করোনাভাইরাস: বিশ্ব যেভাবে বদলে যাবে

Author Topic: করোনাভাইরাস: বিশ্ব যেভাবে বদলে যাবে  (Read 1015 times)

Offline Shamim Ansary

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 3746
  • Change Yourself, the whole will be changed
    • View Profile
করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাবে পরিচ্ছন্নতার মতো ব্যক্তিগত অভ্যাসগুলোও। ছবি: রয়টার্সসারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন করোনাভাইরাস। আক্রান্তের তালিকায় কোন দেশ নেই, তা খুঁজতে এখন রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হবে। মহামারি ঠেকাতে নানা উদ্যোগ চলছে। একই সঙ্গে চলছে মহামারি–পরবর্তী বিশ্বের রূপটি কেমন হবে, তা নিয়ে নানা আলোচনা। এ নিয়ে নানা বিতর্ক হতে পারে, তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, ভালো বা মন্দ—যেমনই হোক, এই সংকট অভাবনীয়ভাবে বদলে দেবে সামাজিক বিন্যাস।

এই করোনাভাইরাস অনেক আমেরিকানকে নাইন-ইলেভেন বা ২০০৮ সালের ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটের মতো ঘটনাগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, যা গোটা বিশ্বের সমাজব্যবস্থাকেই দীর্ঘ মেয়াদে ঢেলে সাজিয়েছে। আমাদের ভ্রমণের অভ্যাস ও বাড়ি কেনা থেকে শুরু করে অভ্যস্ত সামাজিক নিরাপত্তার মাত্রা ও নজরদারি, এমনকি আমাদের ব্যবহৃত ভাষাতেও বদল নিয়ে এসেছে।

মার্কিন পত্রিকা পলিটিকো গত সপ্তাহে বৈশ্বিকভাবে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটের প্রেক্ষাপটে ৩০ জনের বেশি বুদ্ধিজীবী ও চিন্তাবিদের মতামত নিয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট এই ব্যক্তিবর্গ সমাজের ওপর চলমান এ সংকটের বহুমুখী প্রভাব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন, যা আদতে বার্তার চেয়েও বেশি কিছু।

এই ভাইরাস মানুষকে ঘরবন্দী করে ফেলেছে। এই বন্দিত্ব এমনকি কয়েক মাসের জন্য হতে পারে। এটি এরই মধ্যে দেশে দেশে নাগরিকদের সঙ্গে সরকারের বা বহির্বিশ্বের এমনকি নিজেদের মধ্যকার সম্পর্কের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে শুরু করেছে। আগামী মাসগুলোয় বা বছরে এমন আরও অভাবনীয় পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞেরা। বিশ্বের জাতিগুলো কি এমন রুদ্ধই হয়ে থাকবে? স্পর্শ করাটা কি ট্যাবুতে রূপান্তরিত হবে? রেস্তোরাঁগুলোর কী হবে?

কিন্তু সংকট থেকেই তো সম্ভাবনার দেখা মেলে। হতে পারে তা প্রযুক্তির আরও দক্ষ ও উপযোগী ব্যবহার, কম মেরুকরণ, জীবনের ছোটখাটো সাধারণ আনন্দ-খুশিগুলো নতুনভাবে অনুভূত হওয়া। কেউ জানে না আসলে কী ঘটতে চলেছে। কিন্তু এরপরও সমাজ, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনীতি, জীবনযাপনসহ নানা দিক যেভাবে বদলে যেতে পারে, তা বোঝার জন্যই এই প্রচেষ্টা।

দেবরাহ তানিন। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যেব্যক্তিগত মাত্রই বিপজ্জনক
দেবরাহ তানিন, ওয়াশিংটন ডিসির জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক ও লেখক। অতি সম্প্রতি বেরিয়েছে তাঁর বই—ইউ আর দ্য অনলি ওয়ান আই ক্যান টেল: ইনসাইড দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ অব উইমেন’স ফ্রেন্ডশিপস।

নাইন-ইলেভেনে মার্কিনরা বুঝতে পারল, এমন সব বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে তারাও রয়েছে, যা এত দিন তারা ভেবেছিল, শুধু দূরবর্তী দেশেই ঘটে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট আমাদের জানিয়ে গেল, ১৯৩০–এর দশকের মহামন্দার সময়ের দুরবস্থার মতো আগেকার দিনের বিপর্যয়ও আমাদের ভোগাতে পারে। আর এখন ১৯১৮ সালের বৈশ্বিক মহামারির অপচ্ছায়া ঢেকে ফেলেছে আমাদের জীবন।

আত্মতুষ্টি ও নিষ্পাপ মনোভাবের ক্ষয়ই এখন বিশ্বে বেঁচে থাকবার কৌশল, যা আমাদের যাবতীয় কাজকেই বদলে দিতে পারে। আমরা এখন বুঝি কোনো কিছু স্পর্শ করা, কারও সঙ্গে থাকা বা আবদ্ধ কোনো জায়গায় শ্বাস নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এই সচেতনতা কে কত দিন ধরে রাখবে, তা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম। কিন্তু যারা এই সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাদের মন থেকে এসব কখনোই পুরোপুরি মুছবে না। বাড়িয়ে দেওয়া হাত না ধরে বা মুখ স্পর্শ না করে পিছিয়ে আসাই আমাদের স্বভাবজাত হয়ে উঠতে পারে। আমরা সবাই আচ্ছন্ন হতে পারি বিভিন্ন সংস্কারে, কেউই হয়তো আর বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস ছাড়তেই পারব না।

কারও সঙ্গ পেলে বা কাছে এলে এখন যে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি, তার বদলে অনুপস্থিতিতেই হয়তো বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব, বিশেষ করে যাদের আমরা চিনি না। এখন যেমনটা আমরা বলি, ‘এসব কথা কি অনলাইনে বলা ঠিক হবে?’, এর পরিবর্তে হয়তো আমরা বলতে শুরু করব, ‘এসব কথা সাক্ষাতে বলার কি কোনো দরকার আছে?’ অনিচ্ছাকৃত হলেও দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, ব্রডব্যান্ডের সুবিধা যাদের থাকবে না, তারা আরও বেশি বঞ্চিত হবে। অনলাইনে যোগাযোগের বিষয়টি আরও ব্যাপকতর হবে। এতে করে যোগাযোগ জোরদার হলেও মানুষে মানুষে দূরত্ব বাড়বে। আমরা দূরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও বেশি অনলাইন ব্যবহার করব এবং এই দূরত্বটাকেই আমরা নিরাপদ বোধ করব।

মারক লরেন্স শ্যারড। ছবি: ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটদেশাত্মবোধের নতুন ধরন
মার্ক লরেন্স শ্যারড, ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর বই ‘স্ম্যাশিং দ্য লিকার মেশিন: আ গ্লোবাল হিস্ট্রি অব প্রোহিবিশন’ প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

আমেরিকার কাছে দেশপ্রেম মানেই সশস্ত্র বাহিনী। কিন্তু ভাইরাসকে তো আর আপনি গুলি করে মারতে পারবেন না। আজকে এই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সামনের সারিতে যাঁরা আছেন তাঁরা তালিকাভুক্ত বা ভাড়াটে সৈনিক নন, তাঁরা হলেন আমাদের চিকিৎসক, নার্স, ফার্মাসিস্ট, শিক্ষক, সেবাদানকারী, কেরানি, পরিষেবাকর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা তাঁদের কর্মীরা। চীনের চক্ষুবিশেষজ্ঞ লি ওয়েনলিয়াং এবং উহানের চিকিৎসকদের মতো এঁদের অনেকের ওপরেই হঠাৎ করে চেপেছে বিপুল কাজের ভার, যেখানে সংক্রমণ, এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য এমনকি তাঁদের সম্মতিও নেওয়া হয়নি।

এই দুরূহ কাজ তাঁরা যখন শেষ করবেন, তাঁদের অবদানকে আমরা হয়তো সত্যিকারের দেশপ্রেম হিসেবে স্বীকৃতি দেব। চিকিৎসক, নার্সদের অভিবাদন জানাব—মাথা নুইয়ে বলব, ‘আপনারা যা করেছেন, তার জন্য ধন্যবাদ’, যেমনটা এখন আমরা করি সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্যদের সঙ্গে। নিজেদের স্বাস্থ্য ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা আমাদের জন্য যা করেছেন, সে জন্য তাঁদের জন্য আমরা স্বাস্থ্যসেবা এবং করপোরেট ছাড়ের ব্যবস্থা করব। আমাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করা এই মানুষদের জন্য আমরা ভাস্কর্য বানাব এবং ভোগ করব ছুটিও। সম্ভবত অবশেষে আমার এটা বুঝতে শিখব যে কোনো জাতিগোষ্ঠীকে বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার চেয়ে বরং কারও স্বাস্থ্য ও জীবনের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করাই দেশপ্রেম। এই মহাবিপর্যয়ের অন্যতম সুফল হবে সম্ভবত আমেরিকান দেশপ্রেমের বেসামরিকীকরণ এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসা।

পিটার টি. কোলম্যান। ছবি: কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটমেরুকরণ কমে যাবে
পিটার টি. কোলম্যান, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের এ অধ্যাপক কাজ করেন অনুসরণযোগ্য সংঘাত নিয়ে। তাঁর নতুন বই ‘দ্য ওয়ে আউট: হাউ টু ওভারকাম টক্সিক পোলারাইজেশন’ প্রকাশিত হবে ২০২১ সালে।

করোনা মহামারি আমাদের গোটা ব্যবস্থার ওপর এক ভয়ানক অভিঘাত সৃষ্টি করেছে। এর ফলে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মেরুকরণের যে ধারায় যুক্তরাষ্ট্র আটকে পড়েছে, তা থেকে আমাদের বের হয়ে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এটি আমাদের বৃহত্তর জাতীয় সংহতিতে সহযোগিতা করবে। এসব কথা শুনতে আদর্শবাদী মনে হলেও এমন অনুমানের পেছনে অন্তত দুটি কারণ রয়েছে।

প্রথম কারণটি হলো, ‘অভিন্ন শত্রুর’ প্রেক্ষাপট, যা মানুষকে নিজেদের মধ্যে থাকা পার্থক্য ভুলে একই বহিঃশত্রুর সঙ্গে যূথবদ্ধভাবে লড়ার মানসিকতা দেয়। কোভিড-১৯ আমাদের সামনে এমন ভয়ানক এক শত্রু হয়ে হাজির হয়েছে, যা ভেদাভেদ করবে না এবং একই সঙ্গে তা আমাদের একীভূত হওয়ার তুমুল শক্তি জোগাতে পারে এবং নতুন করে সংঘবদ্ধতার উদ্দেশ্য অনুধাবনে সহায়তা করতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনে নাৎসি বাহিনীর ৫৬ দিনের বোমাবর্ষণ ও হামলার সেই মহা-আক্রমণের কালে উইন্সটন চার্চিলের মন্ত্রিসভা একই সঙ্গে যেমন হতবুদ্ধি হয়েছিল তেমনি মানুষের পরহিতৈষিতা, সহানুভূতি, উদারতা ও সক্রিয়তায় অভিভূত হয়েছিল।

