জীবন ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই এই চার বন্ধুকে গুরুত্ব দিন

Author Topic: জীবন ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই এই চার বন্ধুকে গুরুত্ব দিন  (Read 1549 times)

Offline Md. Anikuzzaman

  • Newbie
  • *
  • Posts: 31
  • Test
    • View Profile
জীবনের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বন্ধুটির নাম হলো এন্ডোরফিনস। হাসপাতালের বিছানায় একাকী শুয়ে না থাকা পর্যন্ত অনুধাবন করা যায়না- সুস্বাস্থ্য  জীবনে কত দরকার।  সুস্বাস্থ্যের জন্য দিনে চব্বিশ ঘন্টায় কমপক্ষে আধঘন্টা সময় এই বন্ধুর জন্য ব্যয় করতে হয়। ব্যয়াম করলে শরীর এণ্ডোরফিনস ডিসচার্জ করে। শরীরে একটা হাসিখুশী- হালকা- ভাব আসে। ভালো একটা বই পড়লে , ভালো মানুষের সাথে সুসম্পর্ক  রাখলেও শরীরে জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই বন্ধুটির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। তাই, হঠাৎ করে একদিন না। এই বন্ধুটিকে প্রতিদিনই দরকার। মন খারাপ থাকলে প্রিয়জন কাছে আসলে যেমন মন ভালো হয়ে যায়। ঠিক তেমনি- মন যখন খারাপ একটু দৌড়ে আসুন। হেঁটে আসুন। এই এণ্ডোরফিনস নামক বন্ধুটি তখন আপনার ভরসা হয়ে সাথে থাকবে।

অতি প্রয়োজনীয় দ্বিতীয় বন্ধুটির নাম হলো ডোপামিন। প্রথম বন্ধু আপনার শরীরকে লাইনে রাখে। কিন্তু শরীর শুধু লাইনে রাখলে হয়না। পাশাপাশি আপনাকে সৎ একটা জীবনও যাপন করতে হয়। কোটি কোটি টাকা থাকলেও অসৎ মানুষের চেহারা দেখলে বুঝবেন- কি যেন একটা অশান্তি ওদের মাঝে বিরাজ করে। কিন্তু সৎ মানুষের চেহারায় দেখবেন একটা অন্য রকমের দীপ্তি ছড়িয়ে আছে। যখনই সৎভাবে কোনো একটা কাজ আপনি করবেন তখন শরীরে ডোপামিন তৈরি হয়। আপনি পরিকল্পনা করলেন- আজকে ঠিক সময়ে অফিসে যাবেন। অফিসের সব কাজ ভালোভাবে শেষ করবেন। এক টাকাও ঘুষ খাবেন না। ফাইল আটকে রাখবেন না। কোনো রকমের চিটিং করবেন না। কাউকে ফাঁকি দিবেন না। প্রতিদিন যখন এই টার্গেট আপনি পূর্ণ করবেন- শরীরে ডোপামিনের আগমন ঘটবে। ফুলে যেমন প্রজাপতির আগমণ ঘটে।  কারো ভালো কাজে অনুপ্রেরণা দিলেও শরীরে ডোপামিন আসে। স্ত্রী যখন স্বামীর পরিশ্রমকে উৎসাহ দেয়, স্বামী যখন ঘরে গিয়ে দিনের যাবতীয় নানা কাজের জন্য স্ত্রীর প্রশংসা করে- দেখবেন স্ত্রীর চেহারায় একটা লাবণ্য আসে। আপনার কাজ যখন বস এ্যপ্রিশিয়েট করে কিংবা নিজের ছেলেমেয়েকে কোনো কিছু ভালোভাবে শেষ করার জন্য আপনি সাবাশ বলেন- তখন একটা বাড়তি আনন্দ, উৎসাহ তৈরি হয়। এর সবগুলোই হলো- শরীরের অকৃত্রিম বন্ধু ডোপামিনের কাজকারবার। ভালো কিছু অর্জন করুন-ভালো কাজে একজন আরেকজনকে উৎসাহ দিন আর শরীরের ডোপামিনের কলোনি গড়ে তুলুন।

