অর্থ উপার্জনের কতো শত মাধ্যম আছে তা হয়তো গুনে শেষ করা যাবেনা। সময়ের পরিক্রমায় নতুন নতুন সব পেশা যোগ হয়েছে মানুষের জীবনে। তথ্য প্র্রযুক্তির বিকাশের ফলে উপার্জনের মাধ্যমগুলোতে যুক্ত হয়েছে ভিন্ন মাত্রা। বর্তমানে শুধু অনলাইনে-ই আয় করার হাজার হাজার মাধ্যম রয়েছে। যার মধ্যে ইউটিউব সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম। কয়েকটি বিশেষ উপায় অবলম্বন করলে, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও শেয়ারিং মাধ্যমকে আয়ের উৎস বানাতে পারেন আপনিও। চলুন জেনে আসি ইউটিউব থেকে আয় করার নিয়মাবলী সম্পর্কে।
ইউটিউবের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ভিডিও শেয়ার করার জন্য। শুরুর দিকে এর কোনো বাণিজ্যিক কার্যক্রম ছিলো না। তবে শুরুতে কোন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য না থাকলেও বর্তমানে তা অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেকেই ইউটিউব থেকে টাকা আয় করাকে হিমালয় জয় করা ভেবে থাকেন। কিন্তু ব্যাপারটি আসলে তেমন নয়। বিশেষ কয়েকটি শর্ত অবলম্বন করলে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করা সম্ভব হচ্ছে। ২০১৮ সালে ইউটিউবে খেলনার ভিডিও দেখিয়ে, সাত বছরের শিশু রায়ান ইউটিউব থেকে কোটি টাকা আয় করে সর্বোচ্চ আয় করার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন। তাহলে আপনি কেনো পারবেন না ?
ইউটিউব থেকে আয় করতে হলে প্রথমে আপনাকে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে। যার জন্য প্রথমেই দরকার হবে একটি জিমেইল অ্যাকাউন্টের। নিজের সঠিক তথ্য, মানে নাম, বয়স ও ফোন নম্বর দিয়ে জিমেইল অ্যাকাউন্ট খোলা ইউটিউব চ্যানেল খোলার পূর্বশর্ত। এরপর ইউটিউবে ঢুকে Sign In এ ক্লিক করে জিমেইল দিয়ে ইউটিউবে লগ ইন করতে হবে। Create Channel অপশনে ক্লিক করলে চ্যানেল তৈরির জন্য সব তথ্য চাওয়া হবে। প্রয়োজনীয় সব তথ্য দেয়ার পাশাপাশি একটি ভালো প্রোফাইল ফটো ও একটি কভার ফটো যুক্ত করতে পারেন। এরপর নিজের তৈরি একটি ভিডিও আপলোড করুন। ব্যস হয়ে গেলো প্রায় অর্ধেক কাজ!
ইউটিউবে আয়ের মূল উৎসই ভিডিও। আপনার আপলোড করা ভিডিও এক অর্থে আপনার পণ্য! যার বদৌলতে আপনি অর্থ উপার্জন করবেন সেটি অবশ্যই ভালো মানের হতে হবে। আপনার চ্যানেলটিতে সুনির্দিষ্ট বিষয়ের ভিডিও আপলোড করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ। আপনি যে বিষয়ে দক্ষ; সে বিষয়ের ভিডিও ধারণ করে আপলোড করতে পারেন। ধরুন, আপনি ঘুরতে পছন্দ করেন। ট্রেকিং করা আপনার শখ। তবে বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো নিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন ভিডিও। তাহলে ভ্রমণ সংক্রান্ত ভিডিও দেখার জন্য দর্শকরা আপনার চ্যানেলটিতে আসবে। আবার ধরুন, আপনি ভালো নাচ জানেন, তাহলে নাচের ভিডিও কিংবা টিউটোরিয়াল শেয়ার করতে পারেন ইউটিউবে। মজার মজার ভিডিও ধারণ করেও আপলোড করতে পারেন। আসলে যে কোন একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে ভিডিও নির্মাণ করলে আপনার চ্যানেলটির জন্যই ভালো।
২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত ইউটিউবে অর্থ উপার্জনের জন্য সহজ ছিলো। ভালো মানের ভিডিও আর জনপ্রিয় চ্যানেল হলেই ইউটিউবের অ্যাডসেন্স পার্টনারশিপ পাওয়া যেতো। পার্টনার হয়ে গেলেই প্রতি মাসে ২০০ ডলার পাওয়া যেতো। কিন্তু নতুন নীতিমালা প্রনয়নের কারণে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করতে হলে অবশ্যই চ্যানেলটিকে মনিটাইজেশন করতে হবে। ভিডিওতে অ্যাড বসানো এবং এর মাধ্যমে আয় করাকে মনিটাইজেশন বলে। ইউটিউবের আয় মূলত পরোক্ষ। ভিডিওতে বিজ্ঞাপন বাবদ যে টাকা ইউটিউব আয় করে তা থেকে একটি অংশ ভিডিও নির্মাতাকে দেয়া হয়।
এছাড়া, যেহেতু অ্যাড থেকেই সকল লভ্যাংশ আসে তাই অর্থ উপার্জনের জন্য অ্যাডসেন্স চালু করতে হবে। অ্যাডসেন্স চালুর জন্য চ্যানেলটিকে কিছু যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। চ্যানেলটির শেষ ১ বছরের মধ্যে ১ হাজার সাবস্ক্রাইবার ও ৪ হাজার ঘণ্টা ওয়াচটাইম হতে হবে। যে জিমেইল অ্যাকাউন্ট দিয়ে অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করবেন সেটির ব্যাবহারীর বয়স ১৮ হতে হবে। এছাড়া চ্যানেলের চ্যানেল আইকন থাকতে হবে। সাবস্ক্রাইবার ও ভিউ বেশি থাকলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে স্পন্সর জোগাড় করেও ইউটিউবে আয় করা সম্ভব।
সাবস্ক্রাইবার ও ভিউ বাড়লে আয়ের পথ সুগম হতে থাকে। তাই এগুলো বাড়াতে বেশ কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন। ব্যবহারকারী যেনো আপনার ভিডিওটি খুঁজে পায় সেজন্য যথাযথ ও আকর্ষণীয় শিরোনাম ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া থাম্বনেইলেও জুড়ে দিতে পারেন যথাযথ ছবি। ফেসবুক-টুইটারসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার চ্যানেলের ভিডিওটি শেয়ার করতে পারেন। আর হ্যাঁ, ইউটিউবের কপিরাইট ও কমিউনিটি আইন অবশ্যই মেনে চলতে হবে। কপিরাইট কিংবা কমিউনিটি আইন বহিভূর্ত কোনো কিছু করলে আপনার আয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এমনকি ইউটিউব আপনার চ্যানেলটিও বন্ধ করে দিতে পারে!