আজকে থেকে কয়েক হাজার বছর আগে যখন মানুষ কৃষি কাজ শিখতে শুরু করেছে তখন থেকেই মানুষের মনে ভাবনার উদয় হয়েছে যে আমার যদি অনেক বেশি ছেলে-মেয়ে থাকে তাহলে অনেক বেশি উৎপাদন করতে পারবো, নিজেদের খাবার নিয়ে আর কোন চিন্তা করতে হবে না, ঘুরতে হবে না জঙ্গলে জঙ্গলে। তখন মানুষ বেশি করে সন্তান জন্ম দিতে লাগলো।
তারপর অনেক ধীরে ধীরে এই ধারণার পরিবর্তন আসতে শুরু করল, মানুষ বুঝতে পারলো এক মৌসুমে ফসল ফলানোর জন্য সারা বছর এতগুলা ছেলে-মেয়ের খাবার দাবার, পোশাক সহ আরো সকল সুবিধা অসুবিধা দায়ভার নেয়াটা অনেকটা খাজনার চেয়ে বাজনা বেশির মতই।
অতপর মানুষ বিকল্প উপায়ের সন্ধানে ভাবতে লাগল তারপর প্রথমদিকে একই ধরনে কাজ যাদের আছে এরকম লোক খুঁজে তাদের সাথে এক সাথে কাজ করা শুরু করল। যেমন কারো ৫ জন ছেলে আছে আর ঐ একই রকম আছে এরকম অন্য কারো ৫ জন ছেলে আছে সবাই এক সাথে একই বাড়ির কাজ কয়েকদিন করে করতে লাগল। না এভাবেও মানুষের পুষল না। অতপর নতুন চিন্তার উদয় হল, মানুষ ভাড়া করে কাজ করানো, মানে আজকে যাকে দিন শ্রমিক বলে আর এর আপডেটেট নাম হল চাকুরীজীবি।
এরকম হাজার হাজার উদাহরণ আছে সেই প্রাচীন কাল থেকেই। আর এই সব ধারণার উপর ভিত্তি করেই আজকের দিনের “ক্লাউড কম্পিউটিং” এর জন্ম। কী বিষয়টা পরিষ্কার হল না? তাহলে আসুন প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক যুগে ফিরে আসি। এ যুগের উদাহারণের মধ্যে “উবার” বা “পাঠাও” উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নিজের গাড়ী নেই তো কি হয়েছে! তাই কি গাড়ীর স্বাদ নিব না? ধরুন, আপনার দু’চারটা গাড়ীর প্রতিদিন দরকার হয় না তাই এত টাকা খরচ করে লাভ কি, যখন খুশি যতগুলো খুশি ডেকে নেন উবার বা পাঠাও এর গাড়ী।
হ্যাঁ! ক্লাউড কম্পিউটিং ও এই ধারণার প্রোটোটাইপ। ধরুন,গেম ডেভেলপমেন্ট করার জন্য আপনার অনেক ভা্লো কনফিগারেশনের পিসি দরকার, অনেক বড় বড় প্রিমিয়াম সফটওয়্যার দরকার যেগুলা আপনার পরবর্তীতে আর কাজে লাগবে না, তাহলে এত টাকা ব্যয় করে পিসি আর সফটওয়্যার না কিনে আপনি চাইলেই এখন অনলাইন থেকে যত খুশি, যত ভাল রিসোর্স(হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার) দরকার ভাড়া নিতে পারেন, আর এটাই হল ক্লাউড কম্পিউটিং। তবে হ্যাঁ! সবাইকে যে রিসোর্স ভাড়া করেই নিতে হবে বিষয়টা এমনও নয় আপনি চাইলে আপনার নিজস্ব ক্লাউডও সেট-আপ করে নিতে পারেন এবং চাইলে নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে অন্যদের কাছে আপনিও ভাড়া দিতে পারেন। যেমনটা করছে গুগল, অ্যামাজন ও মাইক্রোসফটের মত কোম্পানি।
বিষয়টা এখনো পরিষ্কার না হলে আরো একটা উদাহারণ দিচ্ছি। “হুয়াওয়ে টেকনোলোজি” পৃথিবীর অনেক দেশে তাদের টেলিকম সার্ভিস (ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক) দিয়ে থাকে যেমন বাংলাদেশেও রবি, বাংলালিংক, গ্রামীণফোন এদের সার্ভিস দিয়ে থাকে। ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক এর কাজে(৩জি ও ৪জি) প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের নেটওয়ার্ক এনালাইসিস করতে হয় যাদের সবার কাছেই আলাদা আলাদা লাইসেন্সড সফটওয়ার থাকতে হয় এবং এতে কাজও হয় অনেক ধীর গতিতে। তাই সময় ও খরচ বাচানোর জন্য হুয়াওয়ে এখন ক্লাউড বেইসড এমন সব ওয়েব এপ্লিকেশন বানিয়েছে যেগুলো দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হুয়াওয়ের কর্মকর্তারা একই সময়ে একই এপ্লিকেশন ব্যাবহার করে খুব অল্প সময়ে অনেক বেশি নেটওয়ার্ক এনালাইসিস এর কাজ করতে পারে। যার জন্য তাদের প্রতিবছর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার সেইভ হচ্ছে- এটাও ক্লাউড কম্পিউটিং এর একটা বড় উদাহরণ। তাই সহজ কথায় ক্লাউড কম্পিউটিং বলতে বুঝায়- ইন্টারনেট ভিত্তিক কোন হ্যার্ডওয়ার বা সফটওয়ার সেবা ব্যবহার করা।
এর আরো সহজ একটা উদাহরণ হচ্ছে- ‘গুগলের জিমেইল’। সারা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ গুগলের ইন্টারনেট ভিত্তিক এই সফটওয়ার বা এপ্লিকেশন সেবা ভোগ করছে ইন্টারনেট ব্যবহারযোগ্য যে কোন ডিভাইস থেকে।