দ্বিতীয় কারণ হলো ‘রাজনৈতিক অভিঘাত’। গবেষণায় দেখা গেছে, বড় ধরনের অভিঘাতে মজবুত ও ঋজু কাঠামোরই বদলে যাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তেমনটা যে এখনই হতে হবে, তা নয়। তবে ১৮১৬ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যকার সময়ে আন্তরাষ্ট্রীয় ৮৫০টি দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, অস্থিতিশীলতার অভিঘাত শেষ হতে ৭৫ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে ১০ বছরের বেশি সময় লেগেছে। সামাজিক অভিঘাতের ফলাফল বিভিন্ন রকম হতে পারে। এতে ভালোও হতে পারে, আবার মন্দও হতে পারে। কিন্তু আমাদের বর্তমান সংকটের যে মাত্রা, তা আমাদের বলছে, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিকাঠামো আরও গঠনমূলকভাবে বিন্যস্ত করার এটাই সময়। পরিবর্তনের সময় যে ঘনিয়ে আসছে, তা পরিষ্কার।

টম নিকোলস। ছবি: ইউএস নেভাল ওয়ার কলেজের ওয়েবসাইটআস্থা ফিরবে বিশেষায়িত জ্ঞানের প্রতি
টম নিকোলস, ইউএস নেভাল ওয়ার কলেজের অধ্যাপক এবং ‘দ্য ডেথ অব এক্সপার্টাইজ’ বইয়ের লেখক

বহু বছর ধরে আমেরিকা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কিছুকেই তেমন গুরুত্ব দেয় না। মূলগতভাবেই একটি উদাসীন দেশে পরিণত হয়েছে দেশটি। শান্তি, সম্পদ ও ভোগ্যপণ্যের প্রাচুর্যের বদৌলতে এই বিলাসিতা সম্ভব হয়েছে। পরমাণুযুদ্ধ, জ্বালানি তেলের স্বল্পতা, বেকারত্বের উচ্চ হারের মতো একসময় যেসব বিষয় মনকে আচ্ছন্ন করে রাখত, তা নিয়ে আমাদের আর ভাবার দরকার হতো না। এসবের জায়গায় জাতীয় হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছিল সন্ত্রাসবাদ। তা মোকাবিলায় আমরা সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবী পাঠিয়েছি, তারা বিশ্বের প্রত্যন্ত কোনো মরুভূমিতে কাজ করেছেন মাতৃভূমির রক্ষক হিসেবে। এমনকি আমরা টেলিভিশনের রিয়েলিটি শোর এক তারকাকে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছি, যা ছিল সরকারকে প্রতিনিয়ত সক্রিয় রাখা আমলাতন্ত্র ও বিশেষায়িত জ্ঞানের ওপর এক বড় আঘাত।

কোভিড-১৯ সংকট এই পরিস্থিতিকে দুভাবে বদলে দিতে পারে। প্রথমত, এই সংকট এরই মধ্যে মানুষকে বিশেষায়িত জ্ঞান গ্রহণে বাধ্য করেছে। এই মহামারির আগ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের প্রতি নাক সিটকানো সহজ ছিল। আর এখন মানুষ অ্যান্থনি ফাউসির মতো চিকিৎসা বিশেষজ্ঞের কথা শুনতে চাইছে। দ্বিতীয়ত, এই সংকট থেকে আমেরিকানরা নতুন করে সবকিছুর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে। অথবা, তারা অন্তত নতুন করে বুঝতে শিখবে যে সরকার চালানো ওজনদার লোকের কাজ। আমেরিকানদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা এবং অর্থনীতিতে মহামারির বেসামাল প্রভাব সামলে উঠতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাণ্ড ব্যর্থতা মানুষকে অন্তত এই অনুভূতিটুকু দেবে যে সরকার শুধু আবেগকে পরিতৃপ্ত করার জন্য নয়; তার চেয়ে বেশি কিছু।

এরিক ক্লিনবার্গ। ছবি: নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটচাপে পড়বে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ
এরিক ক্লিনেনবার্গ, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও ইনস্টিটিউট অব পাবলিক নলেজের পরিচালক। তাঁর সর্বশেষ বই ‘প্লেসেস ফর দ্য পিপল: হাউ সোশ্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ক্যান হেল্প ফাইট ইনইকুয়ালিটি, পোলারাইজেশন, অ্যান্ড দ্য ডিক্লাইন অব সিভিক লাইফ’।

করোনাভাইরাস মহামারি বাজার-সংস্কৃতি ও অতিমাত্রায় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের সঙ্গে আমাদের ভালোবাসার অবসান হতে পারে। আমরা কর্তৃত্ববাদের দিকে ঝুঁকতে পারি। কল্পনা করুন যে আগামী নভেম্বরের নির্বাচন স্থগিত করার চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সামরিক হস্তক্ষেপের কথা বিবেচনা করুন। চরম নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রের বিষয়টি এখন বাস্তব। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আমরা এগোব ভিন্ন দিকে। বাজারকেন্দ্রিক সামাজিক সংস্থার বিপর্যয়কর ব্যর্থতা আমরা লক্ষ করছি। ট্রাম্প থেকে শুরু করে সবার আত্মকেন্দ্রিক আচরণ এই সংকটকে আরও ভয়ানক রূপ দিয়েছে।

সংকট শেষে আমরা আমাদের রাজনীতিকে ঢেলে সাজাব এবং জনস্বাস্থ্য ও পরিষেবার মতো জনকল্যাণমূলক কাজে উল্লেখযোগ্য নতুন বিনিয়োগ করব। আমি মনে করি না যে আমাদের সাম্প্রদায়িকতা কমবে। তবে আমাদের সবার ভাগ্য যে একসূত্রে গাঁথা, তা আরও ভালোভাবে বুঝব আমরা। যে রেস্তোরাঁ থেকে আমি সস্তায় বার্গার খাই, সেখানকার ক্যাশিয়ার যেমন পান না সবেতন ছুটি কিংবা তাঁর রান্নাঘরের কর্মীরা বাড়িয়ে দেন অসুস্থতার ঝুঁকি, ঠিক তেমন করেই এই মহামারিতে ঘরে না থেকে আমার প্রতিবেশী আমার ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন, যাকে আমাদের স্কুলগুলো বিজ্ঞানমনস্ক ও চিন্তাশীল ভাবনায় দক্ষ করতে পারেনি। মহামারির কারণে সৃষ্ট মন্দায় চাকরি হারানো লাখো কর্মীর উপার্জনের নিশ্চয়তা যদি সরকার দিতে না পারে, তাহলে অর্থনীতি ও সামাজিক শৃঙ্খলা ধসে যাবে। সরকার ছাত্রদের ঋণ না কমালে বা বাতিল না করলে তরুণেরাও নতুন করে কিছু করতে পারবে না। ভয়ানক এক দুর্ভোগের সৃষ্টি করতে চলেছে করোনাভাইরাস মহামারি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি আমাদের নিজেদের নতুন করে জানতে, মূল্যায়ন করতে বাধ্য করবে। দীর্ঘ মেয়াদে নিজেদের ভালো দিকটা খুঁজে পেতে সহায়তা করবে এই সংকট।

অ্যামি সুলিভান। ছবি: জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটধর্মীয় উপাসনার ধরন বদলে যাবে
অ্যামি সুলিভান, ভোট কমন গুড-এর কৌশলগত পরিচালক

খ্রিষ্টানদের অনেকেই বলতে ভালোবাসেন যে আমরা ‘ইস্টার পিপল’। আশাবাদের জয় হবেই এবং জীবন হবে শঙ্কামুক্ত—এই বিষয়টিতে জোর দিতেই তাঁরা এ কথা বলেন। কিন্তু ইস্টারের সকালে সবাই মিলে আনন্দ-উল্লাস করতে না পারলে তাঁরা পবিত্রতম দিনটি উদ্‌যাপন করবেন কীভাবে? পাসওভার সিডার যদি (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) জুমে পালন করতে হয়, তাহলে ইহুদিরা কীভাবে দাসত্বের বন্ধন থেকে পরিত্রাণের উৎসব উদ্‌যাপন করবে। তারাবিহ পড়তে যদি মসজিদে যেতে না পারে এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করতে না পারে, তাহলে মুসলিমেরাই-বা কীভাবে রমজান পালন করবে?

যুদ্ধবিগ্রহের সময় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিশ্বাস বজায় রাখতে সব ধর্মবিশ্বাসীকেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। সব ধর্মবিশ্বাসকেই অবশ্য একসঙ্গে এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত পড়তে হয় না। কোয়ারেন্টিনের এই সময় ধর্মের উপাসনার রীতি ও উপাস্য—দুই ধারণাকেই চ্যালেঞ্জ করবে। তবে স্থানীয়ভাবে ধর্মসভা করার ব্যবস্থা যাদের নেই, এই পরিস্থিতি তাদের জন্য দূরবর্তী স্থান থেকে ধর্মীয় বক্তৃতা প্রচারের সুযোগ করে দেবে। ধ্যানচর্চার জনপ্রিয়তা বাড়তে পারে। সবার মঙ্গলের কথা প্রচার করেন—এমন ব্যক্তিদের সামাজিক মর্যাদা অনেক বাড়বে।

জোনাথন রাউচ। ছবি: ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ওয়েবসাইটসংস্কারের নতুন কাঠামো
জোনাথন রাউচ, ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম আটলান্টিকের নিয়মিত লেখক

মার্কিনদের একটি অংশের রূপান্তরমূলক মহামারির মধ্য দিয়ে যাওয়ার সাম্প্রতিক স্মৃতি রয়েছে: আর দলটি হচ্ছে সমকামীরা। করোনাভাইরাসের চেয়ে সবদিক দিয়েই এইচআইভি/এইডসের পার্থক্য ছিল এবং আছে। তবে একটি শিক্ষা প্রযোজ্য হতে পারে যে প্লেগ দিক পরিবর্তন করেছে। সমকামী আমেরিকানরা এক হয়ে সংগঠন, নেটওয়ার্ক করেছে। তারা জানে, ওই বিষয়গুলো সমাজে আমাদের অবস্থান কীভাবে পাল্টে দিয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারি আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ভয়াবহ ত্রুটিগুলোও প্রকাশ করেছে এবং এটা বিয়ের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিতে আমাদের জাগিয়ে তুলেছে। এটা (করোনাভাইরাস) মাইলফলক সংস্কারের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।

করোনাভাইরাসের এই সময়ে কিছু অ্যানালগ পরিবর্তন দেখতে পেলেও তা বিস্ময়কর ঠেকবে না। এই দুর্দশার মধ্যেও মানুষ একে অপরকে সমর্থন দিতে এবং সংযোগ স্থাপন করতে নতুন নতুন উপায় খুঁজছে। তাঁরা নিশ্চিতভাবে স্বাস্থ্যসেবা সিস্টেমে বড় বড় পরিবর্তন আনার দাবি তুলবেন। হতে পারে তাঁরা সরকার পরিবর্তনেরও দাবি তুলতে পারেন। আর তাঁরা হয়ে উঠবেন পরস্পর নির্ভরশীল ও সম্প্রদায়ের নতুনভাবে সচেতন একটি পক্ষ। এর যথাযথ প্রভাবের বিষয়টি এখন অনুমান করা যাচ্ছে না। তবে নিশ্চিত যে এটা কয়েক বছরের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাবে।

ক্যাথেরিন ম্যাংগু-ওয়ার্ড: ছবি: টুইটারের সৌজন্যেঅনলাইন টুলের নিয়ন্ত্রণমূলক বাধা ভেঙে পড়বে
ক্যাথেরিন ম্যাংগু-ওয়ার্ড, রিজন ম্যাগাজিনের এডিটর-ইন-চিফ

