শিশুর পা জন্মগত বাঁকা নয় তো!

Author Topic: শিশুর পা জন্মগত বাঁকা নয় তো!  (Read 2117 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
আচ্ছা ভাবুন তো, বাঁকা পা নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুটি কি কখনো দুর্দান্ত ফুটবলার হতে পারবে? পারবে, ঠিকমতো চিকিৎসা হলেই। বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়, ইংল্যান্ডের লিভারপুল দলের অধিনায়ক স্টিভেন জেরার্ড এমনই বাঁকা পা বা ক্লাব ফুট নিয়ে জন্মেছিলেন। সঠিক চিকিৎসায় তিনিই আজ বিশ্বখ্যাত ফুটবলার।
শিশুরা যেসব জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে, এর মধ্যে বাঁকা পা অন্যতম। এতে জন্মগতভাবে শিশুর পা এমনভাবে বসানো থাকে, যা গল্‌ফ খেলার স্টিক বা ক্লাবের মতো দেখায়। তাই এমন নামকরণ। প্রতি হাজারে এক থেকে দুজন শিশু এ সমস্যা নিয়ে জন্মাতে পারে। তাদের অর্ধেক এক পায়ের, বাকি অর্ধেক দুই পায়ের সমস্যায় ভুগবে। স্টিভেন জেরার্ড ছাড়াও বহু বিখ্যাত ব্যক্তি এ সমস্যা নিয়ে জন্মেছিলেন। যেমন-রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস, কবি লর্ড বায়রন, নাৎসি প্রচারমন্ত্রী জোসেফ গোয়েবলস, চলচ্চিত্রকার ডেভিড লিঞ্চ, অভিনেতা ডাডলি মুর প্রমুখ।

কেন এই বাঁকা পা
অল্প কিছুসংখ্যক ক্ষেত্রে স্মায়ু বা মাংসপেশির বিভিন্ন রোগের কারণে ক্লাব ফুট হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাঁকা পায়ের নির্দিষ্ট কারণ নেই। এগুলোকে বলে ইডিওপেথিক ক্লাব ফুট। পরিবারে কারও এ রোগ থাকলে সেই পরিবারের শিশুদের বাঁকা পা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

চিকিৎসা
নানা ধরনের চিকিৎসা-পদ্ধতি বর্ণিত হলেও মূলত দুই ধারায় চিকিৎসা করা হয়। প্রথমত, অস্ত্রোপচার ছাড়া বা নন-অপারেটিভ। এতে প্লাস্টার বা বিভিন্ন ধরনের জুতা বা স্প্লিন্টের সাহায্যে চিকিৎসা করা হয়। দ্বিতীয়ত, অপারেটিভ বা সার্জারির মাধ্যমে। এতে অস্ত্রোপচার বা বিভিন্ন ধরনের সার্জিক্যাল ফ্রেমের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দুই ধরনের চিকিৎসার সমন্বয়ে কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাঁকা পায়ের চিকিৎসাকাল বেশ দীর্ঘ এবং মূল চিকিৎসার পরও কিছুদিন বিশেষ ধরনের জুতা ব্যবহার করতে হয়। রোগীকে চার-পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত চিকিৎসকের নিয়মিত তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। সঠিক চিকিৎসায় ইডিওপ্যাথিক ক্লাব ফুট সম্পূর্ণ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও অন্যান্য কারণে হওয়া বাঁকা পায়ের চিকিৎসা বেশ কঠিন এবং ফলও ভালো নয়। শিশুর জন্মের সাত দিনের মধ্যেই ক্লাব ফুটের চিকিৎসা শুরু হওয়া উচিত।

পনসেটি মেথড
মার্কিন শিশু অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ইগনাসিও পনসেটি আবিষ্কৃত চিকিৎসা পদ্ধতিটি বাংলাদেশসহ বিশ্বে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এ পদ্ধতিতে কিছুদিন প্লাস্টারের পর লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে ছোট একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মূল চিকিৎসা শেষ হয়। বাংলাদেশেও পদ্ধতিটি চালু হয়েছে। ফলে জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পা সুস্থ করার পরিমাণ কমেছে।

রোগ শনাক্তকরণে মা-বাবার দায়িত্ব
বাঁকা পা এমন একটি জন্মগত ত্রুটি, যা জন্মের পরপরই সবার নজরে পড়ে। যাদের বাঁকা পা থাকে, তাদের জন্মগত অন্যান্য ত্রুটিও থাকতে পারে। সুতরাং শুরুতেই একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া উচিত, যিনি পরীক্ষা করে দেখবেন শিশুটির অন্য কোনো জন্মগত ত্রুটি আছে কি না। এরপর বাঁকা পায়ের চিকিৎসার জন্য একজন অর্থোপেডিক সার্জনের পরামর্শ নেওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, জন্মের পরপরই সঠিক চিকিৎসা শুরু হলে বাঁকা পা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যেতে পারে। নইলে শিশুটি হয়তো বেড়ে উঠবে চিরপঙ্গুত্ব নিয়ে।

সারওয়ার ইবনে সালাম
অর্থোপেডিক সার্জন ও শিশু অর্থোপেডিক রোগবিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ১৭, ২০০৯