‘শুধুই আরেকজন কর্মী’ না হয়ে কোম্পানির ‘গুরুত্বপূর্ণ কর্মী’ হোন

Author Topic: ‘শুধুই আরেকজন কর্মী’ না হয়ে কোম্পানির ‘গুরুত্বপূর্ণ কর্মী’ হোন  (Read 1957 times)

Offline Sultan Mahmud Sujon

  • Administrator
  • Hero Member
  • *****
  • Posts: 2667
  • Sultan Mahmud Sujon, Sr. Admin Officer
    • View Profile
    • Helping You Office Operation & Automation Management
হ্যান্ডিমামা হচ্ছে পেশাদার ক্লিনিং ও মেইনটেন্যান্স সার্ভিসের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। গ্রাহকেরা ক্লিনার, ইলেকট্রিশিয়ান, কার্পেন্টার, পেইন্টার, প্লাম্বার, বাসাবাড়ি বদলের কর্মী ইত্যাদি সেবা পাচ্ছেন এর মাধ্যমে। এই প্রতিষ্ঠানের তরুণ সিইও শাহ পরান। কীভাবে শুরু করলেন প্রতিষ্ঠানটি, তরুণদের এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন চলতি ঘটনার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোছাব্বের হোসেন



আপনার সম্পর্কে বলুন। আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বলুন। কী কী কাজ করেন আপনারা। কেন এই নাম দিলেন?

আমার নাম শাহ্ পরান। আমার একাডেমিক পড়াশোনা কম্পিউটার বিজ্ঞানে। ২০১১ সালে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরির মাধ্যমে আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়। ২০১২ সালে চাকরি ছেড়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করি। ২০১৪ সালে বন্ধুর সঙ্গে একটি আইটি কোম্পানি শুরু করি। মাত্র ছয় মাসের মাথায় ওই কোম্পানি বন্ধ করে দিতে হয়।

তারপর ২০১৪ সালের শেষের দিকে হ্যান্ডিমামার আইডিয়াটা নিয়ে কাজ শুরু করি। মার্কেট রিসার্চ ও পাইলট শেষে ২০১৫ সালের মে মাসে যাত্রা শুরু হয় হ্যান্ডিমামার। হ্যান্ডিমামা হচ্ছে পেশাদার ক্লিনিং ও মেইনটেন্যান্স সার্ভিসের একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। হ্যান্ডিমামা মোবাইল অ্যাপ, ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ, হোয়াটসঅ্যাপ, কল সেন্টারসহ যেকোনো একটি মাধ্যমে গ্রাহকেরা ক্লিনার, ইলেকট্রিশিয়ান, কার্পেন্টার, পেইন্টার, প্লাম্বার, বাসাবাড়ি বদলের কর্মী ইত্যাদি সেবা মুহূর্তের মধ্যেই বুক করতে পারবেন। সার্ভিস বুক করার পর গ্রাহকের সুবিধামতো সময়ে হ্যান্ডিমামা সার্ভিস প্রোভাইডার পৌঁছে যাবে গ্রাহকের দোরগোড়ায়।

সার্ভিস প্রোভাইডার পাঠানোর পাশাপাশি হ্যান্ডিমামা নিশ্চিত করে সেবার সঠিক মূল্য, কোয়ালিটি, গ্রাহকের সেফটি আর ওয়ারেন্টি। হ্যান্ডিমামা অ্যাপের সবচেয়ে জনপ্রিয় সেবাগুলো হচ্ছে হোম ডিপ ক্লিনিং, সোফা ক্লিনিং, কিচেন ক্লিনিং, ডিসিনফেকশান ক্লিনিং, হোম শিফটিং, পেস্ট কন্ট্রোল বা পোকামাকড় দমন, এসি, ফ্রিজ ও ওভেন রিপেয়ার। এ ছাড়া বাসা বা অফিস পেইন্টিং হ্যান্ডিমামার আরেকটি জনপ্রিয় সেবা।

হ্যান্ডিমামা নামকরণের সময় আমি একটা ভিন্নতা চেয়েছিলাম, যাতে মানুষ সহজে নামটি মনে রাখতে পারে। আর তাই ইংরেজি ‘Handy’ বা দক্ষ আর বাংলা ‘Mama’ বা মামার সমন্বয়ে এই নামকরণ। এর মানে হচ্ছে দক্ষ মামা, যিনি আমাদের হেল্প করেন, আমাদের সব সমস্যা সমাধান করেন।

উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করার কারণ কী? নিজেকে সফল মনে করেন কি না?

উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করার পেছনে মূল কারণ বা প্রেরণা হচ্ছে একটা বড় কিছু বিল্ড করা বা একটা বড় সমস্যার সমাধান করা, যেটা অনেক মানুষ ব্যবহার করবে। উদ্যোক্তা হলে আমি অনেক মানুষের জন্য কর্মসংস্থান করতে পারব, এই বিষয়ও একটা বিরাট ভূমিকা রেখেছে। সফলতার অনেক মাপকাঠি রয়েছে। আমি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দিক থেকে নিজেকে সফল মনে করতে পারি। কিন্তু উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে এখনো সফল মনে করি না। যেদিন কমপক্ষে ৫০ হাজার বাসায় প্রতিদিন হ্যান্ডিমামা ব্যবহার হবে, সেদিন নিজেকে সফল মনে করব।

কর্মী নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন কমন বিষয়কে গুরুত্ব দেন?

যেকোনো কর্মী নেওয়ার আগে আমরা তাঁদের পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি তাঁদের প্যাশন, কাজের প্রতি কমিটমেন্ট, শেখার মানসিকতা ও পজিটিভ মনোভাবকে খুব গুরুত্ব দিই।

দেশে কোভিডের পরে কর্মসংস্থান, চ্যালেঞ্জ নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

কোভিড সারা পৃথিবীকে পরিবর্তন করে দিয়ে গেছে। আমি মনে করি, সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয়েছে আমাদের কর্মক্ষেত্রে। মানুষ এখন কাজ করার নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করেছে। কোভিড–পরবর্তী সময়ে মানুষ অনেক কাজকে অটোম্যাট করে ফেলছে। যে কাজ মানুষ করে সে কাজ মেশিনের সাহায্যে করার চেষ্টা করছে, যে কাজ পাঁচজন করেছেন, সে কাজ তিনজন দিয়ে করানোর চেষ্টা করা হবে। এতে অনেক মানুষের চাকরি হারানোর উপক্রম হবে।

আমি মনে করি, আমাদের কর্মীদের তাঁদের পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দক্ষতা নিয়ে আগ্রহী হওয়া উচিত। বাসায় বসে কাজ করার যাবতীয় টুল শেখা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কোম্পানির জন্য ‘শুধুই আরেকজন কর্মী’ না হয়ে কোম্পানির একজন ‘গুরুত্বপূর্ণ কর্মী’ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

কোভিডে আপনি কীভাবে প্রতিষ্ঠানের কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন?

কোভিড যদিও আমাদের ব্যবসার জন্য অনেক বড় একটা ধাক্কা ছিল, তবু লকডাউনের শুরু থেকেই আমরা বাসা থেকে কাজ চালিয়ে গেছি। আমরা ‘বাসা থেকে কাজ’–এর জন্য নতুন নতুন পলিসি ও নিয়ম নিয়ে এসেছি। আমাদের কর্মীরা সবাই দ্রুত নতুন নিয়ম ও কাজের ধরনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন।

লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকে আমরা খুবই সীমিত আকারে অফিসে গিয়ে কাজ করছি। আমাদের ৬০ ভাগের বেশি কর্মী এখন বাসা থেকেই কাজ করছেন।

পেশার উন্নতির জন্য তরুণদের কাছে আপনার পরামর্শ কী?

পেশার উন্নতির জন্য তরুণদের কাছে আমার পরামর্শ হচ্ছে, চাকরিতে আসার আগেই ঠিক করতে হবে ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার কোথায় নিতে চাই, কোন ফিল্ডে কাজ করতে চাই। তারপর পছন্দের ফিল্ডে চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে দু-চার হাজার টাকার জন্য বারবার চাকরি পরিবর্তন না করে, পেশাগত দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জনে দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কোম্পানির জন্য ‘শুধুই আরেকজন কর্মী’ না হয়ে কোম্পানির একজন ‘গুরুত্বপূর্ণ কর্মী’ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

বাংলাদেশে আগামী ১০ বছরে কোনো কোনো সেক্টর বাড়তে পারে? এ জন্য তরুণেরা কীভাবে নিজেদের তৈরি করতে পারেন?

নিঃসন্দেহে তথ্যপ্রযুক্তি ও ই–কমার্স হবে আগামী দিনের সবচেয়ে বড় কাজের সেক্টর। তথ্য ও প্রযুক্তি সেক্টরে সৃষ্টি হবে হাজার হাজার কর্মসংস্থান। হ্যান্ডিমামাসহ অসংখ্য তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন হবে হাজার হাজার দক্ষ কর্মীর। তরুণেরা নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন কোর্স বা ইন্টার্নশিপ করতে পারেন।

পেশা বাছাই করার ক্ষেত্রে কোন কোন দিককে প্রাধান্য দেওয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন?

পেশা বাছাই করার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের আগ্রহের জায়গাটাকে প্রাধান্য দিতে হবে। একটা কিছু করতে হবে বলে যেকোনো কাজ দিয়ে শুরু না করে নিজের পেশা নিয়ে পরিকল্পনামতো এগিয়ে যেতে হবে। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে আগামী ৫-১০ বছরের কোন কোন চাকরির চাহিদা বেশি থাকবে, সে অনুযায়ী নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে।

Source: https://www.prothomalo.com/feature/shapno/%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9-%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%8F%E0%A6%97%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87