কোভিড-১৯ আমাদের আরও বেশি অনলাইন জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়তে অনেক কৃত্রিম বাধা দূর করবে। তাই বলে সবকিছু ভার্চ্যুয়াল হয়ে উঠবে এমন নয়। আমাদের জীবনের অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত কার্যকর অনলাইন টুলগুলোকে ক্ষমতাধরেরা অতিসাবধানী আমলাদের সহায়তায় অতি ধীরগতির করে রেখেছে। যেমন মার্কিনদের ক্ষেত্রে মেডিকেয়ারের (বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যসেবা) আওতাধীন ব্যক্তিদের জন্য টেলিমেডিসিন (ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ পাওয়া) চালুর দাবি রয়েছে অনেক দিনের। তাৎক্ষণিকভাবে বলা যায়, মার্কিনদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা বহনযোগ্য এবং জবাবদিহি আইন হিপার (হেলথ ইনস্যুরেন্স পোর্টেবিলিটি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্ট, ১৯৯৬) কাছে অন্য স্বাস্থ্যসেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সবার কাছে ই-মেইল, স্কাইপে, ফেসটাইমের মতো টুল ব্যবহার করে একই ধরনের সেবা পৌঁছে দেওয়ার অনুমোদন চাইতে পারে। এই সংকটের সময়ে বিষয়টি কার্যকর না হলে নিয়ন্ত্রক আমলাতন্ত্র তা আরও বহু বছর টেনে নিয়ে যাবে।

শিক্ষক ইউনিয়ন ও তাদের সমর্থন করা রাজনীতিকেরা দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ঘরে বসে বা অনলাইনে আংশিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর ধারণার যে বিরোধিতা করেছিল, তা এই সংকটের মুখে ভেসে গেছে। এখন অনলাইন হোমওয়ার্ক ও ঘরে থেকে আংশিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর যে স্বাদ পরিবারগুলো পেয়েছে এবং তাকে তারা যেভাবে গ্রহণ করেছে, তাতে একে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। শূন্য ক্যাম্পাসে হোস্টেলে ফেরার আগ্রহ অনেক কলেজ শিক্ষার্থীরই হবে না। এতে এই খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে বাধ্য হবে, যার প্রয়োজনীয়তা অনেক আগে থেকেই অনুভূত হচ্ছিল।

আর চাকরির ক্ষেত্রে বলা যায়, সব অফিসই দূরবর্তীভাবে করা যায় না। তবে অনেক মানুষই শিখছেন যে বাড়ি থেকে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার জন্য এক-দুটি অ্যাপ ডাউনলোড করা এবং বসের অনুমতি আদায় ছাড়া আর কিছু লাগে না। একবার যদি প্রতিষ্ঠানগুলো এমন দূরবর্তী কাজের পদক্ষেপ নেয়, তাহলে একটা সময়ে কর্মীদের জন্য সেই ব্যবস্থা বাতিল করাই তাদের জন্য কঠিন ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে। অন্যভাবে বলা যায়, বিরক্তিকর এত এত মিটিং (চিকিৎসকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাস) সত্যিকারভাবে ই-মেইলের মাধ্যমে হতে পারত। আর এখন তাই হতে যাচ্ছে।

সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন করোনাভাইরাস। আক্রান্তের তালিকায় কোন দেশ নেই, তা খুঁজতে এখন রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হবে। মহামারি ঠেকাতে নানা উদ্যোগ চলছে। একই সঙ্গে চলছে মহামারি-পরবর্তী বিশ্বের রূপটি কেমন হবে, তা নিয়ে নানা আলোচনা। এ নিয়ে নানা বিতর্ক হতে পারে, তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, ভালো বা মন্দ—যেমনই হোক, এই সংকট অভাবনীয়ভাবে বদলে দেবে সামাজিক বিন্যাস।

মার্কিন পত্রিকা পলিটিকো গত সপ্তাহে বৈশ্বিকভাবে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটের প্রেক্ষাপটে ৩০ জনের বেশি বুদ্ধিজীবী ও চিন্তাবিদের মতামত নিয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট এই ব্যক্তিবর্গ সমাজের ওপর চলমান এ সংকটের বহুমুখী প্রভাব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন, যা আদতে বার্তার চেয়েও বেশি কিছু।

শেরি টার্কলস্বাস্থ্যকর ডিজিটাল জীবনযাপন
শেরি টার্কল, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সামাজিক গবেষণা বিভাগের অধ্যাপক। তিনি এমআইটির টেকনোলজি ও সেলফ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। ‘রিক্লেইমিং কনভারসেশন: দ্য পাওয়ার অব টক ইন আ ডিজিটাল এজ’–এর লেখক।

আমরা আমাদের সময় ও ডিভাইসগুলো হাতে নিয়ে নতুন করে ভাবতে পারি যে এগুলোর মাধ্যমে আমরা কী ধরনের কমিউনিটি গড়ে তুলব। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার দিনগুলোর শুরুর পর্যায়েই আমরা অনুপ্রেরণামূলক প্রথম উদাহরণের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। প্রযুক্তির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ এ ক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে।

মার্কিন সংগীতশিল্পী ইয়ো-ইয়ো মা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিদিন গানের লাইভ কনসার্ট পোস্ট করছেন। এভাবে তিনি নিজের উপস্থিতি জানাচ্ছেন। মার্কিন সংগীতশিল্পী ও অভিনেত্রী লরা বেনানতি গানের স্কুলগুলো থেকে বিভিন্ন স্টেজ শো করে এমন শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তিনি তাঁদের পরিবেশনা অনলাইনে তাঁকে পাঠাতে বলেন। তিনি এসব পরিবেশনা দেখবেন। লরা বেনানতির এই ক্যাম্পেইনে যোগ দিয়েছেন মার্কিন গীতিকার ও সুরকার লিন ম্যানুয়েল মিরান্ডা। তিনিও সব শিল্পীর পরিবেশনা দেখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উদ্যোক্তারা সংগীতের পিচ শুনবেন বলে প্রস্তাব দিয়েছেন।

যোগগুরুরা বিনা মূল্যে যোগাসন শেখাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে অনলাইন স্ক্রিনে ভিডিও গেম খেলার বাইরে এটি অন্য এক জীবন। অনলাইন এখন মানুষে মানুষে উদারতা ও সহানুভূতি প্রকাশের উন্মুক্ত এক মাধ্যম হয়ে উঠেছে। স্ক্রিনে ভেসে উঠছে, ‘আমি কী দিতে পারি? আমার একটা ইতিহাস আছে, আছে জীবন—মানুষের কী প্রয়োজন?’ আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে এভাবে মানবিকতার বিকাশ ঘটাতে পারি। কোভিড-১৯–এর সময়ে এই মানবিকতাই শক্তি হয়ে উঠবে। এভাবে আলাদা থেকেও সবাই একসঙ্গে থাকা সম্ভব।

এলিজাবেথ ব্র্যাডলিভার্চ্যুয়াল জগতের আশীর্বাদ
এলিজাবেথ ব্র্যাডলি, বিশ্বস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষক ও নিউইয়র্কের ভাসার কলেজের প্রেসিডেন্ট।

ভার্চ্যুয়াল জগৎ আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে আইসোলেশনে, কোয়ারেন্টিনে বা একা থাকলেও আমরা অনেক কিছু করতে পারি। এ অভিজ্ঞতা পরবর্তী কোনো দুর্যোগের সময় আমাদের নিরাপদে থাকতে সহায়তা করবে। নিজেদের যাঁরা আইসোলেশনে রেখেছেন, তাঁদের সামাজিকীকরণ ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করবে এমন একটি ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি (ভিআর) প্রোগ্রাম দেখার অপেক্ষায় আছি। একবার ভাবুন যে একটি গ্লাস পরলেন, আর অমনি আপনি চলে গেলেন কোনো শ্রেণিকক্ষে, কিংবা অন্য কোনো সমাবেশে অথবা মানসিকভাবে ইতিবাচক কোনো স্থানে।

ইজিকিয়েল জে ইমানুয়েলটেলিমেডিসিনের অগ্রযাত্রা
ইজিকিয়েল জে ইমানুয়েল, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যনীতি ও চিকিৎসা নৈতিকতা বিভাগের সভাপতি।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব স্বাস্থ্যসেবার ধরন বদলে দিয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে টেলিমেডিসিন ব্যয় সংকোচন ও উচ্চ মাত্রার সুবিধা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সংকটের এই কালে প্রচলিত সেবাব্যবস্থার বদলে দূর থেকে সেবা গ্রহণকে জনপ্রিয় করতে পারে, যখন প্রচলিত ব্যবস্থাটি মহামারির কারণে ভেঙে পড়েছে। সংক্রামক রোগের বিস্তার ঠেকানোটা এই পরিবর্তনের আরেকটি বড় সুবিধা হতে পারে। ভিডিও কলের মাধ্যমে সহজে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার এই পন্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পরিবহনব্যবস্থার সংসর্গে যেতে হবে না, অপেক্ষা করতে হবে না অভ্যর্থনা কক্ষে; সবচেয়ে বড় কথা হলো এতে গুরুতর রোগীরা এর বড় সুফল পাবে।

আই-জেন পোশক্তিশালী পারিবারিক যত্নের শুরু
আই-জেন পো, ন্যাশনাল ডোমেস্টিক ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্স অ্যান্ড কেয়ারিং অ্যাক্রস জেনারেশনসের পরিচালক

আমাদের যত্ন নেওয়ার অবকাঠামোতে যে বড় ধরনের ফাঁক রয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। লাখ লাখ মার্কিন পরিবারকে কোনো ধরনের সুরক্ষাবলয় (সেফটি নেট) ছাড়া এই পরিস্থিতি পাড়ি দিতে হচ্ছে। প্রিয়জন অসুস্থ, বাচ্চারা হঠাৎ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাড়িতে। এমন অবস্থায় পরিবার, স্বাস্থ্য আর আর্থিক ক্ষতির মধ্যে যেকোনোটি বেছে নেওয়ার মতো যন্ত্রণাময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। সর্বোপরি, বাচ্চার যত্নে অর্থবহ সাহায্যের পরিমাণ একেবারেই সীমিত। দীর্ঘ মেয়াদে এই পরিমাণ খুবই নগণ্য। আর খুব কমসংখ্যক কর্মীরই রয়েছে সবেতনে পারিবারিক ও চিকিৎসা ছুটির সুবিধা; যার অর্থ হচ্ছে কাজ নেই তো বেতনও নেই।

এই সংকট হয়তো সর্বজনীন পারিবারিক যত্নের (ইউনিভার্সেল ফ্যামিলি কেয়ার) জন্য একটি কেন্দ্রীয় জনতহবিল গঠনের ব্যাপারে রাজনৈতিক সমর্থন ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেবে। এটি হবে এমন একটি তহবিল, যেখানে আমরা সবাই সহায়তা করব, সবাই সেখান থেকে সুবিধা পাব। কাজের সময় আমাদের পরিবারের যত্নে এটি সহায়তা করবে, শিশু-প্রবীণ আর প্রতিবন্ধীদের যত্নে এই তহবিল কাজে লাগবে, এমনকি সবেতনে ছুটির সুযোগ করে দেবে। আমাদের দেশের প্রবীণ জনগোষ্ঠী, কাজের ভারে নুয়ে পড়া কোটি কোটি পরিবার ও পেশাদার সেবাদাতাদের দেখভালে আমরা যে যথেষ্ট মনোযোগী নই, তা নজরে নিয়ে এল করোনাভাইরাসের এই প্রাদুর্ভাব। যত্নআত্তি সব সময়ই ভাগাভাগি করে নেওয়ার মতো দায়িত্ব, যাকে আমাদের প্রচলিত নীতি কখনোই পুরোপুরি সমর্থন করেনি। এই মুহূর্তে এই সংকট আমাদের ঝাঁকুনি দিয়ে এর পরিবর্তনের কথাই বলছে।

