তওবা কবুল হওয়ার যত আলামত

Author Topic: তওবা কবুল হওয়ার যত আলামত  (Read 1762 times)

Offline Md. Monir Hossain

  • Newbie
  • *
  • Posts: 22
  • Test
    • View Profile

আমাদের গুনাহের শেষ নেই। পদে পদে আমরা নাফরমানি করি। আল্লাহতায়ালাকে ভুলে যাই।

যেহেতু আমরা কালিমা পড়েছি, আল্লাহকে এক বলে স্বীকার করি, তাই মাঝে মাঝে নিজের কৃত পাপকাজের জন্য অনুতপ্ত হই এবং আল্লাহতায়ালার কাছে তওবা করি। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আর কখনও নাফরমানি করব না।

আমাদের তওবা কবুল হলো কি হলো না, এটা আমরা কীভাবে বুঝব?

ভারতের প্রসিদ্ধ চিন্তক আলেম ও দাঈ মাওলানা খলিলুর রহমান সাজ্জাদ নোমানি কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে তওবা কবুল হওয়ার কয়েকটি আলামত বর্ণনা করেছেন।

১. তওবার পরের জীবন তওবার আগের জীবনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে।
২. গুনাহ করতে গেলেই আল্লাহতায়ালার ভয় জাগ্রত হবে।

৩. মন গুনাহের কাজের প্রতি নিরাসক্ত হতে থাকবে। গুনাহ করতে ভালো লাগবে না।
৪. নেককাজের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আমলে তৃপ্তি ও স্বাদ অনুভব হবে।

৫. নেককার লোকদের সঙ্গে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের সোহবতে থাকতে ইচ্ছে করবে।

তওবা করার পর এই আলামতগুলো যদি আমাদের মধ্যে দেখতে পাই, তাহলে বুঝে নিব আল্লাহতায়ালা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

এক যুবক ২০ বছর আল্লাহতায়ালার অনেক ইবাদত বন্দেগি করল। এরপরে হঠাৎ এক মেয়ের প্রতি আসক্ত হয়ে গুনাহের কাজে লিপ্ত হল। ৩০ বছর পর্যন্ত গুনাহ করতে থাকল এবং আল্লাহতায়ালাকে ভুলে গেল।

অতঃপর, সে যখন বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হল, তখন নিজের কৃতকর্মের ওপরে অনুতপ্ত হয়ে নির্জনে বসে আল্লাহতায়ালার কাছে দোয়া করতে লাগল, হে আল্লাহ, আপনার দেয়া ২০ বছর আমি ইবাদত বন্দেগিতে কাটিয়েছি। তারপরে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ৩০ বছর নাফরমানি ও অবাধ্যতা করেছি।

এখন আবার আমি আপনার ইবাদত বন্দেগি করতে চাই। আপনি কি আমার কৃত গুনাহগুলোকে ক্ষমা করে দিবেন?

বারবার সে একই কথা বলে দোয়া করতে থাকল। কাঁদতে থাকলো ঘণ্টারর পর ঘণ্টা। হঠাৎ গায়েব থেকে আওয়াজ এলো, হে আমার বান্দা, তুমি ইবাদতের মাধ্যমে আমাকে যখন মোহাব্বাত করতে, তখন আমিও তোমাকে মোহাব্বাত করতাম।

এরপরে তুমি যখন আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছ, তখন আমিও তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি। কিন্তু আমি অপেক্ষায় ছিলাম,তুমি ফিরে আসবে। হতাশ হইনি। আজ তুমি ফিরে আসতে চাচ্ছ?

তওবা করে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছ? তাহলে শোনো আমার কথা, আমি তোমার তওবা কবুল করেছি এবং তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

এক হাদিসে কুদসির সারমর্ম এমন, কী হয়ে গেল আদম সন্তানের, সে গুনাহ করে, এরপরে সে যখন আমাকে স্মরণ করে, আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন আমি তাকে ক্ষমা করে দিই।

এরপরে আবার সে গুনাহে লিপ্ত হয় এবং আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আমি তাকে ক্ষমা করে দিই; আমার ভয়ের কারণে পরিপূর্ণভাবে না সে গুনাহে লিপ্ত থাকতে পারে, না আমার রহমত ও মাগফিরাত থেকে নিরাশ হতে পারে!

