Health Tips > Coronavirus - করোনা ভাইরাস
করোনা রোধে যা করছে সিঙ্গাপুরের গোয়েন্দারা
(1/1)
Shamim Ansary:
চীনের উহান থেকে প্রথমদিকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া দেশগুলোর মধ্যে সিঙ্গাপুর একটি। দেশটিতে এ ভাইরাসের সংক্রমণ যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে লক্ষ্যে গোয়েন্দারা সংক্রমিত ব্যক্তিদের শনাক্ত করার কাজে নেমেছিল।
গোয়েন্দারা কীভাবে এই কাজ করছেন, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন করেছেন বিবিসি বাংলা।
জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে চীনের গুয়াংশি শহর থেকে ২০ জন পর্যটকের একটি দল চীনা নববর্ষ উদযাপনের জন্য সিঙ্গাপুর সফর করেন। দেশের বেশ কয়েকটি স্থান ভ্রমণ করেন তারা।
তারা চীনা প্রথাগত একটি ওষুধের দোকানও ভ্রমণ করেছিলেন, যেখানে কুমিরের তেল ও বিভিন্ন ভেষজ ওষুধ বিক্রি করা হয়। সেখানে এক বিক্রেতা ওই দলটিকে তাদের দোকানের জিনিসপত্র দেখান ও তাদের হাতে ওষুধি তেলও মালিশ করে দেন।
ওই চীনা দলটি তাদের ভ্রমণ শেষ করে চীনে ফেরত যায়, তবে ফেলে রেখে যায় অদৃশ্য কিছু জিনিস।
ওষুধের দোকান
ওই সময় সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছিল, যারা সবাই চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে আসেন। ৪ ফেব্রুয়ারি সিঙ্গাপুর সরকার জানায়, স্থানীয়দের মধ্যেও করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে, যাদের প্রথম নমুনা পাওয়া যায় ওই চাইনিজ ওষুধের দোকানে।
প্রথম দুজন অসুস্থ হওয়া ব্যক্তি ছিলেন স্থানীয় একজন ট্যুর গাইড ও একজন বিক্রয়কর্মী। ওই দোকান থেকে নয়জন সংক্রমিত হয়, যার মধ্যে বিক্রয়কর্মীর স্বামী, তার শিশু সন্তান এবং তাদের ইন্দোনেশিয়ান গৃহকর্মী ও দোকানের দুজন কর্মী ছিলেন।
তাদের সবাই এখন সুস্থ আছেন। তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারত যদি সিঙ্গাপুরে কার্যকর কন্টাক্ট ট্রেসিং বা সংস্পর্শের ইতিহাস নির্ণয় করার পদ্ধতি না থাকত।
এই পদ্ধতিতে ভাইরাসটি একজন থেকে আরেকজ কীভাবে সংক্রমিত হয় তা নির্ণয় করা, ওই ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং তাদের সংস্পর্শে আসা সবাইকে কার্যকরভাবে খুঁজে বিচ্ছিন্ন করা হয়।
মাউন্ট এলিজাবেথ নভেনা হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ এভং সিঙ্গাপুর সরকারের উপদেষ্টা লেয়ং হো নাম বলেন, 'আমাদের অবস্থা উহানের মত হয়ে যেত। হাসপাতালগুলো উপচে পড়ত।'
১৬ মার্চ পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে ২৪৩ জন করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়, যার মধ্যে একজনেরও মৃত্যু হয়নি। সংক্রমিতদের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষের মধ্যে কোনো উপসর্গ পাওয়ার আগেই স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, পরীক্ষা করে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করতে।
সিঙ্গাপুরে এ সময় পর্যন্ত প্রায় চার হাজার মানুষ আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে আসে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
সিসিটিভি ফুটেজ, পুলিশের তদন্ত এবং পুরোনো ধাঁচের গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে এই মানুষগুলোকে শনাক্ত করা হয়।
অচেনা একজনের ফোন
এক সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সিঙ্গাপুরভিত্তিক ব্রিটিশ যোগব্যায়ামের শিক্ষক মেলিসার (আসল নাম নয়) কাছে একটি ফোন আসে, যেখান থেকে তিনি জানতে পারেন যে, তিনি ভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন।
অচেনা একটি নম্বর থেকে তাকে ফোন করে এই তথ্য জানানোর সময় সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে প্রশ্নও করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি কি বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে বকেটি ট্যাক্সিতে ছিলেন? আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই, ঠিকমতো চিন্তাও করতে পারছিলাম না।’
মেলিসা জানান, তিনি ওই ট্যাক্সিতে ছিলেন এবং বলেন যে, ওই ট্যাক্সি ভ্রমণের সময়টা ছিল মাত্র ছয় মিনিট। তবে তিনি আজ পর্যন্ত জানেন না, ওই ট্যাক্সির চালক সংক্রমণের শিকার হয়েছিলেন, নাকি ট্যাক্সির সেবা নেওয়া কোনো যাত্রী সংক্রমিত হয়েছিলেন।