স্টেফ স্টার্লিংসরকারকে বড় ওষুধের সবচেয়ে বড় উৎপাদক
স্টেফ স্টার্লিং, রুজভেল্ট ইনস্টিটিউটের অ্যাডভোকেসি ও পলিসিবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ‘জনস্বার্থ: জনমালিকানার মাধ্যমে ওষুধের গণতন্ত্রীকরণ’ বিষয়ক প্রকাশিতব্য একটি প্রবন্ধের সহলেখক।

ওষুধ ও ভ্যাকসিনের উন্নয়ন, গবেষণা ও উৎপাদনের ব্যয়বহুল, অকার্যকর ও বাজারকেন্দ্রিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা নগ্নভাবে প্রকাশ করে দিয়েছে করোনাভাইরাস। গত ২০ বছরে করোনাভাইরাস গোত্রের বেশ কয়েকটি ভাইরাস হানা দিয়েছে, এর মধ্যে কোভিড-১৯ একটি। এর যে প্রতিষেধক এখনো বের করা গেল না, এর পেছনে সরকারের ব্যর্থতা আছে। কারণ, সরকার নিজে উদ্যোগী হওয়ার বদলে ওষুধ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণেই আমাদের ১৮ মাস অপেক্ষা করতে হবে, কখন বেসরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সফল হবে। আর মুনাফার নিশ্চয়তা না পেলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভবিষ্যৎ সংকটের কথা মাথায় রেখে কোনো ওষুধ ও ভ্যাকসিন স্বাভাবিকভাবেই তৈরি করবে না।

আর এটি এ ধরনের সংকট প্রতিরোধে কিছুই করতে পারবে না। ওষুধ তৈরির কাঁচামালের ভঙ্গুর সরবরাহব্যবস্থার পাশাপাশি রয়েছে মেধাস্বত্ব সুরক্ষার নামে নতুন চিকিৎসা প্রণালি ও ওষুধ মানুষের নাগালের বাইরে রাখার বিষয়টি। এ অবস্থায় ওষুধের উন্নয়ন ও উৎপাদনে সরকারকে আরও সরাসরি ও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। জনগণের প্রয়োজন মেটানোর চেয়ে মুনাফাকেন্দ্রিক যে ওষুধনীতি ৪০ বছর ধরে দাপট দেখাচ্ছে, তা পরিবর্তন করার সময় এসেছে। জনগণের প্রয়োজনীয় ওষুধ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে নয়, রাষ্ট্রের হাতে রেখে সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

সোনজা ত্রসআবার রাজত্ব করবে বিজ্ঞান
সোনজা ত্রস, ক্যালিফোর্নিয়া–ভিত্তিক সংস্থা ওয়াইআইএমবিওয়াই ল-এর নির্বাহী পরিচালক।

সত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রচারক বিজ্ঞান। তবে প্রায় এক প্রজন্মের বেশি সময় ধরে এই বিজ্ঞানের বিশ্বাসযোগ্যতা কমে গেছে। ওবি-ভান কেনোবি যেমনটি ‘রিটার্ন অব দ্য জেডি’তে বলেছিলেন, ‘আপনি দেখবেন যে আমাদের আঁকড়ে থাকা সত্যের অধিকাংশই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভরশীল।’ ২০০৫ সালে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের জমানা শুরুরও অনেক আগে, হলিউডের বিখ্যাত কমেডিয়ান স্টিফেন কোলবার্ট মজার একটি কথা বলেন। তিনি সত্যকে গৌণ করে তোলা রাজনৈতিক প্রবণতাকে বোঝাতে ‘ট্রুথিনেস’ শব্দটি প্রয়োগ করেন। বলা যায়, তেল ও গ্যাসশিল্প সত্য ও বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। একই রকম কাজ করছে তামাকশিল্পও।

এবারও তেমন দেখা যাচ্ছে। প্রথমে রিপাবলিকানরা দাবি করেছিল যে করোনাভাইরাস নিয়ে যেসব প্রতিবেদন বের হয়েছে, সেগুলো আদৌ বিজ্ঞান নয়; পুরোদস্তুর রাজনৈতিক। আর এটিই লাখ লাখ মানুষের কাছে যুক্তিসংগত বলে মনে হয়েছিল। তবে এখন দ্রুতই মার্কিনরা জীবাণু তত্ত্ব ও (অণুজীবের) জ্যামিতিক হারে বংশবৃদ্ধির মতো বৈজ্ঞানিক ধারণার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। তামাকের প্রভাব বা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক যুক্তি নিয়ে যাঁদের সন্দেহ ছিল, তাঁরাই এখন করোনাভইরাসের প্রভাব দেখতে পাচ্ছেন দ্রুত। আমরা আশা করতে পারি, অন্তত আগামী ৩৫ বছরের জন্য জনস্বাস্থ্য ও মহামারির মতো বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের দক্ষতার প্রতি জন-আস্থা আংশিক হলেও বাড়বে।

ইথান জুকারম্যানঅবশেষে কংগ্রেসও ভার্চ্যুয়াল জগতে আসতে পারে

ইথান জুকারম্যান, এমআইটির মিডিয়া আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি একই সঙ্গে সেন্টার ফর সিভিক মিডিয়ার পরিচালক ও ‘ডিজিটাল কসমোপলিটনস: হোয়াই উই থিংক দ্য ইন্টারনেট কানেক্টস আস, হোয়াই ইট ডাজ নট, অ্যান্ড হাউ টু রিওয়্যার ইট’ প্রবন্ধের লেখক।

করোনাভাইরাস অনেক প্রতিষ্ঠানকে ভার্চ্যুয়ালি কাজ করতে বাধ্য করছে। এখন এই পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে উপকৃত হবে মার্কিন কংগ্রেস। আমাদের এই সংকটের সময় কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কংগ্রেসের দরকার। এদিকে ১০ জন বা তার কম লোকের সমাবেশ করার বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদের কক্ষে সভা করাটা তাই এখন বুদ্ধিমান বিকল্প নয়। কারণ, কংগ্রেসের অন্তত দুজন সদস্য ইতিমধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

বরং এটা বলা যায়, কংগ্রেসের সদস্যদের জন্য এখন সবচেয়ে দুর্দান্ত সময় হলো নিজেদের শহরে ফিরে গিয়ে স্থায়ীভাবে ভার্চ্যুয়াল আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করা। এই পদক্ষেপ এখন কেবল স্বাস্থ্যগত কারণেই প্রয়োজন নয়, এর আরও সুবিধা রয়েছে। এর মাধ্যমে আইনপ্রণেতারা তাঁদের ভোটারদের কাছাকাছি যেতে পারবেন এবং স্থানীয় দৃষ্টিকোণ ও ইস্যুতে সংবেদনশীল আচরণ করতে পারবেন। ভার্চ্যুয়াল কংগ্রেসের কাছে তদবির করাটা খুব শক্ত হবে। কারণ, তদবিরের জন্য যে গোষ্ঠীগুলো এখন ওয়াশিংটনে ভিড় করে, তাদের তখন এ জন্য পুরো দেশে ছুটে বেড়াতে হবে। এতে দলীয় আনুগত্যের চেয়ে স্থানীয় নাগরিকদের প্রতি আইনপ্রণেতাদের দায়িত্ববোধও বাড়বে।

দীর্ঘ মেয়াদে ভার্চ্যুয়ালাইজড কংগ্রেস আমাদের প্রতিনিধি পরিষদের অন্যতম দুটি সমস্যা মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে—তা হলো পুনর্বিবেচনা ও সম্প্রসারণ। ১৯২০ সালের পর থেকে কংগ্রেস অর্থপূর্ণভাবে বড় হয়ে ওঠেনি। বর্তমানে একজন প্রতিনিধি গড়ে ৭ লাখ ৭০ হাজার মানুষের জন্য কথা বলেন, অথচ প্রতিষ্ঠার সময় যা ছিল ৩০ হাজার। আমাদের দেখাতে হবে ভার্চ্যুয়াল কংগ্রেস একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরও ভালো কাজ করতে পারে অষ্টাদশ শতাব্দীর তুলনায়। বোঝাতে হবে, প্রযুক্তির মাধ্যমেই হয়তো আমরা জর্জ ওয়াশিংটনের সময়ের মতো ৩০০০০:১ অনুপাতে ফিরে যেতে পারব।

মার্গারেট ও’মারাসরকারের কর্তৃত্ব ফিরে আসছে
মার্গারেট ও’মারা, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক। ‘দ্য কোড: সিলিকন ভ্যালি অ্যান্ড দ্য রিমেকিং অব আমেরিকা’ বইয়ের লেখক।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কেন্দ্রীয়, রাজ্য ও স্থানীয়—সব ধরনের প্রশাসনকে মার্কিনদের সামনে আগের চেয়ে অনেক বেশি দৃশ্যমান করে তুলেছে। সরকারগুলো নাগরিকদের কাছে এখন অনেক বেশি দৃশ্যমান। আমরা এখন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকে নিয়মিত ব্রিফিং শুনছি, গভর্নরদের কাছ থেকে নির্দেশনা পাচ্ছি এবং জাতীয় নেতাদের কাছ থেকে আশা ও সহায়তা আশা করছি। আমরা দেখছি, বড় সরকারগুলো আমাদের জীবন ও স্বাস্থ্য খাতে ভূমিকা রাখছে। চার দশক ধরে জন-অবকাঠামোতে বিনিয়োগ না করা এবং জনস্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতামত অগ্রাহ্য করার বিপদ আমরা টের পাচ্ছি। সংকট থেকে বের হতে এই বড় বড় সরকারকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা শুধু যে আমেরিকা অনুভব করছে—তা কিন্তু নয়। সবারই প্রয়োজন এটি। বর্তমান পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার পর আমাদের দরকার হবে আরও বড় ও বিজ্ঞ সরকারব্যবস্থা।

(অনুবাদ করেছেন: ফারুক হোসেন, শেখ সাবিহা আলম, নাজনীন আখতার, তপতী বর্মন, শুভা জিনিয়া চৌধুরী, ফজলুল কবির, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, শাকিলা হক, রাজিউল হাসান ও অর্ণব সান্যাল।)


Source: https://www.prothomalo.com/international/article/1647378/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E2%80%93%E0%A7%A7

https://www.prothomalo.com/international/article/1647557/%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%be%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%87%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%b8-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a6%af%e0%a7%87%e0%a6%ad%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%a6%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a7%87-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%ac-%e0%a7%a8
"Many thanks to Allah who gave us life after having given us death and (our) final return (on the Day of Qiyaamah (Judgement)) is to Him"

Offline Shamim Ansary

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 3746
  • Change Yourself, the whole will be changed
    • View Profile
করোনাভাইরাসের এ মহামারির সময়ে পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে চলতি বছরেই নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ছবি: রয়টার্সসারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন করোনাভাইরাস। আক্রান্তের তালিকায় কোন দেশ নেই, তা খুঁজতে এখন রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হবে। মহামারি ঠেকাতে নানা উদ্যোগ চলছে। একই সঙ্গে চলছে মহামারি-পরবর্তী বিশ্বের রূপটি কেমন হবে, তা নিয়ে নানা আলোচনা। এ নিয়ে নানা বিতর্ক হতে পারে, তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, ভালো বা মন্দ—যেমনই হোক, এই সংকট অভাবনীয়ভাবে বদলে দেবে সামাজিক বিন্যাস।

