জান্নাতে যাওয়ার সহজ নেক আমল

Author Topic: জান্নাতে যাওয়ার সহজ নেক আমল  (Read 1400 times)

Offline Mrs.Anjuara Khanom

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 478
  • Test
    • View Profile
মহান রব্বুল আলামিন যাকে পছন্দ করেন, তাকে বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করেন। এ কথাটি খুবই সহজ। আল্লাহর নেক বান্দাদের কাছে নেক আমল অনেক বড় নেয়ামত। তিনি তাঁর  নেয়ামত বহুল জান্নাত নেক বান্দাদের জন্যই তৈরি করে রেখেছেন। প্রিয় পাঠক! চলুন দেখি এ সম্পর্কে পবিত্র হাদিসে কী বলা আছে,  এক সাহাবি বললেন যে, আমি হজরত আবু যর (রা.)-এর কাছে আবেদন জানালাম, আমাকে এমন আমল বলে দিন, যেই আমল করলে বান্দা জান্নাতে যাবে। তিনি বললেন, এ বিষয়টি আমিও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আবেদন করেছিলাম, তিনি জওয়াব দিয়েছেন, যে আল্লাহর প্রতি ইমান রাখবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, নিশ্চয় ইমানের সঙ্গে কোনো আমল আছে? তিনি বললেন, আল্লাহ তাকে যা দান করেছেন তা থেকে কিছু পরিমাণে দান করবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, যদি এমন নিঃস্ব হয় যে, তার কিছুই নেই? তিনি বললেন, মুখে সুন্দর কথা বলবে। আমি বললাম, যদি কথা বলতে না পারে? তিনি বললেন, তাহলে বিপদগ্রস্তকে সাহায্য করবে। আমি বললাম, যদি সে এমন দুর্বল হয় যে, তার কোনো ক্ষমতা নেই? তিনি বললেন, তাহলে কর্মহীনকে কর্ম জুগিয়ে দেবে। আমি বললাম, সে নিজেই যদি কর্মহীন হয়? তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে তাকালেন, বললেন, তুমি যদি বলতে চাও যে, তোমার সঙ্গীর মধ্যে ভালো কোনো যোগ্যতাই নেই, তবে সে যেন অন্তত তার কষ্ট দেওয়া থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখে। তখন আমি বললাম, ইয়া রসুলাল্লাহ! এ তো অনেক সহজ কথা! আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, যে বান্দাই আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়ার উদ্দেশ্যে এসবের কোনো একটার ওপর আমল করবে, কেয়ামতের দিন উক্ত আমল তাকে হাত ধরে নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেবে। সুবহানআল্লাহ। -(সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৩৭৩)। এখানে আমরা দেখতে পেলাম, নেক আমল ইমানের শাখা। নেক আমলের অঙ্গন অতি বিস্তৃত। এক আমল সম্ভব না হলে অন্য আমলের দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন কতই না সহজ। তবে কখনো যদি কোনো  মুমিন বান্দা কোনো ধরনের গুনাহে লিপ্ত হয়ে যায়, এবং একপর্যায় সে কৃত গুনাহ হতে তওবা করতে চায় তার দরজাও মহান রব্বুল আলামিন খোলা রেখেছেন। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিনের গুনাহ হয়ে গেলে তাতে তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। তখন সে যদি তওবা করে, গুনাহ ছেড়ে দেয় এবং ইস্তেগফার করে তাহলে তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু যদি আরও গুনাহ করে, তাহলে কালো দাগ বাড়তে থাকে, একসময় তার অন্তর কালো দাগে ছেয়ে যায়। এটাই সেই জং, যা আল্লাহতায়ালা কোরআনে উল্লেখ করেছেন, ‘না, কখনো নয়; বরং তাদের কৃতকর্ম তাদের অন্তরে জং ধরিয়ে দিয়েছে। (সূরা মুতাফফিফিন আয়াত : ৮৩)। অপর হাদিসে মুমিনের সৎ গুণাবলি এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিন কটুভাষী হতে পারে না, লানতকারী হতে পারে না এবং অশ্লীল ও অশালীন কথা বলতে পারে না। (আলআদাবুল মুফরাদ, হাদিস ৩১২)। এসব কর্ম ইমানের ও মুুমিনের শানের পরিপন্থী। মুমিনের কর্তব্য, এগুলো থেকে নিজেকে পবিত্র রাখা।  মুমিনের নামাজ কেমন হবে এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুমিন যখন নামাজে থাকে তখন সে আসলে তার রবের সঙ্গে ‘আলাপে’ থাকে। সুতরাং সে যেন তার সামনে ও ডান পাশে থুথু না ফেলে। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৪১)।  কোরআনের সঙ্গে মুমিনের সম্পর্কে হজরত আবু মূসা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে মুমিন কোরআন তেলওয়াত করে এবং কোরআন অনুযায়ী আমল করে সে হলো কমলা লেবুর মতো। এর স্বাদও উত্তম, ঘ্রাণও উত্তম। আর যে মুমিন কোরআন তেলাওয়াত করে না, তবে কোরআন অনুযায়ী আমল করে, সে হলো খেজুরের মতো। স্বাদ ভালো, তবে এর কোনো ঘ্রাণ নেই। আর মোনাফিক, যে কোরআন পাঠ করে সে হলো রায়হান ঘাসের মতো, এর ঘ্রাণ ভালো, তবে স্বাদ তিক্ত। আর যে মোনাফিক কোরআন তেলওয়াত করে না, সে হলো মাকাল ফলের মতো, স্বাদও তিক্ত, আবার দুর্গন্ধযুক্ত। -(সহিহ বুখারি, হাদিস ৫০২০)।

প্রিয় পাঠক! আমরা বুঝতে পারলাম যে, মুমিন ব্যক্তি সব গুনাহ  থেকে বিরত থাকবে। বিশেষ করে গিবত শেকায়েত থেকে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত রাখবে। এ সম্পর্কে হাদিসে  বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে ঐসব লোক, যারা মুখে ইমান এনেছে, অথচ ইমান এখনো তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, তোমরা মুসলমানদের গিবত কর না, তাদের অপ্রকাশিত দোষ-ত্রুটির অনুসন্ধান কর না, কেননা যে ব্যক্তি তাদের দোষ অনুসন্ধান করবে, আল্লাহ তার দোষ অনুসন্ধান করবেন। আর আল্লাহ যার দোষ অনুসন্ধান করবেন তাকে তো তিনি তার ঘরে লাঞ্ছিত করবেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ১৯৭৭৬)।
এ হাদিস থেকে জানা গেল যে, কোনো মুসলমানের গিবত করা, তার দোষ-দুর্বলতা প্রকাশে উৎসুক হওয়া প্রকৃতপক্ষে এমন এক নিন্দনীয় কাজ যা শুধু ওই লোকদের থেকেই প্রকাশিত হতে পারে যারা মুখে তো মুসলমান কিন্তু ইমান এখনো তাদের অন্তরে স্থান করে নিতে পারেনি। (মাআরিফুল হাদিস)।
মহান রব্বুল আলামিনের কাছে আমরা সবাই কামনা করি তিনি যেন আমাদের সব মুসলমানকে প্রকৃত ইমানদার হয়ে জান্নাতের মালিক বানান। আমিন।

লেখক : মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব ও ইসলামী প্রোগ্রাম উপস্থাপক নিউজ২৪।
Mrs, Anjuara Khanom
Library Assistant Officer,
Daffodil International University
DSC Campus
02224441833/34