শিশুর বিশেষ সমস্যা

Author Topic: শিশুর বিশেষ সমস্যা  (Read 1907 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
শিশুর বিশেষ সমস্যা
« on: January 02, 2012, 08:32:43 PM »
শিশুদেরও পাইলস হয়। তবে প্রকৃত পাইলস শিশুদের কম হয়। অভিভাবকরা শিশুদের যে পাইলসের সমস্যা অর্থাৎ টয়লেটে রক্ত গেলে চিকিৎসকের কাছে আসেন তাদের বেশির ভাগই পাইলস নয়। শিশুদের টয়লেটে রক্ত যাওয়ার প্রধান কারণ রেকটাল পলিপ। এটি এক ধরনের আঙ্গুর ফলের মতো টিউমার, যা ক্যান্সার নয়। এ টিউমার থেকে প্রচুর রক্ত যায়। এগুলো এক বা একাধিক হতে পারে এবং এরূপ শত শত পলিপ থাকতে পারে যা তেকে সাধারণত রক্ত ও মিউকাস বা আম যায়। রোগীর অভিভাবকরা মনে করেন যে এটি রক্ত আমাশয় এবং ওষুধ দিলে ভাল করা যাবে রেকটাল পলিপ রোগের চিকিৎসা হচ্ছে এটিকে কেটে ফেলে দেয়া। রোগীকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে এটি করতে হয়। অভিভাবকদের ভয়, ছোট্ট শিশুকে অজ্ঞান করলে তার ক্ষতি হবে। কিন্তু বহুদিন রক্ত যাওয়ায় শিশুটি যে রক্তশূন্যতায় ভুগছে সেদিকে তাদের লক্ষ্য থাকে না। সবচেয়ে অসুবিধা হচ্ছে, দাদি নানিরা অপারেশনের কথা শুনলেই একেবারে বেঁকে বসেন। তাদের ধারণা, এতটুকুন শিশুকে কখনও অজ্ঞান করা উচিত নয়। তারপর নিরুপায় আধুনিক তরুণ বাবা-মা বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে ধরণা দেন ওষুধের চিকিৎসায় এ রোগ করার জন্য। কিন্তু সেটি কোনো ডাক্তারের পক্ষেই সম্ভব নয়।

রেকটাল পলিপ অপারেশনের জন্য একটি শিশুকে কয়েক ঘন্টা হাসপাতালে রাখলেই চলে। রোগীর পেট খালি করার জন্য আগের দিন কিছু ওষুধ দেয়া হয় যাতে পায়খানা ক্লিয়ার হয়। খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর খালি পেটে অপারেশন করাই ভাল। এজন্য রোগীকে ঘুম পাড়াবার ইনজেকশন দিতে হয়। একটি বিশেষ ধরনের যন্ত্রের সাহায্যে টিউমারটি (পলিপ) কেটে আনা হয়। যেহেতু এ অপারেশনে মলদ্বারে কোনো কাটাছেড়া করা হয় না তাই অপারেশনের পর ব্যথা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। অপারেশনের দু’তিন ঘন্টা পর রোগী স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করতে পারে এবং সরাসরি বাসায় চলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বহির্বিভাগীয় রোগী হিসেবে পরক্ষণেই চলে যেতে পারে। শিশুদের অন্য একটি সমস্যা হয়। এতে পায়খানা শক্ত হলে মলদ্বার ফেটে যায় এবং ব্যথা হয়। কিছুটা রক্তও যেতে পারে। কিছুদিন পর মলদ্বারে একটি গ্যাজ দেখা যায়। শিশু টয়লেটে যেতে ভয় পায় ব্যথার কারণে। এ রোগটির নাম এনাল ফিশার। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসক মল নরম করার জন্য ওষুধ দেন। পানি, সবজি, সালাদ খেলে উপকার পাওয়া যায়, পায়ুপথে মলম লাগানো যেতে পারে। চুলকানি হলে কৃমির ওষুধও দিতে হবে। জন্মের পরপরই যে কোন সময় এ রোগ হতে পারে। সর্বকনিষ্ঠ একমাস দশ দিনের শিশুকে দেখেছি এ রোগে আক্রান্ত হতে। উপরোক্ত পদ্ধতি ও ওষুধ প্রয়োগেও ভাল না হলে অপারেশন করতে হয়। মলদ্বারে শিশুদেরও হয় সেরকম আরেকটি রোগ হচ্ছে ফিস্টুলা বা ভগনন্দর। এতে মলদ্বারের পার্শ্বে একটি মুখ থেকে পুঁজ ও রক্ত যায় এবং ব্যথা হয়। সতেরো মাসের একটি বাচ্চার এ রোগ দেখেছি। এ রোগের একমাত্র চিকিৎসা অপারেশন, তবে এটি শিশুদের খুব কম হয়।

মলদ্বারের প্রতিটি রোগের বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যাখ্যা রয়েছে এবং এর প্রতিটিতেই সঠিক চিকিৎসায় সম্পূর্ণ আরোগ্যলাভ করা যায়। বড়দের যে রোগটি সবচেয়ে বেশি হয় সেটি হল পাইলস। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন ৮০-৯০% পাইলস রোগী বিনা অপারেশনে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করেন। এ পদ্ধতির নাম হচ্ছে ‘রিং লাইগেশন’ পদ্ধতি। কোনরূপ অবশ, অজ্ঞান না করেই চেম্বারেই এক চিকিৎসা করা হয়। যে ক্ষেত্রে অপারেশন দরকার সে ক্ষেত্রেও ২-৩ দিন মাত্র হাসপাতালে থাকতে হয়। অপারেশনের পর পাইলস আবার হয়- এ ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক। তবে ০২% ক্ষেত্রে আবার হতে পারে। পেটে কৃমি থাকলে আর অবশ্যই চিকিৎসা করা উচিত। তবে কৃমির বাসা থেকেএ রোগের উৎপত্তি- এ ধারণা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত।

অধ্যাপক ডা. একে এম ফজলুল হক
চেয়ারম্যান (অবঃ), কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। চেম্বার : জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ হাসপাতাল, ৫৫, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা, ফোন : ০১৭১৫০৮৭৬৬১, ০১৭২৬৭০৩১১৬।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, আগস্ট ২৯, ২০০৯