মার্কিন পত্রিকা পলিটিকো গত সপ্তাহে বৈশ্বিকভাবে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটের প্রেক্ষাপটে ৩০ জনের বেশি বুদ্ধিজীবী ও চিন্তাবিদের মতামত নিয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট এই ব্যক্তিবর্গ সমাজের ওপর চলমান এ সংকটের বহুমুখী প্রভাব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন, যা আদতে বার্তার চেয়েও বেশি কিছু।

লিলিয়ান ম্যাসন। ছবি: ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের ওয়েবসাইট।লিলিয়ান ম্যাসন। ছবি: ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের ওয়েবসাইট।সরকারি সেবার বৈশিষ্ট্য ফিরে পাচ্ছে
লিলিয়ানা ম্যাসন, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক; ‘আনসিভিল অ্যাগ্রিমেন্ট: হাউ পলিটিকস বিকেম আওয়ার আইডেনটিটি’ বইয়ের লেখক।

রিগানের যুগ চলে গেছে। সাধারণভাবে মানুষের ধারণা হচ্ছে, সরকার সার্বিকভাবেই খারাপ। এই ধারণা করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ে আর টিকবে না। এই ঘটনাটির মধ্য দিয়ে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, একটি সুস্থ সমাজের জন্য কর্মক্ষম ও নিখুঁত সরকার ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘আমি সরকারে লোক, সাহায্য করতে এসেছি’—এই শব্দগুলো এখন আর আতঙ্ক জাগানিয়া নয়। আসলে মানুষ এখন এই কথাগুলোই শোনার জন্য উদ্‌গ্রিব হয়ে আছে। সরকারের হয়ে কাজ করলেই মিলবে দেশপ্রেমিকের মর্যাদা; বলা যায় এ ধারণার পুনর্জন্ম দেখব আমরা।

আরকন ফাং।ছবি: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট।একটি নতুন নাগরিক কেন্দ্রীকরণ
আরকন ফাং, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন এফ কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের সিটিজেনশিপ ও সেলফ-গভর্নমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মানসিক আঘাত একটি শক্তিশালী মার্কিন সরকার ও জাতীয় সংহতি সৃষ্টির ভিত্তি তৈরি করেছিল। ঠিক সেভাবেই করোনাভাইরাস সংকট নাগরিক পর্যায়ে নতুন কেন্দ্রের বীজ বপন করছে। এই ব্যবস্থায় অঞ্চল ও রাষ্ট্রই বিচার, সংহতি ও গণতান্ত্রিক সমস্যার দূরদর্শী সমাধানের কেন্দ্রে থাকবে। অনেক মার্কিনি এমন অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে এখন জাতীয় নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়ে আক্ষেপ করছেন। পেছন ফিরলে আমরা দেখব যে, কিছু গোষ্ঠী এই সংকট অন্যদের চেয়ে ভালোভাবে মোকাবিলা করছে। অনুসন্ধান করলে দেখতে পাব যে-এই সফলতা সেই সব রাষ্ট্রেই এসেছে, যেখানে সরকার, নাগরিক ও বেসরকারি খাতের নেতারা সামগ্রিক কল্যাণের জন্য আত্মত্যাগের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে একযোগে হয়েছেন।

একটি বিষয় ভেবে দেখতে হবে যে, শুরুর দিকে যখন কোভিড-১৯-এর পরীক্ষা করাটা খুব বেশি প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল, তখন ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের ভাইরোলজি ল্যাব এই কাজে সিডিসিসহ অন্য সংস্থাগুলোকে ছাড়িয়ে যায়। সামাজিক দূরত্ব মানা, ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান বন্ধ করে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন গভর্নর, মেয়র, শিক্ষা কর্তৃপক্ষ ও নিয়োগকর্তারাই। আয় হারিয়ে সন্তানদের নিয়ে ঘরে থাকা, সেলফ কোয়ারেন্টিনে থাকা লাখ লাখ সাধারণ মানুষ পরস্পরকে সহায়তা করেছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য চিকিৎসা সামগ্রী জোগাড় করা থেকে শুরু করে তাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের কাজটি এই সাধারণ মানুষ বা গোষ্ঠীই তাদের নিজস্ব নাগরিক কাঠামোর মাধ্যমে করেছে। করোনাভাইরাস এই শতাব্দীর সবচেয়ে জরুরি মানবিক চ্যালেঞ্জটির সামনে আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সামনে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। এ সবের মধ্যে থাকতে পারে জলবায়ু পরিবর্তন ও ঐতিহাসিক বৈষম্যের এ যুগকে অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির যুগে রূপান্তরের মতো বিষয়। এগুলো সামলেই রাষ্ট্র, শহর ও তার নাগরিকদের সংহতির এক নতুন দৃষ্টান্তের উদ্ভব হতে হবে।

অ্যাস্ট্রা টেইলর। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।আমাদের সব আইন কাজে আসবে না
অ্যাস্ট্রা টেইলর, চলচ্চিত্র নির্মতা এবং ‘ডেমোক্রেসি মে নট এক্সিস্ট, বাট উই উইল মিস ইট হোয়েন ইটস গন’ বইয়ের লেখক।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আমেরিকা যেভাবে সাড়া দিচ্ছে, তা থেকে একটা সরল সত্য প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এত এত যে নিয়ম-নীতির কথা বলেন, তা কার্যকর করা অসম্ভব ও অবাস্তব। ২০১১ সালে ওয়ালস্ট্রিট আন্দোলনের (অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট) কর্মীরা যখন শিক্ষা ও চিকিৎসা ঋণ মওকুফের দাবি তুলল, মূলধারার অনেক গণমাধ্যমে তখন অনেকেই বেশ হাসাহাসি করেছিল। কিন্তু এর পরের বছরগুলোতেও আমরা ধারাবাহিকভাবে দাবিটি করে গেছি। বলা হয়েছে, আমাদের এসব দাবি অযৌক্তিক। এখন আমরা জানি যে, যেসব ‘নিয়মের’ আওতায় আমরা বাঁচি, তা-ই বরং অপ্রয়োজনীয়; এগুলোই সমাজকে আরও বেশি ভঙ্গুর ও বৈষম্যপূর্ণ করে তুলেছে।

সব মিলিয়ে উচ্ছেদ এড়ানো যেত এবং গৃহহীনদের সরকারি ভবনে আশ্রয় দেওয়া যেত। বিল দিতে না পারলেও পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করলেও চলত। সবেতন ছুটি হতে পারত সব কর্মীরই অধিকার। মর্টগেজের টাকা পরিশোধ করতে দেরি হলেও ব্যবস্থা না নিয়ে অপেক্ষা করা যেত। ঋণগ্রহীতাদের হয়তো ছাড় দিয়ে স্বস্তির ব্যবস্থা করা যেত। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে নেওয়া শিক্ষাঋণের ওপর সুদ এরই মধ্যে স্থগিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো অঙ্গরাজ্য সরকার থেকে নেওয়া চিকিৎসা ও শিক্ষাঋণ স্থগিত করেছেন। দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষাঋণ আদায় স্থগিত বা একেবারে মওকুফ করে দেওয়া যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানরা।

এটা পরিষ্কার যে এই সংকটের সময় সব আইন প্রয়োগ করা যাবে না। আপনি হয়তো বিস্মিত হয়ে বলবেন, তাহলে এসব আইন আছে কি জন্য। আমি বলব, এটাই সুযোগ। শুধু বিদ্যমান ব্যবস্থা স্থগিত এবং সাময়িক উপশমের জন্য নয়, বরং এসব বিধি-ব্যবস্থা চিরতরে বদলে দেওয়ার এটাই সুযোগ, যাতে লাখ লাখ মানুষকে ভবিষ্যতে যেন আবার দুরবস্থার মধ্যে পড়তে না হয়।

মিশিকো কাকুতানি। ছবি: নিউইয়র্ক টাইমসের সৌজন্যে।প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা বাড়বে
মিশিকো কাকুতানি, নিউইয়র্ক টাইমসের গ্রন্থ-সমালোচনা বিভাগের সাবেক প্রধান এবং বেস্টসেলার ‘দ্য ডেথ অব ট্রুথ’ (২০১৮) বইয়ের লেখক।

করোনাভাইরাসের মহামারির প্রেক্ষাপটে মার্কিনিরা বুঝতে পারবেন—প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে মূল্যবোধ নিয়ে দেশ চালাচ্ছেন, তার বদলে কার্যকর গণতন্ত্র অপরিহার্য, যা কার্যকরভাবে জাতীয় সংকট মোকাবিলায় সক্ষম। করোনার প্রেক্ষাপটে স্পষ্ট হয়েছে যে, যেসব সরকারি প্রতিষ্ঠান জনগণের স্বাস্থ্য, স্বাধীনতা ও জাতীয় নিরাপত্তার দেখভাল করে, সেসব প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক অনুগতদের পরিবর্তে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা উচিত। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত যুক্তিসংগত প্রক্রিয়ায়, যার ভিত্তি হবে বিজ্ঞান, ইতিহাস ও ভূরাজনৈতিক জ্ঞান। কোনোভাবেই এর ভিত হবে না ট্রাম্পের ‘বিকল্প সত্য’, যাকে থমাস পিনচন বলছেন, ‘উন্মত্ততা, বিভ্রম ও নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ বিশৃঙ্খলা।’ ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’ পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের বহুপক্ষীয় কূটনীতিতে ফিরে যাওয়া দরকার। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও ভাইরাসের মহামারির মতো বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় শত্রু-মিত্র সবার সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়টির গুরুত্ব বোঝা উচিত।

সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের মনে রাখা উচিত, জনগণের আস্থা সরকারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই আস্থা নির্ভর করে সত্য বলার ওপর। ১৯১৮ সালের ভয়াবহ ফ্লু মহামারিতে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫ কোটি মানুষ মারা যায়। সেই বিপর্যয়ের মূল শিক্ষা হলো—ক্ষমতাসীনদের অবশ্যই জনগণকে আস্থায় রাখতে হয়। আর তার উপায় হলো কোনো কিছু বিকৃত না করা, কারসাজির চেষ্টা না করা।

ক্যাথি ও’নিল। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।রাজনৈতিক বিপ্লব প্রত্যাশা করুন
ক্যাথি ও’নিল, গাণিতিক নিরীক্ষা কোম্পানি ওআরসিএএর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এবং ‘ওয়েপনস অব ম্যাথ ডেস্ট্রাকশন: হাউ বিগ ডেটা ইনক্রিজেস ইনেকুয়ালিটি অ্যান্ড থ্রেটেনস ডেমোক্রেসি’ বইয়ের লেখক।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পরিণামগুলোর মধ্যে একটি হতে পারে নতুন রাজনৈতিক বিপ্লব—ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব। তবে এবার তা হবে আরও ব্যাপক আকারে এবং ক্ষোভের সঙ্গে। চলমান এই স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা শেষ হলে আমরা দেখতে পাব, ধনী এবং যোগাযোগ ও সম্পদে সুবিধাপ্রাপ্তরা কতটা ভালোভাবে টিকে গেছে; আর দুর্বল, দরিদ্র ও ঐক্যবদ্ধ নয়—এমন গোষ্ঠীগুলো ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। উপরন্তু, আমরা এখন দেখব, কীভাবে রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব—প্রয়োজনকে জরুরি মনে করলে লাখো কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তা ও প্রকল্প কীভাবে দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায়। এই অসামঞ্জস্য দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে বার্তা দিচ্ছে যে, তাদের প্রয়োজনীয়তাগুলোয় এত দিন শুধু মনোযোগই দেওয়া হয়নি, যে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন, তাও ছিল না, যার পরিণতি হবে মারাত্মক।

