চালচোরদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি (Kalerkantho)

Author Topic: চালচোরদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি (Kalerkantho)  (Read 895 times)

Offline kekbabu

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 78
  • Test
    • View Profile
    • https://daffodilvarsity.edu.bd/
চালচোরদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি [The daily Kalerkantho on 27.04.2020 (p.5)
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু
২৭ এপ্রিল, ২০২০

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্ব আজ যেন স্থবির হয়ে গেছে। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৫টি দেশে প্রায় ১৮ লাখ ৮৫ হাজার ৫০৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আর ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে এক লাখ ১৪ হাজার ১৮৫ জন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও করোনাভাইরাসের কবলে পড়েছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) হিসাব অনুযায়ী, ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ৮০৩ জনের করোনা শনাক্ত হয় আর ওই সময় পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩৯ জন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যা সরকারসহ দেশবাসী সবার জন্যই রীতমতো ভীতিকর ও উদ্বেগের বিষয়। যদিও সরকারের সামাজিক বিচ্ছিন্নতার (সোশ্যাল ডিস্ট্যান্স) নীতি এবং করোনায় আক্রান্ত মানুষকে শনাক্ত ও তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছে, তাদের পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা লকডাউন কর্মসূচি এ ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কিন্তু করোনা সংকট এ দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে এরই মধ্যে যেভাবে ও যে হারে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে এবং দেশের অর্থনীতির ওপর দীর্ঘ মেয়াদে যে ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, তা কিভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা-ই এখন সবার কাছে চিন্তার বিষয় হিসেবে দেখা দিচ্ছে। যদিও বেশ আগে থেকেই জনস্বার্থের বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বা পুরোপুরি লকডাউন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে রীতিমতো; কিন্তু এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে দেশের অসংখ্য খেটে খাওয়া মানুষ তথা দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক, রেস্তোরাঁর শ্রমিক, গৃহকর্মী, হকার, ভিক্ষুকসহ নানা শ্রেণির মানুষ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে এ ধরনের মানুষের সংখ্যা দুই কোটির বেশি। আর করোনার ফলে এসব মানুষের আয়-রোজগার এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। গত ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ৬৪ জেলায় দুই হাজার ৬৭৫ জন নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের মানুষের উপার্জন ও খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলেছে করোনাভাইরাস। জরিপে দেখা যায়, দারিদ্র্যরেখার নিম্নসীমার নিচে নেমে গেছে ৮৯ শতাংশ মানুষ। আর ১৪ শতাংশ মানুষের ঘরে কোনো খাবারই নেই। মানবিক ও জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার করোনার অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে। পাশাপাশি চলছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরাও অংশ নিচ্ছেন ত্রাণ তৎপরতায়। ত্রাণ দিচ্ছেন বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন, মানবদরদি ব্যক্তিসহ বিত্তবানরা। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় সরকার দরিদ্র মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে অনেকের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছে এবং দিচ্ছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু সরকারের এই মহতী কাজ কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা ভেবে দেখা দরকার। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণের পরও থেমে নেই ত্রাণের চালচোরদের কারবার। রাজনীতিকে পুঁজি করে এ ধরনের অসৎ ও লোভী লোকের কারণে সরকারের গৃহীত এ ধরনের কর্মসূচির সুফল অনেক সময় ভুক্তভোগীরা পায় না। ফলে সরকারের ওই সব পদক্ষেপ পরিপূর্ণভাবে সফলতা পায় না আবার অনেক ক্ষেত্রে তা প্রশ্নবিদ্ধও হয়ে পড়ে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ৩১ মার্চ পটুয়াখালীতে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিক্রির অভিযোগে কমলাপুর ইউনিয়নের স্থানীয় জনতা জাকির হোসেন ও মো. সোহাগ নামের দুজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। আটককৃতদের জবানবন্দি অনুযায়ী কমলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনির রহমান মৃধাকে আটক করেছে পুলিশ। আবার ২ এপ্রিল রাতে নওগাঁর রাণীনগরে আওয়ামী লীগ নেতা আয়াত আলীর বাড়ি থেকে ১৩৮ বস্তা ত্রাণের চাল ও ২০০ খালি বস্তা উদ্ধার করেছে উপজেলা প্রশাসন। আর ৭ এপ্রিল নাটোরের সিংড়ায় ত্রাণের