চীন, জাপান, কোরিয়ার মতো সফল নয় ইতালি-ইরান

Author Topic: চীন, জাপান, কোরিয়ার মতো সফল নয় ইতালি-ইরান  (Read 714 times)

Offline Md. Alamgir Hossan

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 935
  • Test
    • View Profile
বিশ্বের ১৭৩টি দেশের ৩ লাখ ৩৩ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এ পর্যন্ত সাড়ে ১৪ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত মানুষ ও মৃত্যুর হার লাফিয়ে বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ছাড়া অন্য দেশগুলো খুব সফল হয়নি। এরপরও চেষ্টা চলছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ঠেকানোর।

চীন পথ দেখাচ্ছে

গত বছরের ডিসেম্বরের চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনাভাইরাস বা ‘কোভিড–১৯’। চীনে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আগে গোটা উহান লকডাউন বা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আক্ষরিক অর্থেই চীনের এ শহরের লোকেরা বাসা থেকেও বেরোতে পারেনি। এরপরও রোগটি চীনের অন্যান্য এলাকায় পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়া না ঠেকানো গেলেও অন্যান্য অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই নগণ্য। অর্থাৎ, উহান বন্ধ করে দেওয়ায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকারে আর চীনে ছড়িয়ে পড়েনি।

চীন গোটা উহানকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করেছে। এ জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সাধারণ মানুষও যোগ দিয়েছে।


করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে ১০ দিনের মধ্যে বিশেষায়িত হাসপাতাল বানানো হয়েছে। এ ছাড়া চীনের বহু হোটেলকে অস্থায়ী হাসপাতাল বানানো হয়েছে। সেখানকার মানুষকে গণহারে পরীক্ষা করা হয়েছে।


গত জানুয়ারি মাসে চীন উহান শহরকে কার্যকরভাবে অবরুদ্ধ করে এবং এর ১ কোটি ১১ লাখ জনসংখ্যাকে কোয়ারেন্টিনে পাঠায়। এই প্রক্রিয়া পরে অনুসরণ করা হয় পুরো হুবেই প্রদেশের জন্য। পাঁচ কোটি মানুষকে গণ-আইসোলেশনে পাঠায়। ৪২ হাজার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হুবেই প্রদেশে পাঠানো হয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য। এ সময় ৩ হাজার ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হন এবং ১৩ জন মারা যান।

এ সময় চীনের ব্যাপক মানুষ মাস্ক পরতে শুরু করে। চীন এ সময় প্রতিদিন ১৬ লাখ মাস্ক উৎপাদন করেছে। পরিস্থিতির ভিত্তিতে ‘সবুজ’, ‘হলুদ’ ও ‘লাল’ চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নাগরিকদের কাছে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। অনেকে জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়ার সময় এসব এলাকা এড়িয়ে গেছেন।

জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির এসব ব্যবস্থা নেওয়ায় ৮১ হাজার ৪৫৪ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা গেছে ৩ হাজার ২৭৪। ইতিমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৭২ হাজার ৮১৭ জন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী হাসপাতালগুলো। চীন এখন সারা দুনিয়ার বহু দেশে অভিজ্ঞ চিকিৎসক, করোনা শনাক্তকরণ কিট, মাস্কসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠাচ্ছে।

আর সে কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মোকাবিলায় চীন আশার আলো দেখাচ্ছে। অর্থাৎ চীনা পথে করোনাভাইরাসকে মোকাবিলা করার ওপর জোর দিচ্ছেন সারা দুনিয়ার বিশেষজ্ঞরা।

করুণ অবস্থা ইতালির
এ পর্যন্ত সব থেকে বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে ইতালিতে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির হিসাবমতে, ইতালিতে এখন পর্যন্ত ৫৯ হাজার ১৩৮ জন আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে মারা গেছে ৫ হাজার ৪৭৬ জন। ১২ মার্চ থেকে ইতালির সরকার বেশির ভাগ ব্যবসা-বাণিজ্য এবং জনসমাগম নিষিদ্ধ করেছে। এরপরও থামছে না মৃত্যুর মিছিল।

লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার একটি কারণ হতে পারে দেশটির জনসংখ্যায় প্রবীণদের সংখ্যাধিক্য। নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতালির বাসিন্দাদের প্রায় ২৩ শতাংশের বয়স ৬৫ বা তার বেশি। দেশটিতে বসবাসরত মাঝবয়সী জনসংখ্যা ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এই হার ৩৮ দশমিক ৩ শতাংশ। দ্য লোকাল–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতালিতে যারা এই সংক্রমণে মারা গেছে, তাদের বেশির ভাগের বয়স ৮০ থেকে ৯০।

মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে অনেক ব্যক্তি ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা ক্যানসারে ভুগছিলেন। অনেকে আবার ধূমপান করতেন। সেই কারণেই তাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গিয়েছিল।
চীন ইতিমধ্যে ইতালির জন্য পরীক্ষার কিট, মাস্ক, ওষুধ, চিকিৎসকসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি পাঠিয়েছে। আজ সোমবার রাশিয়া বড় আকারে চিকিৎসা সরঞ্জাম ও চিকিৎসক পাঠিয়েছে ইতালিতে।
ইতালিতেও ভালো খবর আছে। সেই ভালো খবরের নাম হলো ইতালির ছোট্ট শহর ভো। এ শহরে সব বাসিন্দাকে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করার পর দারুণ সফলতা পেয়েছে। শহরটিতে এখন সংক্রমণের সংখ্যা শূন্যে নেমে এসেছে।
ইতালির ইউনিভার্সিটি অব পাদুয়ার অণুজীববিজ্ঞানের অধ্যাপক আন্দ্রেয়া ক্রিসান্তি এবিসির দ্য ওয়ার্ল্ড টুডেকে বলেন, ‘আমরা সবাইকে পরীক্ষা করেছি। তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ইতিমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি শনাক্ত করি।’ তিনি আরও জানান, মোট বাসিন্দার ৩ শতাংশ (৮৯ জন) মানুষের শরীরে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। কোনো লক্ষণ নেই, এমন মানুষের শরীরেও করোনা শনাক্ত করা হয়। বিষয়টি গবেষকদের জন্য ছিল খুবই উদ্বেগের। ভো শহরে সংক্রমণ শূন্যে নেমে এসেছে। সব নাগরিকের করোনা পরীক্ষার পর মেলে এই সফলতা।


