এক দিনেই ২৭৯ পয়েন্ট হারাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টকএক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। আজ সোমবার লেনদেনের শুরু থেকেই সূচকের একটানা পতন লক্ষ করা যায়। প্রথম ৬ মিনিটের লেনদেনে ডিএসইর সূচক ডিএসইএক্স হারায় ১০০ পয়েন্ট। বেলা ১১টায় সূচকটি দেড় শ পয়েন্ট হারায়। বেলা ১১টা ১৬ মিনিটে উধাও হয় ২০০ পয়েন্ট। লেনদেন শেষে সূচকটি কমে ২৭৯ পয়েন্ট, অবস্থান করছে ৪ হাহার ৮ পয়েন্টে। মাত্র দুটি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে আজ।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে গতকাল রোববার লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স কমে ৯৭ পয়েন্ট। পরে বিকেলে বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার খবর আসে। আর এর প্রভাবে আজ বিশাল ধস নামল ডিএসইতে।
বাজারের এ পরিস্থিতির কারণে জানতে চাইলে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, এমনিতেই বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সংবেদনশীল। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে আজ দরপতনের গতি বেশি দেখা যাচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, মূলত করোনাভাইরাসের প্রভাবে আজকে শেয়ারবাজারে এই পতন। আতঙ্কিত হয়ে মানুষ শেয়ার বিক্রি করেছে। তবে এটা সাময়িক প্রভাব। কেটে যাবে। এ অবস্থা থাকবে না।
সকালে বাজার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘আজ দুই সপ্তাহ ধরেই সূচক কমছে। উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখছি না। বাজারে কোনো স্থিতিশীলতা নেই। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে। বাজারে আজকে বিক্রির চাপ অনেক। ক্রেতা নেই। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরাও বুঝছেন না কী করবেন।’
এই বিনিয়োগকারী জানান, ২০১৫ সালে অবসরের পর ৭৫ লাখ টাকা নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা শুরু করেন তিনি। এখন তাঁর শেয়ারের দর কমে কমে ঠেকেছে ৭ লাখে। আজ ৭ লাখে সব শেয়ার বিক্রি করেছেন তিনি। এ পরিস্থিতি কাউকে বোঝানোর অবস্থাও নেই তাঁর।
সাইফুল ইসলাম নামের আরেক বিনিয়োগকারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানা নবম দিনের মতো দর কমেছে। আজ বাজারে প্যানিক সেল হচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজারে। দর যত কমছে, সেল প্রেশার বাড়ছে। সবাই মার্জিনে ব্যবসা করে, লোকসান চায় না। দাম কমতে থাকলেই বিক্রি করে দেয়।’
ডিএসইতে আজ দর কমেছে প্রায় সব শেয়ারেরই। হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র দুটির দর বেড়েছে। অপরিবর্তিত আছে একটির দর। লেনদেন হয়েছে মাত্র ৪৯৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার।
ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হলো স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোন, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড, সামিট পাওয়ার, সি পার্ল, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ওরিয়ন ইনফিউশন, ব্যাংক এশিয়া, ভিএফএস থ্রেড ডায়িং লিমিটেড ও ওরিয়ন ফার্মা।
আজ ডিসইতে যে দুটি কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে, সেগুলো হলো এপিএসসিএল নন কনভারটেবল অ্যান্ড ফুললি রিডেমেবল কুপন বিয়ারিং বন্ড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই কমেছে ৭৫৮ পয়েন্ট। হাতবদল হওয়া শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর কমেছে ২৪৯টির, বেড়েছে ৩টির, অপরিবর্তিত আছে ৪টির দর। এ সময় পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে ৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকার শেয়ার।