Faculties and Departments > Research and Publication

করোনা পরবর্তীপ্রস্তুতিঃ শিক্ষাতেই হতে পারে সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ

(1/1)

tokiyeasir:


লেখালেখির ইচ্ছা বা সখ কোনটাই তেমন ছিল না , এখন ও হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। ভাবনা থেকেইলেখা আসলে। চলমান করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ মহামারী আমাদের সবাইকে এতোটাই ভাবতে শিখিয়েছে যে অনেক সময় ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে যাই। এত ভাবনার মধ্যে কিছু দূর্ভাবনাও যে নেই তা বলা যাবে না। যা হোক মার্চের ১৫ তারিখের পরে আর ভার্সিটিতে যাওয়া হয়নি , চলছে অনলাইন ক্লাস। প্রথমদিকে শিক্ষক শিক্ষার্থী সবারই বেশ সমস্যাহলেও ধীরে ধীরে অনেক সমস্যাই কেটে যাচ্ছে বা যাবে। আর কিছু সমস্যা থাকবেই যেগুলোতে আসলে আমাদের খুব একটা কিছু করার নেই, নেই বলতে সামর্থ নেই। এমন ছোট খাটো কিছু সমস্যা মেনে নিয়ে এখন শিক্ষার্থী- শিক্ষক-অভিভাবক- সমাজ সবাই অনলাইন ক্লাসের বাস্তবতা মেনে নিয়েছি। কিন্তু করোনার শুরু থেকেই অনেকের ভাবনা ছিল, কতদিন থাকবে , কবেই বা শেষ হবে এর তাণ্ডব। অনেকে অনেক ভাবে পূর্বাভাস দিত। করোনার বিদায় ঘন্টা অনুমান করতে করতে কেউ কেউ বলে আসছিলেন জুনে মনে হয় এটা বিদায় নিচ্ছে- এখন বলছি আগস্ট, অনেকে একটু বেশি বাড়িয়ে বলছি ডিসেম্বর। কিন্তু সত্যি বলতে কবে শেষ হবে করোনার মহামারী এটা বলা খুব কঠিন। কারণ করোনা নিয়ে মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি শুধু ধর্মীয় আলেম ওলামারাই দেয় নি, শিশু বিশেষজ্ঞও আমাদের নজর কেড়েছে। এই ক্ষুদে বিশ্লেষকে নিয়ে দেশের প্রথম সারির টেলিভিশন চ্যানেলে লাইভ অনুষ্ঠানও দেখেছি আমরা। ইতালির স্বপ্নের ব্যাখ্যা নাহয় নাই বললাম। তবে অনেকের ধারণা করোনা কখনোই হয়তো বা পুরোপুরি বিদায় নেবে না, ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়াই একমাত্র আশা ও ভরসা। কিন্তু এভাবে আর কতদিন, সাধারণ ছুটি, লকডাউন, কঠোর লকডাউন কোনটাতেই কি আসলে সমাধান আছে? অন্ততঃ আপাতত আমি তা দেখছি না। বরং করোনার তান্ডবের ফলে বৈশ্যিক যে পরিবর্তন সেটার সাথে কষ্ট হলেও নিজেকে খাপ খাওয়ানো ছাড়া কোন ভাল বিকল্প আমার এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে আসছে না। মনে রাখতে হবে এই পৃথিবীতে অনলি চেঞ্জ ইজ পার্মানেন্ট। আগে আমরা সমাজের সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে অভ্যস্থ ছিলাম এখন করোনার সাথেও মিলেমিশে থাকতে হবে। হয়তো বা কোন একদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেও পারে। ততোদিনে আরো অনেক কিছু হয়তো পরিবর্তন হবে, অনেকে হয়তোবা করোনার সাথে নিজেকে ভালভাবে খাপ খাইয়ে নিবে। যেসব ব্যবসায় বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে সেগুলো হয়তো ঘুরে দারানোর আপ্রাণ চেষ্টা করবে- সফলতা বা ব্যর্থতা সময় ই বলে দিবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব চালু হয়ে যাবে। ঢাকা শহরের রাস্তায় আবার ফিরে আসবে গতানুগতিক চিত্র। ইতোমধ্যেই পত্রপত্রিকার কল্যাণে জানা