ইরানের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ
ইরানে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২১ হাজার ৬৩৮ জন। করোনাভাইরাসে মারা গেছে ১ হাজার ৬৮৫ জন। ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, দেশটিতে ঠিক কত পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, তার সঠিক তথ্য নেই।
বিশ্বে যেসব দেশে করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি সংক্রমিত হয়েছে, তার মধ্যে ইরান অন্যতম। ইরানের জনগণের মধ্যে প্রবল ধারণা, ইরানের সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এর বড় কারণ হলো, ইরানের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২১ ফেব্রুয়ারি। এ নির্বাচনের আগে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সরকার মুখ খোলেনি। বিপুল মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে এসে ও প্রচারণায় যোগ দিয়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশটির সরকারের একজন উপদেষ্টা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
ইরানে ফেব্রুয়ারি মাসে দুটি বড় ঘটনা ঘটে যায়। একটি ইসলামিক অভ্যুত্থানের ৪১ বছর পূর্তি, অন্যটি দেশটির সংসদ নির্বাচন। ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানের বিজয় দিবস। এর কিছুদিন আগেই ইরানে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।

পরীক্ষা, পরীক্ষা ও পরীক্ষার নীতি নিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রথমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এরপরই দেশটি নাটকীয়ভাবে করোনাভাইরাসকে আটকে দিতে সমর্থ হয়। এর কারণ হলো, ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা। উপসর্গ দেখা দিক বা না দিক, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার দেশটির নাগরিকদের পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এখন পর্যন্ত দেশটি ২ লাখ ৯০ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করে ফেলেছে। প্রতিদিন দেশটি বিনা মূল্যে ১০ হাজার লোকের পরীক্ষা করছে।

এ ব্যাপারে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের সংক্রামক রোগের উদ্ভব বিষয়ের অধ্যাপক ওই ইং ইয়ং বলেছেন, তাঁরা (দক্ষিণ কোরিয়া) যেভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং লোকজনকে পরীক্ষা করেছে, তা উল্লেখ করার মতো।

অধ্যাপক প্যানগেস্তো জানান, কিছু দেশে পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট কিট নেই। তিনি বলেন, ব্যাপকভাবে পরীক্ষা করার বিষয়টি এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেতে হবে। উপসর্গ রয়েছে, কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়নি এবং এখনো ভাইরাস ছড়াচ্ছেন, এমন ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা আরও বেশি জরুরি। এ কারণে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৯৬১ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ রোগে মারা গেছেন ১১১ জন। সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন ৩ হাজার ১৬৬ জন।

জার্মানি
জার্মানিতে পাঁচ ফুট দূরত্বের মধ্যে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল কোরান্টিনে। কারণ, ৬৫ বছর বয়সী ম্যার্কেল ভাইরাসে আক্রান্ত একজন চিকিৎসকের সংস্পর্শে এসেছিলেন। দেশটির সরকার স্কুল এবং অনেক ব্যবসা, জনসমাগমস্থল বন্ধ করেছে। দেশটিতে ২৪ হাজার ৮৭৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ৯৪ জন।

যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৫ হাজার ২২৪। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৪৭১ জন। এর মধ্যে সর্বাধিক মারা গেছে দেশটির নিউইয়র্ক শহরে ৯৯ জন। ব্যাপকভাবে রোগটি ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশটির মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


জাপানের ওষুধ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে
জাপানে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১০১ জন আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৪১ জন। জাপান ভাইরাসটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়া থেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে।
অন্যদিকে চীনের চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলেছেন, জাপানে ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হওয়া একটি ওষুধ করোনার চিকিৎসায় ব্যবহার করে তারা সফলতা পেয়েছে। চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ঝ্যাং সিনমিন সাংবাদিকদের বলেছেন, ফাভিপিরাভির নামের ওই ওষুধ প্রস্তুত করেছে জাপানের বহুজাতিক কোম্পানি ফুজিফিল্মের সহযোগী ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান টয়ামা কেমিক্যাল। এটি একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ। ওষুধটি চীনের উহান ও শেনজেন এলাকার ৩৪০ জন করোনা সংক্রমিত রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। এতে ব্যাপক ও কার্যকর সফলতা পাওয়া গেছে।

জাপানের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে এক খবরে জানায়, যে রোগীদের ওপর ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছে, তারা গড়ে চার দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে। যেখানে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া অন্য রোগীদের সেরে উঠতে সময় লেগেছে ১১ দিন। এ ছাড়া রোগীদের বুকের এক্স-রের মাধ্যমে জানা গেছে, যেসব রোগীর শরীরে ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের ফুসফুসের অবস্থা ৯১ শতাংশ উন্নতি হয়েছে। যাদের ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়নি, তাদের ওই সময়ে ফুসফুসের উন্নতি ঘটেছে ৬২ শতাংশ।