করোনার দিনগুলোতেও পড়াশোনা হবে কীভাবে?

Author Topic: করোনার দিনগুলোতেও পড়াশোনা হবে কীভাবে?  (Read 1887 times)

Offline Md. Siddiqul Alam (Reza)

  • Sr. Member
  • ****
  • Posts: 253
    • View Profile
করোনার কারণে সবার আগেই বন্ধ হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখন ছাত্রছাত্রীদের কী হবে? অনেককেই দেখলাম বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে বেরিয়েছে বা গোপনে কোচিংয়ে যাচ্ছে। তবে সেটি কোনো সমাধান নয় বরং ক্ষতিকর। বরং এ সময়ে আমাদের ভাবা দরকার অনলাইন পড়াশোনা ও এর প্রয়োগ নিয়ে। এক যুগ ধরে আমি বিভিন্ন দেশে অনলাইনে পড়িয়েছি। সে অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে আমার কিছু ভাবনা এখানে তুলে ধরছি।

আমার মনে হয় না করোনাভাইরাসের এই সংক্রমণের সময়ে কোনো বিশেষ প্রযুক্তি বা শিক্ষা প্রদানে হাই-ফাই প্রযুক্তির প্রয়োগ নিয়ে কথা বলতে হবে। আর এর মধ্যেই আমরা অনলাইনে কী কী ধরনের পড়াশোনার প্ল্যাটফর্ম আছে, সেগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন লেখায় ধারণাও পেয়ে গেছি। এগুলো ছাড়াও স্কুল-কলেজের বাইরে, ঘরে বসে শিক্ষা দেওয়ার আর নেওয়ার কিছু সহজ পদ্ধতি আর কৌশল নিয়ে আলাপ হতে পারে। অনেক নামীদামি আর কপিরাইটেড সফটওয়্যার আর প্ল্যাটফর্মের দিকে না তাকিয়ে আমাদের উচিত হাতের নাগালে থাকা প্রযুক্তিগুলো কীভাবে পড়াশোনার কাজে খুব ভালোভাবে প্রয়োগ করা যায়, তার ব্যবস্থা করা।


আজকাল করোনা–সংক্রান্ত কয়েকটা ইংরেজি শব্দ বেশ ব্যবহৃত হচ্ছে কোয়ারেন্টিন (সেলফ/হোম), সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং, কমিউনিটি স্প্রেড, হোম স্কুলিং ইত্যাদি। কিন্তু বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই শব্দগুলোর প্রায়োগিক অর্থ কী দাঁড়ায়?

ঘরের বাইরে না গিয়ে, বিশেষ করে মফস্বল আর গ্রামগুলোতে আমি শিক্ষা নেব বা দেবই বা কীভাবে? এ দেশের বাস্তবতা তো ভিন্ন! এখানে ঘরে বসে শিক্ষার সমাধানগুলোও তাই ভিন্ন হবে, টোকিও, নিউইয়র্ক বা লন্ডনের মতো হবে না। বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষা আর পারিপার্শ্বিকতার জন্য থাকতে হবে বিভিন্ন সমাধান। আর এসব সমাধান বের করতে হবে সবাই মিলে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো, শিক্ষার্থীরা, অভিভাবকেরা, আর বিভিন্ন টাইপের সার্ভিস দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন: ইন্টারনেট আর মোবাইল ফোন সেবাদানকারীরা, পাড়ার ব্রডব্যান্ডের দোকান, ইউনিয়ন পর্যায়ের সরকারি তথ্যসেবা কেন্দ্র, মোবাইল ফ্লেক্সিলোডের দোকান, স্যাটেলাইট চ্যানেল আর কমিউনিটি এফএম রেডিও স্টেশন।

