Help & Support > Common Forum/Request/Suggestions

পথশিশুরাও নিতে চায় উচ্চশিক্ষা, হতে চায় বড় ব্যবসায়ী

(1/1)

Farhana Haque:

আমিও ভালোভাবে লেখাপড়া করতে চাই। চাই আরো ১০ জনের মতো বড় হতে, সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই। আমারও ইচ্ছে হয় বড় ব্যবসায়ী হতে।
কথাগুলো ১৩ বছর বয়সী সাবিনার। হাতে তার কিছু গোলাপ আর কয়েকটি ফুলের মালা। শাহবাগ চত্বরে সে সাতসকাল থেকেই এগুলো নিয়ে মানুষের কাছে গিয়ে গিয়ে বিক্রি করে।

তার সাথে কথা বলে জানা গেছে তার গ্রামের বাড়ি জামালপুরে। তবে বর্তমানে রাজধানীর তেজকুনি পাড়ার পাইনে সরদারের বস্তিতে মামার সাথেই থাকে। ছোট বেলাতেই বাবাকে হারিয়েছে সে। মা অন্যত্র বিয়ে করেছে। শাহবাগে এ পথশিশু ফুল বিক্রেতা। তার মামার হাত ধরেই সে এখানে এসেছে। সাতসকালেই ফুল বিক্রি শুরু হয় তার। বিকেল অবধি চলে হাতে করে নিয়ে ফুল বিক্রি। এতে মাসে প্রায় চার হাজার টাকা আয় হয়। তার কাছে প্রশ্ন দিনভর খেটে এত পয়সা কামাই করছ পড়ালেখা করতে ইচ্ছে হয় না, আগ্রহ হয় না বড় হয়ে কিছু হতে? মাথা নেড়ে হ্যাঁ জবাব দিলো সে।

একই রকম আরেকজনের সাথে কথা হয়। তার নাম মানিক। তার মা-বাবা কেউ নেই। তার ঠিকানা এখন কমলাপুর রেলস্টেশন। বাড়ি উড়াকান্দা বরাই, রাজবাড়ী। সেখান থেকে ঢাকায় এসেছে সে। এখন সে বিক্রি করছে পানির বোতল। তার সাথেও নয়া দিগন্ত প্রতিবেদকের কথা হয়। তারও ইচ্ছা সে বড় ব্যবসায়ী হতে চায়। চায় লেখাপড়া করতে, এভাবে পথে পথে ঘুরে জীবন কাটাতে তারও আর আগ্রহ নেই।

রাজধানীর পথশিশুদের মধ্যে ওপরের দু’টি কেস স্টাডি খণ্ড চিত্র মাত্র। সারা রাজধানীতে এরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পথশিশুদের ওপর পৃথক পৃথকভাবে দু’টি গবেষণায় উঠে এসেছে পথশিশুরা জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। লেখাপড়ার সুযোগ চায়। এমন নোংরা পরিবেশে তারা বড় হতে চায় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অধ্যাপক মো: নুরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ঢাকা শহরের ফুলবিক্রেতা পথশিশুদের দৈনন্দিন জীবন শীর্ষক এক সমীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে, এসব শিশুর শতকরা আশি ভাগই পড়াশুনা করতে চায়। এসব শিশুর মধ্যে ব্যবসা ও লেখাপড়া করার আগ্রহ দেখা গেছে। তারা জীবন মানোন্নয়নের জন্য ব্যবসা করতে চায়। এসব শিশু প্রতিদিন ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করে, দুমুঠো ভাতের জন্য। আর এরা মূলত এসেছে রাজধানীতে নদীভাঙন, দরিদ্রতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, গ্রামীণ কূটকৌশল আব গৃহবিবাদের যাতনা থেকে রেহাই পেতে। তাদের বাসস্থান মূলত রাজধানীর বস্তি রেলস্টেশন বা পথের ধারে।

রাজধানীতে এসব পথশিশুর থাকা-খাওয়াসহ আয় রোজগারের জন্য বিচরণস্থান সদরঘাট, গাবতলী সায়েদাবাদ, এয়ারপোর্ট ও কমলাপুর রেলস্টেশন। এসব শিশুর শতকরা ৮০ ভাগ জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করে।