এই জন্য গুনাহ হয়ে গেলেও সে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।

হে আমার ফেরেশতারা, তোমরা সাক্ষী থাকো, আমার এমন সমস্ত বান্দাদেরকে আমি ক্ষমা করে দিলাম।

এক যুবক নবীজি (সা.) এর কাছে এসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল আর বলতে লাগল, হায় হায় আমি গুনাহগার, আমার গুনাহের শেষ নেই! আমার কোনো মুক্তি নেই।

নবীজি (সা.) বললেন, আমার কাছে এসো। আমি যা যেভাবে শিখিয়ে দিচ্ছি, সেভাবে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া কর।

এরপরে নবীজি (সা.) বললেন, হে আল্লাহ, আমার গুনাহ তো অনেক, কিন্তু আমার এই গুনাহের চেয়ে আপনার রহমত আরও অনেক অনেক বেশি।

হে আল্লাহ, আমি যা নেক কাজ করেছি, তার প্রতি বিন্দুমাত্র আমার আশা এবং ভরসা নেই, যতটুকু না আপনার রহমত ও মাগফিরাতের প্রতি আছে!

নবীজি (সা.) যুবককে বললেন, এভাবে আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। দোয়া করে এমনভাবে উঠে যাও, যেন আল্লাহ তায়ালা তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

হযরত মুসা (আ.) আল্লাহতায়ালার কাছে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহ, দোয়ার মাধ্যমে ‘হে আল্লাহ, হে আমার প্রতি পালক’ বলে আপনাকে কেউ যখন ডাকে, তখন আপনি কী বলে তার ডাকে সাড়া দেন?

আল্লাহ তায়ালা উত্তর দিলেন, আমি তখন বলি, লাব্বাইক, (হে আমার বান্দা, আমি হাজির)।

মুসা (আ.) আবার জিজ্ঞেস করলেন আপনার কোনো ইবাদতগুজার বান্দা যখন আপনাকে ডাকে তখন আপনি কী বলে তার ডাকে সাড়া দেন? আল্লাহতায়ালা বললেন, লাব্বাইক।

মুসা (আ.) বললেন, কোনো রোজাদার আপনাকে যখন ডাকে, তখন কী বলেন? আল্লাহ তায়ালা বললেন, তখনও আমি বলি লাব্বাইক।

মুসা (আ.) আবার জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা কোনো গুনাহগার বান্দা যখন আপনাকে ডাকে, তখন আপনি কী বলে তার ডাকে সাড়া দেন?

আল্লাহতায়ালা উত্তরে বললেন, তখন আমি বলি, লাব্বাইক, লাব্বাইক, লাব্বাইক।

মুসা (আ.) অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, নেককার লোক, রোজাদার লোক যখন আপনাকে ডাকে, তখন আপনি একবার লাব্বাইক বলেন, আর কোনো গুনাহগার ডাকলে তিনবার লাব্বাইক বলেন, এর কারণ কী?

আল্লাহতায়ালা বলেন, কোনো নেককার বান্দা যখন আমার কাছে দোয়া করে, তখন তাদের নেক কাজের প্রতি সামান্য হলেও আশা থাকে, আমি এর উসিলায় তাকে ক্ষমা করে দিব।

কিন্তু, কোনো গুনাহগার যখন আমার কাছে দুআ করে, তখন আমার রহমত ছাড়া তার তো আর কোনো কিছুর প্রতি আশা এবং ভরসা থাকে না!

ভারতের প্রখ্যাত দাঈ ও আলেম মাওলানা খলিলুর রহমান সাজ্জাদ নোমানির উর্দু বয়ান অবলম্বনে

www.jugantor.com/islam-life/331603