নবজাতকের ঘুম

Author Topic: নবজাতকের ঘুম  (Read 1821 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
নবজাতকের ঘুম
« on: January 03, 2012, 08:16:39 AM »
নবজাতকের ঘুম নিয়ে দুশ্চিন্তা করেন না এমন মা-বাবা কমই আছেন। জন্মের পরই কিছু মা-বাবা উদ্বিগ্ন থাকেন তাদের সন্তানের অত্যধিক ঘুম নিয়ে। না খেয়ে বাচ্চার দীর্ঘক্ষণ ঘুমানো তাদের অবাক করে। প্রকৃতপক্ষে জন্মের পর প্রথম কয়েক মাস শিশু ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা ঘুমায় তাই এটা অস্বাভাবিক নয়। আর বাচ্চা যদি না খেয়ে দীর্ঘক্ষণ ঘুমায় তাতেও ভয়ের কিছু নেই, ক্ষিধা পেলে সে এমনিতেই জেগে উঠে খেতে চাইবে।

যাদের বাচ্চা রাতে ঘুমায় না আর সারাদিন ঘুমিয়ে কাটায় তাদের বিড়ম্বনা সবচেয়ে বেশি। নবজাতকের রাতে জেগে থাকার কারণ দিন ও রাতের পার্থক্য বুঝতে না পারা। শিশু দীর্ঘদিন মাতৃগর্ভে থাকার কারণে পৃথিবীর আলোতে এসে দিন-রাত বুঝতে পারে না। তাছাড়া শিশুর ব্রেইনের যে অংশ দিন ও রাত বুঝতে পারে তা পরিণত হতেও সময় লাগে, এ কারণেই নির্ঘুম রাত কাটায় নবজাতক।

কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে শিশু দিন ও রাতের পার্থক্য দ্রুতই বুঝতে পারে, ফলে দিনে জেগে থেকে রাতে ঘুমাতে শুরু করে। ঘরে উজ্জ্বল আলো জ্বালিয়ে রাখুন দিনের বেলায়। পরস্পরের সঙ্গে উঁচু স্বরে কথা বলুন, বাচ্চার সঙ্গেও কথোপকথন চালান। মিউজিক ও টিভিও চালাতে পারেন। দিনের বেলায় অতিথি এলে বাচ্চাকে ঘুম থেকে তুলতে সংকোচ করবেন না। অতিথি যদি বাচ্চাকে কোলে নেয়, কথা বলে কিংবা বাচ্চার সঙ্গে খেলে তবে তা শিশুর ঘুম তাড়াতে সাহায্য করবে। তবে দিনের বেলায় শিশুকে একেবারে নির্ঘুম রাখতে হবে তা নয়। শিশু ২ থেকে ৪ বার এক-দেড় ঘণ্টার ঘুম দিতে পারে। কিন্তু সন্ধ্যা ৬টার পর শিশু যেন না ঘুমায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রঙিন পোশাক, খেলনা ও উজ্জ্বল আলো তাকে উদ্দীপ্ত করবে। খেলা, কথা বলা ও মিউজিক এ সময়ও চালিয়ে যেতে হবে। বাচ্চা যেন দুধ খেতে খেতে ঘুমিয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন। প্রয়োজনে পায়ে আলতো টোকা দিন। কুসুম গরম পানি দিয়ে বাচ্চাকে মুছিয়ে দিলে বাচ্চা ফ্রেশ থাকবে, এতে ঘুমাবেও কম। সন্ধ্যা থেকে বাচ্চাকে জাগিয়ে রাখলেও ১টা বাজলেই ঘরের সব বাতি নিভিয়ে দিন। কোথাও যেন কোনো শব্দ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। পরস্পরের সঙ্গে ফিসফিসিয়ে কথা বলুন। ঘুমের আগে শিশুকে সর্বশেষ রাত ১০টার দিকে খাওয়াতে চেষ্টা করুন। এরপর শিশু না ঘুমালেও তাকে বিছানায় নিয়ে যান, রাতে ঘুমানোর জন্য হালকা গান শোনাতে পারেন। কোলে নিয়ে শিশুকে দোলালেও তাড়াতাড়ি ঘুম পাড়ানো যায়। শিশু মাতৃগর্ভে থাকার সময় মায়ের হাঁটাচলা ও নড়াচড়ার কারণে গর্ভের বাচ্চা দোল অনুভব করে। জন্মের পরেও এই দোল খাওয়াটা শিশুরা পছন্দ করে, তাই কোলে নিয়ে হাঁটলে শিশুরা তাড়াতাড়ি ঘুমায়।

প্রথম কয়েকদিন রাতে ঘুমানোর ক্ষেত্রে অসুবিধা হলেও একটু ধৈর্য ধরে এসব পদ্ধতি মানলে ১/২ মাসেই বাচ্চা রাতে ঘুমাবে। তবে সতর্ক থাকতে হবে ছয় মাস পর্যন্ত কারণ শিশুর ঘুমের প্রকার ও সময় নির্দিষ্ট হতে ছয় মাস লেগে যায়। ছয় মাসে শিশু নয় থেকে এগারো ঘণ্টা ঘুমায়। এর মধ্যে দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টার দুটি ছোট ঘুম দেয়া ছাড়া বাকিটা যেন রাতেই ঘুমায় সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যেতে হবে।

ঘুমের এসব পদ্ধতি অবলম্বনের সময় খুব কঠোর হওয়া যাবে না। জবরদস্তিও করা উচিত নয়। মুল কাজটা হবে দিনের বেলায় শিশুকে জাগিয়ে রাখতে তাকে উদ্দীপ্ত ও উৎসাহিত করা আর রাতে শিশুর ঘুমের জন্য শব্দহীন, আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা। এতসব করতে গিয়ে নবজাতকের খাওয়া-দাওয়া যেন অপর্যাপ্ত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে কিন্তু।

——————————-
ডা. আবু সাঈদ শিমুল ২০০৮-০৩-১৮
আমার দেশ, ১৮ মার্চ ২০০৮