অ্যান্ড্রয়েড সুরক্ষায় করণীয়

৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ নতুন ম্যালওয়্যারের লক্ষ্যই হচ্ছে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম। কম্পিউটার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ক্যাসপারস্কির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের প্রথম তিন মাসে মুঠোফোন লক্ষ্য করে যতো ম্যালওয়্যার ছাড়া হয়েছে তার ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশই অ্যান্ড্রয়েডের জন্য। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট ম্যাশেবল।
ক্যাসপারস্কির গবেষকেরা জানিয়েছেন, অ্যান্ড্রয়েড লক্ষ্য করে বানানো ম্যালওয়্যারগুলোর বেশিরভাগই হচ্ছে এসএমএস ট্রোজান। অ্যান্ড্রয়েডে এই ম্যালওয়্যার প্রবেশ করলে ব্যবহারকারীর অগোচরে বার্তা প্রেরণ করে এবং অর্থ চুরি করতে পারে।
এসএমএস ট্রোজানের পাশাপাশি সব ধরনের মোবাইল ম্যালওয়্যারের আক্রমণ বেড়েছে বলেও জানিয়েছেন ক্যাসপারস্কির গবেষকেরা। অ্যান্ড্রয়েড লক্ষ্য করে বানানো ম্যালওয়্যারগুলোর অধিকাংশই আসে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও নেদারল্যান্ডস থেকে।
আক্রমণের ঝুঁকি ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি গবেষকেরা জানিয়েছেন, অ্যান্ড্রয়েডনির্ভর ট্যাবলেট আর মুঠোফোনের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ম্যালওয়্যারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও। ইন্টারনেট নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ব্লু কোট সিস্টেমসের প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেস্কটপ কম্পিউটারের মতই অ্যান্ড্রয়েডনির্ভর মুঠোফোন ও ট্যাবলেটে ভাইরাস আক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে গেছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কম্পিউটার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ম্যাকাফিও তাদের প্রতিবেদনে একই ঝুঁকির কথা জানিয়েছিল। ম্যাকাফি সেসময় জানিয়েছিল, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমেই ভাইরাস আক্রমণের ঝুঁকি বেশি।
গবেষকেরা জানিয়েছেন অ্যান্ড্রয়েডের পাশাপাশি অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমনির্ভর মুঠোফোন ব্যবহারকারীদেরও ভাইরাস আক্রমণের কারণ ও প্রতিরোধের বিষয়গুলো মাথায় রাখা উচিত। যদি মুঠোফোন বা ট্যাবলেটে ভাইরাস ঢুকে পড়ে তবে তা ব্যবহারকারীর অগোচরেই অ্যাডওয়্যার ইনস্টল করে ফেলতে পারে এবং এসএমএস ট্রোজান সক্রিয় করে ফেলতে পারে। এরপর মোবাইল ফোন থেকে অগোচরে বিভিন্ন কন্টাক্ট নম্বরে বার্তা পাঠাতে থাকে এবং অর্থ হাতিয়ে নিতে থাকে। এ ছাড়াও মোবাইল ফোনে আসা ইমেইল, বার্তা ও ব্রাউজিং তথ্য চুরি করে।
টাইম অনলাইনে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে মুঠোফোনে ভাইরাস আক্রমণের ঝুঁকি ও সে ঝুঁকি নিরাপত্তায় করণীয় তথ্য উঠে এসেছে।
কীভাবে মুঠোফোন বা ট্যাবলেটে ভাইরাস প্রবেশ করে?
অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডের সময় মুঠোফোন বা ট্যাবলেটে ভাইরাস প্রবেশ করে। অ্যাপ ডাউনলোডের সময় সচেতন না থাকার ফলে ভাইরাস ভোগান্তির শিকার হতে হয়। মুঠোফোন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা জানিয়েছেন, জনপ্রিয় ও প্রয়োজনীয় অনেক অ্যাপ্লিকেশনের ছদ্মবেশে মুঠোফোনে ম্যালওয়্যার ডাউনলোড হয়ে যায়। অনেক সময় সচেতন থাকার পরও ম্যালওয়্যারের ধোঁকায় পড়ে যান অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডকারী। ২০১২ সালে জনপ্রিয় গেম ‘অ্যাংরি বার্ডস’ ও ‘অ্যাসাসিন ক্রিড’ অ্যাপ্লিকেশনের ছদ্মবেশে গুগল প্লে স্টোর থেকে ম্যালওয়্যার ডাউনলোডের হার ছিল বেশি। এতে অনেক অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডকারী তাদের প্রচুর অর্থ খুইয়েছেন।
অ্যাপ্লিকেশন ছাড়াও ওয়েবপেজ থেকেও ট্যাবলেট ও মুঠোফোনে ভাইরাসের আক্রমণ ঘটতে পারে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের স্যানফ্রান্সিসকোতে অনুষ্ঠিত আরএসএ সিকিউরিটি কনফারেন্সে নিরাপত্তা গবেষক ক্রিস অ্যাসটাসিও জানিয়েছিলেন, অ্যাপ্লিকেশনের পাশাপাশি ওয়েবপেজ থেকেও মুঠোফোন ও ট্যাবলেটে ভাইরাস আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। অ্যান্ড্রয়েড-নির্ভর মুঠোফোন ও ট্যাবলেটের পাশাপাশি কম্পিউটারের জন্য তৈরি ট্রোজান ভাইরাসগুলো আইফোন, আইপ্যাডের জন্যও ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। এখন আক্রমণের ঝুঁকি কম থাকলেও ভবিষ্যতে ওয়েবপেজের মাধ্যমে মুঠোফোন ও ট্যাবলেট ভাইরাস আক্রান্ত হওয়া সম্ভব বলেই জানান ক্রিস।
কীভাবে মুঠোফোন ও ট্যাবলেট নিরাপদ রাখবেন
আপনি যখন কোনো পরিচিত অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করবেন তখনও আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ পরিচিত অনেক অ্যাপ্লিকেশনের ছদ্মবেশে আপনার প্রিয় পণ্যটিতে মারাত্মক ভাইরাস প্রবেশ করে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারে সমস্যা তৈরি করতে পারে। আর এ সমস্যা এড়াতে, অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডের আগে নির্মাতার তথ্য যাচাই করে নিতে হবে। পরিচিত ও মূল উত্স থেকে প্রকাশিত না হওয়া অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করার সময়ই সতর্ক থাকতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অ্যাংরি বার্ড অ্যাপ্লিকেশনটির প্রকাশক রোভিও। এই প্রকাশকের বাইরে আর কারও প্রকাশিত অ্যাংরি বার্ড ডাউনলোড করবেন না। যদি এরকম ম্যালওয়্যারের সন্ধান পান তবে তা গুগলের কাছে অভিযোগ দিন। যদি কোনো অজানা বা অপরিচিত প্রকাশকের প্রকাশিত কোনো অ্যাপ্লিকেশন আপনার পছন্দ হয় সেক্ষেত্রে ডাউনলোডের আগে অ্যাপ্লিকেশনটির রেটিং ও ব্যবহারকারীদের মন্তব্যগুলো দেখে দিন। অ্যাপ্লিকেশনটিতে কোনো ব্যবহারকারী লাল পতাকা দেখিয়েছেন কী না তা খেয়াল করুন।
অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডের আগে যদি মন্তব্য কম থাকে এবং এতে যদি কেউ ভুয়া অ্যাপ্লিকেশন বলে মন্তব্য করেন তবে তা যাচাই করে নিতে হবে। এর জন্য অনলাইনে ওই অ্যাপ্লিকেশনের রিভিউ বা পর্যালোচনা পড়ে নিয়ে তারপর ডাউনলোড করতে হবে। অনেক বেশি নেতিবাচক মন্তব্যযুক্ত অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।
মুঠোফোন ও ট্যাবলেটের জন্য অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন
মুঠোফোন ও ট্যাবলেটের নিরাপত্তার জন্য বেশ কয়েকটি অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার বাজারে রয়েছে। বিনামূল্যে অ্যাপ্লিকেশন স্টোরগুলোতেও অনেক অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডের জন্য পাওয়া যায়। বাজারে থাকা কয়েকটি জনপ্রিয় মুঠোফোন নিরাপত্তা অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে অ্যান্ড্রয়েড নির্ভর পণ্যের জন্য নর্টন সিকিউরিটি অ্যান্টিভাইরাস, লুকআউট সিকিউরিটি অ্যান্ড অ্যান্টিভাইরাস, ম্যাকাফি মোবাইল সিকিউরিটি, এভিজি অ্যান্টিভাইরাস উল্লেখযোগ্য।Source:
http://prothom-alo.com/detail/date/2013-05-24/news/354771