শিশুর জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে কী করবেন

Author Topic: শিশুর জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে কী করবেন  (Read 1879 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
সব শিশুই কম-বেশি জ্বরে ভুগে থাকে। কিন্তু জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে শিশুর বাবা-মার দুশ্চিন্তার মাত্রা বেড়ে যায়। কি করবেন, কোথায় যাবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারেন না। জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে বিলম্ব না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসা পরিভাষায় জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে সে অবস্হানে বলে ‘ফেবরাইল কনভালশন’ সাধারণত জ্বরের প্রথম দিনেই খিঁচুনি হতে দেখা যায়। দেখা গেছে, চার মাস থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। শিশুর বয়স যখন ১৮ মাস হয় তখন জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি সমস্যাটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়া মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলে শিশুদের এ সমস্যাটি বেশি হয়ে থাকে। সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা ১০০.

৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর বেশি হয়ে তাকে। জ্বরের শুরুতেই খিঁচুনি হয়ে থাকে এবং খিঁচুনি ১০ থেকে ১৫ মিনিটের বেশি থাকে না। পরিবারে এ রোগের ইতিহাস থাকলে অর্থাৎ পরিবারের অন্য কেউ শৈশবে এ রোগে ভুগে থাকলে সেই পরিবারের শিশুদের এ সমস্যাটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যায়-

* শিশুর দাঁতে দাঁত লেগে যায়।
* মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে পারে।
* চোখ স্হির হয়ে থাকে।
* হাতে-পায়ে বার বার খিঁচুনি হতে থাকে।
* কখনো কখনো শিশু সংজ্ঞাহীন হয়ে যেতে পারে।
* সংজ্ঞাহীন অবস্হা ৫ থেকে ১৫ মিনিট পর্যন্ত স্হায়ী হতে পারে।
জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি কেন হয়?

বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, নিম্নলিখিত কারণে এ সমস্যাটি হয়ে থাকে-
* শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগের প্রদাহ যেমন টনসিলাইটিস, অটাইটিস মিডিয়া
* প্রসাবের রাস্তায় প্রদাহ
* নিউমোনিয়া
* গ্যাসট্রো এন্টেরাইটিস বা পেটের অসুখ ইত্যাদি

জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে কি করবেন?
এক কথায় বললে এ ধরনের সমস্যায় শিশুকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসক দেখানো উচিত। তবে চিকিৎসক দেখানোর আগে ও পরে মা-বাবারও করণীয় আছে। মনে রাখতে হবে জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমাতে হবে। কারণ, জ্বর কমে গেলে খিঁচুনি বন্ধ হয়ে যায়। শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য পরিষ্কার তোয়ালে বা স্বাভাবিক পানি অর্থাৎ কলের পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে চিপড়ে শিশুর সমস্ত শরীর মুছে দিতে হবে। এভাবে কিছুক্ষণ পর পর স্পঞ্জ করতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়ানো যেতে পারে। তবে শরীরে ওজন এবং রোগীর অবস্হা বুঝে চিকিৎসকের নির্ধারিত ডোজে এটি দেয়া উচিত। সাধারণত ৬০ মিলিগ্রাম প্যারাসিটামল প্রতি কেজি ওজনে প্রতিদিন দেয়া হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে প্রতি ৪ বা ৬ ঘণ্টা অন্তর শিশুকে দেয়া যেতে পারে। তাপমাত্রা কমানোর জন্য প্রয়োজন বোধে পাখা ছেড়ে বাতাস দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে, এ অবস্হায় শিশু যেন কখনোই একা না থাকে এবং খিঁচুনি চলাকালে শিশুকে একদিকে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে। এতে করে মুখের লালা গাল দিয়ে গড়িয়ে যেতে পারে। চিৎ করে শোয়ালে মুখের লালা শ্বাসনালীতে ঢুকে যেতে পারে। ফলে শিশুর শ্বাসকষ্ট এমন কি শ্বাসরোধ হয়ে মারাত্মক অবস্হার সৃষ্টি করতে পারে। শিশুর মাথার নিচে এ অবস্হায় বালিশ দেয়া উচিত নয়।

জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে শিশুর দাঁতে দাঁত লেগে যেতে পারে। কিন্তু এ অবস্হায় শিশুর মুখে চামচ বা অন্য কোনো শক্ত জিনিস দিয়ে দাঁত খোলার চেষ্টা করবেন না। কেননা এতে করে শিশুর মুখে বা চোয়ালে আঘাত লাগতে পারে। প্রয়োজনবোধে কাপড় বা এ জাতীয় অন্য কিছু মুখে দেয়া যেতে পারে যাতে করে দাঁত লেগে জিহ্বা কেটে না যায়। আবারো বলছি, এ অবস্হা হলে সময় নষ্ট না করে শিশুকে নিকটস্হ হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নেয়াই ভালো। চিকিৎসক শিরা পথে ডায়াজিপাম ইনজেকশন ধীরগতিতে দিতে পারেন। খিঁচুনি হলে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অন্তর এটি দেয়া যায়। এছাড়া পায়ুপথেও ডায়াজিপাম দেয়া যায়। চিকিৎসক রোগীর অবস্হা বুঝে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধও দিতে পারেন।

মনে রাখতে হবে, যে শিশুর একবার জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হয়েছে তার কোনো কারণে জ্বর হলে আবার খিঁচুনি হতে পারে। এ অবস্হা থেকে রেহাই পেতে মা-বাবাকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে। আজেবাজে ফার্মাসিউটিক্যাল নামধারী কোম্পানির সস্তা প্যারাসিটামল ওষুধ কখনোই শিশুকে খাওয়াবেন না। শিশুর বয়স পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলে এ সমস্যার ঝুঁকি থাকে না। তাই এ বয়স পর্যন্ত মা-বাবাকে শিশুর প্রতি বিশেষ যত্ম নিতে হবে। কেননা জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি সমস্যা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণে না আনলে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি সাধন করতে পারে।

—————–
ডা. এবি সিদ্দিক
ব্যবস্হাপনা পরিচালক, আল শেফা ডায়াগনষ্টিক ও হাসপাতাল, কমলগঞ্জ, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ।
আমার দেশ, ১লা এপ্রিল ২০০৮