তৃতীয় বন্ধুটি হলো সেরোটোনিন। এই বন্ধুটি হলো- কামিনী রায়ের কবিতার এই দুই লাইন "আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী 'পরে, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে মোরা পরের তরে।" কারো কল্যাণের জন্য যাই করিনা কেন তাতে সেরোটোনিন নামক এই অদৃশ্য বন্ধুটির সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। পথের মাঝ থেকে একটা কাঁটা ফেলে দিলেন- কাউকে সুপরামর্শ দিলেন- বৃদ্ধ, মহিলা, রোগী , দূর্বল কাউকে বাসের  সীটটা ছেড়ে দিলেন। দেখবেন- মনে সুখ পাচ্ছেন। শরীরে এই সুখ এনে দেয় সেরোটোনিন নামক এই অদেখা বন্ধুটি। একাগ্রচিত্তে ধ্যান করলেও শরীরে প্রশান্তি আসে। লোক দেখানো না বরং আধ্যাত্মিক সম্পৃক্ততার তাগিদে কেউ যদি কারো ধর্ম বিশুদ্ধ পালন করে - মনে প্রশান্তি আসে। এই প্রশান্তির যোগান দেয়- বন্ধু সেরোটোনিন।

আমাদের শেষ বন্ধুটি হলো- অক্সিটোসিন। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে আসলে কিংবা কোনো সুন্দর জায়গা ভ্রমন করলে শরীরে একটা সুখ আসে। কোলাকুলি  করলে- কারো সাথে করমর্দন করলে- অদেখা বন্ধুকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরলে -বাবা-মায়ের পাশে বসে থাকলে - এমনকি আপনজনের কন্ঠস্বর শুনলে- পরিবারের সবাইকে ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখলে  দেহ মনে একটা আনন্দের ভাব আসে। কেউ যখন খুব কষ্টে থাকে তখন কোনো প্রিয়জন যদি বুকের সাথে শুধু জড়িয়ে ধরে- তখন মনটা অনেক হালকা হয়ে আসে। মনকে হালকা করে দেয়া  এই আনন্দময়ী বন্ধুটি হলো অক্সিটোসিন।

তাই, এন্ডোরফিনস নামক বন্ধুকে পেতে প্রতিদিন ব্যায়াম করা, ডোপামিনকে পেতে প্রতিদিন সৎভাবে জীবনযাপন করে ছোট ছোট কাজ সম্পাদনা করা, সেরোটোনিন কে পেতে পরোপকার করা- বিশুদ্ধ মনে নিজ নিজ ধর্ম পালন করা  আর অক্সিটোসিন নামক অকৃত্তিম বন্ধুকে পেতে  শিশুদের আদর-সোহাগ করা- সুযোগ পেলেই বাবা-মায়ের পাশে বসে থাকা  এবং আপনজনের সাথে সময় কাটানোর কোনো বিকল্প নেই। প্রতিটি পরিবারেরই উচিত শিশুরা যেন  এই চারবন্ধুকে সাথে নিয়ে বড় হতে পারে-সেটা খেয়াল রাখা।  একাডেমিক পড়ালেখার চেয়ে শিশুদের  আরো বেশী দরকার এই চার বন্ধুর।  মোবাইল, ভিডিও গ্যেমে-ডিজিটাল ফ্রেমে  ঘরে বন্দি হয়ে না  থেকে শিশুদের উচিত ঘরের বাইরে প্রকৃতির ফ্রেমে নজর দেয়া। শারীরিক নানা রকমের খেলাধূলায় সম্পৃক্ত করা। এটা হলো- এণ্ডারফিনস। প্রতিটি ভালো কাজে শিশুদের উৎসাহিত করা- শিশুদের যেকোনো ছোট অর্জনকেও অনুপ্রেরণা দেয়া- এটা হলো- ডোপামিন। সহপাঠির সাথে প্রতিযোগিতা না সহযোগিতা  শিখা। খাবার ভাগ করে খাওয়া- একসাথে বসে একটা অংকের সমাধান করা- স্কুলের টেবিল -চেয়ার সাজিয়ে রাখা- বৃষ্টিতে ভেজা কোনো সহপাঠিকে নিজ ছাতার নীচে নিয়ে আসা। এইসব ছোট ছোট পরোপকারই হলো- সেরোটোনিন। আর কাজে যত ব্যস্ততাই থাকুক-জীবন যত পেরেশানই থাকুক ঘরে গিয়ে প্রশস্ত হৃদয়ে শিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরা- বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খোঁজ খবর নেয়া- অল্প সময়ের জন্যও  সুযোগ পেলে তাদের পাশে বসা থাকাই  হলো-নিজের-শিশুর-পিতামাতার সবার  অকৃত্রিম বন্ধু অক্সিটোসিন।

Collected