জো ব্রাদারটন। ছবি: ডেমোক্রেসি লাইভের সৌজন্যে।মূলধারায় আসবে ইলেকট্রনিক ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা
জো ব্রাদারটন, ইলেকট্রনিক ব্যালট প্রস্তুতকারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ডেমোক্রেসি লাইভ-এর চেয়ারম্যান

কোভিড-১৯ এর অন্যতম ভুক্তভোগীতে পরিণত হবে ভোট দেওয়ার পুরোনো ব্যবস্থা, যেখানে নির্বাচনকেন্দ্রে ভোটারদের সমবেত হওয়াটা আবশ্যকীয়। ফলে অন্যদের সংস্পর্শে থাকার আশঙ্কাও বেশি। আমরা ২০১০ সাল থেকে এই মডেল থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছি। ওই সময় মার্কিন কংগ্রেস একটি আইন পাস করে, যার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর সদস্য ও বিদেশে থাকা ভোটারেরা ইলেকট্রনিক ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান করতে পারছেন। কিছু অঙ্গরাজ্য এখন এই সুবিধা চাইছে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী ভোটারদের জন্য, যাতে তারা বাড়ি থেকে ভোট দিতে পারে। নির্বাচন কর্মকর্তারা যেখানে মহামারির মধ্যে নিরাপদ ভোট নিশ্চিতে হিমশিম খাচ্ছেন, সেখানে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করাই দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তিযুক্ত। যে ব্যবস্থায় নিরাপদ, স্বচ্ছ ও সাশ্রয়ীভাবে সেলফোন বা এ ধরনের বহনযোগ্য ডিভাইসের মাধ্যমে ভোট দেওয়া যাবে। ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কিছু এলাকায় একটি হাইব্রিড মডেল ব্যবহার হতে পারে, যেখানে কাগজের ব্যালটের পাশাপাশি সেলফোনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। এই বিকল্প আরও ব্যাপকভাবে ব্যবহার হবে বলেই মনে হয়। পরিষ্কারভাবে বলতে গেলে, কাগজের ব্যালটের পাশাপাশি এখনই এমন প্রমাণিত প্রযুক্তি রয়েছে, যা ঘরে বসে ভোট দেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। এই ব্যবস্থা কোনো ধারণাপ্রসূত নয়; এটি বাস্তবতা, যা প্রায় এক দশক ধরে এক হাজারের বেশি নির্বাচনে বিদেশে অবস্থানরত আমাদের সামরিক বাহিনীর সদস্য ও প্রতিবন্ধী ভোটারেরা ব্যবহার করে আসছেন। এটাই নতুন বাস্তবতা হওয়া উচিত।

লি ড্রুটম্যান। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।নির্বাচনের দিন না হয়ে হয়তো হবে নির্বাচনী মাস
লি ড্রুটম্যান, নিউ আমেরিকার জ্যেষ্ঠ ফেলো এবং ‘ব্রেকিং দ্য টু-পার্টি ডুম লুপ: দ্য কেস ফর মাল্টি পার্টি ডেমোক্রেসি ইন আমেরিকা’ বইয়ের রচয়িতা।

করোনাভাইরাসের এই মহামারির কালে আমরা কী করে নির্বাচন করব? আমরা ভোট দেওয়ার পদ্ধতিকে সহজ করে আনতে পারি। যেমন ভোটাররা যখন যেখানে ভোট দিতে চান, সেখানে ভোটের ব্যবস্থা করা। এতে করে নির্বাচনী দিনের ভিড় বা লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে থেকে যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে, তা এড়ানো যায়। পরিবর্তন আসতে পারে আগাম ভোট বা ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে মেলে ভোট দেওয়ার যে ব্যবস্থা তার প্রয়োগের বিস্তার ঘটিয়ে। এতে করে কার্যত নির্বাচনটা আর দিনে দিনে হবে না, এটি হবে মাসজুড়ে। অর্থাৎ ইলেকশন ডের পরিবর্তে ইলেকশন মান্থ চালু হতে পারে (অথবা কয়েক মাস ধরেও নির্বাচন হতে পারে। এটি নির্ভর করবে নির্বাচনগুলো কতটা বিরতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং ইলেকশন ডের তারিখ লেখা ব্যালট কত দিন পর্যন্ত গ্রহণ করা হবে তার ওপর।) এই পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট চিন্তাভাবনার প্রয়োজন, যেন প্রত্যেক সম্প্রদায়ের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয় এবং জাল ভোট না পড়ে। জনাকীর্ণ নির্বাচনী কেন্দ্রগুলো ঝুঁকিতে থাকা ভোটকর্মীতে (যারা সাধারণত বয়স্ক) ভরা থাকে। এমন পরিস্থিতিতেও নির্বাচন যেন অনুষ্ঠিত হয় সে জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণের তীব্র চাপ পড়তে পারে রাষ্ট্রের ওপর। আর একবার নাগরিকেরা এমন অভিজ্ঞতা পেলে, তা সহজে ছেড়ে দিতে চাইবে না। ভোট দেওয়াটা যত সহজ হবে, ভোট পড়ার হারও তত বাড়বে, যা দলীয় আনুগত্যের ধারায় একটি বড় বদল আনবে।

কেভিন আর কোসার। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।চিঠির মাধ্যমে ভোটই স্বাভাবিক হয়ে উঠবে
কেভিন আর কোসার, গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর স্ট্রিট ইনস্টিটিউটের সহসভাপতি

এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া, কেনটাকি, লুইজিয়ানা, ম্যারিল্যান্ড ও ওহাইও প্রাইমারি স্থগিত করেছে। অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোকেও হয়তো এ পথেই হাঁটতে হবে। কিন্তু এই নির্বাচনগুলো অনির্দিষ্টকাল ধরে স্থগিত থাকতে পারে না। দলগুলোকে এই শরতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগেই সম্মেলন শেষ করে একজন প্রার্থীকে মনোনীত করতে হবে। বেশ কিছু প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে জুন মাস এমনকি গ্রীষ্মের শেষ অবধি ভোগাতে পারে। এর মানে বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনী নীতিতে একটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। সময় কিন্তু বয়ে যাচ্ছে।

আশার কথা, জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থার মধ্য থেকে একটিকে বেছে নেওয়ার দায় থেকে মুক্তির একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি রয়েছে, সেটা হলো চিঠিতে ভোট দেওয়া। দেশের বাইরে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা দশকজুড়েই এভাবে ভোট দিয়ে আসছেন। ওয়াশিংটন, ওরেগন ও ইউটাহের মতো কিছু অঙ্গরাজ্যে এখনই বাসায় বসে ভোট দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তারা ভোটারদের কাছে ব্যালটসহ চিঠি পাঠায়। ফলে কেন্দ্রে গিয়ে বা চিঠির মাধ্যমে ভোট দেওয়ার বিকল্পটি ভোটারদের হাতেই থাকে। দুর্ভাগ্যবশত, বেশির ভাগ অঙ্গরাজ্যেই ব্যক্তিকে নিজেকে ভোট দিতে হয় এবং কেউ চিঠির মাধ্যমে ভোট দিতে চাইলে, তার অনুমতি আগেই নিতে হয়। ভোটাররা এখনই নিবন্ধন কার্ড ও নির্বাচনী নির্দেশনা চিঠিতে পেয়ে থাকেন। তাহলে ব্যালট কেন নয়? নিজে ভোট দিতে গিয়ে যে ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন ভোটারেরা, সে কথা মাথায় রেখে সনাতন সেই পদ্ধতির আধুনিকায়ন জরুরি এবং আমাদেরও উচিত দ্রুতই পরিবর্তনের আশা করা।

ডেল হো। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।ঝুঁকি কমাতে চিঠির মাধ্যমে ভোটই বিকল্প
ডেল হো, আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের ভোটাধিকার বিষয়ক প্রকল্পের পরিচালক

বেশির ভাগ মানুষ নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে যেভাবে ভোট দিয়ে আসছেন, তার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব অকল্পনীয়। কিন্তু স্বাস্থ্য ও ভোটাধিকার এ দুয়ের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার বিকল্প দেওয়ার বদলে আরও অনেক পদক্ষেপ নেওয়ার আছে।

প্রথমত, প্রত্যেক ভোটারকে ব্যালটসহ চিঠি পাঠানো যেতে পারে ফিরতি খামসহ। নির্বাচনের তারিখেই পোস্ট করা হয়েছে—এমন চিহ্ন থাকলেই সেগুলো গ্রহণ করতে হবে ও গুনতে হবে। ভোটার যদি কোনো ভুল করে থাকেন, তবে তাঁকে না জানিয়ে ভোট বাতিল করা যাবে না। পাশাপাশি ভুল শোধরানোর সুযোগও তাঁদের দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী বা ভাষায় অদক্ষ ব্যক্তি, যাদের ভোট দিতে অন্যের সহায়তা প্রয়োজন বা ডাকযোগে ভোট দেওয়ার সুযোগ যাদের সীমিত, তাদের জন্য কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে রাষ্ট্রকে।

যেসব ভোটার নিজেরা ভোটকেন্দ্রে আসবেন তাঁদের ঝুঁকি কমাতে এবং যে বিপুলসংখ্যক ভোট চিঠিতে পৌঁছাবে সেগুলো দ্রুত ও নির্ভুলভাবে গণনার জন্য নির্বাচনী প্রশাসনকে তরুণ নির্বাচনকর্মী নিয়োগ দিতে হবে। এ কাজের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ দেওয়া উচিত। অঙ্গরাজ্যগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে, যেন নির্বাচনী কর্মকর্তারা চিঠিতে পাঠানো ব্যালট নির্বাচনের তারিখের আগেই গণনার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধা দূর হয় (১৫টি অঙ্গরাজ্যে এমন নিয়ন্ত্রণ আছে)। মিডিয়ার দায়িত্ব হবে মানুষকে বোঝানো যে, এমন একটা পরিবেশে যখন বিপুলসংখ্যক ভোট চিঠিতে পৌঁছাচ্ছে, তখন বিজয়ীর নাম ঘোষণায় সময় বেশি লাগবে। এমন দেরির সঙ্গে আমরা অভ্যস্ত নই।

যদি কোনো অঙ্গরাজ্য এ সব উপায়ের সবগুলো গ্রহণ করতে না–ও পারে, যতগুলো সম্ভব ততগুলো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। চলমান সংকট এই ধরনের পরিবর্তনের আবশ্যকীয়তার কথা বলছে জোরেশোরে—পরিবর্তনগুলো ঘটবেও। (চলবে)

(অনুবাদ করেছেন: ফারুক হোসেন, শেখ সাবিহা আলম, নাজনীন আখতার, তপতী বর্মন, শুভা জিনিয়া চৌধুরী, ফজলুল কবির, সাইফুল ইসলাম, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, শাকিলা হক, রাজিউল হাসান ও অর্ণব সান্যাল।)


Source: https://www.prothomalo.com/international/article/1647746/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E2%80%93%E0%A7%A9
"Many thanks to Allah who gave us life after having given us death and (our) final return (on the Day of Qiyaamah (Judgement)) is to Him"