এ দিকে একিই চিত্র ফুটে উঠেছে চট্টগ্রামে পথশিশুদের ওপর এক গবেষণায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী এ গবেষণা পরিচালনা করেন। তার বিষয় ছিল চট্টগ্রাম মহানগরের ওপর পথশিশুদের আর্থসামাজিক অবস্থা নিয়ে। এতে তিনি দেখান চট্টগ্রাম মহানগরীর পথশিশুরা জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত।

তাদের মধ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশ ডাস্টবিন ও ময়লার স্তূপ থেকে কাগজ ও অন্যান্য জিনিস কুড়ায়, ২০ শতাংশ পেপার বিক্রি করে, ১২ শতাংশ ভিক্ষা করে এবং বাকিরা ভাঙ্গাড়ির কাজ, কুলির কাজ, হোটেল ও দোকানের কাজ, পানি বিক্রি, ওয়েলডিং কারখানার কাজ, রিকশা চালানো, বাস-ট্রাকের হেলপারসহ প্রভৃতি কাজ করে থাকে। আর তারা এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজে জড়িত হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে দরিদ্র্যতা, পারিবারিক ভাঙন, অন্য কোনো কাজ না পাওয়া এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বহীনতা। চট্টগ্রামের পথশিশুদের প্রায় ২৭ ভাগ দৈনিক ৬ থেকে ৯ ঘণ্টা কাজ কাজ করে।

গবেষণায় দেখা গেছে পথশিশুদের ৩৭.৩৩ শতাংশ ছোট ব্যবসায়ী বা দোকানদার হতে চায়। প্রায় ২৯ শতাংশ শিশু গাড়ির ড্রাইভার, ১৬ শতাংশ শিশু হোটেল ও দোকানের কাজ করতে চায়। ৯ শতাংশের ইচ্ছে বিদেশ গমন আর ০.৬৭ শতাংশ শিশু ভবিষ্যতে কী করবে তা বলতে পারেনি।

ইউনিসেফ পথশিশু ধারণাটি ব্যাখ্যা করতে পথশিশুদের দুই ভাগে ভাগ করেছেন, পথশিশু এবং রাস্তার পাশে শিশু যারা বেঁচে থাকার জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করে। আবার এসব শিশু নিয়মিতভাবে রাতে নিজ পরিবারে ফিরে যায় এবং পরিবারের সাথে বসবাস করে। আবার রাস্তায় থাকে এমন শিশু অর্থাৎ যাদের কোনো ঘর নেই, যারা নগরীর রাস্তায় বা ফুটপাথে বাস করে, কাজ করে এবং ঘুমায়।

জাতিসঙ্ঘের তথ্য মতে, বর্তমানে বিশ্বের পথশিশু রয়েছে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন। সে অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে যেসব শিশু জীবিকা বা অন্য কোনো প্রয়োজনে দিনে বা রাতে রাস্তায় একা বা পরিবারের সাথে বাস করে, তাদেরকে পথশিশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে দেশে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ পথশিশু রযেছে, এদের মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগের বাস রাজধানীতে।

অপর দিকে ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিসের হিসাবে শুধু ঢাকায় রয়েছে প্রায় চার লাখ ৫০ হাজারের মতো পথশিশু। এ বিপুল পথশিশু শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সুুচিকিৎসা সহ নানা সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত। আর এমনই বাস্তবতায় প্রতি বছর পালিত  হচ্ছে বিশ্ব পথ শিশু দিবস। এ উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন ব্যাপক কার্যক্রম হাতে ও নেয়। ২০১২ সাল থেকে দিবসটি প্রতি বছর পালিত হচ্ছে। কিন্তু ভেবে দেখার বিষয় প্রতিবছর তাতে কতটুকু সুবিধা নিশ্চিত করা হয় পথশিশুদে জন্য।

সুত্রঃ কালের কন্ঠ

Navigation

[0] Message Index

Go to full version