মেলিসা শুধু জানেন, সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা তাকে ফোন করে ঘরে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
পরদিন তার বাসার সামনে জ্যাকেট ও সার্জিক্যাল মাস্ক পড়ে তিনজন চলে আসে। তখন মেলিসা বুঝতে পারেন, স্বাস্থ্য বিভাগ নির্দেশনার বিষয়ে আসলে কতটা গুরুত্ব আরোপ করেছে।
মেলিসা বলেন, ‘বিষয়টা অনেকটা সিনেমার মতো ছিল। তারা আমাকে একটি চুক্তিপত্র দেয়। যেটি আসলে ছিল একটি কোয়ারেন্টিন থাকার আদেশ, যেখানে বলা ছিল, আপনি আপনার বাসার বাইরে যেতে পারবেন না, অন্যথায় জেল ও জরিমানা হবে। সেটি আসলে একটি আইনি নোটিশ ছিল।’
তিনি বলেন, 'আমি জানি, আমি এমন একটি দেশে থাকি যেখানে তারা আপনাকে যা বলে আপনার তাই করতে হবে।’
তবে দুই সপ্তাহ পরে যখন মেলিসার দেহে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়নি, তখন তাকে বাসা থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৮ হাজার মানুষ থাকা সিঙ্গাপুর বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। এরকম জায়গায় সংক্রমিত একটা গুচ্ছ যদি শনাক্ত না হয় তাহলে রোগটি ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর যে ধরনের চাপ তৈরি হতে পারে তা অকল্পনীয়।
তাই ঝুঁকিতে থাকা প্রত্যেককে খুঁজে বের করে বিচ্ছিন্ন করা ছাড়া সিঙ্গাপুরের হাতে কোনো পথ খোলা ছিল না।
ধাঁধাঁর উত্তরের খোঁজে গোয়েন্দারা
সিঙ্গাপুরের যে কয়টি সরকারি হাসপাতালে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা দেওয়া হয়, তার একটি সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে। ওই হাসপাতালের যে তিনজন কন্টাক্ট ট্রেসিং করেন, কনসেসাও এডউইন ফিলিপ তাদের মধ্যে একজন।
হাসপাতালে আসা করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীরা কাদের সংস্পর্শে এসেছেন এবং কোথায় কোথায় গিয়েছেন, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে তার দল।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন পরীক্ষার পর কাউকে পজিটিভ পাই, তখন সব কাজ বাদ দিয়ে রাত ৩টা পর্যন্ত তার সঙ্গে কথা বলি। পরেরদিন সকালে আবারও সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়।’
ওই তথ্য তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে, এরপর পদক্ষেপ নেওয়া হয় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
এডউইন ফিলিপ বলেন, ‘প্রথম তথ্যটি ছাড়া বাকিগুলোর যোগসূত্র মেলানো সম্ভব না। এটি অনেকটা ধাঁধাঁর মত, সবগুলো টুকরো আপনাকে মেলাতে হবে।’
ওই কাজের জন্য নিয়োজিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব দল কাজ করে, সেরকম একটি দলের নেতৃত্ব দেন জুবাইদা সাইদ।
তথ্য একত্রিত করার ক্ষেত্রে অনেকসময়ই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয় তার দল। অনেক সময়ই আক্রান্তরা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মত শারীরিক অবস্থায় থাকেন না, যা তাদের কাজকে আরও কঠিন করে তোলে।
তখন শুরু হয় তৃতীয় ধাপের কাজ। এ ধরনের কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সহায়তাও নেয় সিঙ্গাপুর।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার লিয়াম ঘিম হুয়া ইমেইল করে বিবিসিকে জানান, ‘তথ্য আদান-প্রদানের জন্য পুলিশ ও মন্ত্রণালয় নিয়মিত টেলি-কনফারেন্স করে।’
তিনি বলেন, ‘গড়ে ৩০ থেকে ৫০ জন অফিসার প্রতিদিন কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের জন্য নিয়োজিত থাকেন। কোনো কোনো দিন এই দায়িত্বে ১০০ জন অফিসারও থাকেন।’
এই কাজে তদন্ত বিভাগ কখনো কখনো মাদক বিভাগ ও গোয়েন্দা বিভাগেরও সহায়তা নিয়ে থাকে। সিসিটিভি ফুটেজ, তথ্য চিত্রায়ণ এবং তদন্তের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে অচেনা কন্টাক্টদের শনাক্ত করা হয়।
এই পদ্ধতির কার্যকারিতা জুলির ঘটনা দিয়ে বোঝা যায়। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে জ্বর জ্বর ভাব নিয়ে হাসপাতালে যান তিনি।
জুলি ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছেন, এই তথ্য চিকিৎসকরা জানানোর এক ঘণ্টার মধ্যেই কর্মকর্তারা কাজ করা শুরু করে দেয় কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের।
জুলি বলেন, ‘হাসপাতালের বিছানায় থাকার সময়ই আমি প্রথম ফোনটি পাই।’
এরপর শুরু হয় আগের সাতদিন তিনি কোথায় কোথায় গিয়েছেন এবং কার কার সংস্পর্শে এসেছেন-সে বিষয়ে বিস্তারিত প্রশ্ন।