Offline Shamim Ansary

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 3746
  • Change Yourself, the whole will be changed
    • View Profile
হংকং ডিজনিল্যান্ডের মতো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের উদ্যানগুলো এই সময়ে ফাঁকা হয়ে পড়লেও সংকটের পর তা মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ছবি: রয়টার্সসারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে নতুন করোনাভাইরাস। আক্রান্তের তালিকায় কোন দেশ নেই, তা খুঁজতে এখন রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হবে। মহামারি ঠেকাতে নানা উদ্যোগ চলছে। একই সঙ্গে চলছে মহামারি-পরবর্তী বিশ্বের রূপটি কেমন হবে, তা নিয়ে নানা আলোচনা। এ নিয়ে নানা বিতর্ক হতে পারে, তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, ভালো বা মন্দ যেমনই হোক, এই সংকট অভাবনীয়ভাবে বদলে দেবে সামাজিক বিন্যাস।

মার্কিন পত্রিকা ‘পলিটিকো’ গত সপ্তাহে বৈশ্বিকভাবে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটের প্রেক্ষাপটে ৩০ জনের বেশি বুদ্ধিজীবী ও চিন্তাবিদের মতামত নিয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট এই ব্যক্তিরা সমাজের ওপর চলমান এ সংকটের বহুমুখী প্রভাব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন, যা আদতে বার্তার চেয়েও বেশি কিছু।

সোনিয়া শাহ। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যেভোগের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ
সোনিয়া শাহ, ‘প্যান্ডেমিক: ট্র্যাকিং কন্টাজিয়নস ফ্রম কলেরা টু ইবোলা অ্যান্ড বিয়ন্ড’ বইয়ের লেখক। তাঁর লেখা ‘দ্য নেক্সট গ্রেট মাইগ্রেশন: দ্য বিউটি অ্যান্ড টেরর অব লাইফ অন দ্য মুভ’ নামের আরেকটি বই বর্তমানে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

Lifebuoy Soap

সবচেয়ে ভালো যা হতে পারে, তা হলো বৈশ্বিক মহামারির আতঙ্ক সমাজকে বাধ্য করবে ভোগের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টিকে মেনে নিতে। ভবিষ্যৎ সংক্রামক রোগ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নিজেদের রক্ষার স্বার্থেই যৌক্তিক মূল্য হিসেবে তাকে এটি মেনে নিতে হবে। দশকের পর দশক ধরে আমরা আমাদের সীমাহীন ক্ষুধাকে পরিতৃপ্ত করতে পৃথিবীর বুকে শিল্প-স্থাপনার অনিয়ন্ত্রিত সম্প্রসারণ ঘটিয়েছি। বন্য প্রাণীদের বাধ্য করেছি নিজেদের গুটিয়ে নিতে। এই সম্প্রসারণের মধ্য দিয়ে বন্য প্রাণীদের সঙ্গে মানুষের সংযোগ বেড়েছে। আর এভাবেই সার্স-কোভ-২, ইবোলা, জিকার মতো বন্য প্রাণীর দেহে থাকা শত শত অণুজীব মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে, যারা মহামারির কারণ হয়ে উঠছে।

তত্ত্বীয়ভাবে বলা যায়, আমরা পারতাম আমাদের শিল্পায়নের মাত্রাকে কমিয়ে আনতে এবং বন্য প্রাণী সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে, যাতে প্রাণিদেহের অণুজীব প্রাণীর দেহেই থাকে। সে ক্ষেত্রে এমন সংক্রমণের মুখোমুখি হওয়ার শঙ্কা কম থাকত। এই পরিস্থিতিতে এখন বৈশ্বিকভাবেই নীতি প্রণয়ন-সম্পর্কিত বিতর্কের কেন্দ্রে চলে আসবে মানুষের মূল আয় ও অসুস্থতাজনিত সবেতন ছুটির প্রসঙ্গটি। গণহারে বিচ্ছিন্ন থাকার অবধারিত ফল হিসেবে সামনে চলে আসবে মানুষে-মানুষে সংসর্গের উচ্চ চাহিদা এবং ছোট পরিসরে হলেও উচ্চ জন্মহারের মতো বিষয়। অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের যে উল্লম্ফন এ সময়ে হচ্ছে, তাতে বর্তমানে নিঃসঙ্গ থাকতে বাধ্য হওয়া তরুণ প্রজন্ম গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনের প্রতি আস্থা রেখে সাংস্কৃতিক বদল নিয়ে আসবে।

টড এন টাকার। ছবি: টুইটারের সৌজন্যেঅভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে
টড এন টাকার, রুজভেল্ট ইনস্টিটিউটের গভর্ন্যান্স স্টাডিজের পরিচালক

২০১৮ সালের সেই পুরোনো দিনে জাতীয় নিরাপত্তার বৈশ্বিক মানদণ্ডের দোহাই দিয়ে স্টিলের ওপর শুল্ক আরোপ করায় ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক সমালোচনা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সে সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টুইটার পোস্টে লিখেছিলেন, ‘যদি তোমার স্টিল না থাকে, তবে তোমার কোনো দেশও থাকবে না।’ তবে অধিকাংশ অর্থনীতিবিদই ধাতুর বাজারকে অস্থির করে তোলার (মার্কিন এই পদক্ষেপের) কারণ হিসেবে চীনকে চিহ্নিত করেছিলেন। একই সঙ্গে তাঁরা মনে করেছিলেন, মার্কিন মিত্রদের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ ছিল অত্যন্ত বাজে সিদ্ধান্ত। এও বলা হয়, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র যদি তার সব স্টিল শিল্প হারিয়ে বসে, তবে আমরা উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় মিত্রদের কাছ থেকে এর সরবরাহ পাব।

এবার ২০২০ সালে আসা যাক। এই সপ্তাহেই মার্কিন মিত্ররা বন্দর ও রপ্তানি বন্ধসহ সীমান্তে বাড়তি বিধিনিষেধ আরোপের কথা ভাবছে বলে জানা গেছে। যদিও বাণিজ্যের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়—এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো পাওয়া যায়নি। এই প্রেক্ষাপটে যে কারও মাথায় এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ের পূর্বাভাসই আসবে, যেখানে ভয়াবহ মন্দার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাও। আর এগুলো স্বাভাবিক সরবরাহ ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশযোগ্যতা কমাবে। একই সঙ্গে বহু পণ্য অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদন করার ক্ষমতা না থাকায় যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ মুহূর্তে তার সাড়া দেওয়ার ক্ষমতাও ব্যাপকভাবে কমবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত সঠিক পদক্ষেপ ছিল কি না, তা নিয়ে যৌক্তিক তর্ক চলতেই পারে। তবে সামনের বছরগুলোতে অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে রক্ষণশীল যেকোনো সিদ্ধান্তের প্রতি ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান নির্বিশেষে বিশেষজ্ঞ ও কূটনীতিকদের সমর্থন মিলবে, যাতে মিত্র দেশগুলোর দিক থেকে বাণিজ্য খাতে যেকোনো সিদ্ধান্তেও স্থিতিশীল থাকা যায়। সাম্প্রতিক অতীতকে বিবেচনায় নিলে এটি হবে অনেক সংহত পুনর্গঠন।

দাম্বিসা ময়ো। ছবি: টুইটারের সৌজন্যেব্যয় বাড়বে ভোক্তা ও করপোরেশন উভয়েরই
দাম্বিসা ময়ো, অর্থনীতিবিদ ও লেখক

করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারি করপোরেশনগুলোর ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে, যাতে তারা বিদ্যমান বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার বিপরীতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার কার্যকারিতার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বাধ্য হয়। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা খণ্ডিত সরবরাহ ব্যবস্থার বদলে আরও বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, নতুন এই ব্যবস্থায় মানুষ তার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পেলেও এই রূপান্তর অবশ্য ভোক্তা ও করপোরেশন উভয়েরই ব্যয় বাড়াবে।

থেডা স্কোকপল। ছবি: হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটবৈষম্য বাড়বে
থেডা স্কোকপল, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক

যুক্তরাষ্ট্রে বৈষম্য নিয়ে আলোচনা মাঝেমধ্যেই ১ শতাংশের সঙ্গে ৯৯ শতাংশের আয়ের ব্যবধানের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। কিন্তু সর্বোচ্চ আয় করা ৫ শতাংশ ও সবচেয়ে নিচুতলার মানুষের মধ্যবর্তী পর্যায়েও বৈষম্য বেড়েছে। এই সংকটে ওই বৈষম্য আরও বাড়বে।

সাম্প্রতিক দশকগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশের আয় তাঁদের নিচে অবস্থান করা শ্রেণির তুলনায় অনেক বেশি বেড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা বিবাহিত ও উচ্চশিক্ষিত শ্রেণির প্রতিনিধি। উচ্চ বেতনের পেশাজীবী বা ব্যবস্থাপক হিসেবে তাঁরা এমন ঘরে বাস করেন, যেখানে রয়েছে ইন্টারনেট ও ফোনে যোগাযোগের সুযোগ থেকে শুরু করে সন্তানদের জন্য আলাদা ঘরসহ নানা ব্যবস্থা। ফলে তাঁদের পক্ষে ঘরে থেকে কাজ করাটা অনেক সহজ। এই সংকটকালে তাঁরা তাই আগের মতোই আয় করে যাবেন। আর তাঁদের নিত্যপণ্য তাঁদের দোরগোড়াতেই পৌঁছে যাবে।

বাকি ৮০ শতাংশ মার্কিনের এই আর্থিক সুযোগটি নেই। কেউ কেউ আগের মতোই থাকবেন। তবে অনেকেই কাজ হারিয়ে পরিবারের বোঝা হয়ে উঠবেন। একক আয়ে চলা পরিবারগুলোই এ বিপদে পড়বে বেশি। তাঁদের ঘরে থেকে কাজ করার সুযোগও কম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁরা সেবা খাত বা পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। আর এ ধরনের চাকরি তাঁদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের সন্তানেরা ঘরে বসে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারবে না, যেহেতু তাদের মা-বাবার পক্ষে তাদের সহায়তা করা সম্ভব হবে না। এমনকি উচ্চগতির ইন্টারনেট না থাকায় অনেকের ক্ষেত্রেই দূর থেকে সন্তানদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়াও সম্ভব হবে না। ফলে সার্বিকভাবে বৈষম্য বাড়বে।

মেরি ফ্রান্সিস বেরি। ছবি: পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটবৈচিত্র্যের ক্ষুধা
মেরি ফ্রান্সিস, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার আমেরিকান সোশ্যাল থট, হিস্ট্রি অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক

করোনাভাইরাস যে পৃথিবীকে স্থায়ীভাবে বদলে দেবে, তার কিছু নমুনা ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, যা হয়তো আরও বেগবান হবে। যেমন এখনই কোনো কোনো প্রবেশপথের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কণ্ঠস্বর প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মহামারি পড়ানোর বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া বিজ্ঞানীরা শুরু করেছেন মহামারির পূর্বাভাস, চিকিৎসা ও এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে বিস্তর গবেষণা। ইতিহাস অবশ্য আরেকটি বিষয়েও শিক্ষা নিতে বলছে।

১৯১৮-১৯ সালে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ স্প্যানিশ ফ্লু মহামারি ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কা সামলে ওঠার পর অধিকাংশ আমেরিকান একটু আয়েশি জীবন চেয়েছিল। ভয়-শঙ্কা পেরিয়ে জীবনে বিনোদন চেয়েছিল। এরই ফল হিসেবে ব্যক্তিগত গাড়ি ও রেডিও আবিষ্কার অনেক সহজ হয়। সংবিধানের ১৯ সংশোধনীর মাধ্যমে নারীরা ভোটাধিকার লাভ করেন। এ ঘটনার পর ১০ বছরের মধ্যে অর্থনীতির ব্যাপক বিকাশ ঘটে। অযৌক্তিক বিনিয়োগ আমেরিকাসহ সারা বিশ্বকে চাপে ফেলার আগ পর্যন্ত অর্থনীতির এই বিকাশ অব্যাহত ছিল।

অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, করোনাভাইরাসের এই মহামারি শেষ হয়ে গেলে সম্ভবত মানুষ নানা দিক থেকে মুক্তি চাইবে। মানুষ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে।

পল ফ্রিডম্যান। ছবি: ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটরান্নায় ঝোঁক বেড়ে যাবে
পল ফ্রিডম্যান, ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক ও ‘আমেরিকান কুইজিন: অ্যান্ড হাউ ইট গট দিস ওয়ে’ বইয়ের লেখক

গত কয়েক বছরে দেখা গেছে, খাবার কেনা বা তৈরির চেয়ে আমেরিকানরা বাইরের প্রস্তুত খাবারের পেছনে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেছে। তবে এই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের বেশির ভাগ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে, মানুষ একা একা সময় কাটাচ্ছে। এ কারণে বাধ্য হয়েই ঘরবন্দী মানুষ শিখছে—কী করে আগামী দিনগুলোতে বাইরে না গিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়। এ কারণেই একসময় তারা এই বাড়িতে রান্নার ব্যাপারে আবার অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। রেস্তোরাঁয় আর অযথা অর্থ খরচ করে সময় নষ্ট করতে চাইবে না। ইউরোপ ও আমেরিকার রেস্তোরাঁগুলোয় বসে খাওয়ার চল কমে যাবে। একই সঙ্গে বিশ্বের মানুষ কিছুদিনের জন্য হলেও অনেকটাই অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠবে।

আলেক্সান্দ্রা লেঞ্জ। ছবি: সংগৃহীতসুন্দর ও মুখর হয়ে উঠবে উদ্যানগুলো
আলেক্সান্দ্রা লেঞ্জ, স্থাপত্য সমালোচক

আগে মানুষ পার্ক, ফুটবল মাঠ, বারবিকিউ বা একটু সুযোগ পেলেই খেলার মাঠের দিকে ছুটতেন। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এখন এসব প্রায় বন্ধ। ভাইরাসটি ছোঁয়াচে হওয়ায় এখন ঘরে বা বাসায় থাকাটাই জরুরি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, উদ্যানগুলো কম মূল্যবান হয়ে উঠেছে।

আমি বর্তমানে ব্রুকলিনে নিজের পরিবারের সঙ্গে আছি। আর প্রতিদিনই একবার বাইরে হাঁটতে বের হই। গোল্ডেন গেট পার্কের সংযোগ সড়কগুলো বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন লোককে আমি আহ্বান জানাতে দেখেছি, যাতে তারা হাঁটার জন্য আরও বড় পরিসর পায়। ব্রিটেনে ন্যাশনাল ট্রাস্ট এই সময়ে মানুষের জন্য আরও বেশি বাগান ও উদ্যান বিনা মূল্যে উন্মুক্ত করার চেষ্টা করছে। গত দশকে বড় শহরগুলো উদ্যান গড়ে তুলতে বড় বিনিয়োগ করেছে। এসব উদ্যান দূরত্ব মেনে অনেক মানুষের হাঁটাচলার জন্য উপযুক্ত।

শহুরে মানুষ খোলা জায়গা চায়। একটু হাঁটার পথ চায়। অনেক দিন এসব পার্ক ব্যবহৃত না হওয়ায় এক সময় সবুজে ভরে উঠবে। আর মানুষ তখন সবুজের সমারোহে মুক্ত বাতাসে আনন্দ উপভোগ করবে। আজকের এই সামাজিক দূরত্ব মানতে বাধ্য করা মহামারি শেষে মানুষ মানুষের অনেক কাছাকাছি আসতে চাইবে। সে সময় এই বড় পরিসরগুলো মানুষের কাছে অনেক বেশি মূল্যবান হয়ে উঠবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের লক্ষ্যেই নয়, মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগ বাড়াতেই এগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

শপিংমল নিয়ে আমি একটি বই লিখছি। তবে সতর্কতার কারণে এখন শপিংমলে পর্যবেক্ষণে যাচ্ছি না। পার্কগুলোর যে কাজ, বর্তমান সময়ে শহরতলির শপিংমলগুলো একই কাজ করছে। সেখানেই মানুষ ভিড় জমিয়ে একত্র হচ্ছে, একে অপরের সঙ্গে দেখা করছে। ছোট্ট একটা জায়গার মাঝে এত মানুষের ভিড় করোনাভাইরাস ছড়ানোর উপযুক্ত জায়গা। তাই এই সময়ে শপিংমলগুলোতে ভিড় না জমানোই ভালো। এ ছাড়া অনেক দেশ জনগণের নিরাপত্তার কথা ভেবে শপিংমল বন্ধ ঘোষণা করেছে। ঘর ছাড়া মানুষের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এই মহামারি শেষ হয়ে গেলে আশা করব মানুষ আর শপিংমল নয়, বরং উন্মুক্ত মাঠ তৈরিতে বেশি বিনিয়োগ করবে। এতে মানুষ ও সবুজে মুখর হয়ে উঠবে সারা বিশ্বের উদ্যানগুলো।

ম্যাথিউ কন্টিনেত্তি। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে‘পরিবর্তন’ ধারণার বদল ঘটবে
ম্যাথিউ কন্টিনেত্তি, আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের আবাসিক ফেলো

সাংবাদিকতায় বহুল ব্যবহৃত শব্দের একটি হচ্ছে ‘পরিবর্তন’। করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতেও এই শব্দ ব্যবহৃত হচ্ছে। আমেরিকান সমাজ পরিবর্তনের একটি বিশেষ মডেলের সঙ্গে পরিচিত। উদারনৈতিক গণতন্ত্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিশেষত মুক্তবাজার, ব্যক্তিস্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেই এই শব্দের প্রয়োগ বেশি হয়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বদল আসবে এই ‘পরিবর্তন’ ধারণায়ও।

করোনাভাইরাস কেবল রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় আঘাত হানেনি। গৃহযুদ্ধ, মহামন্দা বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতোই মুক্ত সমাজের ভিতে আঘাত করার ক্ষমতা এর রয়েছে। রাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বহুমাত্রিক এই সংকট মোকাবিলায় নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে, যার কোনো কোনোটি পরস্পরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বৈশ্বিক অর্থনীতি এরই মধ্যে মন্দার প্রাথমিক স্তরে প্রবেশ করেছে, যা মহামন্দাতেও রূপ নিতে পারে। ইতিমধ্যে মার্কিন অর্থনীতির একটা বড় অংশ পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে। মার্কিন নাগরিকেরা হালকা চালে চলার ও নিরবচ্ছিন্ন সক্রিয়তার রেওয়াজ থেকে মুহূর্তেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ফেডারেল সরকার এমন সব পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা শুধু যুদ্ধকালেই দেখা যায়। ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত আমাদের সামগ্রিক চেতনা এরই মধ্যে বদলে গেছে। যদি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা একই সঙ্গে ব্যক্তি স্বাস্থ্য ও গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আঘাত করে চলে, তাহলে আমাদের ‘পরিবর্তন’-এর আগের ধারণায় বদল আনতে বাধ্য হতে হবে। মূলগতভাবেই পরিবর্তন আসবে।

ভার্জিনিয়া হেফারনান। ছবি: লিংকডইনের সৌজন্যেস্বভাবের স্বেচ্ছাচার আর নয়
ভার্জিনিয়া হেফারনান, ‘ম্যাজিক অ্যান্ড লস: দ্য ইন্টারনেট অ্যাজ আর্ট’ বইয়ের লেখক

মানুষ তার প্রতিদিনের রুটিন বা চক্র থেকে সাধারণত একবারে বের হয়ে যেতে পারে না। তবে এই সময়ে কর্মক্ষমতা, উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতার সর্বোচ্চ মাত্রা অর্জনের সাম্প্রতিক যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা অজস্র কুটিরশিল্পের পত্তন করেছে, তা আদতে নিকটজনকেই নায়কোচিত হিসেবে প্রদর্শনে ব্যস্ত ছিল। দ্য ফোর-আওয়ার ওয়ার্কউইক, দ্য পাওয়ার অব হ্যাবিট ও অ্যাটমিক হ্যাবিটসের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের পাঠকদের এমন স্বয়ংক্রিয় স্বভাব রপ্ত করতে উদ্বুদ্ধ করেছে, যার মূল কথাই হচ্ছে—বেশি কাজ ও কম খাওয়া।
তবে কোভিড-১৯-এর এই সময় জানাচ্ছে যে, আমাদের সময়ের নেতা হওয়ার যোগ্য তাঁরা নন। ‘দ্য প্লেগ’ বইয়ের লেখক আলবেয়ার ক্যামু মহামারিতে আলজেরিয়ার একটি শহর বিলোপ হয়ে যাওয়ার পেছনে নেতাদের কঠোরতাকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, মহামারিতে সেখানে সবাই বিরক্ত ছিল, সবাই তাদের পুরোনো অভ্যাস বদল করার চেষ্টা করছিল। আর শুধু অভ্যাসের পেছনে সময় ব্যয় করায় নগরবাসীর কল্পনাশক্তি হারিয়ে যাচ্ছিল। চারপাশের মৃত্যু দৃশ্য তাদের থমকে দিয়েছিল। এ কারণে তাদের রাস্তায় বেড়ানো, অর্থের প্রয়োজনে কাজ করা ও সিনেমা দেখার মতো কাজগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

আলবেয়ার ক্যামুর সময়ের মতোই এটি আমাদের স্বৈরতন্ত্র ও মহামারির অপচ্ছায়া সম্পর্কে সতর্ক করছে, যা আমাদের নির্ধারিত আচরণবিধির বদলে কল্পনা, কাণ্ডজ্ঞান ও খামখেয়ালি স্বভাবের দিকে ফিরে তাকাতে বলছে। এই সময় আরও বেশি বিস্তৃত ও সাহসী দৃষ্টিভঙ্গির দাবি করছে, যাতে আমরা ট্রাম্পের মতো গোঁড়া ও স্বেচ্ছাচারীর কবলে না পড়ি। একই সঙ্গে এটি পরিবেশবিধ্বংসী ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করতে পারে—এমন কোনো আচরণের কবলেও যেন না পড়ি, তার বার্তাও দিচ্ছে। পৃথিবীতে আমাদের ক্ষণিকের আয়ুর কথা বিবেচনায় নেওয়ার মধ্য দিয়ে এই মহামারি আমাদের মধ্যে আরও বিস্তৃত বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির উদয় ঘটাতে পারে। ব্যবস্থাপত্র মেনে অভ্যাস গড়ার পাশাপাশি অর্থবহ ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের দিকে ঝোঁকার কথা যেন আমরা ভুলে না যাই। (শেষ)


(অনুবাদ করেছেন: ফারুক হোসেন, শেখ সাবিহা আলম, নাজনীন আখতার, তপতী বর্মন, শুভা জিনিয়া চৌধুরী, ফজলুল কবির, সাইফুল ইসলাম, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, শাকিলা হক, রাজিউল হাসান ও অর্ণব সান্যাল।)

Source: https://www.prothomalo.com/international/article/1647909/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%A6%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B7-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC
"Many thanks to Allah who gave us life after having given us death and (our) final return (on the Day of Qiyaamah (Judgement)) is to Him"