শিশুর হঠাৎ কেঁপে ওঠা

Author Topic: শিশুর হঠাৎ কেঁপে ওঠা  (Read 3015 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
শিশুর হঠাৎ কেঁপে ওঠা
« on: January 03, 2012, 08:04:04 AM »
রনির (কাল্পনিক নাম) এক বছর বয়স। তার জন্মের সময় কোনো সমস্যা ছিল না। অন্যান্য শিশুর মতোই সে বেড়ে উঠছিল। কিন্তু তার বয়স যখন আট মাস, তার মা লক্ষ করলেন, তার শরীর মাঝেমধ্যে হঠাৎ করেই এক-দুইবার ঝাঁকি দেয়। প্রথম দিকে অতটা গ্রাহ্য করেননি। কিন্তু দিন দিন তার ঝাঁকির পরিমাণ বাড়তে থাকে। ঝাঁকি দেয় সেজদা দেওয়ার মতো সামনের দিকে ঝুঁকে। পরমুহূর্তে আবার সোজা হয়ে যায়।

বিশেষ করে ঘুম থেকে উঠলে বেশ কয়েকবার হয়। আর যখনই ওঠে, পাঁচ-সাতটা ঝাঁকি এক-দুই মিনিট অন্তর হয়ে যায়।

আগে সে হাত দিয়ে জিনিস ধরত বা বসিয়ে দিলে একা বসে থাকত। কিন্তু এখন সে আর একা বসতে পারে না। দু-একসময় ঝাঁকি দেওয়ার পর কেঁদে ওঠে। রনির রোগটা একটা বিশেষ ধরনের খিঁচুনি। একে বলা হয় ইনকেনটাইল স্পাজম। এটা খুব খারাপ ধরনের খিঁচুনি। যদি সময়মতো সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হয়, তাহলে শিশুর ক্ষতি হয় না বা কম হয়।

দেরিতে চিকিৎসা শুরু করলে দেখা যায়, শিশুর খিঁচুনি হয়তো বন্ধ হয়েছে, কিন্তু তার বৃদ্ধি অন্যদের তুলনায় বেশ কম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এক বছর বয়সের আগেই এই খিঁচুনি শুরু হয়। সাধারণত চার থেকে ছয় মাস বয়সে শুরু হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জ্নের পর পরই শুরু হতে পারে। এই খিঁচুনি শুরু হলে শিশুর বিকাশ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি যতটুকু হয়েছিল, তাও হারিয়ে যায়। অর্থাৎ আগে সে বসতে পারত, হাত দিয়ে জিনিস ধরত, এখন সে একা বসতে পারে না বা হাত দিয়ে জিনিসপত্রও আর ধরে না।

সাধারণত ঝাঁকি দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেছন দিকেও ঝুঁকে পড়ে। আবার কেউ কেউ সামনে-পেছনে দুই দিকেই ঝুঁকে পড়তে পারে। সাধারণত এই খিঁচুনি হয় প্রসববেদনা বেশি হলে, অর্থাৎ জ্নের পর পর যদি শিশু না কাঁদে। এমনকি গর্ভে থাকা অবস্থায় শিশুর বা মায়ের যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলেও হতে পারে।

জ্নের পর শিশুর যদি মস্তিষ্কে কোনো সমস্যা হয়, তাহলে অবশ্য অনেক ক্ষেত্রেই কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না।

এই খিঁচুনি হলে দ্রুত চিকিৎসা করালে শিশুর পুরোপুরি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তা না হলে শিশু প্রতিবন্ধীও হয়ে যেতে পারে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোলজি (স্মায়ুরোগ) বিভাগে প্রতি মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে ১০টা পর্যন্ত এপিলেপ্সি বা মৃগী রোগী দেখা হয়। দোতলায় ব্ল্যাড ব্যাংকের উল্টো দিকেই নিউরোলজি বিভাগ। প্রত্যেক রোগীর রোগের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রাখাসহ অন্যান্য যত্ন নেওয়া হয় এ বিভাগে।

———————-
ডা· সেলিনা ডেইজী
শিশু, শিশু নিউরোলজি ও ক্লিনিক্যাল নিউরোফিজিওলজি বিশেষজ্ঞ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
প্রথম আলো, ৪ জুন ২০০৮