শিশু বুকের দুধ খেতে চায় না!

Author Topic: শিশু বুকের দুধ খেতে চায় না!  (Read 2397 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
অনেক মা শিশুকে তাড়াহুড়ো করে কোনো রকম বসে বুকের দুধ খাওয়াতে চান। বুকের দুধ বের হওয়ার জন্য যে হরমনটি কাজ করে, তাড়াহুড়ো করলে তা ঠিকমতো কাজে আসে না। ফলে ঠিকভাবে বসে সঠিক পদ্ধতিতে সময় নিয়ে দুধ পান না করানো হলে শিশু পেট ভরে বুকের দুধ পায় না। পরবর্তী সময়ে এসব মায়ের বুকে আর দুধ থাকে না।
প্রসবের পর নতুন মা ও নবজাতক শিশু উভয়ের কাছে বুকের দুধ সঠিকভাবে পান করানোর বিষয়টি রপ্ত করতে কিছুটা সময় লাগে। যথেষ্ট সময় নিয়েও যদি শিশু বুকের দুধ পান করতে না পারে, তখনই মায়েদের সাহায্য করতে হবে। যত দিন শিশু বুকের দুধ খেতে না চায়, তত দিন শিশুকে বুকের দুধ টিপে বের করে কাপে বা চামচে করে খাওয়াতে হবে।
কখনো বা দেখা যায়, শিশু কিছুতেই মায়ের বুকে যেতে চাইছে না বা মায়ের দুধ খেতে চাইছে না। মা যখনই বুকে নিতে চান, অমনি শিশু কান্নাকাটি করে। শিশুকে দুধ পান করানোর সময় মা বা অন্য কেউ যদি শিশুর মাথা পেছন থেকে বুকে চেপে রাখে বা সে চেষ্টা করে, শিশু তখন অত্যন্ত বিরক্তি বোধ করে। পরবর্তী সময়ে এই শিশু আর মায়ের বুকে যেতে চায় না। শিশুকে জোর করে খাওয়ানো থেকে কিছুক্ষণের জন্য অব্যাহতি দিতে হবে। পরে শান্ত হলে সঠিক নিয়মে চেষ্টা করতে হবে। দাদি, নানি বা বাইরের বেশি মানুষের অতিরিক্ত আদরেও শিশু বিরক্ত হয়। বারবার এ-কোল থেকে সে-কোলে টানাটানি করলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
যদি কোনো শিশুকে চুষনি বা বোতল দেওয়া হয়, তাহলে শিশু নিপল ও স্তনের বোঁটা দিয়ে দুধপানে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। বোতলের নিপলে একটু চাপ লাগাতেই দুধ পেয়ে যায়। অথচ স্তনের বোঁটা চুষে টেনে পরিশ্রম করে খেতে হয়। উপরন্তু টিনের দুধ বুকের দুধের চেয়ে বেশি মিষ্টি। ফলে শিশু আর মায়ের দুধ খেতে চায় না।
বুকের দুধ পানরত অবস্থায় কোনো কোনো সময় স্বাস্থ্যকর্মীরা বাচ্চাকে ইনজেকশন বা টিকা দেন। অথবা দুধ না খাওয়া অবস্থায়ও যদি শিশুকে বুকের দুধ পানের অবস্থানে রেখে ইনজেকশন প্রয়োগ করেন, তবে শিশু বুকের দুধ খাওয়ানোর অবস্থানের কথা মনে করেই পরবর্তী সময়ে বুকে যেতে চায় না। সে মনে করে, এখন তাকে ব্যথা দেওয়া হবে।
বুকের দুধ পানের সময় শিশু মায়ের বুকে সঠিক অবস্থানে না থাকলে দুধ পানে অসমর্থ হয়। দুধ খাওয়ার সময় শিশু যদি ঘাড় বাঁকিয়ে থাকে, তাহলে এমন সমস্যা হয়। শিশু ছোট হাঁ করার সঙ্গে সঙ্গে যদি স্তন দেওয়া হয়, তাহলে সে শুধু বোঁটা মুখে নেয়। শুধু বোঁটা চুষলে শিশু পর্যাপ্ত দুধ পায় না বলে নিরাশ হয়ে সে আর বুকের দুধ খেতে চায় না। মনে রাখা ভালো, বোঁটায় দুধ থাকে না, দুধ বের হয় মাত্র। বোঁটার পেছনে কালো অংশের নিচেই দুধ থাকে।
কখনো মায়ের দুধের প্রবাহ বেশি থাকে বলে সময়ে সময়ে শিশুর বুকের দুধ খাওয়ার সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। শিশু ঘুমন্ত অবস্থায়, ঘুম ঘুম ভাব থাকলে, ক্ষুধার্ত না হলে, দুর্বল হলে বা অসুস্থ থাকলে দুধ টেনে খেতে চায় না। বেশি পরিমাণে জোরে দুধ এলে খাওয়ানোর সময় চোখেমুখে দুধ ছিটিয়ে পড়ে, তাই শিশুকে খাওয়ানোর আগে কিছুটা দুধ টিপে গেলে নিতে পারেন। এতে বোঁটাও তার নিজের আকার ফিরে পাবে। শিশুর বোঁটাসহ কালো অংশ ধরতে সুবিধা হবে। কোনো কোনো শিশুকে দেখা যায়, এক বুকে খায়, কিন্তু অন্য বুকে খেতে চায় না। এসব ক্ষেত্রে ভেতরে ঢোকানো এবং বুকে বেশি না দেওয়ার কারণে পর্যাপ্ত দুধ শিশু পায় না। এ ছাড়া স্তন ফুলে থাকলে মা-ও খাওয়াতে চান না, শিশুও বুকে যেতে চায় না। অথবা বুকে মা শিশুকে যেভাবে ধরেন, শিশু এতে ব্যথা পায় বা অস্বস্তি বোধ করে।
প্রসবের সময় বা প্রসব-পরবর্তী অপ্রয়োজনে মাকে ওষুধ দেওয়া ঠিক নয়। এতে শিশুর ঘুম ঘুম ভাব আসে এবং বুকের দুধ খেতে উৎসাহ থাকে না।
শিশুকে অন্য কোনো খাবার, পানি বা চিনির পানি দিলে সে বুকের দুধ খাওয়ার আগ্রহ হারায়। পূর্ণ ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
শিশু যেন কোনোভাবেই ব্যথা না পায়। যেমন প্রসবের সময়, করসেপ বা ভ্যাকুয়াম হলে শিশুর কোনো জায়গায় আঘাত থাকতে পারে, সেসব ব্যথার জায়গায় বুকের দুধ পানের সময় যেন চাপ না পড়ে, সে খেয়াল রাখা দরকার।

প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুবিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ১৭, ২০০৯