করোনাভাইরাসের মহামারি ঠেকানো যেত: নোয়াম চমস্কি

Author Topic: করোনাভাইরাসের মহামারি ঠেকানো যেত: নোয়াম চমস্কি  (Read 762 times)

Offline Shamim Ansary

  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 3747
  • Change Yourself, the whole will be changed
    • View Profile
করোনাভাইরাসে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগের ধাক্কায় বেসামাল সারা বিশ্ব। বিশ্বের ১৮১টির মতো দেশে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ১০ লাখের বেশি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। দিন যত যাচ্ছে, মৃত্যুর এই মিছিল ততই দীর্ঘ হচ্ছে। তবে মার্কিন বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ ও লেখক নোয়াম চমস্কির মতে, করোনার এই আঘাত চাইলেই সামাল দেওয়া যেত। থামানো যেত মৃত্যুর মিছিল।

নিজের কার্যালয়ে স্বেচ্ছা-আইসোলেশনে থাকা নোয়াম চমস্কি ক্রোয়েশিয়ার দার্শনিক ও লেখক সার্কো হর্ভাটের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্বের কাছে এই ভাইরাস সম্পর্কে অনেক তথ্য আগে থেকেই ছিল। এখন যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। নোয়াম চমস্কি হুঁশিয়ার করেছেন, করোনাভাইরাসের মহামারি শেষ হলে বিশ্বের সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ থেকে যাবে—পারমাণবিক যুদ্ধ আর বৈশ্বিক উষ্ণতা।

নোয়াম চমস্কি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারি ঠেকানো যেত, এটি ঠেকানোর মতো তথ্য ছিল। আসলে ২০১৯ সালের অক্টোবরে, এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ঠিক আগে, যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে ধারণা হয়েছিল যে এটা মহামারি আকারে ছড়াতে পারে।’ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ও বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে করা জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির ‘ইভেন্ট ২০১’ নামে এক গবেষণার বরাত দিয়ে চমস্কি দাবি করেন, ‘এই মহামারির সম্ভাব্য আবির্ভাবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ধরনের স্বার্থ জড়িত ছিল।’

চমস্কি বলেন, এর মোকাবিলায় আসলে কিছুই করা হয়নি। ভঙ্গুর রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যা আসন্ন বিপদের কথা জানত, তাদের অবহেলার কারণেই করোনা সংকট আরও জটিল হয়ে পড়েছে।

চমস্কি বলেন, ‘৩১ ডিসেম্বর চীনারা নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগের বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে তথ্য দিয়েছিল। সপ্তাহ খানেক পর কিছু চীনা বিজ্ঞানী এটিকে করোনাভাইরাস হিসেবে চিহ্নিত করেন। এরপর তাঁরা এ বিষয়ে বিশ্বকে একের পর এক তথ্য দিতে থাকেন। ওই সময়ে কিছু ভাইরোলজিস্টসহ অন্যরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনের অপেক্ষা করতে থাকেন। তাঁরা করোনাভাইরাস সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তাঁরা এটাও জানতেন যে সামনে এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করতে হবে।’ চমস্কি প্রশ্ন করেন, ‘তারা কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিল?’

মার্কিন এই চিন্তাবিদ বলেন, হ্যাঁ, কেউ কেউ করোনা ঠেকাতে নড়েচড়ে বসেছিল। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর ভূমিকা নেওয়া শুরু করেছিল এবং করোনা সংক্রমণের প্রথম ভাগে এই দেশগুলো পরিস্থিতি মোটামুটি সামাল দিতে পেরেছে।

সংকট মোকাবিলায় পশ্চিমা দেশগুলো কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলো ব্যাখ্যা করেন চমস্কি। তিনি বলেন, ‘ইউরোপে কিছু ক্ষেত্রে তারা সফল হয়েছে। জার্মানি অনেকটা স্বার্থপরের মতো শুধু নিজেদের রক্ষা করতে পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা রোগ নির্ণয়কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়েছে, যাতে সহজেই করোনা পরীক্ষা করা সম্ভব হয়। অন্য দেশগুলো এই পদ্ধতি গ্রহণ করেনি, যার খেসারত দিয়েছে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।’

চমস্কি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একদিন বললেন, এটা কোনো সংকটই নয়। এটি সাধারণ ফ্লুর মতো। পরের দিন তিনি বললেন, এখন ভয়াবহ সংকটের সময় এবং আমি এসবই জানতাম। এর পরের দিনই তিনি আবার বলেন, আমাদের সবাইকে সবার কাজে ফিরে যেতে হবে। কারণ, আমার নির্বাচনে জিততে হবে।’