তিনি জানান, কর্মকর্তারা বিশেষ করে জানতে চাইতেন, ২ মিটার দূরত্বে অন্তত ৩০ মিনিট ধরে কার কার সঙ্গে তিনি সময় যাপন করেছেন।
তিনি বলেন, ‘কারও সঙ্গে আমার ধাক্কা লাগার বিষয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যথা ছিল না। যাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় পার করেছি, তাদের বিষয়ে জানতে চাইছিলেন তারা।’
জুলি কন্টাক্ট ট্রেস করা কর্মকর্তার সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে কথা বলেন। ফোন রাখার পর দেখা যায় তিনি ৫০ জনকে শনাক্ত করেছেন, যাদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রত্যেককে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনের আদেশ দেওয়া হয়। ওই ৫০ জনের একজনের মধ্যেও ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেনি।
কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের 'নিখুঁত পদ্ধতি'
আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্যদের মধ্যে রোগ ছড়ানো রুখতে কয়েক দশক ধরেই কন্টাক্ট ট্রেসিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে সিঙ্গাপুর এই দুর্যোগ পরিস্থিতিতে যেভাবে এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছে, তার প্রশংসা করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিষয়ের বিশেষজ্ঞরাও। তারা বলেছেন, সিঙ্গাপুরের নেওয়া পদক্ষেপ কন্টাক্ট ট্রেসিং করার 'প্রায় নিখুঁত পদ্ধতি’।
প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার আগেই যে সিঙ্গাপুর কন্টাক্ট ট্রেসিং শুরু করেছে, সেবিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তাদের প্রশংসা করেছে।
নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সিওসি ওয়াইলস বলেন, ‘আপনি যদি কন্টাক্ট ট্রেসিং করতে দেরি করে ফেলেন, তাহলে তা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ তখন এটি অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।’
কিন্তু সিঙ্গাপুর যতটা নিখুঁতভাবে রোগী শনাক্ত করেছে, তা অনেক দেশের পক্ষেই করা সম্ভব হবে না।
বিবিসিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, সিঙ্গাপুরের যেরকম নজরদারির ব্যবস্থা, তা বিশ্বের খুব বেশি দেশের নেই। তবে এটি সম্ভব হয়েছে জনসাধারণের সহযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে। সরকার থেকে ফোন করে যখন সহায়তা চাওয়া হয়, তখন সবাই সহায়তা করেছে।
সিঙ্গাপুরের সংক্রামক রোগ বিষয়ক আইন অনুযায়ী পুলিশ যখন তথ্য সংগ্রহ করতে চায়, তখন তাদের সহায়তা না করা বেআইনি। এই অপরাধের জন্য জরিমানা ১০ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার (৬ হাজার ৯০০ মার্কিন ডলার) বা ছয়মাসের জেল অথবা দুটিই হতে পারে।
কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের সময় পুলিশকে নিজেদের সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়ার দায়ে এরই মধ্যে দুজন চীনা নাগরিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসি বিষয়ের শিক্ষক জেমস ক্যাবট্রি বলেন, ‘যেসব সমাজে বিশেষজ্ঞ ও সরকারের ওপর মানুষের ভরসা থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করার মত সামর্থ্য থাকে, সেসব দেশ ভাইরাস প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় বেশি সফল হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যে কারণে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের মত দেশ ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি সফল হয়েছে।’
গত ১৮ মার্চ সিঙ্গাপুর নতুন ৪৭ জনের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণের খবর জানায়। তবে ৪৭ জনের মধ্যে ৩৩ জনই বিদেশ থেকে এসেছেন এবং অধিকাংশই বিদেশ থেকে ফেরা সিঙ্গাপুরের নাগরিক।
তবে সরকার বলছে এখনো কন্টাক্ট ট্রেসিং যথেষ্ট সময়োপযোগী, কারণ কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে এই মহামারির বিভিন্ন ধাপে কী কৌশল অবলম্বন করা হবে, তা ঠিক করতে পারে সরকার।
Source: https://www.prothomalo.com/video/watch/1646344/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87-%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A4%E0%A6%BE
Navigation
[0] Message Index
Go to full version