শিশুদের কিডনি রোগ

Author Topic: শিশুদের কিডনি রোগ  (Read 1735 times)

Offline Niger

  • Newbie
  • *
  • Posts: 17
  • Travel Story
    • View Profile
শিশুদের কিডনি রোগ
« on: March 12, 2020, 12:36:03 PM »

                                                                            শিশুদের কিডনি রোগ

কিডনি আমাদের দেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যা দেহের ক্ষতিকর দূষিত পদার্থ পেসাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিশ্বের জনসংখ্যার শতকরা ১০ শতাংশ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। শিশুরাও কিডনি সমস্যায় ভোগে। শিশুদের কিডনি রোগের চিকিৎসা বয়স্কদের কিডনি রোগের চিকিৎসা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ, তাদের অসুস্থতার ধরন বড়দের থেকে আলাদা। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, আমাদের দেশে হাসপাতালে আসা শিশুদের মধ্যে প্রতি ২০ জনে ১ জন কিডনি রোগে আক্রান্ত। শিশুদের কিডনি রোগের এক বড় অংশ-ই জন্মগত কিডনি রোগ। যা সঠিক চিকিৎসার অভাবে কিডনি ফেইলিউর হিসেবে দেখা দিতে পারে।


লক্ষণ সমূহ:


কিডনি আমাদের দেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যা দেহের ক্ষতিকর দূষিত পদার্থ পেসাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বিশ্বের জনসংখ্যার শতকরা ১০ শতাংশ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। শিশুরাও কিডনি সমস্যায় ভোগে। শিশুদের কিডনি রোগের চিকিৎসা বয়স্কদের কিডনি রোগের চিকিৎসা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ, তাদের অসুস্থতার ধরন বড়দের থেকে আলাদা। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, আমাদের দেশে হাসপাতালে আসা শিশুদের মধ্যে প্রতি ২০ জনে ১ জন কিডনি রোগে আক্রান্ত। শিশুদের কিডনি রোগের এক বড় অংশ-ই জন্মগত কিডনি রোগ। যা সঠিক চিকিৎসার অভাবে কিডনি ফেইলিউর হিসেবে দেখা দিতে পারে।

লক্ষণ সমূহ:


ক) জন্মগত কিডনি রোগ:
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জন্মগত কিডনি রোগ, শিশু মায়ের গর্ভে থাকাকালীন আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। যেমন: কিডনি অথবা প্রস্রাবের নালি ফুলে যাওয়া, একটি বা উভয় কিডনিতে এক বা একাধিক সিস্ট থাকা। মায়ের গর্ভের পানি কম বা বেশি হওয়া ইত্যাদি। এ ছাড়া, নবজাতক ও শিশুদের, ঘন ঘন প্রস্রাব করা, ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব করা এবং ছেলেদের প্রস্রাব দূরে না যাওয়া, প্রস্রাব করা শেষ হওয়ার পর ও ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব হওয়া, পেটের নিচের অংশে ফোলা বা কোনো চাকা অনুভূত হওয়া এবং ঘন ঘন জ্বর হওয়া।

খ) জন্মের পরে পরবর্তীতে হওয়া কিডনি রোগ:
১) প্রস্রাব করার সময় ব্যথা হওয়া, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাওয়া অথবা ফেনা ফেনা প্রস্রাব হওয়া।
২) সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মুখ ফুলে যাওয়া, পা ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাল চাকা চাকা দাগ হওয়া।
৩) শারীরিক দুর্বল ভাব, ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া, বয়সের তুলনায় শিশুর বিকাশ কম অথবা কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ।
৪) স্বাভাবিকের তুলনায় কম বা বেশি প্রস্রাব করা এবং ৫ বছর বয়সের পর ও বিছানায় প্রস্রাব করা।

কিডনি ফেইলিউর বা কিডনি বিকল হওয়া:

কিডনি ফেইলিউর সাধারণত ২ ধরনের, একিউট বা হঠাৎ কিডনি ফেইলিউর এবং ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি কিডনি ফেইলিউর। নিম্নলিখিত কারণে শিশুদের একিউট বা হঠাৎ কিডনি ফেইলিউর হতে পারে:
১) অতিরিক্ত রক্তপাত, বড় অপারেশন, ডায়রিয়া বা দীর্ঘক্ষণ বমি।
২) রক্তের সংক্রমণ বা অন্যান্য কারণে কিডনিতে অক্সিজেন এবং রক্ত পৌঁছাতে না পারলে।
৩) কিছু ওষুধ আছে যা খেলে পরবর্তীতে কিডনি সমস্যা হতে পারে।
৪) হেমোলাইটিক ইউরেমিক সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুরা।

নিম্নলিখিত সমস্যার কারণে শিশুদের ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি কিডনি ফেইলিউর হতে পারে:
১) বারবার মুত্রনালির সংক্রমণ বা দীর্ঘদিন মুত্রনালিতে বাধার ফলে প্রস্রাব পরিষ্কার না হলে।
২) প্রস্রাবে প্রোটিন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকলে।
৩) পূর্বে একিউট কিডনি ফেইলিউর হলে এবং তা সঠিক নিয়মে ফলোআপ না করালে।
৪) কেউ উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস এ ভুগলে এবং তার সঠিক চিকিৎসা না করালে।
৫) জিনগত কিডনি রোগ থাকলে।

রোগ নির্ণয়:

শিশুদের কিডনি রোগ শনাক্ত এবং যথাযথ চিকিৎসার জন্য একজন দক্ষ শিশু কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ বা পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজিস্ট এর পরামর্শ প্রয়োজন। অভিজ্ঞ পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজিস্ট এর নির্দেশনা অনুযায়ী রক্ত, প্রস্রাব এবং আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমে কিডনি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।

চিকিৎসা:

কিডনি রোগের চিকিৎসা নির্ভর করে তা কোন পর্যায়ে আছে বা কি কারণে হয়েছে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে দ্রুত রোগ নির্ণয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জন্মগত কিডনি রোগের চিকিৎসায় কিছু ক্ষেত্রে অপারেশন প্রয়োজন হয়, তবে এদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশুই বারবার প্রস্রাবের সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে তাই তাদের ক্ষেত্রে লম্বা সময় ধরে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হয়।
ডায়রিয়া জনিত কারণে কিডনি সমস্যা হলে, প্রয়োজনমতো পানিশূন্যতা এবং রক্তের লবনের তারতম্য ঠিক করা হয়। ক্রনিক কিডনি ফেইলিউর প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে, ওষুধের সাহায্যে এবং জীবনযাত্রা পরিবর্তন বা নিয়ন্ত্রণ করে বেশ উপকার পাওয়া যায়। তবে, শেষ পর্যায়ে ধরা পড়লে, ডায়ালাইসিস ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট এর প্রয়োজন হয়।

প্রতিকার:

শিশুকে পরিমিত পরিমাণ পানি খাওয়ান, বিশেষ করে ডায়রিয়া বা জ্বর হলে বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ান। শিশুর যেন নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস তৈরি হয়। বাচ্চার যদি কোনো কিডনি রোগ থাকে অথবা বংশে কারও কিডনি রোগ থাকলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। শিশুর খাদ্যতালিকায় প্যাকেটজাত খাবার ও পানীয় নিয়ন্ত্রণ করুন। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

ডা. মো. আব্দুল কাদের
অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট, শিশু কিডনি রোগ বিভাগ
স্কয়ার হসপিটাল লিমিটেড, ঢাকা।
Mst. Niger Sultana
Coordination Officer
Daffodil International University