General Category > Common Forum
উল্কাবৃষ্টির রহস্য
(1/1)
Mst. Eshita Khatun:
বৃষ্টি তো পানির ফোঁটা, আকাশের মেঘ থেকে মাটিতে পড়ে। তাহলে উল্কাবৃষ্টি আবার কী? এটাও আকাশ থেকে পড়ে, বৃষ্টির মতোই, কিন্তু সেটা দেখা যায় শুধু রাতে। আকাশে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে। দেখলে মনে হয় আকাশ থেকে আতশবাজি নেমে আসছে। আকাশের তারা বুঝি খসে পড়ছে মাটিতে। ইংরেজিতে সে জন্যই এদের বলা হয় ‘শুটিং স্টার’। মাটির কাছাকাছি আসতেই নিভে যায়। তবে মাঝেমধ্যে দু–একটা জ্বলন্ত অবস্থাতেই মাটিতে পড়ে। সেটা আবার বিপজ্জনক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। সে কথায় পরে আসছি।
উল্কা হলো আমাদের এই সৌরজগতেরই আকাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা কিছু বস্তুখণ্ড। এই বস্তুখণ্ডগুলো আসে ধূমকেতু থেকে। ধূমকেতু মাঝেমধ্যে আকাশে দেখা দেয়। সূর্যের চারপাশে এক চক্কর দিয়ে আবার দূরে চলে যায়। এদের চলার পথ অনেকটা ডিমের আকৃতির মতো (ইলিপটিক)। হ্যালির ধূমকেতুর কথা আমরা জানি। একবার সূর্য প্রদক্ষিণ করে আবার প্রায় ৭৬ বছর পর ফিরে আসে। এ ধরনের আরও কিছু ধূমকেতু সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এ সময় ধূমকেতুর মূল অংশের কিছু জমাট বাঁধা মহাজাগতিক ধূলিকণা ও অন্যান্য বস্তু আকাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থেকে যায়। পৃথিবী তার কক্ষপথে চলার সময় এসব বস্তুখণ্ডের কাছাকাছি এলে ওগুলো পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে মাটির দিকে পড়তে থাকে।
এই পড়ন্ত বস্তুগুলো পৃথিবীর কাছাকাছি এলে বাতাসের সঙ্গে ঘর্ষণে জ্বলে ওঠে। তখন আকাশে ওদের দেখে মনে হয় আলোকোজ্জ্বল তারা আকাশ থেকে পড়ছে। যেন আতশবাজির বৃষ্টি পড়ছে। এটাই উল্কাবৃষ্টি।
উল্কাপিণ্ডগুলো ঘণ্টায় প্রায় ২৫ হাজার থেকে দেড় লাখ মাইল বেগে পৃথিবীর দিকে ছুটে আসে। ফলে বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে এরা জ্বলে ওঠে। সাধারণত মাটিতে পড়ার আগেই জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যায়। কিন্তু উল্কা খণ্ড খুব বড় হলে সবটা জ্বলে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আগেই মাটিতে পড়তে পারে। এ রকম উল্কার আঘাতে মাঝেমধ্যে বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রায় সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে এ ধরনের বিশাল এক উল্কাখণ্ড বা গ্রহাণুর (অ্যাস্টেরয়েড) আঘাতে পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছিল বলে বিজ্ঞানীরা বলেন। তবে ভিন্নমতও রয়েছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনো গবেষণা করছেন।
চাঁদের মহাকর্ষ বল পৃথিবীর তুলনায় কম। সেখানেও কিছু উল্কাখণ্ড পড়ে, কিন্তু তাকে উল্কাবৃষ্টি বলা যাবে না। কারণ চাঁদের কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। তাই চাঁদে যেসব উল্কাখণ্ড পড়ে, সেগুলো পাথরের কণা বা জমাট বাঁধা মহাজাগতিক ধূলিকণা হিসেবেই পড়ে। এদের আঘাতে চাঁদের মাটিতে ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি হয়। চাঁদের আকাশে কখনো উল্কাবৃষ্টি হয় না।
পৃথিবীর আকাশে সব সময় উল্কা দেখা যায় না। কোনো ধূমকেতু আকাশের যে পথে সূর্য প্রদক্ষিণ করে, সেখানে রাতের আকাশে উল্কাবৃষ্টি বেশি হয়। কারণ, সেখানেই আকাশে ধূমকেতুর ফেলে যাওয়া বস্তুখণ্ড বেশি থাকে। তাই পৃথিবী তার কক্ষপথে সূর্য প্রদক্ষিণ করার সময় ওই এলাকায় এলে আকাশে উল্কাবৃষ্টি দেখা যায়। সাধারণত জুলাই-আগস্ট মাসে বেশি উল্কাপাত ঘটে। অবশ্য বছরের অন্য সময়েও মাঝরাতের পর বিচ্ছিন্নভাবে উল্কা পড়তে দেখা যায়।
আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক
Raja Tariqul Hasan Tusher:
Thanks for sharing.
Navigation
[0] Message Index
Go to full version