাইব্রেরি ডেসপ্তাহে একদিনকে উৎসর্গ করতে পারেন লাইব্রেরি ডে নামে। শহরের কোনো লাইব্রেরির সদস্য হতে পারেন। অথবা পাবলিক লাইব্রেরিতে ফ্রি বই পড়তে পারেন।
৮। পরিবারে বই পড়ুনপরিবারের সবাই মিলে বই পড়ুন। তাহলে একটা পড়ার পরিবেশ পরিবারে তৈরি হয়ে যাবে অনায়াসেই। আপনার সন্তানকে বই পড়ে শোনান। শোনান আপনার বাবা-মাকে।
৯। ই-বুক রিডারঅনলাইনে সহজেই এবং অনেক ফ্রি বই নামাতে পারেন অনায়াসেই। আর বাংলাদেশের জ্যামকে ভুলেও কাজে লাগাতে পারেন সময় যদি সাথে থাকে কোনো ই-বুক রিডার। আমাজনের বুক রিডার আপনার সঙ্গী হতে পারে। অথবা আপনার আইফোন বা অ্যান্ড্রয়েডকেও বানিয়ে নিতে পারেন ই-বুক রিডার। এক্ষেত্রে ইরিডার প্রেস্টিজিও নামের অ্যাপটা অনেক ভালো।
১০। সোশাল মিডিয়া অ্যাপগুলো আনইন্সটল করাসোশাল মিডিয়া আজকাল আমাদের অনেকটা সময়ই নষ্ট করে ফেলছে। আপনি এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন যদি এগুলো আনইন্সটল করে ব্রাউজারে (ক্রোম, ফায়ারফক্স ইত্যাদি) এগুলো ব্যবহার করেন। এছাড়াও সপ্তাহে সময় নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট করে নিতে পারেন ঠিক কখন কখন সোশাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন। একদম না ব্যবহার করলে তো সোনায় সোহাগা।
উপর্যুক্ত পরামর্শ আপনাকে আবারও বইয়ের জগতে আরামে বিচরণ করাতে সাহায্য করবে নিঃসন্দেহে। তবে সেক্ষেত্রে আপনাকে দৃঢ় হতে হবে। বিশেষ করে ইন্টারনেট আসক্তি কমিয়ে ফেলা যায় এমন দিকে নজর দিতে হবে।