করাত – রুম্মান মাহমুদ
ট্রেন থামতেই টের পেলাম, আটকে গেছি সীটে। শেষ স্টপেজে সবাই নেমে পড়ছে নিয়তির মতো। আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেও এক চুল নড়তে পারিনা। আজ ব্যাগ চুরির ভয়ে টয়েলেটে যাইনি, ঘুমাইনি। বই খুলে সারাটা পথ ভেবেছি গন্তব্যের কথা। ছোট একটা কালো ঘর অপেক্ষা করে আছে চিলেকোঠায়। তার জানলা জুড়ে লেবু ও নারীর নিষিদ্ধ সম্মোহন। বাহিরে বাড়িওয়ালা ও রূঢ় রোদের রগড়। ভেতরে আমার অথর্ব জীবন। ট্রেনের লোকেরা এলো, চারজন মিলে আমাকে টেনে হিঁচড়ে ক্লান্ত। বললো, আপনার তো শেকড় গজিয়েছে, করাত ছাড়া হবে না। বললাম, ভয় পাই। যদি রক্ত পড়ে? তারা হাসে, গাছের আবার রক্ত। তারা করাত আনতে যায়৷ আমি বাড়ির কথা ভাবি। ওরা করাত খোঁজে। মায়ের মুখ ভাবি। ওরা চিৎকার করে করাত খোঁজে। স্ত্রীর জলভরা চোখ ভাবি। বিপথগামী ভাই ও বিপন্ন বাবার কথা ভাবি। ওদের করাত খোঁজার শব্দ ক্রমশ দূরগামী ট্রেনের শব্দে মিলিয়ে যায়। ক্লান্তি আমাকে আচ্ছন্ন করে। সমুদ্রের ঢেউ গুনতে গুনতে ঘুমিয়ে পড়ি। দেখি বিশাল এক করাত কেটে টুকরো টুকরো করে আমাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে ধূসর প্লাটফর্মে।