শিশুর বিভিন্ন রকম কাশি

Author Topic: শিশুর বিভিন্ন রকম কাশি  (Read 1709 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2674
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
শিশুর বিভিন্ন রকম কাশি
« on: January 03, 2012, 08:24:02 AM »
শ্বাসতন্ত্র থেকে শ্লে্না, অস্বস্তিকর পদার্থ ও সংক্রামক জীবাণু বের করে দিয়ে কাশি আসলে শরীরের রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ফলে শ্বাসতন্ত্রে শ্লে্না ও অন্যান্য তরল জমতে পারে না। শ্বাসতন্ত্রের যত উপসর্গের জন্য আমরা চিকিৎসকের কাছে যাই, তার মধ্যে কাশি হচ্ছে প্রধান সমস্যা।

কাশি হওয়া মানেই যে আপনার সন্তান অসুস্থ, এ কথা সব সময় ঠিক নয়। স্বাভাবিক শিশুরা দিনে এক থেকে ৩৪ বার পর্যন্ত কাশতে পরে এবং এই কাশির পালা চলতে পারে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে রাতে ঘুমের মধ্যে কাশি হলে সেটা সব সময়ই অস্বাভাবিক মনে করতে হবে। তখন দরকার চিকিৎসকের পরামর্শ।

শিশু ও বড়দের কাশি এবং চিকিৎসার মধ্যে যেমন কিছু মিল আছে, তেমনই কিছু অমিলও রয়েছে। শিশুদের কাশি দুই রকম হতে পারে। একিউট কাশি (মেয়াদকাল এক থেকে দুই সপ্তাহ) এবং ক্রনিক কাশি (মেয়াদকাল চার সপ্তাহের বেশি)।

শিশুর একিউট কাশি
এ ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রের ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস এই কাশির জন্য দায়ী হতে পারে। প্রাক-স্কুল বয়সের সুস্বাস্থ্যের অধিকারী শিশু বছরে ছয় থেকে আটবার ভাইরাসজনিত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে। এগুলো সচরাচর প্রত্যক্ষ বায়ুবাহিত ভাইরাসের সংক্রমণ।

ক্রনিক কাশি
ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী কাশি (চার সপ্তাহের অধিক সময়ব্যাপী) শিশুদের মধ্যে খুব বেশি পরিমাণে দেখা যায়। এ ধরনের কাশির কারণ হচ্ছে-

হাঁপানির উপসর্গ হিসেবে কাশি
অ্যাজমায় আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে কাশি হচ্ছে প্রধান উপসর্গ (থেকে থেকে বুকের মধ্যে শাঁ শাঁ শব্দ এবং ছোট ছোট শ্বাস)। কোনো কোনো শিশুর ক্ষেত্রে উপসর্গ হিসেবে শুধু কাশিকেই খেয়াল করতে হবে। অ্যাজমাজনিত কাশির প্রকোপ বেড়ে যায় ভাইরাস সংক্রমণের কারণে, বিশেষ করে রাতে। খেলাধুলা ও ঠান্ডা বাতাস কাশিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। অ্যাজমাজনিত এ কাশির চিকিৎসায় শিশুদের ক্ষেত্রেও বড়দের মতোই ইনহেলার ও মুখে খাওয়ার ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

নাক ও সাইনাসের অসুখের কারণে কাশি
রাইনাইটিস (নাকের প্রদাহ) ও সাইনুসাইটিস (সাইনাসের প্রদাহ) শিশুদের পোস্টনাজাল ড্রিপের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। ফলে দীর্ঘস্থায়ী কাশি হতে পারে। নাক বন্ধ হয়ে যায় বা সর্দি ঝরা থাকলেও এ ক্ষেত্রে মূল উপসর্গ হিসেবে খুঁজে পাওয়া যায় কাশি।

এ রোগের আরেকটি কারণ হচ্ছে, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস (ই-ফিভার)। এটি মৌসুমি হতে পারে, হতে পারে সারা বছরও। এ ক্ষেত্রে অ্যালার্জি পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। সাইনাসের সংক্রমণের কারণে যে কাশি হয়, তা সপ্তাহের পর সপ্তাহ, এমনকি এক মাসের বেশি সময় ধরেও চলতে পারে। সাইনাসের এক্স-রে বা সিটিস্ক্যানের প্রয়োজন হতে পারে রোগ নির্ণয়ের জন্য।

পাকস্থলী ও খাদ্যনালির রোগজনিত কাশি
কিছু শিশুর ক্ষেত্রে ক্রনিক কাশির কারণ হিসেবে পাকস্থলী ও খাদ্যনালির সংক্রমণকে খুঁজে পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রো-ইসোফেসিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিস হচ্ছে সবচেয়ে সাধারণ। এ অসুখের সঙ্গে বুকজ্বলা থাকে। তবে শিশুরা বুকজ্বলার কথা তেমন বলে না।