আমাদের দেশের সামাজিক ব্যবস্থা, তথ্যপ্রযুক্তির হাল আমলের অবকাঠামো, ইন্টারনেট–ফোন ব্যবহারের খরচ, এ সবকিছুই যেকোনো অনলাইন শিক্ষার সমাধান পরিকল্পনার সময় মাথায় রাখতে হবে। অনলাইনে লেকচার দিতে গেলে যেসব সময় লাইভ ব্রডকাস্ট করতে হবে এমন কিন্তু কোনো কথা নেই। আগে থেকে রেকর্ড করা লেকচারও কাজ চালিয়ে নিতে পারে। আর ক্লাস চলাকালীন বা এরপর ছাত্রছাত্রীদের হাজারটা প্রশ্ন থাকতেই পারে, সেটাই স্বাভাবিক। তো সে ক্ষেত্রে একজন শিক্ষক কীভাবে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন লাইভ থাকা অবস্থায়? অথবা যখন তিনি আগে থেকে রেকর্ড করা ভিডিও চালাচ্ছেন?

সমস্যা আরও আছে। বড় শহরগুলোতে নাহয় শিক্ষক আর ট্র্যাডিশনাল শিক্ষা প্রদানের মান একটা মোটামুটি পর্যায়ের মধ্যে আছে। তেমনি আছে ভালো কানেক্টিভিটি, ভালো কনটেন্ট। কিন্তু এসব শহর ছেড়ে বের হলে? যেসব জায়গায় শিক্ষক নেই বা থাকলেও তাঁদের কোনো খোঁজ নেই, আমরা সেখানে কীভাবে আশা করতে পারি যে তাঁরা অনলাইনে উদয় হবেন? আর খরচের ব্যাপারটা তো বিরাট সমস্যা। বিভিন্ন পর্যায়ের জন্য আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে পারি।

১. বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়
এ পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহার, আমার মনে হয় তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে সহজ। এই কাজ নিয়ে অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে। এ ধাপের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির ধারণা ও ব্যবহার দুটোই বেশি। লাইভ ক্লাস করতে হলে গুগলের হ্যাংআউট/জুম/স্কাইপে ব্যবহার করা যায় সহজে (ভিডিও–অডিও)। নিদেনপক্ষে ফেসবুক লাইভ করে সময়ের ক্লাস সময়ে নিয়ে নেওয়া যাবে। যারা লাইভে আসতে পারবে না, তারা পরে সুবিধা অনুযায়ী রেকর্ড করা ভিডিও দেখে নিতে পারে। ভিডিও বা অডিও ফাইলগুলোর সেটিংস এমনভাবে রাখতে হবে, যাতে বেশি বড় না হয়, তাতে অল্প খরচেই দ্রুত ক্লাস বা আলোচনাগুলো ডাউনলোড করা যাবে। ইমো (Imo) বা হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) ও বেশ ভালো সমাধান। বাস্তুচ্যুত মানুষদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার, এমনকি ইন্টারনেট সংযোগ না থাকার পরও! আমরাও পারব।

ক্রস অ্যাসাইনমেন্ট ম্যানেজ করার জন্য গুগলের কোর্স বিল্ডার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা ভালো। নইলে ই-মেইল বা ফেসবুক মেসেঞ্জারের মতো অ্যাপ ব্যবহার করে চালাচালি করে ব্যাপারটা চালিয়ে নেওয়া যায়। তেমন একটা স্মার্ট কোনো সলিউশন না, কিন্তু কাজ ঠিক হয়ে যাবে।

এই লেভেলে অনলাইন শিক্ষার সব থেকে বড় শক্তি হবে এর পিয়ার শেয়ারিং (peer sharing) ক্ষমতা। অর্থাৎ এই বয়সের ছেলেপেলেরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না। তারা নিজেদের মধ্যে ক্লাস আর পড়াশোনার তথ্য শেয়ার করা ছাড়াও চাহিদামতো লার্নিং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বানিয়ে নিতে পারবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি একটু উৎসাহী হয়, তাহলে ফ্রিতে পাওয়া অনলাইনের কোর্সগুলো থেকে যা যা লাগবে, সেগুলোর একটা তালিকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তারা শেয়ার করতে পারে। এই লেভেলের শিক্ষার্থীদের হাতে টাকাপয়সাও থাকে তুলনামূলকভাবে বেশি। তাই যাতায়াতের ঝক্কি এড়িয়ে ঘরে বা হোস্টেলে বসে ক্লাস ধরতে আর অ্যাসাইনমেন্ট করতে একটু–আধটু খরচ তো করাই যায়!