চাল বিক্রির দায়ে উপজেলা প্রশাসনের হাতে আটক হন ইউপি সদস্য মো. শাহিন শাহসহ আরো দুজন। শুধু তা-ই নয়, ৮ এপ্রিল টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ইউনিয়নের টিলাবাজার এলাকায় ওএমএসের ৯০ কেজি চালসহ এক ভ্যানচালককে আটক করা হয়। আবার ৮ ও ৯ এপ্রিল হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দের ৩৫৬ বস্তা চাল আটক করেছে পুলিশ। বগুড়া, জামালপুর, ফরিদপুর, কুমিল্লা, রংপুর, কিশোরগঞ্জ ও ফেনীর বিভিন্ন স্থান থেকে ওই চাল উদ্ধার করা হয়। এসব ঘটনার পাশাপাশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে, অনেক জনপ্রতিনিধি ত্রাণের চাল কম দিচ্ছেন। উপরোক্ত ঘটনাগুলোর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও থেমে নেই ত্রাণ চুরির কাণ্ড। এই অসৎ ব্যক্তিরা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশকে নিলামে তুলে বিক্রি করে দেওয়াটাও তাঁদের পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। অতীতে দেখা গেছে, ত্রাণের চাল চুরির ঘটনায় যাঁরা ধরা পড়েন বা আটক হন তাঁরা কিছুদিন পর জামিন নিয়ে বের হয়ে আবারও শুরু করেন অপকর্ম। এ যেন ‘ব্যাক টু দ্য প্যাভিলিয়ন’। আবার যাঁদের শাস্তি হয়, তাঁরাও আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আবার স্বরূপে চলে আসেন। বর্তমানে দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সরকার সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় হতদরিদ্র মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার যে মহতী পরিকল্পনা এরই মধ্যে নিয়েছে, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হবে না যদি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির জোরে এই চাল বিতরণের দায়িত্ব যাঁরা পান, তাঁদের বেশির ভাগই আত্মস্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত থাকে, যা দুঃখজনক। অতীতে এও দেখা গেছে যে সরকারের এ ধরনের কর্মসূচি সফল না হলে জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসনকে আর প্রশাসন জনপ্রতিনিধিদের দোষারোপ করে থাকে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন মোটেও দোষারোপের সময় নয়। করোনার কারণে দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে হতদরিদ্র ও অভাবী মানুষের কাছে খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছানো জরুরি। কারণ খাদ্য মানুষের প্রথম ও প্রধান মৌলিক চাহিদা। করোনা সংকট উত্তরণে সরকার সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে বেশিসংখ্যক দরিদ্র মানুষ উপকার পায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল রাজনৈতিক নেতা নামধারীরা আত্মসাৎ করলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী উপকারভোগী হবে কিভাবে? ভিজিডি, ভিজিএফের চাল-গম আত্মসাৎ করা কিংবা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল কালোবাজারে বিক্রি করার খবর হরহামেশাই গণমাধ্যমে আসে। কিন্তু রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধীরা খুব কম ক্ষেত্রেই শাস্তি পায়। তবে এবার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আত্মসাৎ করা চাল উদ্ধার এবং আত্মসাৎকারীকে গ্রেপ্তার করার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণ অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। দেশের অন্যান্য স্থানেও প্রশাসন ও জনগণ সক্রিয়তা দেখিয়ে কাজ করলে রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় থাকা দুর্নীতিবাজ, অসাধু, লোভী ও দুর্বৃত্তরা অনেকটাই নিরস্ত হবে। আর তখনই সরকারের পক্ষে সম্ভব হবে দরিদ্র ও কর্মহীনদের খাবার নিশ্চিত করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এ ক্ষেত্রে আগে শাস্তি পরে তদন্ত করা হবে।’ বলা বাহুল্য, যাঁরা গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত সাহায্য আত্মসাৎ করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের যে আর জনপ্রতিনিধিত্ব করার নৈতিক অধিকার থাকে না, তা বলা বাহুল্য। তাই এ ধরনের অসৎ লোক যেন ভবিষ্যতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক পদ-পদবি না পান বা দলে যেন কোনোভাবেই থাকতে না পারেন, তা অবশ্যই নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ তাঁরা দলের জন্য করোনাভাইরাসের চেয়ে কোনো অংশেই কম ক্ষতিকর নয়। তাঁদের সামাজিকভাবেও বয়কট করা প্রয়োজন। সর্বোপরি ত্রাণচোরদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমসহ সবাইকে সজাগ থাকতে হবে, যেন তাঁরা ভবিষ্যতে কোনোভাবেই অসহায়, দুস্থ আর গরিবের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বা ত্রাণ চুরি করতে না পারেন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আন্তর্জাতিক সদস্য
kekbabu@yahoo.com

Link: https://www.kalerkantho.com/print-edition/sub-editorial/2020/04/27/904191
Dr. Kudrat-E-Khuda (Babu).
Associate Professor (Dept. of Law), Daffodil International University;
International Member of Amnesty International;
Climate Activist of Greenpeace International; Column Writer;
Mobile Phone: +8801716472306
E-mail: kekbabu.law@diu.edu.bd