ট্রাম্পের এমন উদ্ভট চিন্তাভাবনার খেসারত দিচ্ছে মার্কিনরা। দেশটিতে এখন সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। সংখ্যাটা আড়াই লাখের বেশি। এখন পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘সোশিয়োপ্যাথিক জোকার’ আখ্যা দিয়ে চমস্কি বলেন, ‘আমরা একটা বিপর্যয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়াচ্ছি। মানবজাতির ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এর চেয়ে বাজে সময় আর আসেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা এই প্রতিযোগিতায় নেতৃত্ব দিয়ে পরিস্থিতি আরও রসাতলে নিয়ে যাবে। এমনকি আমরা বিশাল এক হুমকির মুখে পড়তে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে নিউক্লিয়ার যুদ্ধ, অন্যটি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি।’

করোনাভাইরাসের ভয়াবহ পরিণতির পর পরিস্থিতি একসময় স্বাভাবিক হবে। চমস্কি বলেন, কিন্তু অন্যান্য হুমকির ক্ষেত্রে পরিস্থিতি উত্তরণের সুযোগ থাকবে না। সব শেষ হয়ে যাবে।

এমন ক্রান্তিকালেও ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ট্রাম্পের সমালোচনা করেন চমস্কি। ইরানে এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। চমস্কি বলেন, এই একটা মাত্র দেশের (যুক্তরাষ্ট্র) ক্ষেত্রেই এসব সম্ভব। অন্য দেশগুলোকে একে অনুসরণ করতে হয়। তা না হলে তাদের অর্থনৈতিক সিস্টেম থেকে বের করে দেওয়া হবে।

গত ২৮ মার্চ ক্রোয়েশিয়ার দার্শনিক ও লেখক স্রেকো হরভাটের সঙ্গে অনলাইনে এই আলাপ হয় চমস্কির। মারামারির পর বিশ্বের অবস্থা কেমন হবে—এটি ছিল তাঁদের আলোচনার মূল বিষয়।

ওই আলাপে চমস্কি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের একটা ভালো দিক থাকতে পারে। তা হচ্ছে মানুষ এখন চিন্তা করবে যে আমরা কেমন পৃথিবী চাই। সংকটের গুরুত্ব বুঝতে হবে আমাদের। ভাবতে হবে কেন এই করোনাভাইরাস সংকট?’ তিনি বলেন, ‘মহামারি খুব কাছাকাছি জেনেও এটিকে খুব হালকাভাবে নেওয়া হয়েছে। ১৫ বছর আগে সার্স মহামারিই ধরন পাল্টে করোনাভাইরাস মহামারিতে রূপ নেবে, এটা খুব ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছিল।’

ওই সময়ে পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া গিয়েছিল। ভাইরাস চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছিল। ভ্যাকসিনও বের হয়েছিল।

চমস্কি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে ল্যাবগুলো করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কাজ করে যাচ্ছে। আগে তারা এটা কেন করেনি? মার্কেট ভুল ইঙ্গিত দিয়েছিল। বিশেষ করে ওষুধ কোম্পানিগুলো। আমরা আমাদের ভাগ্যকে স্বৈরশাসকের মতো করপোরেশন নামক প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর হাতে দিয়ে রেখেছি। বড় বড় প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষের কাছে দায়বদ্ধ নয়। তাদের জন্য ওষুধ তৈরির চেয়ে প্রসাধনী বানানো বেশি লাভজনক।’

যুক্তরাষ্ট্রে পোলিও মহামারির কথা মনে করিয়ে দেন চমস্কি। সেই মহামারি আটকানো গিয়েছিল সাল্ক ভ্যাকসিন আবিষ্কারের ফলে, যা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান আবিষ্কার করেছিল। পোলিও ভ্যাকসিন ১৯৫০ সালের শুরুর দিকে বাজারে ছাড়া হয়েছিল। কোনো পেটেন্ট নেই, সবার জন্য উন্মুক্ত, যা এবারও সম্ভব।[/size]

Source: https://www.prothomalo.com/international/article/1648659/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF-%E0%A6%A0%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8B-%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%A4-%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%AE-%E0%A6%9A%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BF
"Many thanks to Allah who gave us life after having given us death and (our) final return (on the Day of Qiyaamah (Judgement)) is to Him"