ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে কাজ করলে শরীরের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এটা জেনেও আমাদের কিছু করার থাকে না। কারণ, অফিসে কাজ করতে গেলে এটা মেনে নিতেই হবে। কিন্তু আমরা কি জানি, বসে কাজের দরুন শরীরের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা কীভাবে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব? কিংবা প্রতিদিন এর জন্য কতক্ষণ আমাদের সক্রিয় থাকতে হবে?
সাইকেল চালিয়ে ঘাম ঘরানো যেতে পারে
সাইকেল চালিয়ে ঘাম ঘরানো যেতে পারেছবি: পিকজাবে, পেকজেলসডটকম
সম্প্রতি একটি গবেষণা বলছে, প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট ঘাম ঝরাতে হবে। তবে দুলকি চালে নয়; বরং একটু বেশি কায়িক শ্রম লাগবে। আর ৪০ মিনিট ঠিকঠাক ঘাম ঝরাতে পারলে প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা বসে কাজ করলেও সমস্যা হবে না; বরং সেটা পুষিয়ে যাবে।
তবে গবেষণা এ–ও বলছে, টানা বসে না থেকে মাঝেমধ্যে উঠে দাঁড়ালেও কিছুটা কাজ হবে। সামান্য পায়চারি করতে পারলে তো কথাই নেই।
চার দেশের প্রায় সাড়ে ৪৪ হাজার মানুষ ফিটনেস ট্র্যাকার পরে এই গবেষণায় অংশ নেন। ফলে কোনো তথ্যই মুখের কথা নয়।
যোগাসনেও শরীরকে ফিট রাখা সম্ভব
যোগাসনেও শরীরকে ফিট রাখা সম্ভবছবি: এলি ফেয়রিটেল, পেকজেলসডটকম
নিয়মিতভাবে কায়িক শ্রম করা মানুষের মৃত্যুহার কম বলেও জানা গেছে এই গবেষণার বিস্তারিত বিশ্লেষণে। তবে শুধু যে ব্যায়ামই করতে হবে তা নয়; সাইকেল চালানো, বাগান করা, হাঁটাহাঁটি করা বা কোনো না কোনোভাবে সক্রিয় থাকলেও অকালমৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন গবেষকেরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২০ সালের গ্লোবাল গাইডলাইনস অন ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি অ্যান্ড সেডেনটারি বিহেভিয়ার রিপোর্টের সমান্তরালেই প্রকাশিত হয়েছে এই গবেষণাপত্র। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকার জন্য ৪০ জন বিজ্ঞানী ছয়টি মহাদেশের মানুষকে নিয়ে কাজ করেছেন।
এই নির্দেশনাকে সময়োপযোগী বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, এই দুটো রিপোর্ট এমন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে, যখন পুরো বিশ্ব অতিমারির মধ্যবর্তী অবস্থানে রয়েছে। এমনকি দ্বিতীয় ঢেউ সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলেছে।
বাচ্চাদেরও উৎসাহিত করা যেতে পারে
বাচ্চাদেরও উৎসাহিত করা যেতে পারেছবি: কেতুত সুবিয়ান্তো, পেকজেলসডটকম
এই পরিস্থিতি মানুষকে আবার গৃহবন্দী করছে। তাতে করে মানুষ আরও অলস হতে বাধ্য হচ্ছে। তা সত্ত্বেও মানুষের উচিত নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া এবং নিষ্ক্রিয়তার কুফল থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা।
শুরুতে উল্লেখিত গবেষণাপত্রের সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ, ওই গবেষণায় প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট মাঝারি থেকে কঠোর ব্যায়ামের কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে প্রতি সপ্তাহে ১৫০-৩০০ মিনিট মাঝারি অথবা ৭৫-১৫০ মিনিট কঠোর শারীরিক শ্রমের কথা। তাহলেই বসে থাকার ফলে শরীরের যে সমস্যা তৈরি হবে, তার ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে।
লিফট ব্যবহারের বদলে সিঁড়ি ভাঙা, বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা করা, যোগাসন করা কিংবা নাচ অনুশীলন করা, বাসার কাজ করা, সাইকেল চালানোর মতো এমন কাজে দিনের কিছুটা সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখা গেলে শরীর চাঙা থাকবে।
বয়স্কদেরও কিছুটা সক্রিয় থাকতে হবে
বয়স এবং শরীরের ওজন অনুযায়ী সক্রিয় থাকার সময় নির্ধারণ করাটা বেশ দুরূহ হলেও গবেষকেরা মোটের ওপর ৪০ মিনিটকেই ধরছেন। গবেষকেরা বলছেন, এই কাজে এখনো নতুন নতুন বিষয় উঠে আসার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। যেটা হয়তো সামনে আরও গবেষণার মাধ্যমে তুলে ধরা সম্ভব হবে।
তথ্যসূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট
Ref:
https://www.prothomalo.com/life/health/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A7%9F-%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%A7%E0%A6%98%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE