সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি (ইত্তেফাক, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০; পৃষ্ঠা- ৮)

Author Topic: সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি (ইত্তেফাক, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২০; পৃষ্ঠা- ৮)  (Read 1308 times)

Offline kekbabu

  • Jr. Member
  • **
  • Posts: 78
  • Test
    • View Profile
    • https://daffodilvarsity.edu.bd/
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি

ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু
 
এ দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নতুন কোনো বিষয় নয়। পত্রিকার পাতা খুললে কিংবা টিভি চ্যানেলের সংবাদের দিকে চোখ রাখলে প্রায় প্রতিদিনই চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহত হওয়ার খবরাখবর। দেশে প্রতিনিয়ত মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে চললেও তা রোধে কার্যকর তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না এবং সেই সঙ্গে জনগণও ট্রাফিক আইন ভালোভাবে মানে না। তাই প্রায় প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। পরিসংখ্যান মোতাবেক, দেশে যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে, তাতে মনে হয় দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলো নিরাপদে চলার পথ না হয়ে তা দিনে দিনে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে নিয়মিতভাবে ঘটে চলা দুর্ঘটনাগুলো কি এ দেশের জনগণের কপালের লিখন? দেশের সড়ক-মহাসড়কে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনাগুলোকে যদি এ দেশের পরিপ্রেক্ষিতে না দেখে উন্নত দেশের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে উন্নত দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার এ দেশের তুলনায় অনেক কম। সুতরাং, এ দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে নিয়মিতভাবে ঘটে চলা দুর্ঘটনা জনগণের কপালের লিখন নয়, কিংবা ভাগ্যদেবীর নির্মম পরিহাসও নয়। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো এ পার্থক্যের সৃষ্টি করছে তা হচ্ছে; সার্বিক যোগাযোগব্যবস্থার ধরন, চালকদের দক্ষতা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, চালকদের ওভারট্রেকিং করার মানসিকতা প্রবল মাত্রায় বিদ্যমান থাকা, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, জনগণের সচেতনতার অভাব, জনগণ কর্তৃক ট্রাফিক আইন কিংবা রাস্তায় চলাচলের নিয়ম না মানা প্রভৃতি। সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, সড়ক দুর্ঘটনার ৯০ শতাংশেরই কারণ হলো চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও গতি। এদেশে লাইসেন্সবিহীন ও ট্রাফিক আইন না জানা চালকের সংখ্যাই বেশি। সড়ক দুর্ঘটনার অনেক কারণের মধ্যে এটি একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।

এক হিসাবে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান সমগ্র বিশ্বে দ্বিতীয়। বেসরকারি সূত্রগুলো বলছে, প্রতি বছর দেশের সড়কপথে অন্তত ৫ হাজার দুর্ঘটনা ঘটছে আর এক বছরেই দেশে মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায় এবং পঙ্গুত্ব বরণ করছে এর দ্বিগুণ। দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোয় যেভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে এবং দুর্ঘটনার সংখ্যা দিনে দিনে যে হারে বাড়ছে, তা যদি অতি দ্রুত রোধ করার ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তাহলে যে ভবিষ্যতেও ভয়াবহ ও মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার পাশাপাশি জনগণ আহত-নিহত হতেই থাকবে। সুতরাং, সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা এখন অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যান্য কারণও নিবিড়ভাবে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে সঠিক পরিকল্পনাহীন দেশে অনেক অনুপযুক্ত সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, নির্দিষ্ট লেন ধরে গাড়ি না চালিয়ে সড়কের মাঝ দিয়ে চালকদের গাড়ি চালানো, রাস্তায় বিপজ্জনক বাঁক বিদ্যমান থাকা, রাস্তার ত্রুটিপূর্ণ নকশা থাকা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চালানো, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো, চালকদের বেপরোয়া গতিসহ ভুল পথে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, বেশি গতির বড় গাড়িগুলোর অপেক্ষাকৃত কম গতির ছোট গাড়িগুলোকে ওভারটেকিং করার টেনডেন্সি থাকা, রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী বা পথচারীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, রাস্তার ফুটপাত ব্যবহার না করে রাস্তার মাঝখান দিয়ে জনগণের চলাচল করা, রাস্তা পারাপারের জন্য অনেক সময় ওভারব্রিজ থাকলেও তা ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়া, রাস্তার ওপর ও ফুটপাতে দোকানপাট সাজিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা, দুর্বল ও দুর্নীতিগ্রস্ত ট্রাফিকব্যবস্থা এবং সর্বোপরি রাস্তায় চলাচলের জন্য যেসব নিয়মকানুন রয়েছে, তা না মানা।

সড়ক দুর্ঘটনা অপ্রতিরোধ্য কোনো কঠিন বিষয় নয়। এজন্য দরকার সরকার ও জনগণের ইতিবাচক চিন্তা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন। রাস্তার ওপর ফুটপাতে দোকানপাট স্থাপনসহ ফুটপাতে নির্বিঘ্নে হকারদের ব্যবসা করার ‘সুযোগ’ করে দেওয়া, অপরিকল্পিত ও দুর্বল ট্রাফিকব্যবস্থা, চাঁদাবাজি, খেয়ালখুশি মতো যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং করা, সড়ক-মহাসড়কের ওপর রিকশা, ভ্যান, টেম্পো, ট্যাক্সিস্ট্যান্ড স্থাপন করা, সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়নের কাজ যথাযথভাবে সম্পন্ন না করা এবং একই রাস্তা বছরে বারবার খনন করা, জনগণ কর্তৃক রাস্তা পারাপারের নিয়মকানুন সঠিকভাবে না মানার কারণে এ দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সর্বাগ্রে চালকদের হতে হবে বেশি দক্ষ, হতে হবে সতর্ক। আর জনগণকেও ট্রাফিক আইন ও রাস্তায় চলাচলের আইনকানুন যথারীতি মেনে চলতে হবে। তাছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দেশের সার্বিক সড়কব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোসহ চালকদের দক্ষতা বিচার করে দুর্নীতিমুক্তভাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন গণমাধ্যম, সুশীলসমাজ, সরকারসহ আপামর জনগণকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ছয় দফা নির্দেশনা দিয়েছেন, তা এখন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। সর্বোপরি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবাই সচেতন হলে সড়ক দুর্ঘটনা নিশ্চয় অনেকাংশে কমে আসবে।

লেখক :সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

Link: https://www.ittefaq.com.bd/print-edition/opinion/180395/%E0%A6%B8%E0%A7%9C%E0%A6%95-%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%98%E0%A6%9F%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%A5-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%A8-%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%BF
« Last Edit: September 06, 2020, 10:24:17 PM by kekbabu »
Dr. Kudrat-E-Khuda (Babu).
Associate Professor (Dept. of Law), Daffodil International University;
International Member of Amnesty International;
Climate Activist of Greenpeace International; Column Writer;
Mobile Phone: +8801716472306
E-mail: kekbabu.law@diu.edu.bd