করোনা মোকাবিলায় বিগ ডেটার ব্যবহার

Author Topic: করোনা মোকাবিলায় বিগ ডেটার ব্যবহার  (Read 749 times)

Offline Md. Sumon-ul Islam

  • Newbie
  • *
  • Posts: 43
  • Test
    • View Profile
    • Md. Sumon-ul Islam
চিন্তা করুন বাংলাদেশের এক জীবন্ত মানচিত্র । মানচিত্রটি আপডেট হচ্ছে প্রতি মুহূর্তে । দেশের কোন কোন এলাকার মানুষ এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, তা এই মানচিত্র দেখে জানা যাবে। এটি হবে একটি ডিজিটাল মানচিত্র। বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, থানার ওপর থাকবে রঙিন গুচ্ছ; করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এলাকাগুলো সহজে শনাক্ত করার জন্য। একনজরেই বোঝা যাবে কোন এলাকার বাসিন্দাদের এখন করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট বেশি দরকার, কোন এলাকার গতিবিধি এই মুহূর্তে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া উচিত; কোন এলাকার গতিবিধি সাময়িকভাবে শিথিল করা সম্ভব ইত্যাদি। আমাদের সরকার এ রকম এক উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।

করোনাভাইরাস মোকাবিলার জন্য চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো তাদের সব নাগরিকের জন্য তাদের মোবাইলে একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। তারা অ্যাপটির তথ্য ব্যবহার করে এই রোগের বিস্তার ও আনুষঙ্গিক অনেক বিষয় সম্পর্কে জেনেছে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছে।

তেমন একটি কৌশল বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা খুব সহজ কাজ নয়। প্রধান কারণ হচ্ছে পুরো প্রক্রিয়াটি কাজ করবে জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ওপর। সবাই নিজে থেকে উদ্যোগী হয়ে সঠিক তথ্য দিলেই শুধু কৌশলটি সফল হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন মানুষকে নিজের উপসর্গগুলোর তালিকা তৈরি করতে বলা হয়, তখন অনেকেই নিজের উপসর্গ সঠিকভাবে যাচাই করতে পারে না। এভাবে ভুল তথ্য আসতে পারে। কোনো কোনো বাসায় একই ফোন একাধিক সদস্য ব্যবহার করতে পারে। সেই ক্ষেত্রে কার উপসর্গ ধারণ করা হবে? কেউ হয়তো ভয় পেয়ে সঠিক উপসর্গ পাঠাবে না। কেউ হয়তো তথ্য সন্নিবেশ করার সময়ে কিছুটা ভালো বোধ করলে লিখে দিতে পারেন উপসর্গ। এর উল্টোটাও সম্ভব। তাহলে উপায়?

এই চ্যালেঞ্জগুলো তথ্যপ্রযুক্তিতে নতুন নয়। বিশ্লেষণের কার্যকারিতা এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সরকারের এই অভিনব পন্থার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে অনেক ধরনের ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্স’ প্রয়োগ করা সম্ভব।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে ‘র‍্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল’ ( আরসিটি)। এই পদ্ধতির জন্য গত বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন এস্থার ডুফলো, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাইকেল ক্রেমার ।

আরসিটি মানে কী? বাংলাদেশ সরকারের এই ডিজিটাল মানচিত্র তৈরির সঙ্গে এর সম্পর্কই-বা কী? বাংলাদেশের নাগরিকদের দেওয়া তথ্যগুলো কতটা সঠিক, তা যাচাই করার জন্য প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে কয়েক শ মানুষকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। তাদের কাছ থেকে তাদের উপসর্গের তথ্য হয়তো সরাসরি বা ফোনের মাধ্যমে নেওয়া যেতে পারে। স্বেচ্ছাসেবকদের উপসর্গের (ধরলাম গ্রুপ-ক) সঙ্গে ওই একই জায়গার অন্য মানুষদের (গ্রুপ-খ) মোবাইলে পাওয়া তথ্যের তুলনা করা যেতে পারে। গ্রুপ ক ও খ-এর উপসর্গের মধ্যকার সামঞ্জস্য দেখে বোঝা যেতে পারে তথ্যের সঠিকতা।

এতে লাভ? প্রথম লাভ, এই বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি মোবাইল গ্রাহকের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যের সঠিকতা যাচাই করা সম্ভব। এভাবে সংগৃহীত বিগ ডেটার ওপর আস্থা স্থাপন করা সম্ভব হলে সরকারের পদক্ষেপগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। দ্বিতীয়ত, তথ্যের সঠিকতা অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এলাকাগুলোকে সঠিকভাবে শ্রেণি বিন্যস্ত করে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া সম্ভব হবে।

সংগৃহীত তথ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, লিঙ্গীয়, জীবিকা-সংক্রান্ত নানা ধরনের পক্ষপাতদুষ্টতা থাকা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আদমশুমারির পরিসংখ্যান ব্যবহার করা যেতে পারে। আদমশুমারির তথ্য ব্যবহার করে প্রতিটি এলাকার আর্থসামাজিক সূচকগুলোর সঙ্গে মোবাইল অ্যাপ থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে আপেক্ষিকতা যাচাই করা যেতে পারে। এতে বিশ্লেষণের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, করোনাভাইরাস কোন নির্দিষ্ট এলাকায় কেন বেশি ছড়াচ্ছে, কীভাবে ছড়াচ্ছে এবং কীভাবে তা প্রতিহত করা সম্ভব। করোনাভাইরাস প্রতিহত করতে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সংগৃহীত তথ্যের কিছু অংশ সরকার বেনামে আইসিটি গবেষকদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে। সরকারের সীমিত সম্পদ নিয়ে সংগৃহীত তথ্যের সব ধরনের বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। যথার্থ পার্টনারশিপের মাধ্যমে বিশ্লেষণের মাত্রা অনেকগুণ বাড়ানো সম্ভব। যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সাত দিনের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে বলা সম্ভব পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কেমন হতে পারে।

সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে মানচিত্রে মোটামুটি বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তোলা সম্ভব। গ্রাহকদের থেকে পাওয়া তথ্যে থাকতে পারে অনেক অদৃশ্য নমুনা, যা খালি চোখে খুঁজে বের করা সম্ভব নয়। এত বড় আকারের উপাত্ত থেকে অদৃশ্য এই নমুনাগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শনাক্ত করা সহজ কাজ হবে না। এইখানে দরকার গবেষকদের সঙ্গে সহযোগিতা এবং যৌথ প্রচেষ্টা ।

এই বড় প্রকল্পে সঠিক তথ্যের পাশাপাশি কিছু ভুল তথ্যও আসবে। সঠিক ‘চেক এবং ব্যালেন্স’-এর প্রয়োগে ভুল তথ্যের উৎস এবং পক্ষপাতদুষ্টতা শনাক্ত করে বিশ্লেষণে সেগুলোর প্রভাব প্রশমিত করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সরকারের এই সাহসী উদ্যোগটি প্রশংসনীয়।

এহসান হক: সহকারী অধ্যাপক, ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার, যুক্তরাষ্ট্র

সুত্রঃ https://www.prothomalo.com/opinion/article/1648626/%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A7%9F-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%97-%E0%A6%A1%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%AC%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B0
 

Md.Sumon-ul Islam
BSc in Computer Science & Engineering 
Daffodil International University