যাচ্ছে যে এক মিলিয়ন বা আরও বেশি অভিবাসী দেশে আসছে, দেড় কোটির বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছে। আয় রোজগার কমে যাওয়ায় পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছে আবার অনেকে পরিবারপরিজন সহ আপাতত একেবারেই গ্রামে চলে যাচ্ছে। এসব ই কি সমাধান? এভাবে কি আমরা পারবো নিজেকে বা নিজের ভবিষ্যৎকে নিরাপত্তা দিতে? যাদের নিজের বা পরিবারের সামার্থ্য আছে তারা আর কতদিন এভাবে থাকতে পারবে বা থাকবে? এভাবে থাকতে থাকতে কতদিন ই বা ভাল লাগবে মানুষের! সবচেয়ে বেশি দূশ্চিন্তাগ্রস্থ যারা তাদের একটা বড় অংশের গোটা ভবিষ্যৎই সামনে। আজকের ভবিষ্যৎ করোনার পরে যখন বর্তমান হয়ে যাবে, তখন কী হবে বা করা যাবে? যারা চাকরি বাকরি বা ব্যবসায়ে জড়িত আছেন তারা হয়তোবা অনেক কষ্টে আদাজ্বল খেয়ে মাটি কামড়ে ধরে থাকবেন কিন্তু যারা পড়াশুনা শেষ করে চাকরি, ব্যবসায় বা কিছু একটা করার কথা ভাবছিলেন তারা কী করবেন? নতুন করে কোন চাকরি পাওয়া যেমন কঠিন হবে তেমনি কঠিন হবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো। তিন মাস, ছয় মাস, এক বছর বা দুই বছর পর যখন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তখন হঠাৎ করে কী করবে এ নিয়ে ভাবনার যেন শেষ নেই। নিজের ও পরিবারের স্বপ্ন বুকে ধারণ করে বহু কষ্টে যারা পড়াশোনা শেষ করেছেন তখন কি তাঁদের জন্য চাকরি পাওয়া টা অনেক সহজ হয়ে যাবে? করোনা ভাইরাস না থাকলেই কি সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে? না, বরং বিপরীত টা হবার আশংকাই বেশি।করোনা আসার আগে কি আমাদের বাজারে চাকরি পাওয়া সহজ ছিল? মোটেও না। তাহলে এত লক্ষ লক্ষ চাকরি প্রার্থী থাকত না। করোনা পরবর্তী বিশ্বে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা যে অনেকগুন বেড়ে যাবে এটা বুঝতে কোন বিশেষ গবেষণা বা জ্ঞান নিষ্প্রয়োজন। তাহলে করোনা পরবর্তী কালে কিভাবে টিকে থাকা যাবে? করোনা পরবর্তী সময়ে কে কত ভাল করতে পারবে এটা অনেকটাই নির্ভর করবে এই করোনাকালীনসময়টা কে কিভাবে কাজে লাগাচ্ছে তার উপর। এই দুঃসময়ে কে কোথায় অর্থ বা সময়বামেধা বিনিয়োগ করছে তার উপর। আমার এ কথায় অনেকে অবাক হলেও আমি অবাক হবনা। আমার লেখাটার শিরোনাম দেখে অনেকে বলতে পারেন করোনার এই মহামারীতে মানুষ ভিটামিন সি, জিঙ্ক ট্যাবলেট আর লেবু-পানি খেয়ে এন্টিবডি তৈরি ও ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য হ্যান্ড ওয়াশ-স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধুয়ে কূল পায়না আর আমি আসছি শিক্ষায় বিনিয়োগ নিয়ে! মাস্টার মানুষদের যে সমস্যা আর কী!সুযোগ পেলেই শুধু জ্ঞান দেয়ার অভ্যাস। কিন্তু ‘পাছে লোকে কিছু বলে” সেটা ব্যাপার না। আমাকে আমাদের শিক্ষিত যুবসমাজের জন্য দু একটা কথা বলতেই হবে। কারণ তাঁদের মধ্যে একটা ছোট্ট অংশ হলেও আমার ছাত্রা ছাত্রী । আসছে দিনগুলো যে আরো কঠিন হবে এটা মানতে কারোই কোন দ্বিমত থাকার কথা না। তাহলে সেসব আসছে দিনের জন্য আমরা নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করছি এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । লকডাউনের এই সময়টাকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। ভাল একটা গ্রাজুয়েশন করে ফেলেছি এটা দিয়েই কিছু একটা শুরু করব তারপর দেখা যাবে। না এত সহজ ভাবনা ভাবলে হবে না। পৃথিবী অনেক কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। অনেকটাই টেকনোলোজি ও বুদ্ধিনির্ভর। যত সম্ভব নতুন নতুন স্কিল বা দক্ষতায় নিজেকে তৈরি করতে হবে। বিদেশের অনেক নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে অনেক প্রোগ্রাম চালু করেছে, সেখান থেকে দু একটা শর্ট কোর্স করা যেতে পারে। যারা গ্রাজুয়েশন শেষ করেছেন তারা সম্ভব হলে একটা IT based MBA করে নিতে পারেন। অনেক কাজে দেবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ আসছে দিনগুলোতে ব্যবসায় বাণিজ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার আরো অনেকগুন বেড়ে যাবে। এই করোনার সময় আবার MBA? বাবা মায়েরা টাকা দিবে কিভাবে!এই করোনাকালীন সময়ে হয়তো বাবা মায়ের জন্য একটু বেশি ই কঠিন হবে, তবে এই আপদকালে শিক্ষায় বিনিয়োগই হবে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ। এক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের পাশাপাশি সরকার ও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকেও কিছুটা এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ভালমানের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো MBA বা Mastersপ্রোগ্রামের ফি তে বিশেষ ছাড় বা কিছু বৃত্তি দিতে পারে। অন্যদিকে সরকারের উচিৎ করোনা প্রণোদনার একটা অংশ বা শিক্ষা খাতের কিছু অংশ থেকে সহজ শর্ত ও কম সুদে শিক্ষা ঋণের ব্যাবস্থা করা। এতে একদিকে যেমন আমাদের শিক্ষিত যুবসমাজ নিজেকে আগামীর জন্য যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে পারবে অন্যদিকে চাকরি প্রার্থীদের দুশ্চিন্তা ও সমাজের অপরাধ প্রব্ণতাও অনেকাংশে কমে যাবে। অন্যথায় শিক্ষার্থী বা চাকরি প্রার্থীরা ঘরে বসে বসে কী করবে? কী ই বা করার আছে! চিন্তা বা দুশ্চিন্তা করতে করতে সেটা যে রোগে পরিণত হবে না সে নিশ্চয়তা কে দেবে! বরং তারা নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসহারিয়ে ফেলবে। অনেকে নিজের ভাগ্য বা সৃষ্টিকর্তাকে দোষারোপ করবে যা নিছক অযৌক্তিক ছাড়া কিছুই নয়। শুধু চাকরি নির্ভর চিন্তাভাবনা থেকে বের হতে হবে। বিকল্প চিন্তা ভাবনা নিয়ে আরেকদিন লেখার ইচ্ছা পোষণ করে পরিশেষে মহান আল্লাহ্‌ রাব্বুল আল-আমিনের কাছে দোয়া করি, এই করোনা মহামারি থেকে আমাদেরকে পরিত্রাণ দান করূন। আমীন।



মোঃরাইহানুল ইসলাম লাজু
লেখক, গবেষক ও শিক্ষক,
রিয়েল এস্টেট বিভাগ,
ড্যাফোডিল ইন্টার্ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা।

Source: https://www.sheershakhobor.com/exclusive/%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8b%e0%a6%a8%e0%a6%be-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a7%81%e0%a6%a4%e0%a6%bf%e0%a6%83/?fbclid=IwAR0apoieXQLzpjXxwUNc24ZXzq8LuQm_ny2kPNAlzK_YA51Wbpbf9KpP1iA

Navigation

[0] Message Index

Go to full version