কামিন্দু মেন্ডিস: দুই হাতেই বোলিং করেন যিনি

Author Topic: কামিন্দু মেন্ডিস: দুই হাতেই বোলিং করেন যিনি  (Read 1505 times)

Offline Faruq Hushain

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 86
  • Test
    • View Profile
তার এই বিরল প্রতিভা ক্রিকেট বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ থেকেই। শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলতে এসেছিলেন ২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে। ডান ও বাঁহাতে তার বোলিংয়ের ছবি, ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেই কামিন্দু আবার এসেছেন বাংলাদেশে। এবার শ্রীলঙ্কা ইমার্জিং দলের হয়ে।

মাঝের এই তিন বছরে তার ক্যারিয়ার এগিয়েছে যথেষ্টই। ২০১৬ সালের পর ২০১৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপও খেলেছিলেন, সেবার শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক হিসেবে। সেবছরই শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলেন ইমার্জিং এশিয়া কাপে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে যায় গত বছরই, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে।

গত মার্চে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অভিষেক হয়েছে ওয়ানডেতে। ২০ বছর বয়সী ক্রিকেটার এখনও পর্যন্ত খেলেছেন দুটি ওয়ানডে ও চারটি টি-টোয়েন্টি।

২২ গজে মনে রাখার মতো কিছুই করতে পারেননি ছোট্ট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে। তবু ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে তার পরিচিতি আছে যথেষ্টই। সেটি দুই হাতে বোলিং সামর্থ্যের কারণেই।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুই হাতেই বোলিং করা প্রথম ক্রিকেটার অবশ্য কামিন্দু নন। ১৯৫৮ সালে গ্যারি সোবার্সের ৩৬৫ রান করার ইনিংসে হানিফ মোহাম্মদ বোলিং করেছিলেন ডান ও বাঁ হাতে। গ্রাহাম গুচও দুয়েকবার করেছেন। তবে হানিফ বা গুচরা ছিলেন একদমই অনিয়মিত বোলার।

কামিন্দুর স্বদেশি একজনও করেছিলেন। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে পরপর দুই বল ডান ও বাঁহাতে করেছিলেন হাশান তিলকরত্নে। সেটি ছিল ম্যাচের শেষ ওভার, ফল ছিল নিশ্চিত। তাই মজা করেই অমনটি করেছিলেন তিলকরত্নে।

ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে বিদর্ভের অলরাউন্ডার অক্ষয় কার্নেওয়ার দুই হাতে বোলিং করে বেশ সাড়া জাগিয়েছেন। তবে এখনও তিনি জাতীয় দলের কাছাকাছি নেই।

১৯৯৬ সালে মালয়েশিয়ায় এসিসি ট্রফিতে জাপানের বোলার তেতসুয়ো ফুজি পরপর দুই বল ডান ও বাঁহাতে করে আউট করেছিলেন বাংলাদেশের শাহরিয়ার হোসেন ও আমিনুল ইসলামকে। তবে সেটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল না।

কামিন্দুর বোলিং মজা করে নয়, অনিয়মিত বোলারও নন তিনি। বোলিং করেছেন শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটেই। মূল বোলারদের বিবেচনায় নিলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে সম্ভবত তিনিই প্রথম বোলিং করেছেন দুই হাতে।

পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও তিনি যথেষ্ট ভালো। চেষ্টা করছেন জেনুইন অলরাউন্ডার হয়ে উঠতে।

যেভাবে শুরু দুই হাতে

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তার একটিই উইকেট এখনও পর্যন্ত। সেটি নিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনে। কিন্তু একটা সময় তিনি ছিলেন কেবলই ডানহাতি অফ স্পিনার। আর বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে বাঁহাতি স্পিনও যোগ হলো কিভাবে? দিন কয়েক আগে মিরপুর একাডেমি মাঠে অনুশীলন শেষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সেই গল্প শোনালেন কামিন্দু।

“ছেলেবেলা থেকে আমি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, ডানহাতি স্পিনার। বাঁহাতি স্পিন শুরু করি অনূর্ধ্ব-১৩ পর্যায় থেকে। একদিন ভাইয়ের সঙ্গে বসে টিভিতে ক্রিকেট দেখছিলাম। এক বাঁহাতি স্পিনারের বোলিং খুব ভালো লেগে গেল। ভাইকে বললাম, বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আমি, বাঁহাতি স্পিনও চেষ্টা করব নাকি! ভাই বলল, ‘চেষ্টা করতে ক্ষতি কী!’ সেখান থেকেই শুরু।”