২. হাইস্কুল ও কলেজ
পর্যায়টি একটু কঠিন আগেরটার চেয়ে। কারণ, এ পর্যায়ে সবার মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা ততটা নাও থাকতে পারে। আর থাকলেও খরচ একটা বড় ব্যাপার। মা-বাবাদের রাজি হওয়ার ব্যাপার থাকে। আর শিক্ষকদের সময়/অভিজ্ঞতা/সংযোগ এসবও বড় হয়ে দেখা দেয়। আমার মতে অন্তত ফেসবুকে প্রতিটা ক্লাসের পেজ থাকা দরকার, যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে যৌথ, আর নিয়ম করে সেখানে শিক্ষকদের লাইভে যাওয়া উচিত। ছাত্রছাত্রীদের কাছে পেজগুলোর দায়িত্ব দিলে একটা সহমালিকানা তৈরি হবে, যেটা খুব দরকার। আমরা এ পর্যায়ে চায়নিজ ভিডিও অ্যাপ টিকটকও ব্যবহার করতে পারি খেলার ছলে কিছু বোঝানোর জন্য বা ছোটখাটো অ্যাসাইনমেন্টের জন্য। তবে এই ক্লাসগুলোয় পড়ানোর সময়ে শিক্ষক-ছাত্র আর ছাত্রদের নিজেদের মধ্যে গঠনমূলক ইন্টারেকশন থাকাটা খুব দরকার।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, হাতের কাছে থাকা প্রযুক্তিগুলো নিয়ে চটজলদি জটিলতম বিষয় বা গণিতের একটার পর একটা ক্লাস নিচ্ছেন ঢাকার অর্কিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের গণিত বিভাগের প্রধান শাহেদ নূর। তিনি গুগল হ্যাংআউটের ফ্রি ভার্সন ব্যবহার করে এ-লেভেলের মেকানিক্স ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি এক কম্পিউটারে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করে লেকচার দিচ্ছেন, আর অন্য কম্পিউটারে ছাত্ররা ফেসবুক মেসেঞ্জারে তাঁকে প্রশ্ন পাঠাচ্ছে একের পর এক! হাতের কাছে থাকা ফ্রি প্ল্যাটফর্মগুলোকে কাজে লাগিয়েছেন শাহেদ। তাই তাঁর এখন দম ফেলার সময় নেই। তাঁর অনলাইন ক্লাস চলছে একের পর এক।

এই প্ল্যাটফর্মগুলো ছাড়াও আমরা এ পর্যায়ে ভিডিও–অডিও রেকর্ড করার জন্য যেকোনো মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারি আর কোর্স লেকচার আপলোড করে দিতে পারি ইউটিউবে। এখানে একটা জিনিস অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আর তা হলো শিক্ষার্থী আর শিক্ষকের মধ্যে যেকোনো ধরনের অনলাইন শিক্ষায় ভৌগোলিক দূরত্ব যা–ই হোক না কেন, ক্লাস–সংক্রান্ত আদান-প্রদান হতে হবে এক্কেবারে অনটাইম। শিক্ষকদের বুঝতে হবে যে হড়বড়িয়ে পড়িয়ে ক্লাসে সিলেবাস শেষ করে দিলেই হবে না। অনলাইনে পড়াতে হলে কোর্সগুলো এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে ছাত্রছাত্রীরা ফোকাস না হারিয়ে ফেলে।

আগে থেকে রেকর্ড করা ক্লাসগুলো আমরা অনলাইন বা অফলাইন, দুভাবেই শেয়ার করতে পারি। যদি ইন্টারনেটের অবস্থা বেশ খারাপ হয়, তখন মেমোরি কার্ডে ক্লাস ভিডিও–অডিওগুলো সেভ করে রাখা যেতে পারে, যেগুলো পরবর্তী সময়ে হাতবদল হতে পারে শিক্ষক আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

