মহাকাশ মানুষের জন্য অনেক আগে থেকেই খুব রহস্যের একটি বিষয়। মানুষ চাঁদ তারার দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতো সেই আদিকাল থেকে। এই মহাকাশকে ঘিরে মানুষের জল্পনাকল্পনা এবং সেই কল্পনাগুলো থেকে তৈরি বিভিন্ন মিথ আমাদের সবারই জানা। মানুষ চাঁদকে নিয়েও কল্পনা করতো অনেক কিছু। আধুনিক বিজ্ঞান মানুষের কৌতুহলের অবসান ঘটায় এবং জানান দেয় যে চাঁদ পৃথিবীর উপগ্রহ। মহাকাশে অনেক ধরনের স্যাটেলাইট রয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানের ছোয়ায় মানুষও মহাকাশে নিজের তৈরি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। আমরা মূলত কৃত্রিম উপগ্রহের কিছু কাজ সম্পর্কে জানবো।
১৯৫৭ সালের চৌঠা অক্টোবর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের সর্বপ্রথম স্যাটেলাইট স্পুটনিক ১ স্থাপন করে। এরপর প্রায় ৪০টি দেশ থেকে সর্বমোট ৮১০০টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হয়। ২০১৮ সালের তথ্য অনুযায়ী এখনো প্রায় ৪৯০০টি স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপিত আছে এবং বাকিগুলোর ধ্বংসাবশেষ কক্ষপথগুলোতে রয়েছে। প্রায় ৫০০টি অপারেশনাল স্যাটেলাইট পৃথিবীর সর্বনিম্ন কক্ষপথে আছে, ৫০টি স্যাটেলাইট মধ্যম কক্ষপথে আছে এবং ৫০টি স্যাটেলাইট আছে জিয়োস্টেশনারি অরবিটে।
যেভাবে কাজ করে
এখন আসা যাক স্যাটেলাইটের কাজ প্রসঙ্গে। স্যাটেলাইট এর কাজ নির্ভর করে মুলত সেটি কোন উদ্দেশ্যে বানানো এবং উঠক্ষেপণ করা তার উপরে। যেমনঃ স্যাটেলাইট ব্যবহৃত হতে পারে তারকাপুঞ্জির ম্যাপিং করার জন্য অথবা তারকার গতিপথ নির্ণয়ের জন্য। আবার একটি গ্রহের উপরিতলের মানচিত্র কেমন হবে তা বুঝার জন্য স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হয়। যে গ্রহে স্যাটেলাইট প্রেরণ করা হয় সেই গ্রহের বিভিন্ন বস্তুর বা স্থানের ছবি তুলতে এটি ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের স্যাটেলাইট বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ
আর্থ রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট: এই স্যাটেলাইট মূলত অসামরিক স্যাটেলাইট যেটি তৈরির উদ্দেশ্য হচ্ছে কক্ষপথ থেকে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করা। এটি পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এর পরিবেশকে দেখে, পৃথিবীর ম্যাপিং করে। প্রথম আর্থ রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট হচ্ছে স্পুটনিক ১। স্পুটনিক ১ যে রেডিও সিগন্যাল পাঠাতো তা দিয়ে বিজ্ঞানীরা আয়নমন্ডল অধ্যয়ন করতো।
কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট: কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট হচ্ছে সেই ধরনের কৃত্রিম উপগ্রহ ট্রান্সপন্ডারের মাধ্যমে রেডিও টেলিযোগাযযোগ মাধ্যমের সিগন্যাল স্থাপন করে। এটির একটি উৎস থাকে যেটি হচ্ছে ট্রান্সমিটার এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এর বিভিন্ন গ্রাহক থাকে এবং স্যাটেলাইটটি উৎস ও গ্রাহকের মধ্যে যোগাযোগের চ্যানেল তৈরি করে দেয়। এই স্যাটেলাইট টেলিভিশন, ডিশ মিডিয়া, টেলিফোন, রেডিও, ইন্টারনেট এবং সামরিক বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।
নেভিগেশন স্যাটেলাইট: এই স্যাটেলাইট দ্বারা ব্যক্তির অবস্থান নির্ণয় করা যায়। কোনো বস্তু ঠিক কোন জায়গায় রয়েছে তা খুজে বের করতেও এই স্যাটেলাইট সাহায্য করে। তাছাড়া বৈশ্বিক সময় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়, কোনো স্থানের অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ নির্ণয়ে এটি ব্যবহৃত হয়। মূলত জিপিএস এর কার্যক্রম পরিচালিত হয় নেভিগেশন স্যাটেলাইট দিয়ে।
ওয়েদার স্যাটেলাইট: এটি ব্যবহৃত হয় মূলত পৃথিবীর আবহাওয়া ও জলবায়ু পর্যবেক্ষণের জন্যে। এটি ধুলি ঝড়, বায়ু দুষণ, মেরু অঞ্চলের বরফের গলন, সমুদ্রে পানির উচ্চতা, বৃষ্টিপাত,বায়ুর আদ্রতা, বৃষ্টিতে বিভিন্ন রাসায়নিকের পরিমাণ, পৃথিবীতে বিভিন্ন রাসায়নিকের পরিমাণ, বায়ুতে গ্রীন হাউস গ্যাসের পরিমাণ, বজ্রপাত, মেঘের অবস্থান, দেশের কোন স্থানে কখন তাপমাত্রা কেমন হতে পারে, দিনের তাপমাত্রা কেমন হতে পারে, রাতের তাপমাত্রা কেমন হতে পারে ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে। ওয়েদার স্যাটেলাইট আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তথ্য দেয় সেটি হচ্ছে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত। এটি একটি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এর ফলে যে মেঘ তৈরি হয় তার সাথে অন্যান্য আগ্নেয়গিরির উপরের মেঘের তুলনা করে তথ্য সংগ্রহ করে।
ইনভার্নমেন্ট স্যাটেলাইট: ওয়েদার স্যাটেলাইট আর ইনভার্নমেন্ট স্যাটেলাইট এর কাজ এক নয়। ইনভার্নমেন্ট স্যাটেলাইট পৃথিবীর অভ্যন্তরে যে গাছপালা আছে তার যে পরিবর্তন সেটি পর্যবেক্ষণ করে, সমুদ্রের অবস্থা, সমুদ্রের পানির রঙ পরিবর্তন, আইস ফিল্ড ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে।
স্যাটেলাইট মূলত রকেট দ্বারা মহাকাশে প্রেরণ করা হয় এবং একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথের গতির সাথে তাল মিলিয়ে একে কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। এই হলো মোটা দাগে স্যাটেলাইট সমূহের কাজ।
সুতরাং বলা যায় যে, স্যাটেলাইট আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে নানা কাজে বহুল ব্যবহৃত এবং আমাদের নানা কাজের সাথে যুক্ত।