সেই থেকে শুরু। তবে শেষ খুঁজে পাচ্ছিলেন না কামিন্দু। ব্যাটিং ও ডানহাতি স্পিন দুটি অনুশীলন পর্যাপ্ত করার পরই কেবল বাড়তি সময়ে চেষ্টা করতেন বাঁহাতি স্পিন শেখার। নিয়ন্ত্রণে আনতেই সময় লেগেছে অনেক।

“অনূর্ধ্ব-১৩ পর্যায়ে শুরু করলেও তখন নিয়ন্ত্রণ ভালো ছিল না। এমনকি অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭ পর্যায়েও আয়ত্ত করতে পারিনি পুরোপুরি। আস্তে আন্তে রপ্ত করেছি। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে গিয়ে মোটামুটি ভালোভাবে বাঁহাতি স্পিন করতে শুরু করি।”

এখন তিনি দুটোতেই সমান দক্ষ, কোনো একটিকে এগিয়ে রাখতে পারেন না।

“দুটিতেই আমার নিয়ন্ত্রণ এখন সমান। অনুশীলনে দুটিই সমান চেষ্টা করি। ম্যাচে সাধারণত ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য বাঁহাতি স্পিন, বাঁহাতির জন্য ডানহাতি স্পিন করি। তবে ম্যাচের পরিস্থিতি, ব্যাটসম্যান বুঝে অন্যরকমও হতে পারে।”

বোলিং দুই হাতেই করতে পারলে ব্যাটিং কেন নয়? প্রশ্ন শুনে কামিন্দু হাসলেন, “নাহ, সেই চেষ্টাই কখনও করিনি। বাঁহাতি ব্যাটিংই ভালো লাগে।”

ব্যাটিংয়ে তিনি আদর্শ মানেন কুমার সাঙ্গাকারাকে। ভালো লাগে মাইক হাসিকেও। তবে বোলিংয়ে তেমন কাউকে অনুসরণ করেন না, “বোলিংয়ে তো আমার মতো কেউ নেই, কাকে করব অনুসরণ! তবে আকিলা দনাঞ্জয়ার মতো বোলিংয়ে বিভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করছি।”

স্বপ্নের সীমানায় টেস্ট ক্যাপ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেটুকু সুযোগ পেয়েছেন, কাজে লাগাতে পারেননি সেভাবে। জায়গা হারিয়েছেন। ইমার্জিং দল, ‘এ’ দল, ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে আরও পোক্ত করার চেষ্টা করছেন। ব্যাটিং সামর্থ্য আর বোলিংয়ে ধার বাড়াতে কাজ করছেন।

শুধু দুই হাতে বোলিং করতে পারলেই যে সুযোগ মিলবে না, সেই উপলব্ধি হয়েছে। হাত একটিই হোক বা দুটি, বোলিং করতে হবে ভালো ও কার্যকর। কামিন্দু চেষ্টা করে যাচ্ছেন নিজের সহজাত প্রতিভাকে ঘষেমেজে আরও শাণিত করতে।

“কোচরা আমাকে বলেন, একটি স্পেশাল উপহার আমি পেয়েছি। দুই হাতে বোলিং করতে পারার ক্ষমতা খুবই বিরল। এটি যেন কাজে লাগাই। আমিও চেষ্টা করছি যেন এই উপহার নষ্ট না হয়।”

আপাতত তার লক্ষ্য, যে কোনো সংস্করণে জাতীয় দলে ফেরা। তারপর পারফর্ম করে নিজেকে আরও ভালো করে চেনানো। জায়গা পাকা করা। আর, নিজের স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে চলা। মাথায় তুলতে চান টেস্ট ক্যাপ।

“সব ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে টেস্ট ক্রিকেট খেলার। আমিও টেস্ট খেলতে চাই। শ্রীলঙ্কার টেস্ট ক্যাপ মাথায় মাঠে নামতে চাই। দেশের হয়ে খেলতে চাই দীর্ঘদিন।”