আশঙ্কার কথা হচ্ছে, এ রকম বেশ কিছু আপাতত সহজ সলিউশন থাকার পরও স্কুল লেভেলে এ দেশে অনলাইনে শিক্ষা দেওয়াটা অনেক কঠিন। এ ক্ষেত্রে আমাদের একটা নতুন আর পুরোনো ঘরানার আইডিয়ার একত্র করে ব্যবহার করা যেতে পারে। আইডিয়াটা হলো, প্রথম আলো অনেক দিন ধরেই মাধ্যমিক–উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনার বিভিন্ন রিসোর্স শেয়ার করে তাদের দৈনিক কাগজে, যেগুলো প্রচুর জনপ্রিয়। এগুলোর সঙ্গে যদি এখন নিয়মিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসগুলোর ভিডিও–অডিওর কিউআর কোড শেয়ার করা যায়, তাহলে ভালো কনটেন্ট নিয়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে!

অনলাইন শিক্ষকতার অদ্ভুত নিয়মকানুন সম্পর্কে কিছু বলা যাক। এটা নিয়েও অনেক চিন্তাভাবনার ব্যাপার আছে। আমি নিজে অনলাইনে পড়াচ্ছি এক দশকের বেশি সময়। এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় প্রযুক্তির সঠিক প্রয়োগের পাশাপাশি খুব জরুরি শিক্ষা প্রদানের বিভিন্ন বিষয়কে প্রযুক্তিনির্ভর বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো। যদি আপনি একা বা কয়েকজন মিলে দলভিত্তিক শিক্ষার পরিকল্পনা করেন, তাহলে এটা মাথায় রাখবেন যে সময়মতো শিক্ষার্থীদের তাদের জিজ্ঞাসাগুলোর উত্তর দেওয়াটা কিন্তু অনলাইন শিক্ষায় খুবই জরুরি। এ ছাড়া ই–মেইল–মেসেঞ্জার বা অফলাইন–অনলাইন আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। আর ছাত্রছাত্রীদের বেশির ভাগই একটু-আধটু ফাঁকি দিতে চাইবে, দেবে। তাই অনলাইনে পড়ানোর সময়ে লেখাপড়া নিয়ে কথাবার্তাকে উৎসাহ দিতে আপনি চালু করতে পারেন এক্সট্রা পয়েন্টের ব্যবস্থা। তাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে, বিভিন্ন বিষয়ে, বিভিন্ন পর্যায়ে কীভাবে অনলাইনে, এক বা একাধিক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কোর্স কনটেন্ট বানানো যায় আর শিক্ষা প্রদান করা যায়, সেটা নিয়ে এখন কাজ না করলে বাকি সব উদ্যোগ সফল হবে না, তা আমি নিশ্চিত!

এই লেখা লেখার সময় দেখলাম সরকারি চ্যানেল ব্যবহার করে প্রাথমিক/জুনিয়র পর্যায়ের ক্লাসগুলো নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব ভালো উদ্যোগ। তবে এটা মূলত কাজ করবে রেফারেন্স হিসেবে। মাঠপর্যায়ে শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি চেনা মুখ না থাকে, যদি স্থানীয় পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সমন্বয় করা না হয়, তাহলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ক্লাসগুলো রেকর্ড করে ছাড়লেও লাভ হবে না। আর কমিউনিটি লেভেলে এই কাজে খুব ভালোভাবে সহযোগিতা করতে পারবে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা আমাদের কমিউনিটি রেডিও স্টেশনগুলো।

ফাহিম হুসাইন: অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল ফর দ্য ফিউচার অব ইনোভেশন ইন সোসাইটির সহকারী অধ্যাপক

https://www.prothomalo.com/opinion/article
MD. SIDDIQUL ALAM (REZA)
Senior Assistant Director
(Counseling & Admission)
Employee ID: 710000295
Daffodil International University
Cell: 01713493050, 48111639, 9128705 Ext-555
Email: counselor@daffodilvarsity.edu.bd