সম্ভবত তারা বুঝতে পারে না যে এটি একটি রোগের লক্ষণ। এমনও হতে পারে যে তারা এই কষ্টের অনুভূতিকে ঠিকমতো ব্যক্ত করতেও শেখেনি। তবে অনেক শিশুর ক্ষেত্রে এর সঙ্গে বুকজ্বলা থাকে না। কারও কারও গলার স্বর কর্কশ হয়ে যায়।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি ট্রায়াল হিসেবে চিকিৎসক শিশুকে ওষুধও দিতে পারেন। মনে রাখা দরকার, খেতে বসে ঢেকুর তোলা বা খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়ার কারণে কাশির উদ্রেক হওয়া শিশুদের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক নয়।
দীর্ঘস্থায়ী কাশির অন্যান্য কারণ

ভাইরাস সংক্রমণ-পরবর্তী কাশি, ভাইরাসের কারণে শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি হলে কয়েক সপ্তাহব্যাপী কাশি হতে পারে। শিশুর অ্যাজমা, অ্যালার্জি বা সাইনুসাইটিস না থাকলেও এমনটি ঘটতে পারে। এ ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। অনেক সময় এমনিতেই কাশি সেরে যায়। কফ সিরাপ ব্যবহার করলে অনেক সময় ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
নাকে কোনো কিছু প্রবেশ করা

প্লাস্টিকের খেলনার ক্ষুদ্র অংশ, বাদাম, হটডগ বা শক্ত চকোলেটের অংশ দুই থেকে চার বছরের শিশুদের নাকে-গলায় আটকে যাওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি থাকে। অনেক সময় এক্স-রেতেও এসব জিনিস ধরা পড়ে না। এগুলো অপসারণ না করা পর্যন্ত শিশুর কাশি ভালো হয় না।

অভ্যাসজনিত কাশি
এ ধরনের দীর্ঘস্থায়ী কাশির কোনো সুনির্দিষ্ট শারীরিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। শিশু-কিশোর ও সদ্য তরুণদের মধ্যে এ ধরনের কাশি দেখা যায়।

শুরু হয় সচরাচর ভাইরাসের সংক্রমণ দিয়ে। কাশির ধরন শুকনো ও নির্দিষ্ট বিরতিতে কাশি হওয়া। আক্রান্ত শিশু থেকে তাদের অভিভাবক বা শিক্ষকেরাই কাশির ঠা ঠা শব্দ শুনে আতঙ্কিত হয়ে থাকেন। ঘুমের মধ্যে কখনোই কাশি থাকে না।

অস্বস্তিকর কফ
অনেক সময় আশপাশে কেউ ধূমপান করলে ধোঁয়ার কারণে কাশি হতে পারে। এ ছাড়া বায়ুদূষণ, গাড়ির ধোঁয়া, আগুন প্রভৃতি কারণেও কাশি হতে পারে। অ্যাজমা ও অ্যালার্জিতে আক্রান্ত শিশুদের এসব অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে হবে।

চিকিৎসা

    ভাইরাসজনিত কাশির ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে এমনিতেই এ কাশি সেরে যায়।
    দীর্ঘস্থায়ী কাশির ক্ষেত্রে প্রথমেই খুঁজে বের করতে হবে কাশির কারণ। অ্যাজমা, রাইনাইটিস, সাইনুসাইটিস, অন্ত্রের সমস্যা-এগুলোর যেকোনোটি কাশির কারণ হতে পারে। গুয়াইফেনেসিন-জাতীয় কফ সিরাপ প্রয়োগে তেমন ফল পাওয়া যায় না।
    বড় ডেক্সট্রোমেথরফেন-জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে এতেও খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না। যেসব সিরাপের মধ্যে কোডেইন থাকে, সেগুলো বেশ কার্যকর। তবে এ-জাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুব বেশি। তাই বেশি দিন ধরে এ ওষুধ খাওয়ানো ঠিক নয়।
    দীর্ঘস্থায়ী কাশির মূল কারণ খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা করতে হবে।
    যদি কাশির ধরন পরিবর্তিত হতে থাকে, ওষুধে কোনো ফল না হয়, যদি কাশির সঙ্গে রক্ত আসতে থাকে অথবা কাশির কারণে ঘুম ও কাজকর্মের ব্যাঘাত ঘটতে থাকে, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কখন অ্যাজমা বা অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে?

    তিন-চার সপ্তাহ বা তার চেয়ে বেশি সময় কাশি থাকলে।
    কাশির সঙ্গে যদি হাঁপানির টান থাকে।
    দীর্ঘস্থায়ী কাশির সঙ্গে যদি নাক ও সাইনাসের রোগ থাকে।
    দীর্ঘস্থায়ী কাশির সঙ্গে ধূমপান বা অন্য উত্তেজক পদার্থের উপস্থিতি থাকলে।তে পারেন। অবশ্যই পুরুষ-বন্ধ্যত্ব নিয়ে কাজ করেন এমন কোনো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দেখা করে পরামর্শ নিন।

সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো,
লেখকঃ ডা· গোবিন্দ চন্দ্র দাস